![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার জীবনের বাস্তব একটা গল্প!
ধনীর ছেলেরা ছোট বেলা থেকেই পুষ্টিকর নানা খাবার খেয়ে বড় হয়। ডিম, দুধ, হরলিক্স আরো কত কি।
আর আমিতো সেই নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরে জন্ম নেয়া সোনার রাজপুত্র।
ছোট বেলা থেকে হরলিক্স – মরলিক্স তো দূরে থাক, আব্বুর এক কেজি গরুর গোসতও হয়তো কেনার সামর্থ্য সেই ভাবে ছিলো না।
তবুও যে গরুর গোসত কিনেন না, তা নয়। খুব করে কিনতো, বিশেষ করে যখন নানা বাড়ি থেকে কোনো আত্মীয়স্বজন আসতো কিংবা বিশেষ দিন গুলোতে। আমার জন্ম ২০০২ সালে, আমরা দুই ভাই বোন। মানে আমি আর আমার বড় বোন। নাহ, দুই ভাই-বোন নয়। দুই বোন আর আমি একাই এক ভাই।
আমার আরো একটা বোন আছে, সে আমাদের ভাই-বোনেরও বড়।
আমার বড় মায়ের মেয়ে।
সে ছোট বেলা থেকেই আমার দাদার ভাইয়ের কাছে থাকে। জন্মের সময় সে তার মাকে হারিয়ে ফেলেন। ঠিক যেমন আমার মেয়ে তাসফিয়া জান্নাত তার মাকে হারিয়ে ফেলেছেন।
ছোট বেলা থেকেই আমার গ্রোথ অনেক ভাল। আমার বয়সী ছেলেমেয়েদের থেকে আমি অনেকটা বড়,আর লম্বা।
এই ভালো গ্রোথের পিছনে ছিলো আল্লাহর দয়া আর আল্লাহর দান। কোনো হরলিক্স-মরলিক্স এর অবদান নেই। একেবারে জিরো।
এই ভালো গ্রোথ ধনীদের কাছে হাজার হাজার টাকা খরচের ব্যাপার সেপার।
আমার আব্বু আমারে অনেক ভালোবাসতেন। গোসত, মাছ কিংবা ফলমূল যাই কিনুক না কেনো সেটার তিন ভাগ করা হতো। এক ভাগ আমার, আরেক ভাগ আমার আপার। এবং অবশিষ্ট অংশ টা আমার আব্বুর আর আম্মুর। আম্মুকে অনেকেই আম্মু ডাকে, আমার কেনো জানি আম্মু ডাকে শান্তি নেই। আমি ‘মা’ ডাকি। আমার আপাও মা ডাকে। আর আব্বুকে আব্বু ডাকি।
এমনও হয়েছে বাড়িতে গোসত রান্না করা হয়েছে, দেখা গেলো মা আমাকে একটু লবণ চেক করতে দিয়েছে। আর সেই লবণ চেক করতে করতে গোসত সব শেষ করে ফেলতাম।
আমার আপা’কে ও অনেক ভালোবাসতো আমার আব্বু-মা দুজনেই। তবে আপার সাথে আমার কোনোভাবেই বনতো না। সারাদিন মারামারি করতাম।
আমি আবার ছোট বেলায় অনেক দুষ্ট ছিলাম, আপার টাকা চুরি করতাম। শূধু আপার আর মা’র।
এই দুজন আমার জন্যে বালিশের ভিতর, কৌটার ভিতর, ট্রাংকের ভিতর মা’র তেজপাতা কিংবা মশলার কৌটায় আপার বইয়ের ভিতর ইত্যাদি বিভিন্য জায়গায় টাকা গুলো লুকিয়ে রাখতো।
আমিও আবার ছিলাম খুবই চালাক, একেবারে এক ঘন্টার মধ্যে সব জায়গা তল্লাশি করে ঠিকই খুজে বের করতাম। এবং মা হয়তো বকাবাজি করতো, আর আপা কান্নাকাটি করতো। হয়তো আপা দুইএকটা থাপ্পড়ও দিতো। আমিও পালটা কিল ঘুশি যা ইচ্ছে দিয়ে দিতাম। আমার আপার সাথে মারামারিতে কোনোদিন হারিনি। এমনকি আপার বিয়ের পরেও আপার শশুর বাড়িতে গিয়েও আপার সাথে মারামারি করেছি। আপারে মেরে পালিয়ে আবার বাড়িতে আসতাম। হয়তো ঘন্টাখানেক পর আবার আপার জন্য কান্না করতাম, পরে আবার সাইকেল নিয়ে আপার বাড়িতে গিয়েছি। আপা আবার সব মারামারি ভুলে গিয়ে আমারে ডেকে নিয়ে খাওয়াই দিতো। আমার আপারে আমি অনেক ভালোবাসি। আপা আমার থেকে চার-পাচ বছরের বড় হবে। সালের হিসাব নেই, তবে মা হিসাব করে রেখেছেন আমি যখন হয়েছি তখন আপা মোটামোটি বড়। আমারে কোলে নিয়ে ঘুরতো। সারাদিন আমার সাথে সাথে থকতো। আমি আবার আমার দাদা-দাদির ভালোবাসা পাইনি কখনো।
