![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সামুব্লগের সাথে নিয়মিত পাঠক হিসেবে পরিচিত অনেক দিন যাবত। দেখাযাক মাঝে মাঝে কিছু লিখতে পারি কিনা.........
সংস্কৃত ইতি+আদি-র সন্ধির ফলে ইত্যাদি শব্দের উৎপত্তি। ইতি মানে ইহা, শেষ আর আদি মানে প্রথম, খাঁটি মূল বা আরম্ভ। শব্দার্থে ইত্যাদি হচ্ছে ইতি হতে আরম্ভ, অর্থাৎ সম্পূর্ণ বা পূর্ণাঙ্গ। সমাস করলে দাঁড়ায়: ইতি হয়েছে আদি যার।।বহুব্রীহি। অর্থাৎ এখানেও পূর্ণাঙ্গ। কিন্তু ব্যবহারিক অর্থে ইত্যাদি মানে ‘এগুলো এবং এরূপ আরো অনেক’। যেমন বাংলাদেশে বাস করে এ ধরনের কয়টি পাখির উদাহরণ দিতে কাক,চিল, বক, শালিখ, ময়না, দোয়েল ইত্যাদি। এ বাক্যে ইত্যাদি শব্দে বোঝানো হচ্ছে।।এরূপ আরো আছে। সময় এবং স্থানাভাবে তাদের নাম দেয়া গেল না, কিন্তু আমি জানি ইত্যাদির প্রতিশব্দ প্রভৃতি। ইত্যাদি শব্দটি অব্যয় পদ।
প্রভৃতি শব্দটি কখনো বিশেষণ, কখনো অব্যয়। সং প্র+ র(ভৃ)+তি = প্রভৃতি। বিশেষণ হিসেবে প্রভৃতির অর্থ ইত্যাদি, আর অব্যয় হিসেবে এর অর্থ অবধি বা পর্যন্ত। শব্দগত বা ব্যবহারিক দিক দিয়ে প্রভৃতি এবং ইত্যাদি সমার্থক। বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধান, সুবলচন্দ্র মিত্রের সরল বাঙ্গালা অভিধান, রাজশেখর বসুর চলন্তিকা, সংসদ বাঙ্গালা অভিধান সেরকমই বলে। কিন্তু ইত্যাদি আর প্রভৃতির মধ্যে যে ব্যবধান বা পার্থক্য তা সম্পূর্ণরূপেই প্রায়োগিক। ভাষা শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে ইত্যাদি আর প্রভৃতির ব্যবহার সম্পূর্ণ একটা রীতি-র মত চলে আসছে। আজ আর তার ব্যতিক্রম ঘটানো যাবে না, তা নয়। তবে তা হবে শৃঙ্খলা ভঙ্গের নামান্তর। তাতে ভাষা দীর্ঘদিনের বৈশিষ্ট্যচ্যুত হবে। নষ্ট হবে সৌন্দর্য।
ইত্যাদি আর প্রভৃতির ব্যবহার ব্যাকরণে বহুবচন বাচক শব্দ বা অব্যয়সূচক প্রত্যয় রা,এরা, গণ, গুলি, গুলা, গুলো, বৃন্দ, বর্গ, রাজি, রাশি, সকল, সমূহ, সমুদয়, দল, দাম, নিচয়, নিকর, মালা, আবলী, গোষ্ঠী, যূথ ‘প্রভৃতি’র ব্যবহারিক নির্দিষ্ট নিয়মের মতই। এর যে কোনটি যে কোন বহুবচন বাচক শব্দের শেষে যুক্ত হবে না। যেমন সাধারণত উন্নত প্রাণিবাচক শব্দে ‘রা’ ব্যবহৃত হয়: মুক্তিযোদ্ধারা, ছাত্ররা (কবিতায় অবশ্য ব্যতিক্রম ব্যবহার প্রচলিত)। কিন্তু গণ, বৃন্দ, মণ্ডলী, বর্গ কেবল উন্নত প্রাণিবাচক শব্দের বহুবচনেই ব্যবহৃত হয়। যেমন দেবগণ, জনগণ সুধীবৃন্দ, শিক্ষকবৃন্দ, সম্পাদকমণ্ডলী, মন্ত্রীবর্গ।
তেমনি কেবল অপ্রাণিবাচক শব্দে আবলী, গুচ্ছ, দাম, মালা, রাজি ব্যবহৃত হয়; যেমন শব্দাবলী, গ্রন্থাবলী, অশোক গুচ্ছ, কবিতা গুচ্ছ, শৈবালদাম, কুসুমদাম, পর্বতমালা, পুষ্পরাজি, তারকারাশি। সেক্ষেত্রে জনগুচ্ছ, জনমালা, জনরাশির ব্যবহার নেই; তেমনি ইত্যাদি, প্রভৃতির ব্যবহারের নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। পার্ল ও যূথ যেমন কেবল জন্তুর জন্য নির্দিষ্ট।
