নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পরজন্মে তিতলি হবো।

সন্ধ্যা রাতের ঝিঁঝিঁ

What do you want your story to be? And then go write your masterpiece.

সন্ধ্যা রাতের ঝিঁঝিঁ › বিস্তারিত পোস্টঃ

অতি সংগোপনে জমে থাকে মায়া নামক কিছু ব্যথা

১৩ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৩৬



আমার মন ভালো নেই। এমন না যে কাজ করতে বিরক্ত লাগছে সেজন্য, আমার কষ্ট হচ্ছে, ঠিক কি কারণে আমি বুঝতে পারছি না। সামনে একটা বৃদ্ধ কাপল বসে আছে। দুজনে হেসে হেসে স্যুপ এর বাটি নাড়াচাড়া করছে। হ্যাট মাথায় বুড়ো লোকটাকে দারুণ স্মার্ট লাগছে। কত বয়স হবে? ষাটোর্ধ্ব মে বি। এই বয়সে একান্তে সময় কাটানো বাংলাদেশের দম্পতিদের আর যাই হোক হয়ে উঠে না। এদেরকে সেদিক থেকে ভাগ্যবান কাপল বলা যেতেই পারে। আজকের স্মৃতির ঝুলিতে আর যাই হোক সুন্দর কিছু যোগ হল।

রেস্টুরেন্টে কাজ করা আর যাই হোক সুখকর কিছু না। হরেক রকমের মুখোশ পরা মানুষ। মেকি ভালোবাসা ফুটিয়ে তুলতে সবার সে কি প্রতিযোগিতা। ইদানিং মনে হয় মানুষ হয়ে জন্মানো ব্যাপারটা কুৎসিত হয়ে যাচ্ছে। উফফ, সাদা ইউনিফর্ম এর ছেলেগুলো আবার আসছে। বাঁদর ছেলেগুলাকে একদম সহ্য হয়না। এন্টি কলেজ হওয়াতে বোধহয় এমন লাগছে। ওদেরই বা দোষ কি, ইউনিফর্ম পরা অবস্থায় আমিও কি কম করেছি। এডাম টিজিং , সেসব ভাবলেই এখন হাসি পায়।

ডানের কর্ণারে বসা কাপলটার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে, আমার চিৎকার করে মেয়েটাকে বলতে ইচ্ছে করে, তুমি ভুল মানুষের হাত ধরে বসে আছো। ও আস্ত একটা বাস্টার্ড । গেল সপ্তাহে ও এই ছেলেটা সেইম প্লেসে, সেইম ভাবে অন্য কারো হাতে চুমু খেয়ে ভালোবাসা জানান দিয়েছিল। চার দেয়ালে বন্দী ভালোবাসা দিন শেষে কর্পূরের মত উবে যায়। আমি মুখে দু টাকার হাসি ফুটিয়ে বৃদ্ধ কাপলের দিকে এগিয়ে যাই।
টানা এগারো ঘণ্টা কাজ শেষে আমি বের হই। মাথাটা কেমন ঝিম ঝিম করছে। কাঁধে ব্যাগ নিয়ে রাস্তায় পা দিতেই কেমন জানি লাগে। একসময় এই শহরে কত বন্ধুবান্ধব ছিল। আর এখন থেকেও কেউ নেই। নিয়ন বাতির আলোয় গ্রীন কালারকে অনেক সুন্দর দেখায়। আমি টিপটা খুলে ব্যাগের সাথে আটকিয়ে দেয়, ফেলতে ইচ্ছে করে না।
না উঠালেই পারতে, দাও আমি লাগিয়ে দেয়।
নিহান, তুমি কেন আমার জন্য দাঁড়িয়ে থাকো, বলতো? তোমার কি আর কোন কাজ নেই?
তুলি, সব প্রশ্নের উত্তর হয় না। তোমার এ প্রশ্নের ও কোন উত্তর নেই।
এই যে তুমি প্রতিদিন প্রতিদিন আমাকে হোস্টেল পর্যন্ত দিয়ে আসো, কালকে যখন তুমি থাকবে না, আমার একা যেতে ভয় লাগবে। চেনা
পথ ও আমার অচেনা লাগবে। প্লিজ, আমার পথ আমাকে চলতে দাও।
তোমার কেন মনে হল কালকে আমি থাকবোনা?
এ আর এমন অস্বাভাবিক কি, কালকে তো তুমি অসুস্থ ও হতে পারো।
এরকম কিছু ঘটবেই না। তুমি বিশ্বাস রাখো।
আমি তোমাকে বিশ্বাস করি না।
নিহান ম্লান মুখে তাকিয়ে থাকে, আমি হাঁটতে থাকি। এভাবে প্রতিদিন ও আমাকে হোস্টেল পর্যন্ত এগিয়ে দেয়। আমি কখনো একবারের জন্য ও পেছন ফিরে তাকায় না। আমি জানি ও অপেক্ষায় থাকে একবার তাকানোর।

