নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি অসম্ভব কল্পনাপ্রবণ একজন ছেলে। বিদ্রোহী হতে ভালোবাসি, বিদ্রোহীদের ভালোবাসি। আর দশজনের মত ধরাবাঁধা নিয়ম নীতি থেকে যতদুর সম্ভব দূরে থাকতে ভালোবাসি। প্রচন্ড কৌতুহল আমার মনে। সব কিছু নিয়ে জানবার ইচ্ছা প্রবল। তাই দূর আকাশ নিয়ে রচিত বই থেকে প্রাণের সৃষ্টি

কামিল আল আশিক

আমি অসম্ভব কল্পনাপ্রবণ একজন ছেলে। বিদ্রোহী হতে ভালোবাসি, বিদ্রোহীদের ভালোবাসি। আর দশজনের মত ধরাবাঁধা নিয়ম নীতি থেকে যতদুর সম্ভব দূরে থাকতে ভালোবাসি। প্রচন্ড কৌতুহল আমার মনে। সব কিছু নিয়ে জানবার ইচ্ছা প্রবল। তাই দূর আকাশ নিয়ে রচিত বই থেকে প্রাণের সৃষ্টির রহস্য প্রকৃতি এমনকি পৃথিবীর জাতীসমুহের ইতিহাস সব ধরণের বই খাদক। আর ফেলুদা-মাসুদ রানা পেলে তা না পড়ে অন্য কাজে সময় ব্যয়ের ক্ষমতা আমার নেই। মাঝে মাঝে আমি কল্পনার রাজ্যে পারি দেই, নিজেকে ভাবি বইয়ের কোন চরিত্র। এসব কিছু নিয়েই আমি, বিশ্বের কাছে একজন ছাত্র, যার শখ নিজের যতটুকু ক্ষমতা আছে, তা দিয়ে লিখে সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া।

কামিল আল আশিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাগুরা থেকে মাউন্ট এভারেস্ট!

০৯ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:০০

"বুুঝলে দাদুভাই, তুমি যখন বড় হবে, তখন এমন পর্যায়ে পৌঁছাবে যে সারা বিশ্বের প্রত্যেকেই তোমার সম্পর্কে জানবে। যখন তুমি আমাদের এখানে আসবে তখন মানুষ দাঁড়িয়ে করতালির মাধ্যমে তোমাকে বরণ করে নিবে!"

নিজ আদরের নাতী ফয়সালকে কথাটি প্রায় বলতেন তার দাদু। ফয়সাল বড় হয়ে তার দাদুর সেই কথাটিকে সত্যই প্রমাণ করেছে। এখন আর ফয়সাল একা একা স্বাধীন ভাবে রাস্তায় বেরুতে পারেনা। লোকে তার পেছনে যখন-তখন অটোগ্রাফ-ফটোগ্রাফের জন্য ছোটে! নিজ এলাকায় যখন ফয়সাল আসেন তখন মানুষ দাঁড়িয়ে করতালির মাধ্যমে তাকে সাদর অভ্যর্থনা জানায়, তাকে এক নজর দেখতে রাস্তায় ভিড় করে। এখনকার তরুণ ছেলেরা ফয়সালকে আদর্শ মানে, হয়তবা ফয়সালের দাদু যা ভেবেছিলেন তার চেয়ে কম নয় বরং অনেক বেশি কিছুই পেয়েছেন ফয়সাল। কারণ তিনি এখন এমন এক উচ্চতায় নিজ যোগ্যতায় গিয়ে পৌঁছেছেন যেখান থেকে চাইলেই আকাশ ছোঁয়া যায়। সরকারী ব্যাংক কর্মকর্তার ছেলে ফয়সাল, সবাই ভেবেছিল এই ছেলে বড় হয়ে বাবারই মতো কোন ভালো সরকারী চাকুরী করবে। নইলে আরো বড় কিছুই হবে, ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার কত কি হওয়ার আছে!

