নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি বিপুল শেখ, গাইবান্ধার সাইনদহ থেকে। পেশায় কম্পিউটার অপারেটর। প্রযুক্তি, এক্সেল ও ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি বিষয়ে আগ্রহী। “Tech Bristy” ইউটিউব চ্যানেলের নির্মাতা ও “পদ্ম কাহিনি” গল্পের লেখক।\n\n

বিপুল শেখ

লেখক

বিপুল শেখ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নাহ তবুও, শান্তি নেই মনে।

১৩ ই জুলাই, ২০২৫ সকাল ১০:৫৩


কেনো জানি, কিছুতেই শান্তি পাচ্ছিনা।
‘শান্তি নেই মনে’ গাজিপুরের ব্যস্ত রাস্তা। সময় দুপুর দেড়'টা। লম্বা সিগনাল পড়েছে। চারদিকে গরম আর হর্নের কান ফাটানো শব্দ। সেই ভিড়ে দাঁড়িয়ে আছে একজন লোক, আশিক রহমান।
মাথায় সাদা গামছা, হাতে বাঁধা চারটা দেশি মুরগী। মুখে ক্লান্তি আর চোখে একরাশ আশা। গাইবান্ধার একটা গ্রাম থেকে এসেছে শহরে। মুরগীগুলো বিক্রি করবে। কিন্তু কেউ কিনছে না।
কেউ কেউ ফিরিয়ে দিচ্ছে, আবার কেউ দাম শুনেই পেছনে চলে যাচ্ছে। আশিক রহমান চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। কারো কাছে কিচ্ছু চায় না, মুখটা শুকানো, ঘেমে ঘুমে একাকার। আশিক রহমানের মুখের দিকে তাকিয়ে কেমন জেনো শান্তি হারিয়ে ফেললাম।

সিগনাল ছেড়ে দিয়েছে। এক ট্রাফিক পুলিশ এগিয়ে এসে বলে, “ভাইরে, আমার কাছে টাকা থাকলে চারটা মুরগীই কিনে ফেলতাম। দেশি মুরগীর স্বাদই আলাদা। কতদিন যে খাই না! মনেই পরেনা।”
আবার সিগনাল পড়েগেলো।
এবার একটি সাদা প্রাইভেট কার আশিক রহমানের দিকে এগিয়ে এলো।
ভেতর থেকে হাত বাড়িয়ে দিলো এক ভদ্রলোক, খুবই ভদ্রলোক প্যান্ট শার্ট টাই পড়া। ভদ্রলোকটা আশিক রহমানকে বললো- এই ছেলে... মুরগীগুলা পিছনের ব্যাকডালায় রেখে দে। আশিক রহমান খুব খুশি হইয়ে দৌড়ে গিয়ে মুরগীগুলো ব্যাকডালায় রেখে দেয়।
কিন্তু টাকা দেয়ার আগেই গাড়ি স্টার্ট নেয়। গাড়ি সামনের দিকে চলে যায় দ্রুত।
আশিক রহমান দৌড়ায় পেছনে পেছনে।
গাড়ি থামেনি। মানুষ গাড়ির সাথে দৌড়ে কখনোই পারে না।
রাস্তার মাঝখানে পড়ে যায় আশিক রহমান। মাথা ফেটে রক্ত গড়াতে থাকে।
ফুটপাতের পাশে এক চায়ের দোকানে এসে বসে পড়ে।
চায়ের দোকানদার অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “নতুন শহরে আসছো?”
আশিক রহমান কিছু বলে না।
চোখের পানি আর কপাল দিয়ে রক্ত মিলে যায় একসাথে। ঘটনাটা দেখতে দেখতেই অনেকটা উপলোব্ধি করতে পারলাম। আমার ‘শান্তি নেই মনে’। আচ্ছা, আমার শান্তি কি আদৌ কখনো ফিরবে?