ইটস নভেম্বর, আর মাত্র কয়েকদিন পরেই আমার জন্মদিন। আমার খুব ইচ্ছে হত, কেউ আমার জন্মদিনে একগুচ্ছ গ্যাস বেলুন দিয়ে বলুক, এটা তোমার জন্য, কিন্তু কেউ কখনো আমাকে বলেনি। কখনোই না। ফুড কার্ট এর সামনে বার্গার নিয়ে আমি চুপচাপ বসে থাকি। আমার এতটা একা আর নিসঙ্গ লাগছিল। আমার প্রচন্ড রকম কান্না পাচ্ছিল। নিহান শিরোনামহীনের একটা গান গুনগুন করতে করতে আসছিল। চকবার আইসক্রিম বাড়িয়ে দিতে দিতে বললো, তোমার আজকে এত দেরী হল যে, অনেক কাজ ছিল? আমি শুধু চুপচাপ মাথা নাড়লাম। তুলি, তুমি কাঁদছো কেন? কি হয়েছে বলবা? কিছু না। আমি চুপচাপ বসে থাকি।
নিহানের সব থেকে ভালো দিক হচ্ছে ও কখনোই জোর করে না। ও ঘন্টার পর ঘন্টা আমার পাশে বসে থাকবে। আমি নিজ থেকে না বললে আর বিরক্ত করে না।
আমার দু ঠোঁট কাঁপছে । গাল বেয়ে টপটপ পানি পরছে। আমি জানিনা কেন, আমার ভীষণ ভীষণ কান্না পাচ্ছে।
নিহান, তুমি কি আমার হাত ধরে একটু হাঁটবা?
ও খানিকটা অবাক হয় আমার কথা শুনে। হ্যা অবশ্যই। একচল্লিশতম দিনে আমি ওর হাত ধরে চুপচাপ হেটে যাই। সেদিন প্রথমবার আমি পেছন ফিরে তাকাই।

আমাকে কয়মাস কাজ করতে হবে এখনো শিউর না। পরীক্ষার ফি টা জমানো হলেই আমি কাজটা ছেড়ে দিব। তারপর কোথায় গিয়ে থাকবো সেটা ও একটা প্রশ্ন। আপাতত সেসব ভাবতে চাচ্ছি না। রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে কার্ডিগান টা চাপাতে চাপাতে হাঁটছি। বেশ শীত পড়েছে। এ শহরে কোন কিছুই ঠিকভাবে হয় না। রোজকার মত নিহান দাঁড়িয়ে আছে। এ শহরে আমার একমাত্র বন্ধু। শুধুই কি বন্ধু, নাকি তার চেয়ে বেশি কিছু। ঠিক জানি না।
আচ্ছা তুলি, তোমার চোখ সারাক্ষণ ছলছল হয়ে থাকে কেন? মনে হয় এক্ষুণি কেঁদে দিবা।
আমার চোখে আস্ত একটা দীঘি আছে তো সেজন্য জল সারাদিন টলমল করে।
নিয়ন বাতির আলোয় আমরা অনেকদূর হেঁটে যাই। মাঝে মাঝে আমি ওর মাথা ভর্তি চুল এর দিকে তাকিয়ে থাকি। আমার ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করে কিন্তু তা আর হয়ে উঠে না।

