![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দ ংশ ন
সৈ য় দ কা ম রা ন আ হ মে দ
আমি এখন যে বিষয়ে লিখতে যাচ্ছি, তার জন্য সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি প্রথমেই। ব্যক্তিগতভাবে কোন ব্যক্তিকে সরাসরি লক্ষ্য করে কোন লেখা লিখিনা, পারত পক্ষে। রাজনৈতিক বিষয়ে লিখতে অবশ্য মাঝে মধ্যে অনিচ্ছা সত্বেও এসে যায়। তবে এখনকার লেখাটা আমি লিখতে বাধ্য হলেও তাতে আমার বিন্দু মাত্র আনন্দ নেই।
আমাদের বাংলাদেশে বর্তমানে যে ব্যপারটা খুভ বেশি পীড়া দেয় সেটা হচ্ছে সবার মধ্যে একধরনের পরমতের প্রতি চরম অশ্রদ্ধা। সেটা রাজনৈতিক ক্ষেত্রেই হোক কিংবা সামাজিক, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেই হোকনা কেন । কিন্তু যে জায়গায় এখন এই অশ্রদ্ধাটা একটা বিপদজনক পর্যায়ে চলে গেছে সেটা বোধ হয় ফেইসবুক আর ব্লগ। কুৎসিত ভাষার স্থান আগে জানতাম মাছের বাজার। কিন্তু ডিজিটাল যুগে এসে আমাদের জানার পরিধি যে আরও বাড়াতে হবে সেটা অবলীলায় বলা যায়।
আমার এই লেখাটা গতকাল থেকে পড়া ও দেখা দু চারটি ফেইসবুক স্ট্যাটাস এর পর প্রবল একটা ক্রোভ থেকে বলা যায়। আর ভূমিকা তে যে বিষয় তুলেছি সেটা অনেকদিন থেকেই মাথার মধ্যে ঘেতে আছে। একটা শিক্ষিত জেনারেশন কিভাবে পারে এইরকম কুৎসিত ভাষা ব্যবহার করতে। আমি যে কোন পোষ্ট যতটানা গুরুত্ব দিয়ে পড়ি, কমেন্টগুলো পড়ি তার চেয়ে সহস্রগুণ বেশি গুরুত্ব দিয়ে। একটি পোষ্টে একজন মানুষের চিন্তা বা দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ ঘটে, সেক্ষেত্রে কমেন্ট গুলো পড়ে আমি তার চেয়ে কয়েকশ গুন মানুষের চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গির সাথে পরিচিত হতে পারি। কিন্তু ইদানীং পোস্ট পড়েই আমাকে পড়েই খুশি থাকতে হয়, কমেন্টগুলো পড়ার আর সাহস বা রুচি হয়না। আমার এই অভিজ্ঞতাটা আল্লাহর অশেষ কৃপায় এখন পর্যন্ত আমার নিজস্ব কোন স্ট্যাটাস বা শেয়ারিঙয়ে হয়নি। (ফ্রেন্ড লিস্টটা ৯৯ পয়েন্ট ৯ভাগই ক্লিন বলে হয়তো! তবে আমার এখনকার এই লেখাটা নিয়ে যথেষ্ট শঙ্কা আছে। মনে হয়না এইবার আমি ‘চান্দু’ পার পাব। আল্লাহ ভরসা!
