নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি বিপুল শেখ, গাইবান্ধার সাইনদহ থেকে। পেশায় কম্পিউটার অপারেটর। প্রযুক্তি, এক্সেল ও ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি বিষয়ে আগ্রহী। “Tech Bristy” ইউটিউব চ্যানেলের নির্মাতা ও “পদ্ম কাহিনি” গল্পের লেখক।\n\n

বিপুল শেখ

লেখক

বিপুল শেখ › বিস্তারিত পোস্টঃ

দেশের আগাছা গুলোরে জরিমানা করতাম

২২ শে জুলাই, ২০২৫ সকাল ১১:০৯



মনটা ভালো নেই। বেশ কিছুদিন ধরেই শান্তি খুজে পাচ্ছিনা। হঠাৎ আশিকের সাথে দেখা, আশিক আমারই প্রতিচ্ছবি। আশিক ছেলেটা মন্দ নয়। সাদাসিধে, কম কথার মানুষ, নিজেকে অগোছালো রাখতেই পছন্দ তার। আমার সব চেয়ে কাছের মানুষটা হলো আশিক, দিন রাতের ২৪ঘণ্টার এক সেকেন্ডও সে আমার থেকে আলাদা থাকেনা। আশিক সেদিন তার প্রিয় মানুষটাকে নিয়ে বাহিরে একটু হাওয়া বদল করতে বেরোলো। ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি পরছে, আকাশে খুব চমৎকার একটা মেঘ। দিনটা খুবই সুন্দর। প্রিয় মানুষটাকে নিয়ে আশিক হাটা ধরলো অচেনা কিছু রাস্তার দিকে। হাটতে হাটতে কেমন যেনো, খুদা পেয়ে গেলো দুজনেরই। আশে পাশে তেমন ভালো খাবার হোটেল চোখে পড়েনা। দুজনে স্টেশনের দিকে মুখ করে সামনে এগোতে এগোতে একটা খাবার হোটেল চোখে পড়লে অনেক খুশি হয়ে যায়। যাইহোক ওয়েটার খাবার পরিবেশন করার পর- আশিকের দিকে মুখ ফিরে খুব বাজে ভাবে বললো “আপনাদের রুম লাগলে বলেন।” আশিকের তখন মাথা গরম হয়ে গেলো। খুব কড়া করে প্রতিবাদ করতেও গিয়েও সাহসের ভয়ে পারলো না। কথাটা শোনার পরই আমার মাথা কেমন যেনো হ্যাং হয়ে গেলো। খুব করে বুঝলাম ‘শান্তি নেই মনে’ একটা সচেতন গণতান্ত্রিক দেশে এভাবে কাওকে বলা মানেই এটা নির্যাতন করা। আশিকের তখন তার প্রিয় মানুষটার কাছে খুবই অসহায় লাগছিলো। লজ্জায়, ভয়ে, প্রতিবাদ করতে না পারায়… আমি যদি দেশের রাজা হতাম, তাহলে সর্বপ্রথম ওইসব লোকদের ধরে ধরে জেল-হাজতে ভরতাম।

