নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পরজন্মে তিতলি হবো।

সন্ধ্যা রাতের ঝিঁঝিঁ

What do you want your story to be? And then go write your masterpiece.

সন্ধ্যা রাতের ঝিঁঝিঁ › বিস্তারিত পোস্টঃ

দ্যা কাইট রানার

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ১০:০১


শতাব্দীর পর শতাব্দী পেরিয়ে গেছে, আমরা নিজেদেরকে সভ্য বলে দাবি করছি। আসলেই কি সভ্য হতে পেরেছি? মনে হয় না। এখনো শ্রেণি বিভাজন কতটা প্রকট তা সমাজের দিকে তাকালেই খোলা চোখে দেখা যায়। শিয়া - সুন্নীর চিরন্তন দ্বন্দ্ব, ঈর্ষা, শাসন - শোষণের এক হৃদয় বিদারক কাহিনী ফুটে উঠেছে খালেদ হুসেইনী'র লেখা 'দ্যা কাইট রানার' বইতে। যুদ্ধ বিদ্ধস্ত আফগানিস্তান নিয়ে আমার কখনো জানতে ইচ্ছে হয়নি। বইটি পড়তে গিয়ে বিশাল একটা ধাক্কা খেলাম। বাবা - মা হারনোর কষ্ট তো আছেই সেই সাথে লাখ লাখ শিশু যে অবর্ণনীয় কষ্টের সম্মুখীন হয়েছে ভাবতেই হৃদয় কেঁপে উঠে। মাঝে মাঝে আমার মনে হয় পৃথিবী কেন এত নিষ্ঠুর হবে, একটা শিশু কেন তার অধিকার হারাবে? নিউইয়র্ক টাইমস বেস্টসেলার, ৫৯৩ পেইজের এই বইটি হৃদয়ে নাড়া দেয়ার মত একটি বই। প্রত্যেকটা মানুষ তার কর্মফল ভোগ করবে, সেটা যত ক্ষুদ্রই হোক না কেন। টুডে অর টুমুরো। পুরো বইটি বর্ণিত হয় আমিরের জবানিতে। আমির বড় ব্যবসায়ী বাবার ছেলে, সুন্নী। যারা পশতুন হিসেবে পরিচিত। আমিরের মা সম্ভ্রান্ত পরিবারের নারী, সাহিত্যের প্রতি যার অগাধ আগ্রহ এবং শিক্ষিকা ছিলেন। আমিরের জন্মের সময় তার মা মারা যায়। আর আমির তার মায়ের মত সাহিত্যের প্রতি অনুরাগী ছিল। বাবার সেই এথলেটিক আচরণ কিংবা সব কিছু জয় করার মনোভাব তার মধ্যে কখনোই ছিলনা। অন্যদিকে তার সাথেই বেড়ে ওঠে তাদের কাজের লোক আলীর ছেলে হাসান। হাসান ছিল আমির থেকে ভিন্ন। সবসময় চুপচাপ, শান্ত, যে কোন সময় আমিরকে বাঁচাতে প্রস্তুত। হাসানের মা ছিল নিচু জাত হাজারা নারী। যার টোল পরা গাল আর কোমরের সেই বাঁক যে কোন পুরুষকে উন্মাদ করে দিতে পারতো। হাসানের জন্মের এক সপ্তাহ পর তার মা অন্য পুরুষের সাথে পালিয়ে যায়। আমির আর হাসান দুজনই একই নারীর কাছে বড় হয়। দুজন এর মধ্যে খুবই ভালো বন্ধুত্ব হয় কিন্তু হাসানের প্রতি তার বাবার আদর আমির সহ্য করতে পারে না। হাসান পড়াশুনা করতো না আর আমির তাকে বিকেলে পড়ে পড়ে গল্প শুনাতো। মাঝে মাঝে আমির মিথ্যে বলতো, বইয়ের গল্প না শুনিয়ে অন্য কিছু বলতো, হাসান তো পড়তে জানতো না। এই প্যারাটা পড়তে গিয়ে আমার এত কষ্ট লাগছে। ঈর্ষা মানুষকে কোথায় নিয়ে যায়। তখন আফগানিস্তানে প্রচুর ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা হত। এখন নাকি তালেবান নিষিদ্ধ করে রাখছে। আমি ঠিক জানিনা সৃষ্টিকর্তা এই আবর্জনা গুলোকে দুনিয়াতে কেন পাঠায়ছে। ১৯৭৫ এর কোনো এক চমৎকার রৌদ্রজ্জ্বল দিনে ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতায় আমির আর হাসান অংশগ্রহণ করে। আমিরের একটাই লক্ষ্য বাবাকে কাছে পাওয়া। যেটা হতে পারে এই ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতায় জিতে। দিন শেষে আমির আর হাসান জিতে যায়। শেষ কাটা ঘুড়িটা ছিল নীল রঙা একটা ঘুড়ি। সে হাসানকে ঘুড়িটা খুঁজে আনতে পাঠায়। ঘুড়িটা নিয়ে আসার পথে পাড়ার বখাটে ছেলে আসিফ আর দল তাকে ঘিরে ধরে, যারা তাকে হাজারা নীচু জাত বলে