এই লেখাটা লেখার মূল ভাবনাটা অনেক আগের। কিন্তু নিজের বিবেক আর রুচির প্রতি সম্মান দেখিয়ে এই বিষয়ে কথা বলা বা লেখার বিন্দু পরিমাণ ইচ্ছাও আসেনি মনে। কিন্তু গতকাল থেকে আর পারলাম না।
ডঃ পিয়াস করিম নামক একজন ব্যক্তির বিষয়ে ভিবিন্ন পোষ্ট পড়ে। মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। না, পিয়াস করমের জন্য নয়। অন্য একটি কারনে। পিয়াস করিম কে ব্যক্তিগতভাবে চেনার তো প্রশ্নই আসেনা, উনি কি বলেন বা কোন দৃষ্টি ভঙ্গির লোক সেটাও আমি জানি না। তবে উনার নাম আমি শুনেছি বেশ কিছু দিন আগে। সাধারণত আমি টকশো দেখার সুযোগ পাইনা, পেলেও দেখার ইচ্ছা থাকেনা। আমার কাজ শেষ হতে হতে রাত সাড়ে দশটা, কখনো এগারো। আর সেই সময়ই এখানকার অধিকাংশ চ্যানেল টকশো দেখায়। তাই ইচ্ছা সত্বেও দেখতে বা শুনতে পারিনা। কিন্তু আমার বড় ভাই সেটা শুনেন খুবই মনোযোগ দিয়ে। বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে প্রচারিত (আসলে রেকর্ডকৃত) নিউজ দেখেন খুবই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। উনার কাছ থেকেই বেশ কয়েকদিন আগে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে কথা প্রসঙ্গে এই পিয়াস করিম সাহেবের নাম শুনে ছিলাম। আর আমার এই ভাইয়্যার এইসব বিষয়ে কোন কথাকে আমি খুব গুরুত্ব দেই। কারন উনি সেই প্রেসিডেন্ট জিয়ার হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে ৯১ পর্যন্ত ভিবিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিশেষ বিশেষ ঘটনা তিনি মাস দিন তারিখ উল্লেখ করে বলে দিতে পারেন। দিতে পারেন রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নিরপেক্ষ ব্যাখ্যা। ‘নতুন প্রজন্মের’ কয়জন জানে স্বৈরাচার এরশাদের রায়ট পুলিশ একবার একটি ছাত্র মিছিলের উপর দিয়ে সরাসরি পুলিশের গাড়ী তুলে দিয়ে জীবন্ত পিষ্ট করেছিল দু জন ছাত্র কে? (অবশ্য এর নেপথ্যের ঘটনা অন্য। সেটা না হয় অন্য আরেক দিন বলব।) উনার কাছেই শুনেছিলাম ‘একজন আছে পিয়াস করিম, লোকটা বেশ ভালো কথা বলে’ ব্যাস ওতটুকুই। আমি জিজ্ঞেস করিনি কি ভালো কথা বলেন বা কার পক্ষ নিয়ে কথা বলেন। কিছু কিছু ব্যাপার আছে এই সব প্রসঙ্গ তুলাই অপ্রাসঙ্গিক। তাই আমিও সে বিষয়ে কিছু জিজ্ঞেস করিনি। এইই । এছাড়া উনি ব্যক্তিগতভাবে কি করেন বা উনার চেহারা কি রকম সেটাও জানতাম না। ফেইসবুকের কল্যাণে গতকাল থেকে উনাকে চিনলাম। কিন্তু গতকাল থেকে শুনে ও দেখে বুজলাম উনি সম্ভবত বিরোধী দলের আরও খোলাসা করে বললে বলা যায় জামায়াত নিয়ে ‘নিউট্রাল’ কথা বার্তা বলেন। যাই হোক, এবার আমার মনটা খারাপ হওয়ার বিষয়টা বলে ফেলি। এতদিন কেন ডঃ পিয়াস করীম সম্পর্কে এইসব কথা বলা হল না ? আর এখন কেন বলা হচ্ছে? বলা হচ্ছে কি এই কারনে যে আমাদের মতের বিপক্ষে অন্য মতের হয়ে কথা বলার জন্য? তার মানে কি? উনার সম্পর্কে যে বা যারা বলে বেড়াচ্ছেন সেগুলোর সত্য মিথ্যা জানিনা, আপাতত আমার জেনেও কোন লাভ নাই। কিন্তু একটি মানুষ কে এভাবে তো হঠাৎ জামাত পন্থি, রাজাকারের আত্মীয় ইত্যাকার বলার ঐতিহ্য তো বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ও তার অঙ্গ সংগঠন ছাত্র লীগের। প্রজন্ম চত্বরের লোক বা