![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার আজও ‘শান্তি নেই মনে’।
বাংলাদেশের বিভিন্য জাগায় জাগায় দুর্নিতী, অনিয়ম আর হয়রানীর দৃশ্য দেখে দেখেও শান্তি হাড়িয়ে ফেলেছি। বলছিলাম, আমাদের সোনার বাংলাদেশের কথা। সোনার দেশের মানুষদের কিছু কর্মকান্ডের কথা।
আসসালামু আলাইকুম, আমি বিপুল শেখ। অতিব নগণ্য একজন মানুষ। বাংলাদেশের একজন জনগন, একজন নাগরিক, একজন সচেতন ব্যক্তিত্য। জীবিকার তাগিদে গাজিপুরে থাকি। বাড়ি গাইবান্ধা জেলায় হওয়ায় উত্তর বঙ্গের মোটামুটি সব ধরনের গাড়ীর নামই প্রায় মুখস্ত।
প্রায় সব গাড়িতেই উঠেছি। একটা সময় খেয়াল করলাম, সাধারণত অন্য মাসের থেকে ঈদের মৌসুমে গাড়ি ভাড়া দ্বিগুন থেকে তিন গুন, চার গুন পর্যন্ত বেড়ে যায়। বাংলাদেশের নাম করা কিছু গাড়ির ভাড়া কিছুটা সামান্য পরিমাণে বাড়ানো হয়। পাঁচশত টাকা অন্যমাসে হলে, ঈদের ছুটির আগে পরে আটশত কিংবা সাতশত এর আশে পাশে টিকিট বিক্রি হয়। কিন্ত সিট পাবেন না একটাতেও।
খুব করে যদি টিকিট কাউন্টারে ধরেন, তাহলে দেখবেন সিট ঠিকই মিলবে চোদ্দ কিংবা পনেরশত টাকায়। আচ্ছা বলতে পারেন, পাঁচশত টাকার গাড়ির টিকিটে সাতশত টাকা মানা গেলেও কি চোদ্দশত টাকা মানা যায়? এই কারণেই শান্তি বার বার হারিয়ে ফেলি। আবার দেখবেন, কিছু লোকাল গাড়ি যেগুলা রিজার্ভ জিলা ভিত্তিক চলে সেগুলোও অনেকে রিজার্ভ নিয়ে যায়। হাজার টাকার উপরে টিকিট বিক্রি করে। আমার মনে কিছুতেই শান্তি আসেনা। চেয়ার কোচ গাড়ি গুলো যেখানে সাতশত টাকায় টিকিট বিক্রি করে আসছে, সেখানে নরমাল ভাঙ্গাচুরা গাড়ীর টিকিট হাজার বারোশত।
কিছুই করার নেই, কারো দেখারো নেই, বলারও নেই। শান্তি নেই মনে আমার। এই সময়টাতে চলে রমরমা ব্যবসা, সব জিনিসের দ্বিগুন মূল্য। সিরাজগঞ্জ কিংবা বগুড়া শেরপুর-এ হোটেল বিরতি দেয়া হয়। হোটেল নয়, এটা যেনো কশাই খানা। একশত টাকার তরকারী তিনশত টাকা। বিশ টাকার পানি ত্রিশ টাকা। এইসবে পরে কতশত বার যে শান্তি হারিয়ে ফেলেছি বলার অপেক্ষা নেই। এইতো কুরবানীর ঈদের পর। ফিরছিলাম ঢাকার দিকে। সাথে করে পানির বোতন নেয়া হয়নি। সারে চার ঘন্টা কিংবা পাঁচ ঘন্টার রাস্তা এসেছি সতেরো ঘন্টায়। ধুলো বালু মুখের মধ্যে গিয়ে কেমন যেনো নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিলো। একটু পানি হলে হয়তো নিশ্বাস টা সচল হতো।
রাজিয়াও বার বার বলছিলো পানির জন্য গলা নাকি তার শুকিয়ে একেবারে কাঠ। কিছু ছেলেপেলে কে দেখা গেলো, মাথায় করে পানির বোতল ফেরি করে বেচতে। একজন কে ইশারা করতেই দৌরে এলো। একটা বোতল এগিয়ে দিলো। বোতলের গায়ে মূল্য দেয়া পনের টাকা। বিশ টাকার একটা নোট এগিয়ে দিলাম। নাছোড়বান্দা সে বিশটাকা নিবেনা। তাকে নাকি ত্রিশ টাকা দিতে হবে। অগত্যা যেহেতু পানির খুব দরকার ছিলো তাই না নিয়ে উপায় নেই। পনের টাকার পানির বোতলের জন্য ত্রিশ টাকা দিতে হলো। শান্তি হারিয়ে গেলো তখনো। জানো আমার, শান্তি নেই মনে।
রিক্সা ভাড়া বরাবরই অটোর থেকে একটু বেশী। পা রিক্সা হলে তো আর কথায় নেই। দশ টাকার রিক্সা ভাড়া ত্রিশ টাকা দিতে হয়েছে বেশ কয়েক জাগায়। দুঃখ নেই তবুও। শান্তি হারিয়ে ফেললাম তখনি যখন, বিশ টাকার অটো ভাড়া দেড়শত টকা দিতে বাধ্য হলাম। আচ্ছা আমার মনে কি কখনোই শান্তি ফিরবেনা….?
