![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি অসম্ভব কল্পনাপ্রবণ একজন ছেলে। বিদ্রোহী হতে ভালোবাসি, বিদ্রোহীদের ভালোবাসি। আর দশজনের মত ধরাবাঁধা নিয়ম নীতি থেকে যতদুর সম্ভব দূরে থাকতে ভালোবাসি। প্রচন্ড কৌতুহল আমার মনে। সব কিছু নিয়ে জানবার ইচ্ছা প্রবল। তাই দূর আকাশ নিয়ে রচিত বই থেকে প্রাণের সৃষ্টির রহস্য প্রকৃতি এমনকি পৃথিবীর জাতীসমুহের ইতিহাস সব ধরণের বই খাদক। আর ফেলুদা-মাসুদ রানা পেলে তা না পড়ে অন্য কাজে সময় ব্যয়ের ক্ষমতা আমার নেই। মাঝে মাঝে আমি কল্পনার রাজ্যে পারি দেই, নিজেকে ভাবি বইয়ের কোন চরিত্র। এসব কিছু নিয়েই আমি, বিশ্বের কাছে একজন ছাত্র, যার শখ নিজের যতটুকু ক্ষমতা আছে, তা দিয়ে লিখে সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া।
-আপনি ইতু?
- হ্যাঁ, আমিই ইতু। কখন হল এসব?
- আন্দাজ করা যায় আধা ঘন্টা আগে। যতদুর শুনেছি লোকের মুখে গাড়ির সামনে হঠাৎ করে পড়ায় ব্রেক কষেও লাভ হয় নাই, পিষে গিয়েছে, স্পট ডেড।
ঝাপসা চোখ ইতুর। এই তো মাত্র ক ঘন্টা আগেই কথা হল ছেলেটার সাথে। হাসি হাসি মুখে কথা বলছিল, ইতু ওর বয়ফ্রেন্ডের সাথে পরিচয়ও করিয়ে দিল ছেলেটাকে। আজই আবার ছেলেটার জন্মদিন। ছেলেটা আসিফ, ইতুর ক্লোজেস্ট কেউ একজন,ফ্রেন্ডের চেয়েও বেশি কিছু। একসাথে আসিফ, ইতু আর ইতুর বয়ফ্রেন্ড ক্যাপ্রিকন্স এ বসে ঘন্টা খানেক আড্ডা দিল। এরপর পরই এই ঘটনা। আসিফ আর নেই! ভাবতেই অবাক লাগে ইতুর। আসিফের ফোন থেকে সর্বশেষ করা কল ইতুর নাম্বারে হওয়ায় তাকেই সবার আগে জানিয়েছে পুলিশ।
-এই যে ম্যাডাম, ডেড বডির পাশে এই ডায়েরীটা পাওয়া গিয়েছে। উনার ব্যাগ চেক করার সময় পেয়েছি। চাইলে রাখতে পারেন।
ইতু আসিফের ডায়েরীটা নিল। অনেক চেনা ডায়েরী ইতুর। ক্লাসের অফ পিরিয়ডে সবাই যখন আড্ডায় মশগুল, আসিফ বসে বসে এই ডায়েরীটা লিখত। কতবার ইতু পড়তে চেয়েছে, আসিফ দেয় নি পড়তে। সেই ডায়েরীটা ইতুর হাতে, সে কি আসিফের গোপন ডায়েরীটা পড়বে? ইতু শুনেছিল বেদনার রং নাকি নীল। সে কারণেই ডায়রীটার রং কি নীল?