কিন্তু ক্লাসে বরাবরই যে ছেলে কখনো তৃতীয় হয়নি অর্থাৎ হয় প্রথম নয় দ্বিতীয় হয়েছেন সেই ছেলের খেলাধুলার প্রতি এতো আগ্রহ দেখে পরিবারের সবাই হয়ত খানিকটা ভ্রু কুঁচকেছিলেন। আর সে খেলাটা যদি ক্রিকেট না হয়ে ফুটবল হতো তবুও না হয় মেনে নেওয়া যেত। কারণ ফয়সালের বাবাও খেলেছেন খুলনার হয়ে। আবার তার চাচাতো ভাই উজ্জ্বল খেলেছেন জাতীয় দলে। কিন্তু ফয়সাল যে পাগল ক্রিকেট নিয়ে! কি একটা তক্তা নিয়ে গোল ছোট ফুটবলের মত জিনিসকে পিটাতে হয়। ফয়সালের বাবা মাশরুর রেজা তাই করলেন কি, একদিন রাগ করে কেড়ে নিলেন ছেলের ব্যাট-বল,”আজ থেকে আর কোন ক্রিকেট খেলা নাই তোমার।”

একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলেন ফয়সালের মা শিরিন আখতার। ছেলের প্রতি তার ছিল অগাধ বিশ্বাস, জানতেন একদিন ফয়সাল বিশ্বসেরা হবেনই। আর এজন্যই বাবা ব্যাট কেটে ফেলার পরও তিনি ছেলেকে উৎসাহ দিয়ে গিয়েছেন আর ফয়সালও চালিয়ে গেছে ক্রিকেট খেলা। না হলে কি আমরা আমাদের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে পেতাম!

আমাদের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার ফয়সাল! অনেকেই হয়ত চোখ কপালে তুলেছেন। কারণ আমাদের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার তো সাকিব আল হাসান। সব ফরম্যাটে নাম্বার ওয়ান হওয়া সাকিব আল হাসান। পুরো বিশ্ব মাতানো সাকিব আল হাসান। ইয়ান বোথাম, ইমরান খান, কপিল দেব, গ্যারি সোবার্স সব বাঘা বাঘা অলরাউন্ডারদের রেকর্ড এক এক করে ভাঙ্গতে থাকা সাকিব আল হাসান। অথচ আমি কিনা বলছি ফয়সালের কথা!

আজকে আমরা যাকে সাকিব নামে ডাকি, সেই ফয়সাল তো তারই ডাকনাম। ক্লাস সিক্স-সেভেনে পড়ুয়া সাকিব তখন আলোকদিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে আলো ছড়াচ্ছিলেন। বিধ্বংসী ব্যাটিং সাথে পেস বোলিং, পাঁড়ার খেলায় প্রতিপক্ষের জন্য ত্রাস। একদিন তেমনি এক পাঁড়ার খেলায় আম্পায়ার ছিলেন মাগুরার ইসলামপুর স্পোর্টিং ক্লাবের মালিক সাদ্দাম হোসেন। সাকিবের খেলায় মুগ্ধ হয়ে তাকে নিজের ক্লাবে নিয়ে যান। সেখানেই প্রথম সাকিব দেখে সত্যিকারের ক্রিকেট বল। শুরু হয় সাকিবের জীবনের নতুন অধ্যায়।
একদিন নেটে শখের বসে স্পিন বল করছিলেন সাকিব। তার বলের অসাধারণ টার্ন আর লাইন লেংথ দেখে কোচ সাদ্দাম হোসেন পরামর্শ দেন স্পিন বল করার। কোচের পরামর্শে পুরোদস্তুর ফাস্ট বোলার থেকে সাকিব হয়ে গেলেন স্পিনার, বাঁ হাতি অর্থোডক্স স্পিনার। কদিনের মাঝেই মাগুরা লীগে অভিষেক হয় সাকিবের। সেখানে প্রথম বল করলেন সাকিব আর আউট! কি দারুণ, কাঠের ডিউজ বলে নিজের প্রথম ম্যাচের প্রথম বলেই উইকেট! সাকিব আনন্দে দৌঁড় দিয়েছিলেন। তার সেই দৌঁড় আজও থামেনি। আজও সাকিব উইকেট নিয়ে চলেছেন, রান করে চলেছেন, বিশ্বের কাছে ছোট্ট বাংলাদেশকে তুলে ধরছেন, নানান দেশের বড় বড় লীগে খেলে নিজের প্রতিভায় নতুন নতুন ভক্ত বানাচ্ছেন।
পুরো বাংলাদেশে সাকিব আজ এতটাই বিখ্যাত যে, ২০১২ সালে তার বিয়ের অনুষ্ঠান বেশ কয়েকটি জাতীয় টেলিভিশন চ্যানেলে লাইভ সম্প্রচার করা হয়। সাকিব নিজেই স্বীকার করেন যে, তিনি প্রকাশ্যে ঢাকার রাস্তায় চলাফেরা করেছেন অথচ কোন জাতীয় ঘটনা তৈরি হয়নি এটা দীর্ঘ আগের কথা।
সাকিব আল হাসানকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জানান,
আমি যে কোন শপিং মলে যেতে পারিনা,আমি কিছু রেস্টুরেন্টে যাই, সেগুলো সুনির্দিষ্ট, আমি খুব বেশি একটা বাইরে যাইনা।
স্পাইডারম্যান সিনেমায় অসাধারণ একটি উক্তি আছে, “With great power comes great responsibility”
সেই ১৫ বছর বয়সে অনূর্ধ্ব ১৯ দলের হয়ে খেলার সময় থেকে দায়িত্ব নিয়ে খেলছেন সাকিব। তখনও করতেন বাঁহাতি স্পিন আর বিধ্বংসী ব্যাটিং, এখনও তাই করেন। কিন্তু এই ১২ বছরে সেদিক দিয়ে কোন পরিবর্তন না হলেও হয়েছে তার দায়িত্বের ধরণের বদল। এখন নিজের প্রতিভা অনুসারে তাই সব সময় ভালো খেলার একটা আলাদা চাপ তো আছেই, আছে পুরো দলের ব্যাটিং -বোলিং দুটিতেই ভারসাম্য রাখার দায়িত্ব। একটু খারাপ হলেই তো সমালোচকরা নিন্দা শুরু করবে, করবে তার নেগেটিভ দিক ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা। সাকিব তবে বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার হওয়ায় কেমন চাপ অনুভব করেন!