বাড়িতে যাবার পর, তাসফিয়া জান্নাতের জন্য কিছু ফলমূল কিনতে গিয়েছিলাম। দোকানদার স্বাভাবিক দামের থেকেও কেজি প্রতি ৫০ টাকা বেশি চাইলে, জিজ্ঞেস করলাম- ভাই এতো বেশি দাম চাচ্ছেন কেনো। সে সোজা সাপ্টা উত্তর দিলো, দুদিন আগেও দাম কমই ছিলো আজ ঈদের জন্য দাম বেড়ে গেছে।
বাসস্টপ থেকে আমার বাড়ি পর্যন্ত যেতে ভাড়া লাগে বিশ টাকা। এক অটোতে উঠলাম ভাড়া ঠিক না করেই, বাড়ি পৌছে পঞ্চাশ টাকা ধরিয়ে দিলাম। অর্থাৎ দশ টাকা স্বাভাবিকের চেয়েও বেশি। অটো ওলার উত্তর শুনে ইতিমতো অবাক হয়ে গেলাম। তাকে নাকি একশত টাকা দিতে হবে। ঈদের বাজার বলে কথা। কেমন যানি অনুভব করলাম ‘শান্তি নেই মনে’।
আচ্ছা, আমার শান্তি কি ফিরবে কখনো?
ইতিমধ্যে কিছু লোকের কর্মকান্ড দেখে খুব করে দুঃখ পাই, হাসিও আসে আবার রাগও হয়। বলছিলাম মসজিদের নামে টাকা তোলার কথা। নাম বললে সমস্যায় পড়তে হয় বাস্তবিক জিবনে, তাই নাম না বলেই ঘটনা তুলে ধরছি। আমি চাকুরির সুবাধে গাজিপুরের কোনো এক এলাকায় দীর্ঘ চার বছর ধরে আছি। এখানে নিয়ম করে সকাল, দুপুর, আর সন্ধ্যায় মসজিদের নামে টাকা তোলা হয়। খুবই ইমোশনাল কথায় আপনাকে আটকিয়ে দিবে। আপনি টাকা না দিয়ে পাশ কাটিয়ে গেলে নিজের বিবেক বাধা দিবে। আচ্ছা এতে আমার সমস্যা নেই, তবে মনের মধ্যে খুব করে একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খায়- যেই লোকেরা এই টাকাগুলো তোলার জন্য ৩৬৫ দিন সময় দেয় নিয়ম করে তিন বেলা। তাদের নিজের সংসার কিভাবে চলে। ভেবেও কেনো জানি কুলকিনারা পাইনা। কেনো জানি এইসব ভাবতে ভাবতেই শান্তি হারিয়ে ফেলি।
শান্তি আবারো হারিয়ে ফেলেছিলাম একদিন। খুব প্রিয় একজন মানুষের সাথে রেইল স্টেশনে বসে সময় কাটাচ্ছিলাম। বিভিন্ন্য গল্পে বিভোর। হঠাত করেই একটা ছেলে এসে টাকা চেয়ে বসলো। রেইল স্টেশনের পাশে পথ শিশুরা থাকে। আমার কাছে খুচরো না থাকায় আমার সাথের মানুষটা কিছু টাকা দিয়ে বসলো। ছেলেটা টাকা নিয়ে যাবার পরেই, দ্বিতীয় জন এসে হাত পাতছে। তাকেও দেবার পর, তৃতীয়জন এসে হাজির। এভাবেই পর্যায় ক্রমে…. লজ্জায় সেদিনও অনেকটা শান্তি হারিয়ে ফেললাম। আচ্ছা বলতে পারেন, আমার শান্তি কবে ফিরবে? “আমার না সত্যিই, শান্তি নেই মনে”।
-বিপুল শেখ
১২ই জুলাই ২০২৫
©somewhere in net ltd.