জানুয়ারি, শৈত্যপ্রবাহ চলছে। সারাদিন মেঘে ঢাকা আকাশ। আমি সন্ধ্যা নাগাদ বেরিয়ে আসি, ফুড কার্ট এর সামনে আমি টানা ১০২ মিনিট দাঁড়িয়ে ছিলাম। কিন্তু কোথাও নিহান নেই। কাঁধে ব্যাগ নিয়ে আগেরমত একাকী পা বাড়ায়। প্রথমবার আমি টিপটা ফেলে দিই। আজ নিহানের জন্মদিন, ও আমার কাছ থেকে আজকের সন্ধ্যাটুকু চেয়েছিল, গত দুইদিন ও আসেনি, হয়তো কোন কাজ ছিল। সিদ্ধ্বেশ্বরীর কালি মন্দিরটা পার হতে গিয়ে আমার ভেতরটা কেমন দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছিল।
ঝাকড়া চুলের এ ছেলেটাকে আমি ভীষণ মিস করছি। তার ওই বুনো গন্ধওয়ালা পারফিউম টাকে ও মিস করছি। আচ্ছা, ও ভালো আছে তো? প্লিজ ভালো থেকো।
কোনভাবে আমার কথা কি তার কাছে পৌছাবে, আমি জানি না। নিহান, তোমার হাতে হাত রেখে আরো অনেকগুলো সন্ধ্যা আমি হাঁটতে চাই। তোমার ঝাঁকরা চুল গুলো খুব ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করে, প্লিজ এসো.......

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ১২:০১

চাঁদগাজী বলেছেন:



ছবিটা কোন দেশের?

১৪ ই নভেম্বর, ২০২০ সকাল ৯:৪৪

সন্ধ্যা রাতের ঝিঁঝিঁ বলেছেন: ছবিটা গুগল থেকে নেওয়া, কোন দেশের বলতে পারবো না। উৎস উল্লেখ না করায় আমি দুঃখিত।

২| ১৪ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ২:৫০

নেওয়াজ আলি বলেছেন: অসাধারণ প্রকাশ l

১৪ ই নভেম্বর, ২০২০ সকাল ৯:৪৫

সন্ধ্যা রাতের ঝিঁঝিঁ বলেছেন: ধন্যবাদ, নেওয়াজ আলি ভাই।

৩| ১৪ ই নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:৪১

রাজীব নুর বলেছেন: দারুন আবেগময় লেখা লিখেছেন।

১৪ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৫৮

সন্ধ্যা রাতের ঝিঁঝিঁ বলেছেন: ধন্যবাদ। ভালো থাকুন সবসময়।

৪| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:১২

খায়রুল আহসান বলেছেন: এই গল্পের জন্য আপনি যে শিরোনামটা দিয়েছেন, আমার মনে হয় এর চেয়ে আর কোন ভাল শিরোনাম হতে পারতো না।
গল্প খুব সুন্দরভাবে এগিয়েছে, তবুও কেন যেন মনে হলো, কোথাও হয়তো লেখকের কোন তাড়াহুড়ো ছিল।
আপনার লেখার মান ভাল। সময় করে এগুলো আরো কয়েকবার পাঠ করে প্রকাশনার জন্য তৈরী করবেন।
গল্পে ভাল লাগা + +।

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৫৪

সন্ধ্যা রাতের ঝিঁঝিঁ বলেছেন: "কোথাও হয়তো লেখকের কোন তাড়াহুড়ো ছিল" আমার মনে হয় এগুলো আমার সীমাবদ্ধতা, ঠিকভাবে গল্পটাকে এগিয়ে নিতে না পারা, লিখতে গিয়ে অনেক ধরণের সমস্যা এসে যায়। আরো অনেক পড়াশোনা প্লাস লিখতে লিখতে হয়তো এগুলো ঠিক হয়ে যাবে। আপনার মতামত পেয়ে ভালো লাগছে। প্লাসে অনুপ্রাণিত হয়েছি।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
প্রকাশনার কথা বলছেন, ওহ বাবা আমি ভয় পেয়েছি। এগুলো জ্ঞানী গুণীদের কাজ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.