নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কাজী নিয়াজ

কাজী নিয়াজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

হিন্দু না ওরা মুসলিম ঐ জিজ্ঞাসে কোন জন?

০৮ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:১১

কোনো কোনো হিপোক্রাট নালিশ করিয়া থাকেন, এই দেশের সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদিগ যথেষ্ঠ পরিমাণে দেশপ্রমিক নহেন। প্রমাণ স্বরূপ তাহারা পেশ করিয়া থাকেন-- ইহারা পার্শবর্তী কোনো এক দেশে জমি-বাড়ি-ফ্ল্যাট কিনিতেছেন, ব্যবসায় নিয়োজিত হইতেছেন, সন্তান-আত্নীয়দিগকে উক্ত দেশে পাঠাইয়া দিতেছেন ইত্যাদি। তর্কের খাতিরে ধরিয়া লইলাম, ইহার কিয়দংশ সত্য। কিন্তু, এই কাজ কেবল মাত্র এই দেশের হিন্দু করিতেছেন, আর কেহ করেন নাই, সেই কথা কে বুকে হাত রাখিয়া হলফ করিয়া বলিতে পারিবেন? কোনো মুছলমান কি এই দেশ স্থায়ী ভাবে ছাড়িয়া বৈদেশে কখনো পাড়ি জমান নাই? কোনো বাঙালি মুছলমান কি ভিনদেশে বাড়ি ক্রয় করেন নাই? চাকুরী-ব্যবসা ইত্যাকার পেশায় জীবিকা নির্বাহ করিতেছেন না বিভূঁই-এ? তাহা না হইলে য়ুরোপ-উত্তর আমেরিকা-অস্ট্রেলিয়া-পশ্চিম এশিয়াতে যে কর্মচাঞ্চল্যময় বাঙলাদেশি ‘ডায়াসপোরা’র কথা শোনা যায়, তাহারা কোথা হইতে উদয় হইলেন? তাহারা কি সকলেই তবে অমুছলমান?



