![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঘুম ভেঙ্গে গেলেও এখনা চোখদু’টি মেলতে পারছি না। তাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছি। সে চুপচাপ হয়ে
আছে। হয়তো গভীর ঘুমে। আমার হৃদয় রাজ্যের অধিপতিনী।
হঠাত কিসের আওয়াজ পেলাম। বাসন-কোসনের ঝনঝন শব্দ। কিচেন থেকে আসছে আওয়াজটা। তাকে
হালকা ঠেলা দিলাম, এই, কিচেনে শব্দ হচ্ছে কেন? এই ফ্লাটে তো বিলাই আসার কথা না।
সে নড়ে না। কথাও বলে না। তার নিশ্চুপতা দেখে আরো দুটো ঠেলা দিলাম। না নড়ে না, কিছু বলেও না।
আমি চোখদু’টি কিছুটা মেলে তাকালাম। আঁতকে উঠি। একি, আমি কাকে গভীর আবেগে জড়িয়ে ধরে
আছি! এ তো আমার রানী না। কোলবালিশ!
গলার স্বরটা কঠিন করে ডাক পাড়লাম, পেতনী, এই পেতনী!
সাথে সাথেই তার আগমন। দরজায় দাঁড়িয়ে আমার দিকে কটমট করে তাকাচ্ছে। আমি লাফ মেরে বিছানা
থেকে নামি। দু’হাতে দু’কান চেপে অপরাধী কণ্ঠে বললাম, সরি সরি সরি, লক্ষ্মি সোনা রাগ করো না।
আর কখেনা পেতনী বলব না।
সে দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরে। হাসিটা ঠোঁট চেপে বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারল না। খিলখিল করে হেসে
ফেলে। আমি মন্ত্র মুগ্ধ হয়ে তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। এই হাসিটাকেই মনে হয়, কবি
সাহিত্যিকরা কাঁচ ভাঙ্গার শব্দের সাথে তুলনা করেন। আমার মনে হচ্ছে, আমার হৃদয়টা কাঁচ হয়ে ভেঙ্গে খানখান হয়ে যাচ্ছে।
আমি কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে গেলাম। যেখানে সে শুধু হেসে যাচ্ছে আর আমি গভীর মমতায় তাকে
জড়িয়ে ধরে বসে আছি। পলক না ফেলে তার চোখের তারার নাচন দেখছি।
আচমকা পেটে খোঁচা লাগল। কল্পনার রাজ্য উদাও হেয় গেল। তবে বাস্তবের রাজ্যটা এখন আরো
মধুর। সে আমার একেবারে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। চেহারাজুড়ে একটা অদ্ভুত রহস্য খেলা করছে। কখন
যে একে অপরকে প্যাচিয়ে ধরে আছি; বুঝতে পারি নি।
সে আমার বুকে মাথা রেখে গলা, ঘাড়, বুক হাতাচ্ছে। তার উন্মুক্ত কেশগুচ্ছ আমার নাকেমুখে। বাহারী
চুলের অধিকারী সে। সবসময় ফোলানো ফাপানো থাকে। শুধু চুল না, এই মেয়েটার প্রতিটা অঙ্গ-ই আমার
কাছে অতুলনীয় মনে হয়। ডাগর ডাগর আঁখিযোগল, টিকালো নাক, পাতলা ঠোঁট, সরু সরু দাত, উন্নত
বক্ষযোগল....।
আমি তার চিবুক ধরে মুখটা আমার মুখের কাছে নিয়ে এলাম। ডান হাতে তার মসৃণ কোমল মুখটা বুলিয়ে
বললাম, জানপাখি, আজ তো সিঙ্গাপুর টুর আছে। ফ্লাইট বারোটার দিকে।
সে কিছুটা চঞ্চল হল। বলল, তুমি আগে বলবে না! তুমি যে কি! আমি এখনো গোসলই করি নি। তারপর
কাপড়-চোপড় গোছগাছ করতে হবে। ব্রেকফাস্ট করতে হবে। এই রকম আবুলের সাথে কেউ সংসার
করে? কোনোকিছুর ঠিক নাই। ছাড়ো আমাকে!
সে আমাকে ছাড়তে বলছে. আসলে সে-ই. আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। আমি তার ঠোঁটে ....
দিয়ে বললাম, ময়না পাখি; সিঙ্গাপুর তো শুধু আমি যাব। এত ব্যস্ত হবার প্রয়োজন নাই।
সে আমার দিকে অদ্ভূত চোখে তাকায়। সারা চেহারায় প্রচণ্ড বিস্ময়। দেখে মনে হচ্ছে আমি
মারাত্মক বিস্ময়কর একটা কথা তাকে এই মাত্র বললাম।
আমি তার মাথা শক্ত করে ধরে বললাম, কী হলো? এরকম করে তাকিয়ে আছো কেন?
সে চোখ পিটপিট করে তাকায়। হালকা করে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে আমাকে ছেড়ে সরে দাঁড়ায়। মুখটা কালো করে কিচেনে চলে যায়।
আমি তার মধুর ভঙ্গিতে হেটে চলে যাবার দৃশ্য দেখতে থাকি। নিজেকে প্রচণ্ড সৌভাগ্যবান মনে
হচ্ছে।
কে বলবে, এই মেয়েটা একসময় আমাকে দেখা মাত্র প্রচণ্ড বিরক্ত হত। যা তা বলে গালাগালি করত।
ছাগল বলে মুখ ভেংচি দিত। ফুঙ্গা, খবিশ; রাবিশ। আরো কত কি? ইশারা ইঙ্গিতে প্রপোজ করলাম।
অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে বলল, আমার নাকি বয়স অনেক বেশি। চেহারায় বুড়ো বুড়ো ভাব। আমার সাথে
প্রেম.তো দূরের কথা, কথাও বলবে না। মুখ ফিরে তাকাবেও না. তার গিন্না লাগে।
সে কিচেনে নাস্তা তৈরী করছে। চেহারাট দু:খি দু:খি। একটু আগে হয়তো চেপে চেপে কেঁদেছে। মাঝে মাঝে নাক টানছে। আমার ভেতরটা মুচড় দিয়ে উঠল।
আমি পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম। সে একটুও চমকালো না। মন খারাপ করা গলায় বলল, টেবিলে বসো,
নাস্তা নিয়ে আসছি। তার গলার স্বরটা শুনে আমার কলিজাটা ছিন্নবিন্ন হয়ে গেল।
আনমনা ভঙ্গিতে প্লেনের টিকিট দু'খানা তার চোখের সামনে মেলে ধরলাম। সে বিদ্যুততাড়িতের মতো
আমার দিকে ফিরে। চোখ বড় বড় করে তাকায়। হঠাত ঝাপিয়ে পড়ে আমার বুকে। হাউমাউ করে কেঁদে
ফেলে। দুমাদুম করে কিল দিতে থাকে আমার বুকে, পিঠে, বাহুতে।
জনমভর দু:খি মানুষের মতো বলল, তুমি কী করে ভাবলে, তোমাকে ছাড়া আমি একমুহুর্ত থাকতে পারব?
©somewhere in net ltd.