নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রিয় নজরুল

মোঃ কামাল হোসেন

আমি খুব সাধারণ একজন মানুষ। চেষ্টা করি অন্যের উপকার করতে সম্ভব নাহলে লক্ষ্যরাখি যেন অন্তত ক্ষতি না হয়।

মোঃ কামাল হোসেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রথম স্ত্রী নার্গিসকে লিখা কবির চিঠি

০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:৪১

প্রিয়তমা মানসী আমার!



আজ আমার বিদায় নেবার দিন! একে একে সকলেরই কাছে বিদায় নিয়েছি। তুমিই বাকি! ইচ্ছা ছিল, যাবার দিনে তোমায় আর ব্যথা দিয়ে যাব না, কিন্তু আমার যে এখনো কিছুই বলা হয়নি। তাই ব্যথা পাবে জেনেও নিজের এই উচ্ছৃঙ্খল বৃত্তিটাকে কিছুতেই দমন করতে পারলুম না। তাতে কিন্তু আমার দোষ দিতে পারবে না, কেননা তোমার মনে তো চিরদিন গভীর বিশ্বাস যে, আমার মতন এত বড় স্বার্থপর হিংসুটে দুনিয়ায় আর দুটি নেই।



আমার কথা তোমার কাছে কোনোদিনই ভালো লাগেনি (কেন তা পরে বলছি) আজও লাগবে না তবু লক্ষ্মী, এই মনে করে চিঠিটা একটু পড়ে দেখো যে, এটা একটা হতভাগা লক্ষ্মীছাড়া পথিকের অস্ত-পারের পথহারা পথে চিরতরে হারিয়ে যাওয়ার বিদায় কান্না। আজ আমি বড় নিষ্ঠুর, বড় নির্মম। আমার কথাগুলো তোমার বে-দাগ বুকে না-জানি কত দাগই কেটে দেবে! কিন্তু বড় বেদনায়, প্রিয়, বড় বেদনায় আজ আমায় এত বড় বিদ্রোহী, এত বড় স্বেচ্ছাচারী উন্মাদ করে তুলেছে। তাই আজও এসেছি কাঁদাতে। তুমিও বলো, আমি আজ জল্লাদ, আমি আজ হত্যাকারী কশাই। শুনে একটু সুখী হই।



আমার মন বড় বিক্ষিপ্ত। তাই কোনো কথাই হয়তো গুছিয়ে বলতে পারব না। যার সারা জীবনটাই ব’য়ে গেলে বিশৃঙ্খল আর অনিয়মের পূজা করে, তার লেখায় শৃঙ্খল বা বাঁধন খুঁজতে যেও না। হয়তো যেটা আরম্ভ করবো সেইটেই শেষের, আর যেটায় শেষ করবো সেইটেই আরম্ভের কথা! আসল কথা, অন্যে বুঝুক চাই নাই বুঝুক, তুমি বুঝলেই হল। আমার বুকেই এই অসম্পূর্ণ না-কওয়া কথা আর ব্যথা তোমার বুকের কথা আর ব্যথা দিয়ে পূর্ণ করে ভরে নিও। এখন শোনো।



প্রথমেই আমার মনে পড়ছে (আজ বোধ হয় তোমার তা মনেই পড়বে না), তুমি যেন এক দিন সাঁঝে আমায় জিজ্ঞেস করেছিলে, কি করলে তুমি ভালো হবে?

তোমারই মুখে আমার রোগ-শিয়রে এই নিষ্ঠুর প্রশ্ন শুনে অধীর অভিমানের গুরু বেদনায় আমার বুকের তলা যেন তোলপাড় করে উঠল!

হায়, আমার অসহায় অভিমান! হায়, আমার লাঞ্ছিত অনাদৃত ভালোবাসা। আমি তোমার সে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারিনি। দেয়া উচিতও হত না! তখন আমার হিয়ার বেদনা-মন্দিরে যেন লক্ষ তরুণ সন্ন্যাসীর ব্যথা জীবনের আর্ত হাহাকার আর বঞ্চিত যৌবনের সঞ্চিত ব্যথা-নিবেদনের গভীর আরতি হ’চ্ছিল। যার জন্যে আমার এত ব্যথা, সেই এসে কিনা জিজ্ঞেস করে, তোমার বেদনা ভালো হবে কিসে?...



মনে হল, তুমি আমায় উপহাস আর অপমান করতেই অমন করে ব্যথা দিয়ে কথা কয়ে গেলে। তাই আমার বুকের ব্যথাটা তখন দশগুণ হয়ে দেখা দিল। আমি পাশের বালিশটা বুকে জড়িয়ে নিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লুম। আমার সবচেয়ে বেশি লজ্জা হতে লাগল, পাছে তুমি আমার অবাধ্য চোখের জল দেখে ফেল! পাছে তুমি জেনে ফেল যে আমার বুকের ব্যথাটা আবার বেড়ে উঠেছে! যে আমার প্রাণের দরদ বোঝে না, সেই বে-দরদীর কাছে চোখের জল ফেল আর ব্যথায় এমন অভিভূত হয়ে পড়ার মতো দুর্নিবার লজ্জা আর অপমানের কথা আর কী থাকতে পারে? কথাও কইতে পারছিলুম না, ভয় হচ্ছিল এখনই আর্দ্র গলার স্বরে তুমি আমার কান্না ধরে ফেলবে!