ইহার পরে হয়ত অনেকে আবার বিবাদ করিতে আসিবেন এই বলিয়া যে, দেশের অবস্থা ‘ভালো নহে’, তাই অনেক মুমিন মুছলমান সন্তানদিগের ভবিষ্যতের দিকে চাহিয়া দেশান্তর হইতেছেন। কিন্তু তাহারা কেহ তো পাকিস্তান যাইতেছেন না, তবে কেনো হিন্দুদিগ ভারত যাইতেছেন? অন্য আরও দুই শতের অধিক দেশ তো রহিয়াছে, তাহারা কেনো ঐখানে যাইতেছেন না? ইহার দ্বারাই প্রমাণ হয়, উহারা ভারতের দালাল(!) ইত্যাদি। ইহাদের কথা শুনিবা মাত্র বোধগম্য হয় যে, ইহারা মানবজাতির অভিবাসনের ইতিহাস বা ধরণ বা কারণসমূহ সম্পর্কে খুব একটা ওয়াকিবহাল নহেন। মানুষ অভিবাসন করে ঠিকই, কিন্তু তাহাদের চেষ্টা থাকে কেমন করিয়া নিজেদের প্রাক্তন পরিবেশের সহিত সর্বাধিক মিল রহিয়াছে, এমন একটি স্থানে যাওয়া যায়। প্রকৃতপক্ষে, তাহারা অভিবাসন করিয়া আবার নিজের পরিচত কোনো পরিবেশেই যাইতে চাহেন। এই কারণেই আমারা উপমহাদেশের লোকসকল দলে দলে এংরেজি ভাষায় কথা হয়, এমন কোনো দেশেই যাইতে চাহি। আফ্রিকার যে সকল অঞ্চলে ফরাসি ভাষার প্রভাব রহিয়াছে, তাহারা যান ফরাসি দেশে। আর ল্যাতিন আমেরিকার স্প্যানিশভাষী ফুটবল খেলোয়াড়রা পয়লা খেলিতে চাহেন স্পেন দেশে প্রভৃতি। শুদ্ধ ভাষাই নহে-- ধর্ম, সংস্কৃতি, আত্নীয়তার বন্ধন, পরিবারের কেহ বা এলাকার অন্য কেহ কোন সকল স্থানে পূর্বের অভিবাসন করিয়াছেন, স্থানিক নৈকট্য, ইত্যাদি বহুবিধ সূক্ষ্ণ কারণ ও বিবেচনা অভিবাসনকে প্রভাবিত করিয়া থাকে। সেই কারণেই আমাদের পূর্ব্ব বাঙলার অনেক গরীব মুছলমান, বিশেষ করিয়া নদী-ভাঙ্গনের শিকার মানুষ, আদ্যবধি নামে-বেনামে, আইনত-বেআইনী তরিকায় যে পশ্চিম বঙ্গ বা অসমে অবস্থান করিতেছেন, তাহা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ব্যপারে সচেতন ব্যক্তিমাত্র শিকার করিবেন—যদিও তাহাদের প্রকৃত সংখ্যা লইয়া বিস্তর বিতর্ক রহিয়াছে, কিন্তু সে আর এক বিষয়। ইহার জন্যই রোহিঙ্গারা শ্যামদেশ বা মালয়ে নৌকাযোগে পাড়ি জমাইবার পূর্ব্বে চেষ্টা করেন চট্টগ্রামে আসিবার। তাহা হইলে, পূর্ব্বেই তো বলিয়াছে যে ‘দেশের অবস্থা ভালো নহে’, তাহার উপর মধ্য-ডান হইতে সুদূর দক্ষিণ পর্যন্ত বিবিধ প্রকার রাজনৈতিক সঙ্ঘের সভ্যদের করিৎকর্মা ভূমিকায় দেশের হিন্দুদিগের জন্য ’৯২, ২০০১, ২০১৩ ইত্যাদি সনে তো দেশের অবস্থা ‘যাচ্ছেতাই’ ধারণ করিয়াছিলো বা করিয়াছে, তাহা বলাই বাহুল্য। এমতবস্থায়, তাহারা কি করিবেন? প্রাণ বাঁচাইতে সচেষ্ট থাকিবেন না ঘরের মধ্যে বসিয়া বসিয়া কাবাব হইবেন? বাঙলার বেশির ভাগ গরীব হিন্দুর জন্য, সমাজ বিজ্ঞানের উপর্যুক্ত ‘পুল ফ্যাক্টর’ অনুযায়ী, তৎক্ষনাৎ পার্শবর্তী সেই দেশটিতে প্রাণ বাঁচাইতে আশ্রয় বা অভিবাসন লওয়া ছাড়া আর কোনো পথ খোলা রহে কি? চট করিয়া তো তাহারা য়ুরোপ কি আমেরিকায় চলিয়া যাইতে পারেন না। আর যে অন্য পথটি খোলা থাকে, যাহাকে বলা হয় প্রতিরোধ—খবরের কাগজের ভাষায় ‘দাঙ্গা’—তাহাতে হিন্দুদিগ ৯০ ভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সহিত পারিয়াও উঠিবেন না বা তাহা দেশের আর আর ‘শান্তিপ্রিয়’ মানুষদিগের ভাবমূর্তির জন্য বিশেষ হানিকর বলিয়া ঘৃণা ভরে পরিত্যাজ্য। অর্থাৎ দেখা যাইতেছে, আপনি রাষ্ট্রীয় ভাবে ইহাদিগকে সন্দেহ করিতেছেন, প্রমাণ-- সশস্ত্র-বাহিনীতে ইহাদেগের উপস্থিতি নগণ্য; তাহার পর ভোট ও নির্বাচনী হিসাব-নিকাশ করিয়া হয় ইহাদিগকে কতল করিতে চাহেন বা ব্যবহার করিয়া ছুড়িঁইয়া ফেলাইয়া দিতেছেন; ইহাদিগের কিছু জমি-সম্পদ থাকিলে এক-তৃতীয়াংশ দামে বা চাহে তো বিনে পয়সায় তাহা দখল করিবার নিমৃত্তে রাতের অন্ধকারে বসত বাড়ী কি দোকানে আগুন দিতে দ্বিধাবোধ করেন না; ইহাদের মুখের উপর, কিংবা ভদ্রতাবশত পিছনে, ‘মালাউন’ বলিয়া গালমন্দ করিয়া পরমসুখ পাইতেছেন; অর্থাৎ, ইহাদিগকে যত ভাবে পারিতেছেন ঠেলা-ধাক্কা দিয়া (সমাজ বিজ্ঞানের ভাষায় অভিবাসনের 'পুশ ফ্যাক্টর') সীমান্তের ওপারে ঠেলিয়া দিতে চাহেন, আর তারপর বাস্তবিকই সেই হতভাগ্যের দল যখন সেইখানে গিয়া পড়ে, তখন আকর্ণবিস্তৃত হাসি হাসিয়া বিজ্ঞের মত বলিতেছেন, “কী বলিয়াছিলাম? দেখিলে, কেমন প্রমাণ হইলো? উহারা ভারতীয়ই বটে!”