বাসার বারান্দায় হালকা আলোয় ডায়েরীটা নিয়ে বসেছে ইতু। আসিফের ডেড বডির ছবিটা মাথা থেকে কিছুতের যাচ্ছে না। মনযোগ তাই অন্য দিকে নেওয়ার চেষ্টা করছে সে। ডায়েরীটা অগোছালো ভাবে লিখা, বলাই বাহুল্য অসমাপ্ত ডায়েরী। পৃষ্ঠা ওল্টাতে ওল্টাতে এক যায়গায় থমকে গেল সে। পাতার ওপরে লিখা,"ইতু"
""আজ ছিল ভার্সিটিতে আমাদের নবীন বরণের দিন। এলোমেলো কোঁকড়ানো চুলের একটা মেয়ে একেবারে পাশেই বসেছিল। নাম ইতু, ওর আইডিতে লিখা ছিল। সাধারণভাবে সেঁজেছে, শুধু চোখে একটু বেশি করে কাঁজল দিয়ে। মেয়েটা দেখতে অপরুপা, যে কারোই ভালো লাগবে। জানালা দিয়ে আসা বাতাস বার বার চুল গুলোকে ঠেলে চোখের সামনে নিয়ে যাচ্ছিল আর ইতু সেগুলো কানের পেছনে নেবার ব্যর্থ প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছিল। নবীন বরণে সিনিয়রদের লেকচার শোনার চেয়ে ইতুর চুল নিয়ে বাতাসের সাথে যুদ্ধ আমাকে বেশি টানছিল। ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে দেখছিলাম আমি। মেয়েটার চেহারায় মায়া আছে, স্ট্যান্ডার্ড ভাষায় যাকে বলে কিউট। সেদিন প্রথম বার দেখেই ওর প্রতি একধরণের আসক্তি বোধ করি। যে কোন ধরণের আসক্তিই খারাপ শুনেছিলাম। ইতুর প্রতি আসক্তিও কি এর মাঝেই পড়বে?""
"" ইতু অনেক সিক। জানলাম ওর সাইনাসের সমস্যাটা বেড়ে গিয়েছে। বাইরে অনেক বৃষ্টি হচ্ছিল, অনেক জোরে। কি করলে সাইনাস এর সমস্যা আমারো হবে জানা ছিল না, ছাদে গিয়েছিলাম। গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজেছি প্রায় ঘন্টা খানেক। এরপর সেই বৃষ্টির পানি আমার গায়েই শুকিয়ে গিয়েছে। আর ফলাফল? পুরো গা জ্বরে কাঁপছে ভাইব্রেশন হওয়া মোবাইলের মত। অনেক ভালো ফিল করছি। সম্ভবত আমিই প্রথম ব্যক্তি যে কিনা ১০৪ ডিগ্রি জ্বর নিয়েও ডায়েরী লিখে চলেছি আর অনেক হ্যাপি। আমি হ্যাপি এই কারণে না যে আমি জ্বরের মাঝে ডায়েরী লিখা প্রথম ব্যক্তি। আমি হ্যাপি অনেক, কারণ আমারো ইতুর মতই অনেক কষ্ট হচ্ছে। ওর কষ্ট যেহেতু কমাতে পারছি না, তাই আমি নিজেই ওর মত কষ্ট পেয়ে সমান সমান করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।""
""ইতু আজ জানিয়েছে ওর নাকি বেস্ট ফ্রেন্ড আমি। ঘটনা তেমন কিছুই না, আমি জানি ও পড়াশুনায় তেমন কেয়ার করেনা। তাই ঠিক মত আসাইনমেন্টটাও করবে না। তাই আমি আগে ভাগেই দুইটা রিপোর্ট রেডি করে রেখেছিলাম আজকের ক্লাসের জন্য। একটা ওর একটা আমার। আসলে আমি যা কিছু করি সব কিছুই দুই ভাগ করে নেই। খাবার সময়ও অর্ধেক টা রেখে দিই ওর জন্য, আবার ঘুমানোর সময় বিছানার অর্ধেক অংশ মাঝখানে বালিশ দিয়ে আলাদা করে রাখি। অনুভব করি, ও ওই পাশে ঘুমোচ্ছে। কল্পনা করি আমি, অনেক তৃপ্তি পাই কল্পনা করে! কারণ? কারণ আমি যে ওকে ভালোবেসে ফেলেছি।""
আজ আমার জন্মদিন। আসলে জন্মদিন তবুও "ইতু" শিরোনাম দিয়ে আলাদা করা স্থানে এটি লিখলাম কারণ, এই জন্মদিনটা অনেক স্পেশাল, এই জন্মদিনটা হয়তবা হতে চলেছে 'ইতুময়'। কারণ আমি আজ ওকে বলতে চলেছি, "আমি তোমাকে ভালোবাসি ইতু, অনেক ভালোবাসি! তুমি কি আমার হবে?"
