নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দংশিত

মানুষ হয়ে বাচঁতে চাই, মানুষের মত ভাবতে চাই

সৈয়দ সাব

সৈয়দ সাব › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি শংকিত

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৬:৫৩

আমি শংকিত

বর্তমান নিয়ে এটা আমার ২য় লেখা। বর্তমান মানে শাহবাগ ও সংশ্লিষ্ট ঘটনা নিয়ে।

সাহবাগে কে কি করছে জানি না, তবে আমি বিশ্বাস করি সবাই একটি মানবিক, একটি জাতীয় ইস্যুতে একতাবদ্ধ, ৭১ এ মুক্তিযুদ্ধে যারা বিতর্কিত অবস্থান নিয়েছেন, মানবতাকে কলংকিত করতে যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষোভাবে সাহায্য করেছেন তাদের বিচার । সন্দেহ নেই, যারাই থাকুক পিছনে, যারাই গলাবাজি করুকনা কেন, আমাদের মত সাধারনের আবেগ একটু কমবে না।

তবে আমি শংকিত । আমি অন্য আরেকটা ব্যাপার ভেবে। আমি সংকিত মুক্ত চিন্তা আর প্রগতিশীল যারা তাদের উগ্রতা দেখে, না , তাদের বাহ্যিক কোন কাজ দেখে নয়; বরং তাদের চিন্তার আর আচরনের গোড়ামি দেখে।

হয়ত আমিও তাদের মত ভাবতাম, চিন্তা করতাম, ক্রোভের বহি:প্রকাশ ঘটাতাম । কিন্তু আমি পারছি না। বরং আমার ভাবনায় অন্য একটা বিষয়।

সামাজিকভাবে, একজন মানুষ হিসেবে আমি লজ্জিত। যাদের কাছে শুনার কথা দেশ, সমাজ, বিচার ব্যবস্থার উপর আস্থা রাখার কথা, তারাই গলাবাজি করে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির মাসল দেখানোর জন্য। তারা একটা দেশের প্রান শক্তি কে বলির পাঠা বানাচ্ছেন। আমি 'ফাঁসি চাই' কথাটির কি ব্যাখ্যা জানতে চাই, যদি হয় বলা হয়, কোন প্রশ্ন নয়, আমরা ফাঁসি চাই, ফাঁসি দিতেই হবে, তবেতোরে ভাই আর এই বিচারের নামে রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা খরচ করার কি প্রয়োজন। শাহবাগে এনে ঝুলিয়ে দিলেই হয়। নতুন প্রজন্মতো কফিন নিয়ে প্রস্তুত হয়েই আছে। আর যদি বলেন বিচারে যে রায় হবে সেটাই মেনে নিব, তবে কেন এই ফাঁসি চাই ফাঁসি বলে স্লোগান? স্বীকার করি এটা যৌবনের স্লোগান, এখানে যুক্তি ধার দাড়েনা, কিন্তু যারা পাশে দাড়িয়ে বয়সের চাপ চেহারায় ধরে রেখে মঞ্চ কাঁপালেন এবং এখনো কাঁপিয়ে যাচ্ছেন, তারাও কি যৌবনের আগুনে পুড়ছেন?

আসলে তরুনদের পাশে যারা দাড়িয়ে তাদের চেহারা মোবারক টেলিভিশনের পর্দায় তুলে ধরছেন তারা কি বাসায়, কর্মক্ষেত্রে, অফিসে একবারও নিজেদের চেহারা দেখেন?

লাল/সাদা/কালো ইত্যাকার দলবাজি, চেয়ারবাজি, আর জ্বি হুজুর জ্বি হুজুর করে নিজেদের চরিত্রটাকে করে ফেলেছেন নিশি কন্যাদের মত, তারাই আজকে আমাদেরকে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির নসিহত করছেন। সত্যিই, আপনাদের জন্য করুনা হয়।

যাক, আমার কথা হচ্ছে আদালত মানি কিন্তু তাল গাছ আমার এই দৃষ্টিভংগি কতটা নিম্নস্তরের সেটা কি আমরা জানি?

এতই যদি চাপাবাজি করেন তাহলে কেন গিয়ে সাক্ষী প্রমান দিয়ে কাদের মুল্লা সাহেবের ফাঁসির রায় নিশ্চত করলেন না? নাকি এই ট্রাবুনাল পক্ষপাত দুষ্ট? (যার কিছু কিছু আভাস আমরা পড়েছি পত্রিকায়)

আগামীতে যেসকল রায় আসবে সেগুলো যদি দাবী অনুযায়ী না আসে তবে?