সবসময় খারাপ আচরণ করে। তারা ঘুড়িটা দিয়ে দিতে বলে। কিন্তু হাসান তো দিবে না, সে আমিরের জন্য সব করতে পারে। বাট আমির উঁচু জাত পশতুন, সুন্নী সে কি এই শিয়া নীচু জাতের জন্য আদৌ কিছু করবে? আসিফ তখন বলে, ইটস ওকে, ঘুড়ি লাগবে না। আমির হাসানকে খুঁজতে খুঁজতে গলির মুখে এসে আলো আঁধারিতে দেখতে পায় তাদেরকে। কিন্তু আমির সেখানে না গিয়ে লুকিয়ে পরে। হাসান সেদিন রেইপ হয় আর আমির দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে। সেদিন ঘুড়ি বাবার হাতে দিয়ে আমির জয় করে নেয় বাবার আদর আর হাসানের মুখ থেকে হারিয়ে যায় সমস্ত হাসি। তারপর আমির চুরির দায় দেয় হাসানের উপর। তারপরদিন কোনরকম প্রতিবাদ ছাড়া হাসান আর আলী তীব্র ব্যথা নিয়ে সে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। সেদিন আমিরের বাবা বাচ্চাদের মত কেঁদেছিলেন, তিনি এসব ঘটনার কিছুই জানতেন না। তারপর একসময় আফগানিস্তানের অবস্থা খুবই খারাপ হলে বাবা ছেলে ইউএস চলে আসে। সময়ের সাথে সাথে একসময় সে গ্রাজুয়েট হয়, বিয়ে করে। কিছুদিন পর তার বাবা মারা যায়। একদিন রহিম সাহেবের কল আসে, তিনি তার বাবার খুব কাছের বন্ধু। তিনি তাকে শুধু একটা কথাই বলেন, সময় এসেছে আবার ভালো হওয়ার। কারণ রহিম সাহেব জানতেন সেদিন হাসানের সাথে কি ঘটেছিল। জীবন একটা বৃত্ত। যেখান থেকে শুরু হবে সেখানে গিয়েই শেষ হবে। আপনি পালাবেন কোথায়, পারবেন না। আমির করিম সাহেবের সাথে দেখা করতে পাকিস্তান আসে। তখন সে জানতে পারে হাসান আর কেউ না তার ভাই। হাজারা নারীর সাথে এই সম্পর্ক সমাজ মেনে নিত না, তাই কেউ জানতো না। তার বাবা পুরো জীবন তীব্র ব্যথা বয়ে বেরিয়েছেন। তিনি কখনো হাসানকে ভুলতে পারতেন না। দীর্ঘ ২৬ বছর পর আমির আবার আফগানিস্তান পা রাখে যেটা একটা নরকে পরিণত হয় ততদিনে। তালেবান অসংখ্য মানুষ হত্যা করে। পথেঘাটে শিশু ভিখিরির অভাব নেই। এতিমখানা গুলোতে সপ্তাহ খানেক পর পর তালেবান আসে একটা করে শিশু নিয়ে যায় বিক্রি করে দেয়। কখনো কখনো তাদেরকে দিয়ে তাদের মনোরঞ্জন করে। হাসান আর তার স্ত্রীকে তারা মেরে ফেলে, আর তাদের বাচ্চা সোহরাবের জায়গা হয় তালেবানদের কাছে। তাকে চোখে মাসকারা আর কোমরে, পায়ে ঘুংঘুর বেঁধে হিন্দি গানের তালে তালে নাঁচতে হয়। আচ্ছা, হিন্দী গান শুনলে তাদের পাপ হয় না? পড়াশুনা করলে যদি পাপ হয়। কাবুলের পথে আমিরের সাথে এক ভিখারির দেখা হয়। তিনি ছিলেন বিখ্যাত একজন প্রফেসর, যে ইরান, পাকিস্তান লেকচার দিতে যেত। আর তিনি তার মায়ের ও প্রফেসর ছিলেন। আমির তা মা সম্পর্কে কিছুই জানতো না। তার বাবা কখনো বলতেন না। তার মা' হারোনোর শোক তার বাবার জন্য এত বেশী ছিল হয়তো তিনি কখনো সেটা ব্যাক্ত করতে চাইতেন না। তখন সে খুব করে জানতে চায় তার মায়ের কথা প্রফেসরের কাছে। বৃদ্ধ মানুষ শুধু তার মায়ের শেষ সাক্ষাতের কথাটাই বলে। তার মা সেদিন মলিন মুখে বলেছিল, "I'm so profoundly happy. Happiness like this is frightening. They only let you be this happy if they're preparing to take something from you. এরপর আমিরের মায়ের সাথে বৃদ্ধর আর কখনো দেখা হয়নি। এই উক্তিটার সাথে হয়তো অনেকের দ্বিমত থাকতে পারে। কিন্তু আমার কাছে এটা সবসময় সত্যি মনে হয়। তারপর সোহরাব এর কি হয়েছিল জানতে হলে আপনাকে বইটা পড়তে হবে। অথবা মুভি দেখতে পারেন, চমৎকার একটা মুভি আছে।