ইত্যাদি ব্যবহৃত হয় মানবেতর প্রাণী, জড়বস্তুর কয়েকটি উদাহরণের পর। যেমন টগর, বেলি, জবা, কামিনী ইত্যাদি। বই, খাতা, কলম ইত্যাদি।
অন্যপক্ষে প্রভৃতি ব্যবহৃত হয় শব্দ, সাহিত্য, ব্যাকরণ শাস্ত্রের একাধিক উদাহরণের পর। যেমন পৃথিবীতে অনেক মহাকাব্য রচিত হয়েছে। যেমন রামায়ণ, মহাভারত, মেঘদূত, ইলিয়াড, ওয়ার অ্যান্ড পিস প্রভৃতি। তবে অনেক ক্ষেত্রেই ইত্যাদি আর প্রভৃতি-র যুগপৎ ব্যবহার হয়ে থাকে।
ইত্যাদি আর প্রভৃতি-র মত বচনবাচকতা, বহুত্ববাচকতার আরো একটি শব্দ রয়েছে প্রমুখ। ‘প্রমুখ’ শব্দের আভিধানিক অর্থ বিশেষণ হিসেবে শ্রেষ্ঠ, উত্তম, প্রধান। আর অব্যয়রূপে ইত্যাদি, প্রভৃতি। বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধান মতে প্রমুখ আদি, প্রভৃতি, অগ্রণী বা নেতা। সংসদ বাঙ্গালা অভিধান মতে প্রমুখ (সমাসে উত্তরপদরূপে) আদি, প্রথম, প্রধান, প্রভৃতি। যেমন ব্যাস প্রমুখ কবিগণ। ইদানীং সংশোধিত নিয়মে প্রমুখ ব্যবহৃত হলে ‘গণ’ ব্যবহৃত হয় না।
প্রমুখ শব্দটি বহুবাচক এবং ইত্যাদি প্রভৃতির সমার্থক। এটি প্রয়োগক্ষেত্রে সামান্য দূরত্ব বজায় রেখেছে। এটি যত্রতত্র ব্যবহৃত হয় না। জ্ঞানী, কবি, পণ্ডিত গুণিজনদের বহুবচন বোঝাতে অর্থাৎ উদাহরণে কয়েকজনের নাম দিয়ে, এরূপ আরো আছে বোঝাতে ‘প্রমুখ’ ব্যবহৃত হয়। যেমন শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, নির্মলেন্দু গুণ প্রমুখ কবি বাংলা কবিতাকে নতুন মাত্রা দিতে সক্ষম হয়েছেন। অন্যপক্ষে চরিত্রহীন, লম্পট, ছিঁচকে বা সিঁধেল চোর এদের তালিকা অসমাপ্ত হলেও সেক্ষেত্রে ‘প্রমুখ’ বসবে না। যেমন প্রাথমিক তদন্তে অপরাধী হিসেবে যারা তালিকাভুক্ত হয়েছে তারা হল হামিদ, বজলু। এই ‘বজলু’র পরে প্রমুখ ব্যবহৃত হবে না। এখানে ব্যবহার করা যেতে পারে গয়রহ/ বগয়রহ/ গং (যদিও শব্দটি আরবী ‘বগইরহ’ শব্দজাত, অর্থ ইত্যাদি)।
অতএব ইত্যাদি, প্রভৃতি, প্রমুখ, বগয়রহ গয়রহ শব্দগুলো সমার্থক হলেও ব্যবহারের রীতি অনুসারেই এগুলোর ব্যবহার করা উচিত। অন্যথায় বাংলাভাষা দীর্ঘদিনের ভাষা শৃঙ্খলা বা ভাষা সৌকর্য হারাবে।
(বাংলা ব্যাকরণ বিষয়ে আমার মায়ের আরো একটি লেখা পাঠকদের সাথে শায়ার করলাম)
১০ ই জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৪:৪২
ক্ষুধিত পাষাণ বলেছেন: একই অবস্থা আমারও!
২| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৪:২৮
বোতল ভূত বলেছেন: ব্যকরণ নিয়ে আপনার মায়ের লেখাগুলো অসাধারণ। উনার লেখা কোন বই আছে কি?