দাদা সেই কবেই, অন্যত্র বিয়ে করে আলাদা হয়ে গেছে। আর আমার দাদির তখন তিন ছেলে আর এক মেয়ে নিয়ে সংসার। যাইহোক সেগুলা বাদ, আমি আমার দাদা-দাদির ভালোবাসা টা পাইনি। তবে নানার বাড়ির ভালোবাসা, আলহামদুলিল্লাহ পুষিয়ে নেবার মত।
ছোট বেলা থেকেই আমি সামান্য মেধাবী ছিলাম, তবে লেখাপড়ার দিক দিয়ে হয়তো পিছিয়ে ছিলাম।
ও বলতে ভুলে গেছিলাম, আমার পড়ালেখার দৌড় মাত্র ক্লাস সেভেন।
এইটে পরিক্ষা দেয়া হয়নাই। তো, আমি স্বাভাবিক ভাবেই উচা লম্বা ছিলাম। যেখানে আমার সমবয়সীরা তেমন উচা লম্বা ছিলো না। অর্থাৎ আমারে দেখলে মনে হত আমার বয়স বর্তমানে যেমন হয়তো তার থেকেও চার-পাচ বছরের বেশি।
আমি যেদিন প্রথমদিন ব্রাক স্কুলে ভর্তি হতে গেলাম। আমার সমবয়সী এবং অল্পকিছুদিনের বড়সহ যারা আমার দুক এক বছরের বড় তাদেরও ভর্তি করানো হলো।
আর আমার উচ্চতা দেখে ম্যাডাম, কাগজ পত্র না দেখেই রিজেক্ট করে দিলো ।
আমি অনেক কান্না করেছিলাম, কারণ ব্রাক স্কুলে ভর্তি হওয়া টা আমার কাছে স্বপ্ন ছিলো। কারণ সেই স্কুলে অনেক আনন্দ হতো, সবাই মিলে ছড়া গান কবিতা ইত্যাদি বলতো….
আমারে রিজেক্ট করার পর, হতাশা নিয়ে বাড়িতে গেলাম কান্না করতে করতে। মা’কে সব বলার পর মা আমার টীকার কার্ড দলিল হিসেবে নিয়ে গেলো আমারে সহ।
এবং ফাইনালি ভর্তিতে সুযোগ হয়ে গেলো।
এখানে একটা পয়েন্ট আমার উচ্চতা আর গ্রোথ। এই গ্রোথের কারণেই আমারে তারা অনেক বড় ভেবেছিলো।
আমরা কয়েক জন বন্ধু মিলে ঘুরতে গেছিলাম, তাদের মধ্যে আমি ছিলাম সবচেয়ে ছোট। না গতরে নয়, বয়সে।
একটা ঝামেলায় সবাই আমাকেই দায়ি করলো, কারণ হিসেবে বললো আমি তো ওদের বড়। আমি বড় হয়ে কিভাবে এই কাজটা করলাম, ওরা না হয় ছোট মানুষ ভুল করেছে। বাট আমি তো আর ভুল করতে পারিনা। এখানেও কিন্ত গ্রোথ পয়েন্ট হিসেবে রাখতে হবে।
আবার কোনো একদিন আমার এক ক্লাসমেট আমারে ইচ্ছেমত তুচ্ছ একটা বিষয় নিয়ে অনেক মেরেছে। সেও আমার বয়সে বড় ছিলো, গতরে ছোট। ও হ্যা বলা হয়নি, আমি মারামারি করতে পারিনা কারো সাথেই। জিবনে আমার আপার সাথে মারামারি ছাড়া অন্যত্র মারামারি করিনি। ছোটবেলায় বন্ধুদের সাথে তর্কে জড়ালে মাইর খেতাম। আর পালটা ছ্যাপ (থুতুথুতু) দিয়ে বাসায় আসতাম।
খুব মাইর খেলে কামড় লাগিয়ে আসতাম। এই হচ্ছে আমার মারামারির অবস্থা।
যাইহোক, ক্লাসমেটের সাথেও মারামারিতে পারিনি। মাইর খেয়ে স্কুলে স্যারদের কাছে বিচার দিলাম। নাম বলছি না, অমুক স্যার উলটা আমারে আরো মারলো। বিশ্বাসই করলো না যে আমি মারি নি, উলটা মাইর খেয়েছি। কারণ হিসেবে আমি নাকি ওর থেকে বড়, আর ও আমার ছোট! ও ছোট হয়ে মারছে, আর আমি বড় হয়ে মারিনি। এটা স্যারের কিছুতেই বিশ্বাস হয়না।
তখন আমার বয়স ১৫ কি ১৬!