এই বইটা পড়তে গিয়ে আমার সবথেকে বড় রিয়ালাইজেশন হচ্ছে, আমি ছোটবেলা থেকে কখনো কিছু চাইনি, শুধু পড়াশুনা করতে চেয়েছি। আমার পরিবার শত কষ্টের মাঝে ও আমাকে সেটা দিয়েছে। কখনো না করেনি। আমি সৃষ্টিকর্তা ও আমার পরিবারের কাছে কৃতজ্ঞ। পৃথিবীর কোনো শিশুই যেন পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত না হয়।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ১০:৩৯

খায়রুল আহসান বলেছেন: শিরোনামের ছবিটির কথাগুলো এত সুন্দর! স্তম্ভিত ও বাকরুদ্ধ।
আর তারপরে নেমে দেখি, আপনার রিভিউটাও অতি চমৎকার। যেসব বই কিংবা মুভি মানুষকে মানবিক চিন্তা ভাবনায় আচ্ছন্ন করে, সেসব বই এর লেখক এবং চিত্রপরিচালকদের প্রতি মানুষ ঋণ রেখে যায়। তাদের নান্দনিক সৃষ্টি মানবতাকে এগিয়ে নিয়ে যায়, সমাজের কুৎসিত অসুরতাকে চিহ্নিত করে দিয়ে যায় যেন মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে তা দূর করতে পারে।
চমৎকার এই পোস্টে প্লাস। + +