সাপোর্টারদের কাছ থেকে তো এইরকম কথা আসা করা যায় না! তবে কি যাহা লাও তাহাই কদু? অথচ এই জাগ্রত প্রজন্মের কাছে আশার বানী শোনান জাফর ইকবাল স্যারের মত লোক। আনিসুল হকের মত কথা সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। যিনি সেদিনের মতিঝিল এলাকায় শিবিরের তাণ্ডবের কালে সবাই কে শান্ত থাকার কথা বলেছেন, সৌন্দর্য ধরে রাখার আহবান জানিয়েছেন। সেসব ব্যক্তি যে প্রজন্মের জাগরণের কথা বলেন তাদের তো এইরকম পরমতের প্রতি অ শ্রদ্ধাশীল হওয়া খাপ খায় না। তাই বাজারে চালু একটি কথা বার বার আমার মনে উকি দেয় ‘আওয়ামীলীগ এমন একটা মিশিন যাদের একদিকে রাজাকার ডুকালে অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধা হয়ে বের হয়’। আমি এইরকম ভাবতে চাই না, আমাদের মহান স্বাধীনতার শ্রেষ্ঠ সৈনিকদের নিয়ে এইরকম কুৎসিত চিন্তা আনতে চাইনা। কিন্তু আমাদের লম্পট রাজনীতিবিদ আর হাতেগোনা কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্য আমাদের কে এইসব কুৎসিত কথা শুনতে হয়।
আমি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারব যারা আজ ‘তুই রাজাকার’ ‘তুই রাজাকার’ করে আবেগ কে হিংসায় রূপান্তরিত করছে তাঁদের অধিকাংশই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আগের ও পরের কোন ইতিহাসই পুর্নাংগ রূপে জানেনা। এমনকি যুদ্ধের নয় মাস, তারিখের উল্লেখ না হয় বাদই
দিলাম, মাসের নাম উল্লেখ করে সেই ইতিহাস বলতে পারবে না, ব্যাখ্যা করতে পারবে না। ব্লগ আর ফেইসবুকের স্ট্যাটাস পড়ে আমার সেটাই ধারনাই হচ্ছে। (আমার ধারণা ভুলও হতে পারে)। আমরা ততটুকুই জানি যতটুকু আমাদের জানানো হচ্ছে। জাতি হিসেবে এটা সত্যিই লজ্জার, অনুশোচনার। কেন জানি মনে হয় আমাদের কে ডমিনেট করা হচ্ছে, আমরা ডমিনেট হচ্ছি। আমাদের মধ্যবিত্ত বুদ্ধিজীবীরাও সেটা তুলে ধরতে পারেন নি। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ‘চরম পত্র’ এর লেখক ও পাঠক এম আর আক্তার মুকুল সেই কথাটাই আক্ষেপ করে বলেছেন ‘আমি বিজয় দেখেছি’ তে। আমরা সেই জন্য হাতে গোনা দু চারটি ছাড়া সার্থক কোনও মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক সিনেমা বা নাটক দেখতে পারিনি। কেননা যাঁদের এইসব লেখার কথা, বানানোর কথা তাদের মধ্যে হাতে গোনা মাত্র কয়েকজন ছাড়া কেউই ময়দানে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ দেখেন নি। (এক ‘গেরিলা’ ছবি দেখলেই বুজা যায় মুক্তি যুদ্ধের নাটক ও ছবির নামে আমাদেরকে কি গিলানো হয়েছে এতদিন।)
কিন্তু কেন?
জাফর ইকবাল সার। বাংলাদেশে যে কয়জন লোক কে আমি শ্রদ্ধা করি আপনি তাঁদের মধ্যে অন্যতম। অন্য সবাই যে কারনে আপনাকে শ্রদ্ধা করে, সেই দৃষ্টিতে নয়, অন্য কিছু কারনে। তার মধ্যে একটা হচ্ছে আপনার ও আপনাদের পরিবারের প্রচণ্ড জীবন সংগ্রাম।
