![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভরা দুপুর। সূর্যিমামা ঠিক যেন মাথার উপর দাঁড়িয়ে। ঘড়ির কাটায় সাড়ে বারোটার ছুঁইছুঁই। রাজিয়া বাজারে পাঠিয়ে দিলো, তাই বাসা থেকে বের হলাম। এই দুপুর বেলাতে খুব একটা দোকানপাট খোলা থাকবে বলে মনে হয় না। তবুও ঝামেলায় না জড়িয়ে রাজিয়ার কথামতো বের হতেই হলো।
প্রচণ্ড গরমে গলা শুকিয়ে একেবারে কাঠ হয়ে গেছে। হঠাৎ চোখ পড়লো এক বৃদ্ধার দিকে। পরনে ছেঁড়া, সস্তা একটি শাড়ি, যাতে কয়েক জায়গায় তালি দেওয়া। ঠিকমতো হাঁটতেও পারছেন না, গরমে শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। আমি দাঁড়িয়ে দূর থেকে তাকিয়ে দেখছিলাম।
এক ভদ্রলোকের পাশেই গিয়ে দাঁড়ালেন। ভদ্রলোক দেখেও না দেখার ভান করে পাশ কাটিয়ে মাছের বাজারে ঢুকে গেলেন।
আমি চুপচাপ মাছবাজারে গিয়ে দূর থেকে দেখতে লাগলাম।
বৃদ্ধার বয়স প্রায় ৭৫ বছর হবে। চেহারায় দুর্বলতা স্পষ্ট। চামড়াও অনেকটা ঢিলে হয়ে গেছে। এমন মানুষদের দেখলে আমার খুব মায়া লাগে। বৃদ্ধা একটি মাছের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। মাছটা হাতে নিয়ে টিপেটুপে দেখছেন, আবার রেখে দিচ্ছেন। এরপর আবার সেই ভদ্রলোকের পেছনে গিয়ে দাঁড়ালেন। এবারও ভদ্রলোক পাশ কাটিয়ে চলে গেলেন।
বৃদ্ধা আবার মাছের দোকানের কাছে গিয়ে দোকানিকে কিছু একটা জিজ্ঞেস করলেন। দূর থেকে শুনতে পেলাম না। হয়তো দাম জিজ্ঞেস করেছেন। এরপর শাড়ির আঁচল খুলে কিছু পয়সা আর নোট বের করে বারবার গুনতে লাগলেন। আমি যতদূর দেখতে পেলাম, হয়তো ৩০ টাকার মতো ছিল।
দোকানির সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলে বৃদ্ধা চলে গেলেন। আমি আর সেদিকে মনোযোগ দিতে পারলাম না। হঠাৎ করেই বৃদ্ধা কোথায় যেন অদৃশ্য হয়ে গেলেন।
আমি আমার মতো বাজার নিয়ে বাসায় ফিরলাম। রাজিয়ার কিছুটা বকুনি খেতে হলো দেরি করে আসার জন্য। তবে তাতে আমার খারাপ লাগল না। বুঝলাম, “শান্তি নেই মনে” – এর পেছনে অন্য কারণ আছে। শান্তি হারিয়ে ফেললাম বৃদ্ধার কথা ভেবে।
ফ্রিজ থেকে ঠাণ্ডা পানি বের করে শরবত বানিয়ে খেয়ে, রাজিয়াকে বললাম, কাঁচা কলা ভাজি আর মসুর ডালের পাতলা ঝোল রান্না করো, সাথে মাছ ভাজি দিও। এটাই আমার সবচেয়ে পছন্দের খাবার। রংপুরের মানুষ যে কতকিছু খায়, ভাবতেই ভালো লাগে!
তবুও আমি বাসা থেকে আবার বের হয়ে গেলাম। বৃদ্ধার কথা বারবার মনে পড়ছিল। কিছুতেই শান্তি পাচ্ছিলাম না। ভাবলাম বাইরে গিয়ে একটু গাড়ি ঘোড়া দেখি। আজ গার্মেন্টস বন্ধ, তাই বাইরে মানুষের ভিড় একটু বেশি।
আমি চুপচাপ একটা চায়ের দোকানে বসে মোবাইলে পদ্ম কাহিনী লিখছিলাম।
হঠাৎ সেই বৃদ্ধার সঙ্গে আবার দেখা হয়ে গেলো। এবার তিনি আমার কাছে এসে হাত পাতলেন। আমি কিছু না বলে চুপচাপ ১০ টাকার একটা নোট বের করে দিলাম। তখন ঘড়ির কাটায় বাজে প্রায় ৩টা।
বৃদ্ধা সোজা চলে গেলেন সেই মাছের দোকানের দিকে। আমি লেখালেখি বন্ধ করে পেছন পেছন গেলাম। দূর থেকে দেখছিলাম, উনি কী করেন।
দোকানের সামনে গিয়ে আবার টাকা গুনতে শুরু করলেন। আমিও গুনলাম দূর থেকে, মোটামুটি ৬৫ টাকার মতো। সেই সব টাকা দোকানিকে দিয়ে বললেন, ওই মাছটা দিতে।
কিন্তু দোকানি জানালো মাছটা বিক্রি হয়ে গেছে। বৃদ্ধার চোখে তখন লজ্জা আর কষ্টের পানি। টাকা গুলো ফেরত নিয়ে বাজারের ভেতর থেকে বের হয়ে গেলেন।
আমার বুকের ভেতর একরকম যন্ত্রণায় ছেঁয়ে গেল।
আমার নিজেরও টানাপোড়েন সংসার, সীমিত আয়ের মাঝে কোনোমতে চলে। তবুও দোকানে গিয়ে সেই বৃদ্ধা সম্পর্কে দোকানিকে জিজ্ঞেস করলাম।
তিনি বললেন, বৃদ্ধা মাছটার দাম জেনে কিছু না বলেই চুপচাপ চলে গিয়েছিলেন। মাছটার দাম ছিল ৭০ টাকা, আর ওটা বিক্রি হয়েছে উনি চলে যাওয়ার পরপরই।
দুই ঘণ্টা পর এসে তিনি সেই মাছটাই কিনতে চেয়েছেন।
দোকানে দেখলাম সব বড় বড় মাছ। পকেট হাতড়ে বুঝলাম, শুধুমাত্র একটা মাঝারি সাইজের মাছ কেনার মতো টাকা আছে। কিছু না ভেবেই একটা মাছ কিনে ফেললাম।
যেদিকে বৃদ্ধা গিয়েছিলেন, সেই দিকেই দ্রুত হাঁটা শুরু করলাম। অবশেষে পেলাম, একটা দোকানের পাশে বসে ঝিমাচ্ছেন।
আমি কিছু না বলেই চুপচাপ মাছটা ওনার হাতে দিয়ে দ্রুত সরে এলাম। তাঁকে কিছু বলার সুযোগ দিলাম না। আমি জানি, তিনি মনে মনে আল্লাহর কাছে আমার জন্য দোয়া করবেন।
এরকম ঘটনায় আমি বারবার নিজের ভেতরের শান্তি হারিয়ে ফেলি।
মাছটা পেয়ে বৃদ্ধার মনে যে কি পরিমান আনন্দ হচ্ছিলো তা আমি দূর থেকে ওনার মুখের হাসি দেখেই বুঝলাম।
-বিপুল শেখ
২৪ই জুলাই ২০২৫
©somewhere in net ltd.
১|
১২ ই আগস্ট, ২০২৫ সকাল ১১:১৬
সুলাইমান হোসেন বলেছেন: খুবই ভালো লাগলো গল্পটি পড়ে।