আপনারা কি জানেন আপনারা আপনাদের অলক্ষে ইতিহাসের এক কুৎসিত কিংবা এ যাবৎ সবচেয়ে স্বত:স্ফুর্ত আন্দোলনের ইতিহাসের একটা অংশ হয়ে গেলেন।

আজকে যারা বাবার কিংবা মায়ের হাত ধরে, যে নিষ্পাপ শিশুগুলো এখানে আসছে, তারাও কিন্তু ঐ বাবা কিংবা মা কে ঘৃনা করতে পারে তাদের নিষ্পাপ আবেগকে নোংরা করার জন্য।

আজকের যারা ফাঁসি চাই ফাঁসি চাই বলে স্লোগান দিচ্ছেন তাদের উদ্ধত্ব আমাকে শংকিত করে,

কেন জানি মনে হয় আজ যদি কয়েক হাজার মানুষ আমার ফাঁসির দাবী করে, সেই অনুযায়ী আদালত কি সেটা করতে বাধ্য হবে?

এই সবই আমার শংকা। এই রকমইতো দেখে আসছি। আজ যারা 'হুজুগে বাংগালীত্ব' ফলাচ্ছেন এরাই যে আবার ঘুড়ে চুরি বসাবে না, তার নিশ্চয়তা কি? আমি মানুষের আবেগ কে সম্মান দেই, মানুষের চিন্তাকে, ভাবনা কে আমার নিজের মত ও চিন্তার উপর স্থান দেই, কিন্তু আমার নিজেরও মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে।

আমি আরো আশ্চর্য্য হই যখন ব্যক্তির প্রতি ঘৃনা তার পাত্র উপচে আরো কয়েকটি জায়গায় গিয়ে পড়েছে। আমাদের জানা থাকা উচিত কোন কিছু অপাত্রে রাখলে সেটা যতই মনোমুগ্ধকর হোক না কেন, আকর্ষন হাড়ায়। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে সেটাই হতে যাচ্ছে। তা না হলে ব্যাক্তির প্রতি ঘৃনা কেন কিছু প্রতিষ্টানের উপর গিয়ে বর্তাবে? আর যেহেতু সেটা পাত্র পরিবর্তন করেছে সেহেতু ঘৃনাটাও তার রুপ পরিবর্তন করেছে, এখন সেটা আর কেবল ঘৃনাই নয় এখন সেটা আক্রোশ এর পর্যায়ে গিয়ে পড়েছে। অথচ আমদের দেশে রাজনৈতিকভাবে সেটার শৈল্পিক ব্যবহার সেই আমার বুজতে পারার পর থেকেই দেখে আসছি। তবে কি আমাদের এই প্রজন্মের উপর অসংগায়িত, অদৃশ্য কোন কালো হাত আমাদের শরীরে সংবেদনশীল জায়গা দেখে দেখে সুড়সুড়ি দিয়ে যাচ্ছে?

আমি শেষ যে কথাটি বলে শেষ করব তা হচ্ছে লুকোচুরি করে লাভ নাই। এই আন্দোলন যদি আওয়ামী ও 'বাম' দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হলেও কিন্তু আমাদের নৈতিক সমর্থন থাকবে, কেননা দেশের এই জাতীয় ইস্যু মিমাংশীত হোক। রাজনীতিবিদদের ব্যবসায় 'ছক্কা মাড়া' বন্ধ হোক। কিন্তু বেশি বাড়লে যেমন ঝড়ের থাপ্পর খেতে হয়, তেমনি এই জাগরনও যদি তার সীমা অতিক্রম করে সেটাও কিন্তু তার প্রাপ্য পেয়ে যাবে। প্রাপ্তিটা কি হবে সেটা না হয় আমাদের

পরিবর্তে আমাদের পরবর্তিতে আসা প্রজন্মই পড়ে নেবে!

কেউ স্বেচ্ছায় বলুক কিংবা কেউ থাকে দিয়ে বলিয়ে নিক, সুমতি নিয়ে বলুক আর কুমতি নিয়ে বলুক, মুখ ফসকে বলুক আর ভাব নিয়ে বলুক, যারা বলে 'দেশে সকল ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হোক' কিংবা ' সকল সাম্প্রদায়িক রাজনীতি বন্ধ করা হোক' তখন কিন্তু সেটা হয় বাড়াবাড়ি। এত পড়াশুনা, এত জানা শুনা- আর এটা যে বাড়া বাড়ি, সে ইতিহাস আর শিক্ষা নিশ্চই জানা থাকার কথা।

আমি এ প্রসংগ এখানে আনতাম না যদি এই জাগরন কে কোন দলের ভাবতাম। কারন দেশের বেশ কয়েকটি দল ই সেটা অনেক দিন ধরে বলে আসছে; সেই কথাগুলোতো নতুন করে বলার কি এমন প্রয়োজন পড়ল। নাকি এ জাগরন সেই সব দলেরই 'বাই পাস' ? আমরা এই রকম কোন উচ্চারন শুনতে চাই না।

আমি মনে প্রানে বিশ্বাস করতে চাই - এটা সরকার আর কয়েকটি সংগঠনের সাজানো নাটক নয়। কিন্তু আমি যতবার মতিয়ুর রহমান রেন্টু'র "আমার ফাঁসি চাই' বইটি পড়ি ততবারই শিউরে উঠি; আর স্রষ্টার কাছে মিনতি করি 'প্লীজ.............

১৩/০২/১৩

১২:২১ এ এম।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.