ইতু বলেছে ও আমাকে স্পেশাল কিছু জানাবে, অনেক স্পেশাল আর সিক্রেট! আমি আজ অনেক এক্সাইটেড! ভোর হবে কখন?"
ইতুর সাথে দেখা হয়েছিল। তবে ইতু একা আসে নাই। ওর সাথে ছিল ওর বয়ফ্রেন্ড অর্ক! হ্যাঁ, এটাই ছিল ইতুর সেই গোপন কথা যা সে আমাকে জানাতে চেয়েছিল।
আমি একটা লাল টুকটুকে গোলাপ নিয়ে গিয়েছিলাম ক্যাম্পাসে। ইতুকে দেখে যখন ওটা পেছনের পকেট থেকে বের করব, ঠিক সে সময়ই ওর হাতটা এসে ধরল অর্ক! আমার মায়াপরীকে কেড়ে নিয়ে গেলো। সাথে সম্ভবত হ্যাঁচকা টানে নিয়ে গেলো আমার প্রাণটাও। ইতু যখন এসে বলছিল,"আসিফ, এই যে সেই সিক্রেট! আমার বয়ফ্রেন্ড অর্ক। খুব শিঘ্রয় হয়ত বিয়েটাও সেরে ফেলব" ওর মুখ থেকে মুক্তোর মত হাসি ঝড়ছিল। ফুলটা পেছনের পকেটে রেখেই ইতুর বয়ফ্রেন্ড অর্কের দেওয়া ট্রিট পেতে গিয়েছি সুন্দর করে সাজানো 'ক্যাপ্রিকন্স ' এ। কিন্তু আমার সব কিছু যে এক মুহুর্তেই লন্ডভন্ড হয়ে গেলো?
একা একা বাসায় ফিরছিলাম, রিকশা নিতে ইচ্ছে করছিল না। দেখি এক বাচ্চা মেয়ে ফুল বিক্রি করছে। আমার দাঁড়িয়ে থাকা দেখে জিজ্ঞেস করল,"অ স্যার, ফুল নিবেন?" হাসলাম হালকা। মানিব্যাগটা দিয়ে দিয়েছি পিচ্চিটাকে, লাইফের খারাপ সময়ে ভালো কিছু করার দরকার। সাথে শুকিয়ে আমার মুখের মত অবস্থা হয়ে যাওয়া গোলাপটা দিয়ে বলেছি,"আই লাভ ইউ পিচ্চি! ভালো থেকো!"
বিনিময়ে একটা হাসি দিয়ে সে দৌড় দিয়েছে, হয়ত তার পিতার কাছে, যে কিনা পঙ্গু অবস্থায় পড়ে আছে অথবা তার মার কাছে যে কিনা অন্যের বাসায় কাজ করে খায়। পিচ্চিটা সবাইকে বলে বলে আমার কাহিনী শোনাবে, হয়তবা অনেক কিছু বানিয়েওও বলবে, "জানিস, সেই মানুষটা না, ইয়া বড় আলখাল্লা পরা ছিল,জ্বীনের মত, এক্কেরে!"
আর ভাবতে পারছিনা। "ইতু" এর জন্য দেওয়া স্থানটায় আজিব সব জিনিস লিখছি। আজকের মত এখানেই থাকুক। এখন আমি হাটব,যতদুর মন চায়! শুধু ভাবব আর হাটব।""
চোখ দুটো ভিজে গিয়েছে ইতুর। কি কারণে সে নিজেও জানেনা। আসলেই, মেয়েরা বড়ই রহস্যময়!
©somewhere in net ltd.