সাকিবের মতে,“দায়িত্ব তো অবশ্যই কিন্তু চাপ নয়। যখন আপনি কোন কিছু উপভোগ করবেন তখন চাপের কথা মনেই আসবেনা। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ”।

২০১৪ সালে সাকিব বহিষ্কৃত হয়েছিলেন এবং সেই সময়ে বাংলাদেশ জাতীয় দল সব ফরম্যাটের ক্রিকেটে ১৩ টি ম্যাচ জয়বঞ্চিত ছিল। এর মধ্যে টি-২০ ফরম্যাটে হংকং এর বিপক্ষে হারও আছে। এরপর সাকিব যখন জিম্বাবুয়েত সাথে সিরিজে ফিরলেন, প্রথম ম্যাচেই করলেন সেঞ্চুরি সাথে পাঁচ উইকেট। পরবর্তীতে টেস্টে তিনি ইমরান খান এবং বোথামের রেকর্ডের পাশে নাম লিখান এবং টেস্ট সিরিজ শেষে তিন টেস্টের সিরিজে ১৮ উইকেট নিয়ে এবং ২৫১ রান করে অস্ট্রেলিয়ার মিশেল জনসনের সাথে নাম লিখান।

সাকিবের ব্যাপারে প্রায়ই বলা হয়,তিনি তার বেস্ট পারফর্মগুলোর বেশির ভাগ করেছেন জিম্বাবুয়ের মতো কিছুটা দুর্বল প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে! এটাও মনে রাখা প্রয়োজন সাকিব টেস্টে বিপক্ষে খেলা যে কোন প্রতিপক্ষের ৫ উইকেট অন্তত একবার নিয়েছেন। এই রেকর্ড থেকে শুধুমাত্র বাদ পরবে অস্ট্রেলিয়া কারণ সাকিবের অভিষেকের এক বছর আগে বাংলাদেশ সর্বশেষ অস্ট্রেলিয়ার বিপরীতে খেলেছে এবং ২০০৬ এর পরে তাদের সাথে আর বাংলাদেশের খেলা হয়নি।