বহুদিন আগেও শান্তি হারিয়ে ফেলেছিলাম, অন্য এক আশিক রহমানের জীবনী দেখে। স্কুলের দারোয়ান আশিক রহমান। বয়স ২৫। বিয়ে করেছেন খুব কম বয়সেই। বড় মেয়ের বয়স পাঁচ, ছোট মেয়ের তিন বছর। আশিক রহমান ঘন্টা বাজায় স্কুলে। তারপর বাজারে যায় হেড স্যারের কথা মত। বাজারে গীয়ে বাজার করে সেটা আবার হেডস্যারের বাড়িতে পৌছাতে হয়। এটা তার দৈন্দিন রুটিন। আজ তার কপাল খারাপ। রাস্তা পার হতে গিয়ে একটি অটো তাকে ধাক্কা দেয়। খুব বেশি স্পিড থাকায় অটো থামতে পারেনি। আশিক রহমান পড়ে যায়।
মাথা ফেটে রক্ত বের হয়। রাস্তার মাঝখানে পড়ে থাকা মানুষটাকে আর কেউ আশিক রহমান বলে ডাকে না। সে মাড়া গেছে। অটো ধাক্কা দিয়ে তার প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।

এলাকার লোকজন অটোচালককে ধরে ফেললো। কেউ কেউ বলে পুলিশে দাও, কেউ কেও বলে মারো।
সে সময় এক মসজিদের ইমাম এসে বলেন, “কেনো শাস্তি দিবেন অটোচালককে? মৃত্যু তো আল্লাহর হুকুমে হয়েছে। আশিক রহমানের কপালে এমন মৃত্যু ছিলো বলেই হয়েছে।”
আশিক রহমানের লাশ, রাস্তা, রক্ত... সব চাপা পড়ে যায় ধর্মের নামে গড়া বাণীতে। আমি নিরুপায় সবটা ভালো ভাবে দেখছিলাম, আর বুঝলাম তখনো কারো কারো ‘শান্তি নেই মনে’

কয়েকদিন পরের কথা। আশিক রহমানের ঘরে এখন অভাব। বাচ্চাদের খাবার নেই, টাকাও নেই। তার স্ত্রী হেড স্যারের কাছে গিয়ে মিনতি করে বললো- “স্যার, আমার স্বামী স্কুলের দারোয়ান ছিলেন। আমাদের সংসার আর চলছে না। বাচ্চাদের নিয়ে আমিও কদিন আধপেটে খেয়ে থাকছি। আমার স্বামীর চাকরীটা আমাকে দিন।”
হেড স্যার আশিক রহমানের স্ত্রীর কথা শুনে খুবই রেগে গেলেন। তার চেয়েও বেশি রেগে গেলেন ধর্ম শিক্ষক। আশিক রহমানের স্ত্রী কান্না করতে করতে বাড়ি ফিরে আসে। কেনো জানি শান্তি কিছুতেই খুজে পাচ্ছিলাম না।

দিন যায়, খাবার ফুরিয়ে আসে। সে এক বাসায় কাজ চাইতে যায়। বাড়ির মেমসাহেব বললো- “নতুন বুয়া রাখবো না। তোমাদের মত মেয়েরা কাজ করতে আসে না, চুরি করতে আসে।”
আশিক রহমানের স্ত্রী কাঁদতে কাঁদতে বলে “আমি চোর নই মেমসাহেব। আমি কাজ করতে চাই। আমার স্বামী দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। ঘরে খাবার নেই। বাচ্চারা না খেয়ে কাঁদে।” মেমসাহেব মুখ ঘুরিয়ে বলেন “ভালো মানুষি কোরো না। আমি মানুষ চিনি।”
এইসবটা দূর থেকে খেয়াল করে বুঝলাম, আমার কিছুতেই ‘শান্তি নেই মনে’।

-বিপুল শেখ
১৩ই জুলাই ২০২৫
(শান্তি নেই মনে-পর্ব ৩)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.