একটা এলাকায় গিয়েছিলাম, কিছুদিন কাজ করার জন্য। তো সেখানে একজনের সাথে আমার নিবির বন্ধুত্ব সম্পর্ক তৈরি হলো। তার বয়স ছিলো ২২ বছর।
সে আমারে তার সমবয়সী ভাবতে শুরু করলো। একজন সময়বসী হিসেবে যা যা বলা দরকার সে আমারে সেগুলোই বলতো।
তো একদিন বয়সের প্রসঙ্গে আমি আমার সত্যিকারের বয়সটা বলে ফেললাম, আর সে অবিশ্বাস করে বন্ধুত্বের সম্পর্ক নষ্ট করে দিলো। কারণ হিসেবে আমি মিথ্যাবাদী, নিজের বয়স লুকাই। আর মিথ্যাবাদীর সাথে বন্ধুত্ব করতে নেই।
এখানেও কিন্ত গ্রোথ।
যাইহোক, সিনিয়র একটা মেয়ে আমার বয়স তখন ১৭ বছর হবে হয়তো। আমারে প্রেমের প্রস্তাব দিলো। খোজ খবর নিয়ে জানলাম তার বয়স ১৯ বছর। মানে দুবছরের বড় আমার। এইহলো অবস্থা।
ফাইনালি বিয়ে করলাম তখন আমার বয়স ছিলো ১৭ বছর ৬ মাস ২৭ দিন।
অথচ অনেকেই ভাবতো আমার বয়স মনে হয় ২২-২৩ হবে হয়তো।
শশুর বাড়ির কেও একজন একদিন গল্পে গল্পে জিজ্ঞেস করলো ‘জামাই, ৮৮ এর বন্যার কথা মনে আছে?’
হাই আল্লাহ, আমি অবাক হয়ে গেলাম কিসের মধ্যে কি।
৮৮ এর বন্যার কথা আমার কি, আমার মা’র ও ভাল করে মনে আছে কিনা কে জানে!
আমি কিছুই বলিনি, কারণ আমি যদি বলতাম ৮৮ কেনো ৯৮ এর বন্যাতেও আমার জন্ম হয়নি সেও হয়তো আকাশ থেকে পরতো।
একটা বিষয় খেয়াল করেছিলাম। যাদের গ্রোথ ভাল, তাদের শরীরের অন্য অংশ গুলোও স্বাভাবিক ভাবেই বৃদ্ধি পেতে থাকে।
এই যেমন, দাড়ি মোছ ইত্যাদি।
দাড়ি মোছ ঘন ঘন ক্লিন সেইভ করতাম। আর ফলাফল হিসেবে খুব দ্রুত সেগুলোর বিস্তার লাভ করলো।
যাইহোক বিয়ের ২ বছর ৭ মাস পরে, অর্থাৎ ২০ বছর ১ মাস ২৭ দিন বয়সেই পিতার ভুমিকা পেলাম। দূর্ভাগ্য বসত, জীবনের অর্ধাঙ্গীনি কন্যা সন্তান জন্ম দিয়েই জান্নাতের উদ্দ্যেশে চলে যান।
রেখে যান আমার কলিজার টুকরা মেয়ে ‘তাসফিয়া জান্নাত’কে।
যাইহোক, জান্নাত দুনিয়ায় আসার আগেই জান্নাতের মা বলেছিলো দাড়িতে নাকি আমায় অনেক ভালো মানায়।
ব্যাস, আর ক্লিন সেইভ করা হলো না।
আজ আমার বয়স ২৩ বছর ৪ মাস ৩ দিন।
তো আজ আবার এক ঘটনা ঘটেছে।
আমার ছোট বউ আর আমি ভাড়া বাসায় থাকি।
সেও আবার আমার থেকেও অনেক ছোট। ১৭ বছর বয়স।
যাইহোক আজ সকালে হঠাত চিৎকার শুনে জিজ্ঞেস করলাম, কি হয়েছে?
