নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ক্যাসপার পরিবার

ক্যাসপার পরিবার › বিস্তারিত পোস্টঃ

"আর্তনাদ"

০৯ ই জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৮

চোর! চোর! ধর! ধর! চিৎকারে পুরো খুলনা নিউ মার্কেট মুখরিত হয়ে গেলো। অত:পর চোরটা ধরা পড়লো।
--"ভাইজান ভুল হয়া গেছে,মাফ কইরা দেন!আর জীবনেও চুরি করুম না! এবারের মত মাফ কইরা দেন!"
এদিকে দুজন অনবরত কিল ঘুসি দিয়েই চলেছে ১০-১২ বছরের ছেলেটিকে।
এবার ছেলেটি তাদের একজনের পা চেপে ধরে, বলে ----"ভাইজান আমি রোজা! আর মাইরেন না! আপনাদের পায়ে পড়ি!"
এবার তারা থামে।একজন বলে,
--"তুই দোকানে ঢুইকা চুরি করস! তর আবার কিয়ের রোজা! ওই সালাম হালারে পিডা!"
এবার সালাম নামের লোকটি এগিয়ে এসে ছেলেটির পায়ের পাতা বরাবর সজোরে রড দিয়ে বাড়ি মারে। ছেলেটি "ও আল্লারে" বলে পা চেপে মাটিতে শুয়ে পড়ে।
.
এদিকে চিৎকার চেঁচামেচি শুনে মার্কেট মালিক সমিতির প্রেসিডেন্ট পলাশ সাহেব অফিস থেকে বের হয়ে আসে। সে দেখে অফিসের উঠানে অনেক লোক জড়ো হয়ে আছে। পলাশ সাহেব ভিড়ের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
--"কি হয়ছে এখানে?"
--"সাহেব চোর ধরছি। দোকান দিয়া চুরি করছিলো"।
.
আজ নিউমার্কেটের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে মিলাদ মাহফিল ও ইফতার পার্টির আয়জন চলছিল মার্কেটে। পলাশ সাহেব আরেকটু আগিয়ে দেখলো একটি ১০-১২ বছরের বাচ্চা ছেলে শুয়ে মাটিতে কাতরাচ্ছে আর দুজন লোক তাকে রড দিয়ে খোঁচাচ্ছে। ছেলেটিকে যে নির্মম ভাবে পিটানো হয়েছে তা তাকে দেখলেই বোঝা যাচ্ছে। ভুরুর কাছটাই নীল হয়ে আছে,ঠোট ফুলে আছে, বাম পায়ের পাতা থেঁতলে দেওয়া হয়েছে তাছাড়া তার কালো শরিরেও নানা স্থানে রক্ত জমাট বাধার দাগ স্পষ্ট।
পলাশ সাহেব আসাতে ছেলেটি আরো ভয় পেয়ে গেল। এবার তার হয়তো আর রেহাই নাই। ভয়ে ছেলেটি ফুঁপিয়ে কাদা শুরু করলো।
পলাশ সাহেব জিজ্ঞেস করলো,
--"কি চুরি করছে?"
সালাম নামের লোকটি একটি পলিথিন বের করে দেখালো। পলাশ সাহেব দেখলো পলিথিনের ব্যাগে দুটি আম মাত্র।
সালাম বললো,
"দেখছেন সাহেব দেখছেন! সাহস কত বড়! দোকানে ঢুকে চুরি করে!ভাগ্যিস এক্কেরে হাতেনাতে ধইরা ফালাইছি নাইলে আরো নিতো।"
পলাশ সাহেব বললো,
--"তাই বইলা দুইডা আমের জন্যে বাচ্চা পোলাডারে এইভাবে পিডাইবেন!মানুষ আপনেরা!ছোট মানুষরে এইভাবে পিডাই কেউ!"
পলাশ সাহেবের কথায় লোকজনের উত্তেজনা একটু কমে গেল। সে ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করলো,
--"তর বাপ কি করে?"
ছেলেটি কাতরাতে কাতরাতে উত্তর দেই,
--"আব্বা রিক্সা চালাইতো।কয়দিন খুব অসুস্থ।ঘর দিয়া বাইর হইতে পারে নাই।ঘরে মা আর ভাইগুলা দুইদিন পানি ছাড়া কিছু খাই নাই। অনেক বাসায় ভিক্ষা চাইছি কেউ দেইনি তাই দোকানের ফলে হাত দিছি।সাহেব ভুল হয়া গেছে,আমারে মাফ কইরা দেন। আমারে বাড়ি যাইতে দেন। আমি আগে কোনদিন চুরি করি নাই।"