যাক, ভগবান আমায় রক্ষা করলেন সে বিপদ থেকে। তুমি অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে কি যেন ভাবতে লাগলে। তারপর আস্তে আস্তে চলে গেলে। তুমি বোধহয় আজ পড়ে হাসবে, যদি বলি যে আমার তখন মনে হল, যেন তুমি যাবার বেলায় ছোট্ট একটি শ্বাস ফেলে গিয়েছিলে। হায় রে অন্ধ বধির ভিখারী মন আমার! যদি তাই হত, তবে অন্তত কেন আমি অমন করে শুয়ে পড়লুম, তা একটু মুখের কথায় শুধাতেও তো পারতে!



তুমি চলে যাবার পরেই ব্যথার অভিমানে আমার বুক যেন একেবারে ভেঙে পড়ল। নিষ্ফল আক্রোশে আর ব্যর্থ বেদনার জ্বালায় আমি হুঁকরে হুঁকরে কাঁদতে লাগলুম। তখন সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। তারপর ডাক্তার এল, আত্মীয়-স্বজন এল, বন্ধু-বান্ধব এল। সবাই বললে,- হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বড় অস্বাভাবিক। গতিক... ডাক্তার বললে,-রোগী হঠাৎ কোনো ইয়ে কোনো বিশেষ কারণে এমন অভিভূত হয়ে পড়েছে। এ কিন্তু বড্ডো খারাপ। এতে এমনও হতে পারে যে...।



বাকিটুকু ডাক্তার আমতা আমতা করে না বললেও আমি সেটার পূরণ করে দিলুম- একেবারে নির্বাণ দীপ গৃহ অন্ধকার! না ডাক্তার বাবু? বলেই হাসতে গিয়ে কিন্তু এত কান্না পেল আমার যে, তা অনেকেরই চোখ এড়াল না। সত্যিই তখন আমার কণ্ঠ বড় কেঁপে উঠেছিল, অধর কুঞ্চিত হয়ে উঠেছিল, চোখের পাতা সিক্ত হয়ে উঠেছিল। আমি আবার উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লুম। অনেক সাধ্য-সাধনা করেও কেউ আর আমায় তুলতে পারলে না। আমার গোঁয়ার্ত্তুমির অনেকক্ষণ ধরে নিন্দে করে বন্ধু-বান্ধবরা বিদায় নিলে। আমিও মনে মনে খোদাকে ধন্যবাদ দিলুম।











মন্তব্য ১২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:৫১

গ্রাম্যবালক বলেছেন: কবি নজরুল তাই না??

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১:২৭

মোঃ কামাল হোসেন বলেছেন: সঠিক।

২| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১:০০

জলসিড়ি বলেছেন: সামান্য একটা চিঠিতে কত আবেগী কথা-বার্তা । এতেই বোঝা যায় তার কবিতা এত সুন্দর কেন ? এটা যদি সানি লিওনকে নিয়ে কোন পোষ্ট হত তাহলে ৩৩২ বার পঠিত হতো, আর কমেন্ট থাকতো ৩০-৪০ টা ।

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১:৩৩

মোঃ কামাল হোসেন বলেছেন: সানি লিওনকে যারা পড়েন আর নজরুলকে যারা পড়েন তারা এক মানের পাঠক নয়, এ দু’শ্রেনির পাঠকের তফাৎ নিশ্চয় আপনি বুঝবেন।

৩| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৩:০৯

জাহাঙ্গীর জান বলেছেন: সারারাত রামায়ণ পাঠ করলাম, সকালে উঠি জিজ্ঞেস করলাম রাম কি ছিলো ছেলে না,মেয়ে ? বিদায় বেলায় কবি, সত্যিই আবেগ উৎকণ্ঠা ছিলেন ।

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১:৩৭

মোঃ কামাল হোসেন বলেছেন: আবেগ মানুষের কখনো হারায় না ছোট বেলায় থাকে হালকা আবেগ, ক্রমে তা হয পরিপক্ক। নজরুল ও তার ব্যতিক্রম নয় কিন্তু তিনি অনেক ষড়যন্ত্রের শিকার হন। এ বিষয়ে সময় পেলে একটা প্রবন্ধ লিখে এই ব্লগে প্রকাশ করব আশা এ রাখছি।

৪| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৪:১৬

বেওয়ারিশ পাণ্ডুলিপি বলেছেন: কবির বেশ ক"টা চিঠি পড়েছি। যেন অমৃতের পেয়ালায় চুমুক নাকি... কি বলবো আমি যে ভাষাহীন।

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১:৪৩

মোঃ কামাল হোসেন বলেছেন: সাহিত্যের সকল শাখায় নজরুল দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন চিঠিও তার ব্যতিক্রম নয়, তার চিঠির ভাষা যে কত উঁচুমানের হতে পারে এর প্রমাণ পাবেন তার লেখা পত্র উপন্যাস ‘বাঁধন হারা’য়।

৫| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:৪৬

সংগ্রামী বালক বলেছেন: পড়ে ভালো লাগলো।

০৫ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৪:৪৮

মোঃ কামাল হোসেন বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই সংগ্রামী বালক মনযোগ দিয়ে পড়বার জন্য।

৬| ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৫:০৩

মহাপাগল বলেছেন: অসাধারণ

৭| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:৫৮

মোঃ কামাল হোসেন বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই মহাপাগল, চিঠিটির মর্ম অনুধাবন করার জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.