দূর্ভাগ্যক্রমে, এইরূপ মত পোষণ করেন তেমন কিছু মানুষ আমার পরিচিত। কেহ কেহ জামায়াত-এ-এসলামির ভাবাদর্শে উদবুদ্ধ, নিজামীর সততায়(!) মুগ্ধ । তাহাকে অনেক তর্কাতর্কির পর একখানা সোজা প্রশ্ন করিয়াছিলাম, চাহিয়াছিলাম এক কথায় উত্তর—“হিন্দুদিগকে এই দেশে দেখিতে চাহ নাকি না?” তাহার এককথার জওয়াবের জন্য তাহাকে ধন্যবাদ জানাই। সে জানাইলো, “চাহি না”। ইহার চাইতে ন্যাক্কারজনক ফ্যাসিবাদী মানসিকতা আর কী হইতে পারে? মজার মধ্যে বিষয় এই যে, সে আবার ইদানিং মনীষী মজহার ও সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) মাহমুদুর রহমানের গণতন্ত্রের ধারণায় ঈমান আনিয়াছে, তাহাদের বুলি ও ফ্যাসিবাদের সংজ্ঞাকে শিরধার্য জানিয়াছে। শাহবাগের আন্দোলনকে বুঝিয়া-না বুঝিয়া ফ্যাসিবাদ বলিতে শিখিয়াছে, বাঁশেরকেল্লার এডমিন-দিগকে যুধিষ্ঠির ঠাওরেছে।



অথচ, অবাক হইয়া আবার লক্ষ্য করিতেছি, এইরূপ কিছু কিছু চরম সাম্প্রদায়িক মানুষ তাহাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বেশ ‘সেকুলার’ হইয়া উঠিয়াছে। তাহাদের বিজনেস-পার্টনারদিগের মধ্যে দেশী-বিদেশী হিন্দু হইতে শুরু করিয়া, গাত্রে হিন্দুত্বের গন্ধওয়ালা বড় আওয়ামী লীগার পর্যন্ত কেহই বাদ নাই। মুনাফার কাছে সকলই হালাল হইতেছে। তখন দেশপ্রেম-এসলাম সর্বৈব শিঁকায় উঠিতেছে। ইহার চাহিতে বড় ভন্ডামি ও জচ্চুরি আর কী হইতে পারে? জানিনা ইহাই দেশের সামগ্রিক চিত্র, না শুদ্ধ আমার চেনা-জানা পরিসরের পশ্চাদমুখীনতা? তবে দেশে দেশে বোধকরি পুঁজিপতিদিগের, বুর্জোয়াদিগের রূপ এমনই হইয়া থাকে। স্মরণে আসিতেছে, প্রথম মহাযুদ্ধ সাঙ্গ হইলে এক জর্মন সমরাস্ত্র তৈয়ারির কোম্পানি এই বলিয়া বিলাতের আদালতে মোকদ্দমা ঠুঁকিয়া দিয়াছিলো যে, বিগত মহাসমরে তাহারা মিত্রশক্তিকে যে অত্যাধুনিক হাতবোমা সর্বরাহ করিয়াছিলো, তাহা এতই কার্যকর ছিলো যে আরও বেশি অর্থ তাহাদের প্রাপ্য। গ্রেনেডের ধ্বংসক্ষমতার প্রমাণ স্বরূপ তাহারে একটি পরিসংখ্যানও বিলাতি কোর্টে দাখিল করিয়াছিলো, যাহাতে কেন্দ্রীয়শক্তির (অর্থাৎ, মূলত স্বদেশী জর্মন ও জর্মনভাষী অস্ট্রিয়ান) কত সংখ্যক সৈন্য সেই ব্রহ্মাস্ত্রের ঘায়ে হতাহত হইয়াছিলেন, তাহার উল্লেখ ছিলো! মোহরের লোভে এমনই নির্লজ্জ হইতে পারে ইহারা।