আশেপাশের লোকজন বলা শুরু করলো,
"ডাহা মিথ্যা কথা!ধরা পইড়া অহন ভদ্র সাজতাছে।দুইডা কইসা কানে দেন সব সত্যি বাইর হয়া যাইবো।"
পলাশ সাহেব বললো,
"মার্কেট সমিতির ইফতারি পার্টি শেষ হোক সত্য মিথ্যা দেইখা ওর বাপের কাছে গিয়া সতর্ক কইরা দেয়া হবে। মারামারি গালাগালি দেওনের দরকার নাই।"
এবার পলাশ সাহেব দেখলো ছেলেটি দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে আর প্রচুর হাপাচ্ছে। তিনি ছেলেটিকে দাড়াতে সাহায্য করলো কিন্তু ছেলেটি পারলো না,পা চেপে ধরে পড়ে গেল। এই দেখে রড হাতে দুজন তাদের হাত থেকে রড ফেলে দিলো।ছেলেটি হাপাচ্ছে দেখে পলাশ সাহেব বললো,
--"ওরে কেউ পানি দেনতো!"
একজন পানির পাত্র আগিয়ে দিলে ছেলেটি কথা বলে উঠে,
--"অহন পানি দিয়েন না! মুই রোজা! ইফতারির সময় একটু দিলেই হইবো!"
এবার পলাশ সাহেব বিরক্তি ভরা দৃষ্টিতে ওই দুজনের দিকে তাকালো তারপর ছেলেটিকে উচু করে তুলে ওজু খানায় নিয়ে ওজু করিয়ে পাশে বসিয়ে ইফতার করালো।তারপর নামাজ শেষে ওই দুজনকে আর ছেলেটিকে নিয়ে ওদের বস্তির দিকে রওনা হল।
.
ওদের কুড়ে ঘর।উঠানে ছেলেটির বাবা বসে ছিল।তাকে পলাশ সাহেব সব বলতেই সে ছেলেকে মারার জন্যে উদ্ধত হল।পলাশ সাহেব তাকে থামিয়ে বললো,
--"এহন মারনে কাম নাই।যথেষ্ট মাইর হয়ছে।পোলারে কোথাও কামে লাগাই দেন।"
এই শুনে ছেলেটির বাবা কাঁদতে কাঁদতে বলা শুরু করলো,
--"বিশ্বাস করেন সাহেব আমার পোলারে এই শিক্ষা দেই নাই।কয়দিন ধরে বিছানা দিয়া উঠতে পারি নাই।বউ পোলাপান গুলা না খাইয়া ছিল কিন্তু ও এই কাম করবো ভাবতেও পারি নাই।"
এসব বলতে বলতেই ঘরের ভিতর থেকে ছয় বছরের একটি বাচ্চা বেরিয়ে এসে ছেলেটির সামনে হাত পেতে বলতে থাকলো,
--"ভাই! আম কই! আইজনা আম আনবা কইছিলা!"
ছেলেটি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে বাচ্চাটির দিকে। তার মুখে কোন উত্তর নাই। এরই মধ্যে অনুমানিক চার বছরের একটি বাচ্চা ঘর দিয়ে চিৎকার করতে করতে ছুটে আসে,
--"ওরে না!ভাই! ওরে না! আগে আমারে দিবা!"
এই বলেই হাতটা ছেলেটির দিকে বাড়িয়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তারপর কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর ছোট জন বলে উঠে,
--"ভাই তুমি আমারে থুইয়া একলা খাইয়া আইছো!"
ছেলেটি বাচ্চার একথা শুনে ডুকরে কেঁদে ফেলে। বড়জন মন খারাপ করে ঘরে ঢুঁকে যাই আর ছোট জন মায়ের কোলে উঠে কান্না জুড়ে দেয়।
.
এবার ছেলেটির মা মুখে আচল দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
--"পাশের বাড়ির বাচ্চারে আম খাইতে দেইখা বাচ্চা দুইটা কয়দিন ধইরা আম খাইতে চাইছিল। ওগো বাপের অসুখ,ঘরে কোন ট্যাকাও নাই!তাই পোলাডারে বাইরে পাঠাইছিলাম বাড়ি বাড়ি গিয়া কিছু সাহায্য চাইয়া আনতে। ছোট মানুষ বুঝে নাই আম সামনে দেইখা তুইলা নিছে। তাই বইলা পোলাডারে পিডাই পা ভাইঙ্গা দিবেন!"
এদিকে বাচ্চাটি কাঁদতে কাঁদতে মায়ের কাছে নালিশ করতে থাকে যে,
