![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি অসম্ভব কল্পনাপ্রবণ একজন ছেলে। বিদ্রোহী হতে ভালোবাসি, বিদ্রোহীদের ভালোবাসি। আর দশজনের মত ধরাবাঁধা নিয়ম নীতি থেকে যতদুর সম্ভব দূরে থাকতে ভালোবাসি। প্রচন্ড কৌতুহল আমার মনে। সব কিছু নিয়ে জানবার ইচ্ছা প্রবল। তাই দূর আকাশ নিয়ে রচিত বই থেকে প্রাণের সৃষ্টির রহস্য প্রকৃতি এমনকি পৃথিবীর জাতীসমুহের ইতিহাস সব ধরণের বই খাদক। আর ফেলুদা-মাসুদ রানা পেলে তা না পড়ে অন্য কাজে সময় ব্যয়ের ক্ষমতা আমার নেই। মাঝে মাঝে আমি কল্পনার রাজ্যে পারি দেই, নিজেকে ভাবি বইয়ের কোন চরিত্র। এসব কিছু নিয়েই আমি, বিশ্বের কাছে একজন ছাত্র, যার শখ নিজের যতটুকু ক্ষমতা আছে, তা দিয়ে লিখে সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া।
ফুটবল খেলাটা ইতালিয়ানদের কাছে কি? যদি বলি, এটি তাদের ধর্ম,সত্তা, খুব ভুল হবে কি? যদি ভুল মনে হয় তবে শুনুন-
ইতালির সর্বোচ্চ বিক্রি হওয়া পত্রিকাটির প্রধাণ খবর সহ বেশিরভাগ খবর থাকে ফুটবল সংক্রান্ত। রাজনৈতিক দলের নাম হয় যেখানে কোন এক দলের চ্যান্ট অনুসারে। এমনকি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও কিনা হয়ে যান শীর্ষস্থানীয় এক ক্লাবের মালিক! তো ফুটবল ইতালিয়ানদের প্রতিটি ডিএনএ তে নয় তো কি? ফুটবল ইতালিয়ানদের কাছে, গ্রিক প্রেমের দেবী আফ্রোদিতির মতই মোহনীয়,মোনালিসার রহস্যময় হাসির মতই সুন্দর-মনমুগ্ধকর আবার ঝড়ের মতই চাকচিক্যময়ী অথচ বিধ্বংসী।
বিভিন্ন দেশের ট্রাডিশনাল কিছু স্টাইল থাকে,যেমন ব্রাজিলিয়ানদের জোগো বনিতা, বল নিয়ে ডিফেন্ডারদের চারপাশে তাদের নাচ, স্পেন কিংবা আর্জেন্টিনার ছোট ছোট পাস দিয়ে গেম বিল্ড করা, ইংলিশদের পাস অ্যান্ড মুভ, নেদারল্যান্ডের বিখ্যাত টোটাল ফুটবল। কিন্তু ইতালির ফুটবল স্টাইল কি বলতে পারেন?ইতালির ফুটবল স্টাইল কিছুটা আলাদা,বলতে পারেন একই সাথে স্টাইলিশ এবং চতুরতায় ভরা, অনেক বেশি ট্যাকটিকাল।তাদের খেলার প্রধান দুই উপাদানকে বলা হয় ফ্যান্টাসিয়া এবন ফারবিজিয়া।
প্রথমে আসি ফ্যান্টাসিয়ার কথায়,ফ্যান্টাসিয়া শব্দটি আসলে এসেছে ফ্যান্টাসি শব্দ থেকে। বল নিয়ে অ্যাটাকে যাওয়ার সময় অ্যাটাকারের নিজ মুভমেন্ট দ্বারা প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারের মনে এমন কোন ফ্যান্টাসি জাগানো অর্থাৎ, এর পরে ওই এটাকার কি করতে যাচ্ছে তা সম্পর্কে ধারণা দিয়ে, ঠিক যা করার কথা ছিল তার বিপরীত করে ওই প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারকে বিভ্রান্ত-হতভম্ভ করে দেওয়াই ফ্যান্টাসিয়া।জাদুকরের জাদু দেখানোর সময় ব্যবহার করা ট্রিকের মতই ধাঁধা ময় এটি,একমাত্র যে করবে সেই বুঝবে কি হতে যাচ্ছে।কোন ডিফেন্সকে মুহুর্তেই লন্ডভন্ড করে দিতে পারে একটি পার্ফেক্ট ফ্যান্টাসিয়া মুভমেন্ট।এটি হতে পারে, ব্যাক হিল,ড্যামি মুভ, ক্লান্ত হয়ে যাবার ভান করে খেলা হঠাৎই আক্রমণ কিংবা আরো সব ক্রিয়েটিভ মুভ।
ফ্যান্টাসটিটি অর্থাৎ যারা ফ্যান্টাসিয়া করে,তাদের উদাহরণ দিতে গেলে সবার আগে আসবে রবার্তো বাজ্জিওর নাম,আপনি ইনাকে বলতে পারেন মাস্টার অফ ফ্যান্টাসিয়া।যখনই আক্রমনে যেতেন,সবসময় যেন তিনি একাধিক ড্যামি মুভমেন্টের জন্য রেডি থাকতেন। ইউটিউবের সাহায্য নিলে দেখতে পাবেন,কিভাবে তিনি তার সেকেন্ড ট্রিক গুলো বাস্তবায়ন করেন। এছাড়াও আগেকার আর কজন বিখ্যাত ফ্যান্টাসটিটি হলেন, মিয়াজ্জা, ম্যানচিনি,মাজ্জোলা,রিভেইরা। আবার লিজেন্ড ডেল পিয়েরো কিংবা টট্টি, আন্তোনিও কাসানো,হালের জিওভিনকো কিংবা বুড়ো বয়সেও সেরা ফর্মে খেলতে থাকা পিরলো এদের মুভমেন্টও ফ্যান্টাসিয়ার উদাহরণ।