কি করে শান্তি ফিরে পাব বলেন? বন্ধুদের সাথে ঘুরতে গেলাম বাংলাদেশের এক জাতীয় উদ্যানে। তিন বন্ধু বনের মদ্যে হাটছি আর আমি ভিডিও করছি। আচামকায় কয়েকটা বানর দৌড়ে এলো আমাদের দিকে। নিরুপায় হাতে থাকা বাদাম গুলো দিয়ে সেই যাত্রায় তাদের শান্ত করা গেলেও, শান্ত করা যায়নি ছিন্তাইকারীদের। নানার মৃত্যুর পরের দিনই ঢাকার উদ্দ্যেশে রওনা করতে হলো। ভোগরা বাইপাস গাজীপুর নামক এক এলাকায় এসে খুব জ্যামে পরে গেলাম। ঘড়ির কাটায় তখন রাত ১০ টার মত বাজে। আমি চুপচাপ বসে মোবাইলে চ্যাটিং করছিলাম। আমার পাশেই আমার খালাতো ভাই শহিদ। হটাৎ একটা চিল্লানোর আওয়াজ শুনে জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি কয়েকটা ছেলে হাতে চাকু নিয়ে দৌড়াচ্ছে। পরে বুঝলাম তারা আমাদের বাসেরই এক যাত্রীর হাত থেকে জানালা দিয়ে মোবাইল নিয়ে চম্পট দিচ্ছিলো। খুব করে শান্তি হারিয়ে ফেললাম। বার বার মনে হয় ‘শান্তি নেই মনে’
শান্তি হারিয়ে ফেলছিলাম একটা মেয়ের ঘটনা শুনে, মেয়েটার বাড়ি ছিলো নোয়াখালী। পায়ে কিছু একটা হয়েছে তাই খুড়ে খুড়ে হাটছে। দেখতেও অনেক সুন্দর, যে কেও দেখলে খুব স্বাভাবিক ভাবেই বুঝবে কোনো ভদ্র মেয়ে। মেয়েটারে দেখে কেমন যেনো মনে হলো ভিক্ষা করছে। আমি সেদিন উত্তরা থেকে বুফে খেয়ে ফিরছিলাম। পুরো শরীর ক্লান্ত আর ঘামে একাকার। কৌতুহল নিয়ে কিছুক্ষন দারালাম। বুঝতে চেষ্টা করলাম আসলে মেয়েটা কি করতে চাচ্ছে। বুঝলাম, আসলেই মেয়েটা ভিক্ষা করছে। আমার কাছে আসার আগে নিজেই গিয়ে একটু ব্যস্ত রাস্তা থেকে এক পাশে এনে জিজ্ঞেস করলাম- আপনি ভিক্ষা কেনো করছেন? আর আপনার পায়ে কি সমস্যা? মেয়েটা খুব কষ্ট নিয়ে বললো, তার স্বামী। হ্যাঁ তার স্বামী তাকে এই অবস্থা রেখে পালিয়ে গেছে, তাই ভিক্ষা করতে হচ্ছে। আসলে মেয়েটা প্রেম করে বিয়ে করেছিলো, স্বামীর বাড়ি কুড়িগ্রাম। কোনো দিন জাননি সেখানে। মেয়েটার একটা কঠিন অসুখ ধরাপরে পা কেটে বাদ দিতে হবে, এবং অনেক টাকার দরকার। প্রিয় মানুষ অর্থাৎ তার পাষাণ স্বামী মেয়েটাকে একা রেখেই পালিয়ে যায়। অন্যদিকে মেয়েটার বাবা মা ছোট বেলাতেই মারা গেছেন, বড় হয়েছেন মামা-মামির কাছে। তারাও এই দুঃখের সময়ে মেয়েটাকে অস্বীকার করে। খুব করে শান্তি হারিয়ে ফেললাম মেয়েটার মুখ থেকে ঘটনাটা শুনে। পকেট হাতরে সাত পাচ না ভেবেই একটা নোট বের করে মেয়েটার হাতে দিয়ে দিলাম। মেয়েটা আমার কর্ম অবস্থা শুনে নিতে চাননি। আমি জোড় করে দিয়ে কিছুটা স্বস্থির নিশ্বাস নিলাম।

একদিন আবারো শান্তি হারিয়ে ফেললাম, এক মার্মান্তিক মৃত্যু দেখে। অসুস্থ্য জরুরী রুগীকে নিয়ে সাস্থ্য কমপ্লেক্সে হাজির হলো রুগীর স্বামী। দেখে বুঝাই যায় গরীব মানুষ। আমি অনেকটা দূরে দারিয়ে সব কিছু দেখছিলাম। রুগীর প্রচন্ড পেট ব্যথা হচ্ছিলো বোধহয়। দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকরা ৫হাজার টাকা দাবি করে বসেন, নয়তো তারা চিকিৎসা শুরু করবেন না। নিরুপায় স্বামী ডাক্তারদের কাছে হাত পা ধরেও রাজি করাতে না পেরে রুগীকে নিয়ে বারান্দাতেই বসে কান্নাকাটি করে। তারপরের ঘটনা আর বলতে পারব না। খুব করে বুঝলাম ‘শান্তি নেই মনে’ বুঝতে পারলাম, একটা মানুষের জীবনের মূল্য মাত্র ৫হাজার টাকা। আমি নিরুপায় তাকে শ্বান্তনা দেবার মত ভাষা ছিলো না। চুপচাপ সবটা দেখেও জেনো কিছুই দেখিনি সরে এলাম সেখান থেকে। মাঝে মধ্যেই ভাবতে থাকি, আচ্ছা আমার শান্তি কি ফিরবে না কখনোই?
-বিপুল শেখ
২২ই জুলাই ২০২৫
(শান্তি নেই মনে - পর্ব ৭)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.