সাকিব যে বড় ধরণের প্রতিযোগিতা বরাবরই ভালোবাসেন তা নিজ মুখেও স্বীকার করেছেন,
হ্যাঁ,আমি প্রতিযোগিতা পছন্দ করি। আমার ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফর্মেন্স খুব একটা ভালো নয়, তাই আমি অত বেশি উপভোগ করিনা, আমি খেলি কিন্তু সেখানে খুব একটা ভালো করিনা। আমি মনে করি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অনেক বেশি প্রতিযোগিতাপূর্ণ যা আমি খুব পছন্দ করি এবং এটা আমাকে প্রত্যেক মুহূর্তে ভালো খেলার জন্য উৎসাহিত করে। আর এটাই আমার ক্রিকেট খেলার সবচেয়ে পছন্দের অংশ।
সেই ক্লাসের পরীক্ষা থেকে তার নাম্বার ওয়ান হওয়া শুরু, এরপর এল বিকেএসপির ভর্তি পরীক্ষা। সেখানেও সবাইকে টপকে হয়েছিলেন নাম্বার ওয়ান। নাম্বার ওয়ান হওয়া যার শখ নয় বরং অভ্যাস, সেই সাকিব আল হাসান তো হবেনই বিশ্বের সব ফরম্যাটে নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডার। আর এ কারনেই তো বাংলাদেশের ষোল কোটি জনগনের কাছে, “বাংলার জান বাংলার প্রাণ মানে সাকিব আল হাসান।”


বুুঝলে দাদুভাই, তুমি যখন বড় হবে, তখন এমন পর্যায়ে পৌঁছাবে যে সারা বিশ্বের প্রত্যেকেই তোমার সম্পর্কে জানবে। যখন তুমি আমাদের এখানে আসবে তখন মানুষ দাঁড়িয়ে করতালির মাধ্যমে তোমাকে বরণ করে নিবে!
নিজ আদরের নাতী ফয়সালকে কথাটি প্রায় বলতেন তার দাদু। ফয়সাল বড় হয়ে তার দাদুর সেই কথাটিকে সত্যই প্রমাণ করেছে। এখন আর ফয়সাল একা একা স্বাধীন ভাবে রাস্তায় বেরুতে পারেনা। লোকে তার পেছনে যখন-তখন অটোগ্রাফ-ফটোগ্রাফের জন্য ছোটে! নিজ এলাকায় যখন ফয়সাল আসেন তখন মানুষ দাঁড়িয়ে করতালির মাধ্যমে তাকে সাদর অভ্যর্থনা জানায়, তাকে এক নজর দেখতে রাস্তায় ভিড় করে। এখনকার তরুণ ছেলেরা ফয়সালকে আদর্শ মানে, হয়তবা ফয়সালের দাদু যা ভেবেছিলেন তার চেয়ে কম নয় বরং অনেক বেশি কিছুই পেয়েছেন ফয়সাল। কারণ তিনি এখন এমন এক উচ্চতায় নিজ যোগ্যতায় গিয়ে পৌঁছেছেন যেখান থেকে চাইলেই আকাশ ছোঁয়া যায়। সরকারী ব্যাংক কর্মকর্তার ছেলে ফয়সাল, সবাই ভেবেছিল এই ছেলে বড় হয়ে বাবারই মতো কোন ভালো সরকারী চাকুরী করবে। নইলে আরো বড় কিছুই হবে, ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার কত কি হওয়ার আছে!
কিন্তু ক্লাসে বরাবরই যে ছেলে কখনো তৃতীয় হয়নি অর্থাৎ হয় প্রথম নয় দ্বিতীয় হয়েছেন সেই ছেলের খেলাধুলার প্রতি এতো আগ্রহ দেখে পরিবারের সবাই হয়ত খানিকটা ভ্রু কুঁচকেছিলেন। আর সে খেলাটা যদি ক্রিকেট না হয়ে ফুটবল হতো তবুও না হয় মেনে নেওয়া যেত। কারণ ফয়সালের বাবাও খেলেছেন খুলনার হয়ে। আবার তার চাচাতো ভাই উজ্জ্বল খেলেছেন জাতীয় দলে। কিন্তু ফয়সাল যে পাগল ক্রিকেট নিয়ে! কি একটা তক্তা নিয়ে গোল ছোট ফুটবলের মত জিনিসকে পিটাতে হয়। ফয়সালের বাবা মাশরুর রেজা তাই করলেন কি, একদিন রাগ করে কেড়ে নিলেন ছেলের ব্যাট-বল,”আজ থেকে আর কোন ক্রিকেট খেলা নাই তোমার।”

একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলেন ফয়সালের মা শিরিন আখতার। ছেলের প্রতি তার ছিল অগাধ বিশ্বাস, জানতেন একদিন ফয়সাল বিশ্বসেরা হবেনই। আর এজন্যই বাবা ব্যাট কেটে ফেলার পরও তিনি ছেলেকে উৎসাহ দিয়ে গিয়েছেন আর ফয়সালও চালিয়ে গেছে ক্রিকেট খেলা। না হলে কি আমরা আমাদের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে পেতাম!