পরিশেষে, কেনো বাঙালি মুছলমান পাকিস্তানে অভিবাসন করে না, সেই কথা পাড়িয়া আমার আর্জি আজকের নাহান শেষ করিবো। মানুষ অভিবাসন করিয়া থাকে আরও উন্নততর জীবনের লাগিয়া। পাকিস্তান আবার একটা দেশ যে বাঙালি ঐখানে যাইবে বোমা খাইয়া মরিতে? দ্বিতীয়ত, তাহাদের সাথে এক ধর্ম বাদে আর কোনো ব্যপারেরই আমাদিগের কোনো মিল নাই (আল্লায় রাব্বুল আল-আমিনের অশেষ রহমত), যে আমরা পরিচিত পরিবেশের আশায় অত্র গমন করিবো। তা না হইলে আর ১৯৭১ এ পাকিস্তান ‘ভাঙ্গিয়াছিলো’ কেনো?

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:১৭

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: এত বড় বিশাল লেখা পড়িবার ধর্য্য হইনি ভাই মাপ করবেন ।

২| ০৮ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:২৯

ধমাধম বলেছেন: পাকিস্তান ভাঙিয়াছিল "দ্বিজাতি তত্ত্বে"। আর ভারত ভাঙিয়া ছিল "সাম্প্রদায়িক তত্ত্বে"।

৩| ০৮ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:২৭

অভুতপূর্ব বলেছেন: আমার নিজের এক হিন্দু বন্ধু (খুবই ভালো ছাত্র এসএসসি তে মেধাতালিকায় স্থান পাওয়া) এসএসসির পর পরই স্বপরিবার কলকাতা চলে যায় জায়গা জমি সব বিক্রি করে আরো ভালো থাকার জন্য। কিন্তু কিছু দিন পর ও চিঠি লিখে জানায় ঐখানে ওরা কতটা অবহেলিত ৩য় শ্রেণীর নাগরিকের চেয়েও খারাপ ভাবে গণ্য করা হয় ওদের।এখন কি অবস্থা জানিনা।ঐখানে স্কুলে ওকে সবাই আলাদা চোখে দেখত, ফ্রি ভাবে মিশতে চাইত না কারণ সে বাংলাদেশ থেকে গেছে। ওর চিঠির একটা লাইন ছিল এই রকম-"তোমরা অনেক সৌভাগ্যবান পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী দেশের নাগরিক তোমরা"। ওর কথায় খুব খারাপ লেগেছিল। ওর তো কোন কিছুর অভাব ছিল না এই দেশে। পড়ালেখায় কোন সময় আলাদা ভাবে গণ্য করা হয়নি। তাহলে কিসের মোহে ওরা এদেশ ছেড়ে চলে গেল! ওদের তো কেউ বাধ্য করেনি! কোন দেশ সাম্প্রদায়িকতার উর্দ্ধে নয়।আমেরিকা ইউরোপ, অষ্টেলিয়াও অসাম্প্রদায়িক নয়। বরং আমাদের দেশ অন্য দেশের তুলনায় বেশি অসাম্প্রদায়িক বলে মনে হয়। যাই হোক এই দেশ পৃথিবীর সুখী দেশগুলোর লিষ্ট এ নাম লিখিয়েছে। সাম্প্রদায়িক হলে সেটা কখনও সম্ভব হত বলে আমার মনে হয়না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.