১০ ই জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৪:৫৭
ক্ষুধিত পাষাণ বলেছেন:
না ভাই আমার মায়ের লেখা কোনো বই নেই। তবে ব্যাকরণ বিষয়ে বেশ কিছু লেখা দৈনিক ইত্তেফাক ও দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।
আমার মা ছিলেন স্কুল-কলেজ(ক্লাস থ্রী থেকে ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত) শিক্ষিকা। আমাদের এলাকার সকল স্কুল/কলেজে মায়ের ব্যাকরণ জ্ঞান ও দক্ষতা সম্পর্কে সুনামছিল। তিনি "বাংলা ব্যাকরণের শব্দগত ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ" নামে একটি ব্যাকরণ বইয়ের পান্ডুলিপি লিখেছিলেন। মা বেঁচে থাকতে চেস্টা করেছিলেন বই বেড় করতে। কিন্তু মফস্বল জেলা/উপজেলা শহরে ঐ বই প্রকাশ করার সুযোগ ছিলনা। মায়ের কয়েকটি লেখা আমার স্ত্রী গুছিয়ে বাংলা একাডেমীর প্রকাশনা দপ্তরে দেখিয়েছে। বাংলা একাডেমী লেখাগুলোর প্রসংশা করেছে এবং সব লেখাগুলো দেখার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।সেমতে আমার স্ত্রী মায়ের সব লেখাগুলো একত্রিত করেছে-বাংলা একাডেমী কর্তিপক্ষকে দেবার জন্য।
দোয়া করবেন।
৩| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৪:৩৫
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: চমৎকার লেখা।
১০ ই জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৪:৫৮
ক্ষুধিত পাষাণ বলেছেন: ধন্যবাদ।
৪| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৪:৪৮
প্রকৌশলী মোঃ জুলফিকার আলী জুয়েল বলেছেন: আমরা হয়ত অনেকেই এভাবে ব্যবহার করি, কিন্তু কেন করি তা জানিনা। অসাধারন লেখা। আপনার মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। আপনার মায়ের আগের লেখাটাও পড়েছি। ভাল হতো যদি আপনার লেখায় আগের লিংকটা দিয়ে দিতেন। যারা পড়েনি তারা পড়ে নিতে পারতো। অসংখ্য ধন্যবাদ।
১০ ই জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৫:০৪
ক্ষুধিত পাষাণ বলেছেন:
ধন্যবাদ।
আমার মায়ের জন্য দোয়া করবেন।
আগের লেখার লিংক-http://www.somewhereinblog.net/blog/khudhitopashan/29507704
৫| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৫:০৬
মুনতাশীর বলেছেন: আপনার আম্মার প্রতি সশ্রদ্ধ সালাম।
১৫ ই জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৫:০১
ক্ষুধিত পাষাণ বলেছেন: ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
৬| ১১ ই জানুয়ারি, ২০১২ সকাল ৯:৫৪
বান_দর বলেছেন: রাজীব ভাই, ব্যাকরণ বিষয়ে আমার বলার কোনো যোগ্যতা নাই। আপনার মা'র প্রতি সশ্রদ্ধ সালাম জানাই। আল্লাহ তাঁকে বেহেস্ত নসীব করুন।
১৫ ই জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৫:০১
ক্ষুধিত পাষাণ বলেছেন: ধন্যবাদ পল্টু ভাই।
৭| ১১ ই জানুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১২:৩৮
জোছনার আলো বলেছেন: ভাল লাগল।
১৫ ই জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৫:০১
ক্ষুধিত পাষাণ বলেছেন: ধন্যবাদ লোকমান ভাই।
৮| ১২ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:০৩
জুন বলেছেন: ব্যকরনকে আমি যমের মত ভয় করতাম। আপনার বেহেস্তবাসী মায়ের সরল ভাবে লেখা ব্যাকরণ পড়ে ভয়টা বেশ খানিকটা কেটে গেলো ক্ষুধিত পাষান ভাই।
+
১৫ ই জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৫:০২
ক্ষুধিত পাষাণ বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ জুনাপু।
৯| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৪:৫৯
নাসরিন ফারুক বলেছেন: ভাল লাগল।
১৫ ই জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৫:০২
ক্ষুধিত পাষাণ বলেছেন: ধন্যবাদ।
১০| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৫:১৭
ফ্লাইওভার বলেছেন: এত কঠিন লেখা বুঝিনা-তবে আপনার আম্মাকে সালাম জানাই। আল্লাহ তাঁকে বেহেস্ত নসীব করবেন।
২০ শে জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৩:৩৫
ক্ষুধিত পাষাণ বলেছেন: ধন্যবাদ।
১১| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ৮:৩৮
ইশতিয়াক আহমেদ চয়ন বলেছেন: ১১তম ভাললাগা
চমৎকার লেখা !!
২৮ শে জানুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৪৭
ক্ষুধিত পাষাণ বলেছেন: ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
১০ ই জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৪:১৯
কলির কৃষ্ণ বলেছেন: ব্যাকারণের প্যাচে আমার মাথা ঘুড়াইতাছে!