আমাদের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার ফয়সাল! অনেকেই হয়ত চোখ কপালে তুলেছেন। কারণ আমাদের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার তো সাকিব আল হাসান। সব ফরম্যাটে নাম্বার ওয়ান হওয়া সাকিব আল হাসান। পুরো বিশ্ব মাতানো সাকিব আল হাসান। ইয়ান বোথাম, ইমরান খান, কপিল দেব, গ্যারি সোবার্স সব বাঘা বাঘা অলরাউন্ডারদের রেকর্ড এক এক করে ভাঙ্গতে থাকা সাকিব আল হাসান। অথচ আমি কিনা বলছি ফয়সালের কথা!

আজকে আমরা যাকে সাকিব নামে ডাকি, সেই ফয়সাল তো তারই ডাকনাম। ক্লাস সিক্স-সেভেনে পড়ুয়া সাকিব তখন আলোকদিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে আলো ছড়াচ্ছিলেন। বিধ্বংসী ব্যাটিং সাথে পেস বোলিং, পাঁড়ার খেলায় প্রতিপক্ষের জন্য ত্রাস। একদিন তেমনি এক পাঁড়ার খেলায় আম্পায়ার ছিলেন মাগুরার ইসলামপুর স্পোর্টিং ক্লাবের মালিক সাদ্দাম হোসেন। সাকিবের খেলায় মুগ্ধ হয়ে তাকে নিজের ক্লাবে নিয়ে যান। সেখানেই প্রথম সাকিব দেখে সত্যিকারের ক্রিকেট বল। শুরু হয় সাকিবের জীবনের নতুন অধ্যায়।
একদিন নেটে শখের বসে স্পিন বল করছিলেন সাকিব। তার বলের অসাধারণ টার্ন আর লাইন লেংথ দেখে কোচ সাদ্দাম হোসেন পরামর্শ দেন স্পিন বল করার। কোচের পরামর্শে পুরোদস্তুর ফাস্ট বোলার থেকে সাকিব হয়ে গেলেন স্পিনার, বাঁ হাতি অর্থোডক্স স্পিনার। কদিনের মাঝেই মাগুরা লীগে অভিষেক হয় সাকিবের। সেখানে প্রথম বল করলেন সাকিব আর আউট! কি দারুণ, কাঠের ডিউজ বলে নিজের প্রথম ম্যাচের প্রথম বলেই উইকেট! সাকিব আনন্দে দৌঁড় দিয়েছিলেন। তার সেই দৌঁড় আজও থামেনি। আজও সাকিব উইকেট নিয়ে চলেছেন, রান করে চলেছেন, বিশ্বের কাছে ছোট্ট বাংলাদেশকে তুলে ধরছেন, নানান দেশের বড় বড় লীগে খেলে নিজের প্রতিভায় নতুন নতুন ভক্ত বানাচ্ছেন।
পুরো বাংলাদেশে সাকিব আজ এতটাই বিখ্যাত যে, ২০১২ সালে তার বিয়ের অনুষ্ঠান বেশ কয়েকটি জাতীয় টেলিভিশন চ্যানেলে লাইভ সম্প্রচার করা হয়। সাকিব নিজেই স্বীকার করেন যে, তিনি প্রকাশ্যে ঢাকার রাস্তায় চলাফেরা করেছেন অথচ কোন জাতীয় ঘটনা তৈরি হয়নি এটা দীর্ঘ আগের কথা।
সাকিব আল হাসানকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জানান,
আমি যে কোন শপিং মলে যেতে পারিনা,আমি কিছু রেস্টুরেন্টে যাই, সেগুলো সুনির্দিষ্ট, আমি খুব বেশি একটা বাইরে যাইনা।
স্পাইডারম্যান সিনেমায় অসাধারণ একটি উক্তি আছে, “With great power comes great responsibility”
সেই ১৫ বছর বয়সে অনূর্ধ্ব ১৯ দলের হয়ে খেলার সময় থেকে দায়িত্ব নিয়ে খেলছেন সাকিব। তখনও করতেন বাঁহাতি স্পিন আর বিধ্বংসী ব্যাটিং, এখনও তাই করেন। কিন্তু এই ১২ বছরে সেদিক দিয়ে কোন পরিবর্তন না হলেও হয়েছে তার দায়িত্বের ধরণের বদল। এখন নিজের প্রতিভা অনুসারে তাই সব সময় ভালো খেলার একটা আলাদা চাপ তো আছেই, আছে পুরো দলের ব্যাটিং -বোলিং দুটিতেই ভারসাম্য রাখার দায়িত্ব। একটু খারাপ হলেই তো সমালোচকরা নিন্দা শুরু করবে, করবে তার নেগেটিভ দিক ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা। সাকিব তবে বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার হওয়ায় কেমন চাপ অনুভব করেন!