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ৯:০৮

সন্ধ্যা রাতের ঝিঁঝিঁ বলেছেন: ধন্যবাদ। আপনার মন্তব্য গুলো এত ভালো হয়, আমি মাঝে মাঝে ভাবি ব্লগে না আসলে আপনার লেখা কখনো পড়া বা জানা হতো না। উপড়ের দেয়া উক্তি টা মুলত আমিরের বাবার দেয়া একটা উপদেশ। এর সাথে আরো দুই লাইন আছে। সত্যি বলতে এর আগে আমি কখনো এভাবে ভাবিনি, লাইন দুটি পড়ে তারপর মনে হলো জীবন চলার পথে কত কিছু যে আমরা ক্ষুদ্র ভেবে এড়িয়ে যায়।
চমৎকার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। উত্তর দেরিতে করার জন্য দু:খীত। ব্লগে ক্রোম থেকে এখন আর আসা যায় না। ব্রেভ থেকে আসলেও প্রথম পেজ আসে, সেকেন্ড পেইজ আর ওপেন হয় না। আমার মনে হয় এজন্য অনেকে এখন আর লিখে ও না।

২| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ১০:৪০

কামাল১৮ বলেছেন: এ সবই সৃষ্টিকর্তার খেল।যদি সৃষ্টিকর্তা মানেন।নয়তো চলমান ঘটনা যা মানুষেরই সৃষ্টি।

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ৯:১১

সন্ধ্যা রাতের ঝিঁঝিঁ বলেছেন: সৃষ্টিকর্তা অবশ্যই মানি তাই বলে কোনটা মানবসৃষ্ট আর কোনটা নিয়তি সেটার পার্থক্য না বুঝার কোনো কারণ দেখি না। ধন্যবাদ, ভাল থাকবেন।

৩| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ১১:২৬

বিজন রয় বলেছেন: ভাল লেখা।
+++++

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ৯:২০

সন্ধ্যা রাতের ঝিঁঝিঁ বলেছেন: ধন্যবাদ, ৪নং মন্তব্যের উত্তর অর্ধেক আসছে অর্ধেক আসেনাই, কি একটা মসিবত। মন্তব্য এবং প্লাসে কৃতজ্ঞতা জানবেন।

৪| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:০৭

বিজন রয় বলেছেন: আপনার নিকটি খুব সুন্দর। ব্লগে অনেক আগে এমন সুন্দর নিকের সব ব্লগারদের পাওয়া যেত।

আপনি কি আগের সেই কাঠগোলাপ?

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ৯:১৭

সন্ধ্যা রাতের ঝিঁঝিঁ বলেছেন: ধন্যবাদ। আমি আগের সেই কাঠগোলাপ কিনা তো বলতে পারছিনা, এটাই আমার ব্লগে প্রথম এবং একমাত্র নিক, আশা করছি এটা দিয়েই বাকি সময় পার করে দিতে পারবো। আপনি আমার প্রথম দিককার সব গুলো পোস্টে মন্তব্য করতেন প্রথম পাতায় এক্সেস পাওয়ার আগে সেজন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
এই নিকটা যে কত কষ্ট করে খুলছি, আমি আর আমার ভাই মিলে দুইদিন ধরে শুধু ক্যাপচা মিলাইছি

৫| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:১৮

রাজীব নুর বলেছেন: 'দ্যা কাইট রানার' কি মুভি হয়েছে?
মনে হচ্ছে মুভিটা দেখেছি।

৬| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ৯:০৭

কোলড বলেছেন: You misinformed the readers by giving false narrative. That pedophilia depicted in the book was done by the Mujahedin right after the Soviet withdrawal when the book protagonists fled Afghanistan.

Taliban came much later and in fact Taliban quickly spread the influence when Taliban hanged some local Mujahedin leaders for pedophilia and rescued those children.

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.