--"মা ভাই আইজকাও আম আনে নাই!আম খামু"
.
ছেলেটি মাথা নিচু করে ঘরের খুঁটিতে ভর দিয়ে বসে আছে। হঠাৎ ছোট জনের চোখ যাই ভাইয়ের প্যান্টের পকেটে।দেখে কি যেন উঁচু হয়ে আছে। মেয়েটি কোল দিয়ে নেমেই সরাসরি ছেলেটির পকেটে হাত ঢুকিয়ে একটি আম বের করে আনে।
--"ভাই তুমি আম আনছো! মা! ভাই আম আনছে!" ছোট জনের একথা শুনে বড়টাও ঘর দিয়ে বের হয়ে আসে।
এদিকে আম দেখে ছেলেটির মা কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে গিয়ে ছেলেটির গালে থাপড় মারতে থাকে আর বলতে থাকে,
--"তোরে কইছিনা না কইয়া মানুষের খাবারে হাত দিবিনা কিন্তু তুই হুনিস নাই! ক এই আমও চুরি কইরা আনছোস তুই!"
--"মা হোন মা! আল্লাইর কিরা মুই এইডা চুরি করি নাই!উনারা ইফতারিতে দিসিলো তহন ওর জন্য রাইখা দিসিলাম।" তারপর লোক দুটির দিকে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
--"স্যার মায়েরে বুজান আমি এইডা চুরি করি নাই!" এবার পলাশ সাহেবের দিকে বিশ্বাস ভরা চোখে তাকিয়ে বলে,
--"সাহেব মায়েরে একটু কন না আমি এইডা চুরি করি নাই। আমার ভাগের ইফতারিতে যেইডা দিসিলেন হেইডা তুইলা রাখছিলাম ওর জন্যে,সত্যি এইডা চুরির না।"
.
এতক্ষনের ঘটনাগুলি সবাই স্তব্ধ হয়ে দেখছিলো। পলাশ সাহেব এবার দৌড়ে গিয়ে ছেলেটির মাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে ছেলেটির সামনে হাটু গেড়ে বসে ছেলেটিকে বুকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলে। এদিকে ওই দুজন লোক দৌড়ে গিয়ে ছেলেটির মায়ের পা চেপে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে,
--"চাচি আমাগো মস্ত বড় ভুল হয়া গেসে!আমাগো মাফ কইরা দেন!আফনেরা মাফ না করলে আল্লাইও মাফ করবো না!আফনাগো পোলা চোর না!"
.
এবার ছেলেটি কাদো কাদো ভাংগা গলায় পলাশ সাহেবকে বলতে থাকে,
--"সাহেব আমি ওনাগো অত কইরা কইলাম আর মাইরেন না,কিন্তু ওনরা হুনে নাই! সারা শরিরে রড দিয়া পিডাইছে।" তারপর সালামকে দেখিয়ে বলে,
-- "আমি পাও ধরসিলাম মাফ চাওনের জন্যে তখন উনি রড দিয়ে পায়ের পাতাই বাড়ি দিসে" এই বলে সারা শরিরের ফাটা ফাটা ক্ষত গুলা আর রক্ত জমাট বাধা স্থান গুলা দেখাতে থাকে।পলাশ সাহেব ভাল করে দেখে ছেলেটির কাল শরিরেও রডের বাড়ির ফাটা ফাটা দাগ গুলার চারপাশে কালশিটে নিলচে বর্ন গুলার উপরে রক্তের ছোপ গুলা একদম স্পষ্ট।তাছাড়া বাম পায়ের পাতা টাও রড দিয়ে থেতলিয়ে দেয়া হয়েছে.............!!!!!!!!!!
.
লেখক: Asik Abdullah (আশিক)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১:৩৭

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: ঘটনা জেনে চোখ দিয়ে পানি এসে পড়লো ।

২| ০৯ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১১:২৮

কল্পদ্রুম বলেছেন: চরিত্রগুলোর ভাষা খুলনার আঞ্চলিক ভাষা হলে ভালো হতো

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.