সাকিবের মতে,“দায়িত্ব তো অবশ্যই কিন্তু চাপ নয়। যখন আপনি কোন কিছু উপভোগ করবেন তখন চাপের কথা মনেই আসবেনা। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ”।

২০১৪ সালে সাকিব বহিষ্কৃত হয়েছিলেন এবং সেই সময়ে বাংলাদেশ জাতীয় দল সব ফরম্যাটের ক্রিকেটে ১৩ টি ম্যাচ জয়বঞ্চিত ছিল। এর মধ্যে টি-২০ ফরম্যাটে হংকং এর বিপক্ষে হারও আছে। এরপর সাকিব যখন জিম্বাবুয়েত সাথে সিরিজে ফিরলেন, প্রথম ম্যাচেই করলেন সেঞ্চুরি সাথে পাঁচ উইকেট। পরবর্তীতে টেস্টে তিনি ইমরান খান এবং বোথামের রেকর্ডের পাশে নাম লিখান এবং টেস্ট সিরিজ শেষে তিন টেস্টের সিরিজে ১৮ উইকেট নিয়ে এবং ২৫১ রান করে অস্ট্রেলিয়ার মিশেল জনসনের সাথে নাম লিখান।

সাকিবের ব্যাপারে প্রায়ই বলা হয়,তিনি তার বেস্ট পারফর্মগুলোর বেশির ভাগ করেছেন জিম্বাবুয়ের মতো কিছুটা দুর্বল প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে! এটাও মনে রাখা প্রয়োজন সাকিব টেস্টে বিপক্ষে খেলা যে কোন প্রতিপক্ষের ৫ উইকেট অন্তত একবার নিয়েছেন। এই রেকর্ড থেকে শুধুমাত্র বাদ পরবে অস্ট্রেলিয়া কারণ সাকিবের অভিষেকের এক বছর আগে বাংলাদেশ সর্বশেষ অস্ট্রেলিয়ার বিপরীতে খেলেছে এবং ২০০৬ এর পরে তাদের সাথে আর বাংলাদেশের খেলা হয়নি।

সাকিব যে বড় ধরণের প্রতিযোগিতা বরাবরই ভালোবাসেন তা নিজ মুখেও স্বীকার করেছেন,
হ্যাঁ,আমি প্রতিযোগিতা পছন্দ করি। আমার ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফর্মেন্স খুব একটা ভালো নয়, তাই আমি অত বেশি উপভোগ করিনা, আমি খেলি কিন্তু সেখানে খুব একটা ভালো করিনা। আমি মনে করি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অনেক বেশি প্রতিযোগিতাপূর্ণ যা আমি খুব পছন্দ করি এবং এটা আমাকে প্রত্যেক মুহূর্তে ভালো খেলার জন্য উৎসাহিত করে। আর এটাই আমার ক্রিকেট খেলার সবচেয়ে পছন্দের অংশ।
সেই ক্লাসের পরীক্ষা থেকে তার নাম্বার ওয়ান হওয়া শুরু, এরপর এল বিকেএসপির ভর্তি পরীক্ষা। সেখানেও সবাইকে টপকে হয়েছিলেন নাম্বার ওয়ান। নাম্বার ওয়ান হওয়া যার শখ নয় বরং অভ্যাস, সেই সাকিব আল হাসান তো হবেনই বিশ্বের সব ফরম্যাটে নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডার। আর এ কারনেই তো বাংলাদেশের ষোল কোটি জনগনের কাছে, “বাংলার জান বাংলার প্রাণ মানে সাকিব আল হাসান।”


মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:২৮

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ০৯ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ৩:১৮

কামিল আল আশিক বলেছেন: আমি নতুন লিখি এখানে। পড়ার জন্য ধন্যবাদ :-)

৩| ০৯ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ৩:৩০

দর্পণ বলেছেন: বাহ। ভালো লাগলো

৪| ০৯ ই জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৫

কামিল আল আশিক বলেছেন: ধন্যবাদ অনেক :-)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.