![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার লেখা ছোট গল্প সবাই পড়বেন আশা করি
সঞ্চয়
মোঃ হেলাল হোসেন
করিম মিয়া একজন গরিব কৃষক তার তেমন বেশি জমিজমা নেই। নিজের যেটুকু আছে আর অন্যের ক্ষেতে কাজ করে কোন মতে তার সংসার চলে, তার এক ছেলে ও এক মেয়ে, ছেলের নাম মিন্টু মিয়া আর মেয়ের নাম আছিয়া, তারা পড়ালেখা করে ,মিন্টু মিয়া ক্লাস ফোরে পড়ে আর্ আছিয়া ক্লাস ওয়ানে পড়ে, করিমের অর্থের অভাব থাকলেও সংসারে সুখের অভাব নেই, সে যেহেতু নিজে লেখাপড়া জানে না তাই তার সন্তানদের সে পড়ালেখা শিখাতে চায়, সে জানে লেখাপড়া করাতে অনেক টাকা খরচ হবে, তার নিজের বলতে তেমন সম্পদ নেই, তার সম্বল বলতে তার দেহখানা, সে যদি সুস্থ থাকে তো কাজকাম করে টাকা পয়সা রোজগার করতে পারবে, একবার প্রচুর বৃষ্টি হল, টানা প্রায় পনের দিন, এখন একটু থামেতো খানিক পরে আবার শুরু , কোন কাজকাম নেই চারিদিকে শুধু পানি আর পানি ক্ষেতখামার সব পানির নিচে তলিয়ে গেছে তার মাঠে পাকা ধান ছিল আর মাত্র কয়েকদিন গেলে কাটতে পারতো তা সব শেষ, এখন কাজ বলতে মাছ ধরা, সকলের পুকুর পানিতে ছয়লাব তাই মাছের অভাব নেই, সে জাল নিয়ে মাছ ধরতে গেল মাছও পেল প্রচুর , ঘরে চাউল নেই সে ভাবলো মাছগুলো বাজারে বিক্রি করে বাজার সদাই করবে কিন্তু মাছের বাজারে এসে তার চক্ষু চড়কগাছ, শুধু বিক্রেতা আছে ক্রেতা নেই কে কিনবে কার মাছ, বেশ খানিকক্ষণ অপেক্ষা করে সে কোন ক্রেতা পেল না তাই বাড়ি ফিরল, সে বউকে বলল কোন দিন বাচ্ছাদের ভাল মত মাছ খেতে দিতে পারি না সব রান্না কর আজ সবাই মিলে বেশি করে মাছ খাব, তার বউ বলল মাছ কি শুধু খাবে ? ঘরে কোন চাইল নাই তেল মসলা নাই রাধব কি করে, করিম মিয়া বলল আমি মোড়ল সাহেবের কাছে যাচ্ছি দেখি কোন ব্যবস্থা করা যায় কিনা, করিমের আসতে দেরি দেখে তার বউ অর্ধেক মাছ একজনকে দিয়ে তেল মসলা নিয়ে এসে মাছ রাধলো, করিম খালি হাতে বাড়ি ফিরে বলল, সে কোন টাকার ব্যবস্থা করতে পারেনি এখন যে কাউকে মহাজোন টাকা সুদে দিচ্ছে না, আর সুদও খুব চড়া, সে বউকে বলল কোন উপায় করতে পারলাম না যদি সুদে টাকা নেই তো ভিটে মাটি বিক্রি করতে হবে এখন ভরসা হালের বলদ, আমি বেঁচে থাকতে আমার বাচ্ছাদের না খেয়ে মরতে দিব না, আমি হালের বলদ বিক্রি করে দিব, যদি বেঁচে থাকি তো আবার কিনবো, মিন্টু তার বাবার কথা সব শুনলো, সে জানে তার বাবা যদি হালের বলদ বিক্রি করে তাহলে তার বাবাকে আবার হাল টানতে হবে, আগে তাদের একটি হালের বলদ ছিল তখন একটি বলদ একপাশে আর অন্যপাশে তার বাবা হাল টানতো তার মা লাঙ্গল ধরে রাখতো এটা দেখে মিন্টুর খুব কষ্ট লাগতো, কিছু দিন আগে তার মায়ের কানের দুল বিক্রি করে তারা আর একটি বলদ কিনেছে, এখন আবার অভাবের জন্য সেটা বিক্রি করতে হবে, মিন্টু সেই সময় থেকে কিছু কিছু করে টাকা জমাতো .সে মিঠাই কেনা টাকা তার মাটির ব্যাংকে জমাতো কোন দিন মিঠাই খেত না বাজার করার কিছু টাকা বাবার কাছ থেকে নেওয়া টাকা সে এতদিন জমিয়েছে আজ তার বাবা বলদটিকে গোসল করিয়ে সুন্দর করে সিংএ তেল দিয়ে বাজারে নিয়ে যাবার জন্য তৈরি করেছে, মিন্টু তার বাবাকে বলল বাবা তুমি গরু বিক্রি করবে কেন? তার বাবা বলল কি করব আর কোন উপায় নেই ঘরে খাবার নেই তাই বিক্রি করবো, সে বলল তাহলে তো তোমার আবার অনেক কষ্ট হবে তোমাকে আবার হাল টানতে হবে, তার বাবা বলল আমার বাবা সারা জীবন একটি বলদ দিয়ে চালিয়েছে সে পারলে আমিও পারবো আর টাকা হলে আবার কিনবো, না খেয়েতো থাকা যাবে না, মিন্টু বলল চালডাল কিনতে কত টাকা লাগবে ? তার বাবা বলল এই ধর হাজোর খানেক, মিন্টু তার মাটির ব্যাংক এনে বাবার সামনে ভাঙ্গল এবং বলল এখানে এর চেয়ে বেশি টাকা আছে, টাকা গুনে দেখা গেল এক হাজার দুই শত সতের টাকা , মিন্টুর মা বলল আজ বাজার থেকে তুমি চারটি মাটির ব্যাংক কিনে আনবে আজ থেকে আমরা সবাই সঞ্চয় করবো, মিন্টুর বাবা মিন্টু জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল আর বলল আজ তোমার সামান্যে সঞ্চয় আমার অনেক কষ্ট লাঘব করেছে আজ আমি যদি তোমার মত সারাজীবন সঞ্চয় করতাম তাহলে সংসারে অভাব হতো না, [email protected]
©somewhere in net ltd.
১|
১২ ই মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৩
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: পড়লাম