পরে বললো বাসার’ই এক মহিলার সাথে ঝগড়া লেগেছে। কারণ হিসেবে জানতে পারলাম, রাজিয়া (আমার স্ত্রী) তাকে নাকি আন্টি ডেকেছে। আর এটাতে ওনার অনেক রাগ। ওনার বয়স আনুমানিক ২৮-৩০ হবে। রাজিয়া আন্টি ডেকেছে বলে, উনি নানা কথা তো শুনিয়েছেই এবং আমাকে নিয়েও অনেক কথা বলেছে।
বলেছেন যে, তোমার স্বামীর থেকেও আমার স্বামীর (ওনার) বয়স অনেক কম। আমি নাকি ওনার স্বামীর থেকেও ৩-৪ বছরের বড় হব। আমি আর ওনার স্বামী এক জায়গায় দাড়ালে নাকি অনেক পার্থক্য দেখায়।
যাইহোক, হাসি পাচ্ছিলো অনেক আমার এই গ্রোথ এর জন্য। একটা বিষয় নোটিশ করলাম, আসলে গ্রোথ ব্যপার না। ব্যপার হচ্ছে আমার মুখ ভর্তি চাপ দাড়ি। এই দাড়ির কারণেী মূলত বয়স বেশি মনে হতে পারে। সেই সাথে আবার মাথার চুল পড়া। ‘অ্যান্ড্রোজেনেটিক অ্যালোপেসিয়া’ নামক এক ধরনের রোগ। যেই রোগের কারণে ছেলেদের মাথার টাক পড়ার মত হয়ে যায়। আর এই সমস্যার কারণে আজ আমি ২৩ বছরের বুড়ো হয়েগেছি।
ওহ ভাল কথা এটার অবশ্য ট্রিটমেন্ট আছে। হেয়ার লস ঠেকানোর একটা শ্যাম্পু আছে। কিন্ত আমি মনে করি এই জীবনে দুটো বিয়ে করে ফেলেছি। আর চুল বাচিয়েও বা লাভ কি।
যেখানে আর মাত্র কটা দিন পরেই তো চলে যাব সেই জুগে।
একটা ম্যাসেজঃ কাওকে বাহির থেকে দেখে ভিতরের অবস্থাটা আন্দাজ করা বোকামী ছাড়া আর কি বা বলা যায়?
আমারে যদি কেও জিজ্ঞেস করে বয়স কত, তাহলে সহজ সাপ্টা উত্তর দেই জানিনা। তবে মনে হয় ২৬-২৮ এর আশে পাঁশে হবে হয়তো।
কারণ ২৩ বছর বললে কেওই বিশ্বাস করতে চাইবেনা।
মজার একটা কথা মনে পড়ে গেলো, রাজিয়াকে বিয়ে করার আগে রাজিয়ার মা আমাকে ফোনে দেখে বলেছিলো আমার বয়স নাকি ২৬-২৭ হবে।
তখন ছিলো ২০ বছর।
আবার এখন কাছের একজন বললো, সে নাকি ছবি দেখে আন্দাজ করেছিলো ৩০-৩২ বছর।
এবং সরাসরি দেখার পর মনে হলো ২৫-২৬ বছর। আর আসল বয়স টা শুনেতো হেসেই খুন।
জানিনা বিশ্বাস কতটুকু করেছে।
তবে আমি আমার গ্রোথ নিয়ে সুখি দুঃখি কোনোটাই না, কারণ এই গ্রোথ আমার খুব একটা কাজে লাগেনি।
হয়তো পড়ালেখা করলে কাজে লাগতো।
-বিপুল শেখ
০৩-০৬-২০২৫
©somewhere in net ltd.