ধরুন আপনি খুব ভালো নাচ পারেন।কিন্তু আপনাকে যদি কাঁদার মাঝে নাচতে দেওয়া হয় তবে কি পারবেন নাচতে? ইতালিয়ান লীগের দলগুলোর ডিফেন্স কাদার মত। এজন্যই স্বভাবতই গোল কম হয় সেখানে।কিন্তু ওই ডিফেন্স ভেদ করতে আপনার দরকার হবে বিভ্রান্ত করা সব মুভ অর্থাৎ ফ্যান্টাসিয়া, কিংবা অসাধারণ ড্রিবলিং/ট্রিক যেমনটা ম্যারাডোনা,জিদান কিংবা রোনালদো করতেন অথবা খুবই গোছানো দলবদ্ধভাবে খেলা।কিন্তু স্পানিশ কিংবা ল্যাতিন জন্মাগত টেকনিক ইতালিয়ানদের মাঝে নেই, আবার জার্মানদের মত যান্ত্রিক ফুটবলও তারা পারেনা। তাই তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ট্যাকটিস ব্যবহার করেছে,প্রতিপক্ষকে বিভ্রান্ত করে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে।
হালের অনেক ট্যাকটিসেই ইতালির অবদান, স্পালেত্তির ৪-২-৩-১ বর্তমানে কতটা বিখ্যাত তা সবাই জানেন। কার্লো আঞ্চেলোত্তি মাদ্রিদকে আবারও ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন বানালো, কিংবা সাচ্চির সেই মিলানের কথা তো সবাই জানেন। এছাড়াও ক্যাপেলো, লিপ্পির মত অসাধারণ ট্যাকটিশিয়ান ইতালি ফুটবলকে দিয়েছে।
ফ্যান্টাসিয়ার ক্ষেত্রে ফরোয়ার্ড লাইনকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়,একজন খেলা নিচ থেকে বিল্ড করে,একজন ‘সেকোন্দা পুন্তা’ সেকেন্ড স্ট্রাইকার হিসেবে খেলে অনেকটা, এসিস্ট, চান্স ক্রিয়েট করার পাশাপাশি গোলও করে এবং আরেকজন হয় প্রধাণ স্ট্রাইকার ‘প্রিমা পুন্তা’। উদাহরণ, জুভেন্টাসের সেই বাজ্জিও, ভিয়ালি, ডেল পিয়েরো জুটি, রোমার টট্টি, মোন্তেলা আর কাসানো, এসি মিলানের কাকা, ক্রেসপো, শেভচেঙ্কো। পাশাপাশি সব সময়ই ফ্যান্টাসিয়া স্টাইলে একজন পিভোট থাকেন।
ফ্যান্টাসিয়ার পাশাপাশি ইতালিয়ানদের আরেক কৌশল ফারবিজিয়া অর্থাৎ চতুরতা। ইতালিয়ানরা প্রায় সময়ই মাইন্ড গেম খেলে মাঠে। যার উদাহরণ হিসেবে ২০০৬ বিশ্বকাপে মাতারাজ্জির কথা বলা যায়। জিদানকে উস্কানিমুলক কথা বলে, মনে আগুন উস্কে দেয়,যাতে জিদান ফাউল করে কিংবা আঘাত করে। মাতারাজ্জি সফল হয়েছিল, জিদান তার বুকে ঢুস দেয় এবং লাল কার্ড পায়।ইতালির সেই ২০০৬ ফাইনালে জেতার পেছনে অন্যতম কারন ছিল এটি। এটিকে আদর্শ ফারবিজিয়ার উদাহরণ বলা যায়।
আরেকটি উদাহরণ, ২০০৬ বিশ্বকাপের সেমি ফাইনালে জার্মানির বালাক ফাউল করেন গাত্তুসোকে। অতঃপর মারামারি করবেন এমন ভাব নিয়ে উঠলেও রেফারির দৃষ্টি পড়াতে বালাককে জড়িয়ে ধরেন গাত্তুসো। স্পোর্টসম্যানশিপের কারণে বালাকও প্রত্যাখ্যান করতে পারেন নি। কিন্তু পরবর্তিতে দেখা যায়, গাত্তুসো সেখান থেকে যাবার সময় বালাকের চুল ধরে বেশ জোড়ে টান দেয়,বালাকও এতে প্রচন্ড রেগে যায়। খেলার সময়ও তার রাগ ধরা পরে,নিজেদের মাটিতে সেমিফাইনালে হেরে যায় জার্মানরা।
এছাড়াও কারণে অকারনে রাগারাগি,গালি দেওয়া কিংবা অন্য দলের প্লেয়ারকে কার্ড দিতে রেফারিকে উস্কে দেওয়া এগুলোও ফারবিজিয়া। এখন অনেক দল-অনেক প্লেয়ারকেই এসব করতে দেখা যায়, কিন্তু এটি মুলত প্রবর্তন করেন ইতালিয়ানরা। একজন খেলোয়ারকে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ করে কিংবা রাগিয়ে, তার সাথে মাইন্ড গেম খেললে এর প্রভাব অবশ্যই সেই খেলোয়াড়ের পার্ফরমেন্স এর উপর পরে। এই ফারবিজিয়া অনেকটা অপরিচ্ছন্ন, নিন্দনীয় হলেও এটি তাদের একধরণের ট্যাকটিস,বিভিন্ন ক্ষেত্রে জয়ের সময় এর যথেষ্ট অবদান আছে। আর ফুটবলে জয়টাই দিন শেষে বেশিরভাগ মানুষ দেখে।
©somewhere in net ltd.