আচ্ছা আপনি কি কখনো বলেছিলেন আপনার নানা একজন রাজাকার ছিলেন, ছিলেন শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান। আপনার (সম্ভবত) ছোটমামা ছিলেন রাজাকার। আজ পর্যন্ত আমি আপনার কোন লেখায় পড়িনি। (যদি লেখে থাকেন –আমি আমার এই লেখার জন্য ক্ষমা প্রার্থী।) আপনার শ্রদ্ধেয় আব্বা কে একাত্তরে ঘাতক ফাকিস্তানী আর্মিরা ৫ই মে বিকেল পাঁচটায় ধলেশ্বরী নদীর তীরে নির্মমভাবে শহীদ করেছে। আর আপনার নানা এবং মামা নজরুল সাহেব কে, যাঁদের বাড়িতে আপনারা সপরিবারে আশ্রয় নিয়েছিলেন, ডিসেম্বরের ৮ তারিখ মুক্তিযুদ্ধারা নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। এইসব আমি জানতাম না। এই বাংলাদেশের হাজারো রত্নগর্ভা মায়েদের একজন আপনার শ্রদ্ধেয় আম্মা। আমি তাকে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে সম্মান দেখাই। তাঁরই লেখা বই ‘জীবন যেরকম’ বই থেকেই জেনেছি আমি।
আমি এই বিষয়ে লিখতাম না। কিন্তু দেখলাম এই প্রজন্মের প্রকৃত সুন্দর মনের প্রগতিশীল তরুণরা আপনার কথা শুনে। আপনি কি পারতেন না মুক্তিযুদ্ধের পুরো চিত্রটা নিরপেক্ষভাবে আমাদের কাছে তুলে ধরতে? পারতেন না বলতে স্বাধীনতা যুদ্ধের আগের আওয়ামীলীগ আর স্বাধীনতা যুদ্ধের পরের আওয়ামীলীগ এক না। আপনি কি করে পারেন সে রকম একটি দল কে স্বাধীনতা যুদ্ধের একমাত্র স্বপক্ষের শক্তি উল্লেখ করে কলাম লিখতে? আপনি কেন ভুলে যান সদ্য স্বাধীন এই দেশের তৎকালীন আওয়ামী সরকারের কাছ থেকে আপনাদের ন্যায্য শহীদ পরিবারে জন্য বরাদ্ধ একটি মাথা গোজার ঠাই এর জন্য আপনার আম্মাকে দুয়ারে দুয়ারে হাটতে হয়েছে। তৎকালীন সরকারের মন্ত্রীর কাছ থেকে আপনার আম্মাকে শুনতে হয়েছিল ‘পেয়েছেন কি আপনারা; প্রত্যেকদিন সকালে এসে বসে থাকেন? সকালে ঘুম থেকে উঠেই আর কত বিধবার মুখ দেখব?’ জানিনা ঐ লাইন গুলো পড়ে আপনার কেমন লেগেছিল, কিন্তু আমি আমার চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি, বিশ্বাস করেন।
আপনার তো দুই পক্ষেরই অভিজ্ঞতা ছিল। আমি বিশ্বাস করি আপনার নানা পরিস্থিতির স্বীকার ছিলেন। এবং সচরাচর রাজাকার আর শান্তিবাহিনীর চেয়ারম্যান বলতে আমরা যাদের জানি তিন সেরকম ছিলেন না। আপনার আম্মার কথায় সেটা স্পষ্ট। আমি সেটাও মনে প্রাণে বিশ্বাস করি। কিন্তু আজকে যাদের কে একটা ‘জুজু’ ধরে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে তারা কি সেটা বিশ্বাস করবে?
(জনাবা আয়েশা ফয়েজ, আপনি যখন এই ঘটনা গুলা লিখে ছাপা খানায় দিয়েছিলেন, আমি যদি থাকতাম তাহলে ‘ছাপাখানার ভূত’ হয়ে সেই লেখাগুলো মুছে দিতাম। আপনি যে সরল বিশ্বাস নিয়ে আপনার জীবনীর ঐ পর্ব গুলো লিখেছিলেন, এদেশের মানুষ গুলোর মধ্যে তা এখন দুষ্প্রাপ্য । আমাদের উপরের তলায় যাঁরা, যাঁরা আমাদের আবেগ, স্বপ্ন, বিশ্বাস কে নিয়ন্ত্রিত করেন তারা পঁচে গেছেন, নষ্ট হয়ে গেছেন, স্বাধীনতার পর পরই তাদের সেই দুর্গন্ধ আপনি পেয়েছিলেন। পেয়েছিলেন এই দেশ ও রাষ্ট্রের কাছ থেকে। তাদের পাশে থেকে থেকে আমরাও তাদের সেই পচন কে বয়ে বেড়াচ্ছি, দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছি। আপনি আমাদের ক্ষমা করবেন।)
কিন্তু যারা স্বীকৃত স্বাধীনতা বিরোধী, হানাদারদের কে প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য করেছেন, তাদের অত্যাচারের আগুনে পেট্রোল ঢেলে দিয়েছেন, তাদের বিচার চাই ই চাই। তবে ‘একটা করে শিবির ধর সকাল বিকাল জবাই কর’ টাইপের বিচার না, স্বচ্ছ এবং প্রকাশ্যে, যাতে কেউ প্রশ্ন করতে না পারে রাজনৈতিক আক্রোশ থেকে কারো প্রতি অবিচার করা হয়েছে।
©somewhere in net ltd.