নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মো: হেলাল হোসেন

আমি একজন গবেষক ও সমালোচক

মো: হেলাল হোসেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

মেধা বুদ্ধি ও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা

১৪ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১:৩৫

মেধা বুদ্ধি ও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা

শিক্ষকদের ছোটবেলার উপদেশগুলো মনে পড়লে খুব হাসি লাগে, তারা বার বার বলতো পড় পড় পড় জীবনে কিছু করতে হলে বেশি করে পড়তে হবে,যত পড়বে তত জ্ঞান বৃদ্ধি হবে, আমি ভাবতাম তার উল্টো ,কম পড়বো পাশ করবো ছোটখাটো চাকরি করবো বাপের যা আছে তাই দিয়ে কোন রকমে জীবন পার করবো, স্কুলে যাওয়ার ইচ্ছা কোন দিন মন থেকে হয়নি কিন্তু মাঠে কাজ করার ভয়ে স্কুলে যেতাম আমার বড় ভাই বাবার সাথে মাঠে কাজ করতো কি যে কষ্ট, কখনো খাঁ খাঁ রোঁদে আবার বৃষ্টিতে ভিজে কখনো কনকনে শীতের মধ্যে জলে নেমে কাজ কর, তাই দেখে ভাবলাম স্যারদের প্যানপ্যানানি আর মাঝে মার খাওয়া এর চেয়ে বেশি ভালো ।অবশ্য মার খুব কম খেয়েছি আমাদের মারখুটে স্যারকে আমি বশ করেছি স্যারের গা টিপে দিতাম মাঝে মাঝে পান খাওয়াতাম আর এতেই তিনি আমাকে রেহাই দিতেন, ক্লাসের কারক, সমাস, সন্ধি, অনুবাদ, voice, tense , narration অংক কখনোই আমার মাথায় ঢুকতো না আমার ক্লাসের ফাস্ট বয়কে বসে এনে পরীক্ষায় কোন মতে পাশ করতাম আর এভাবেই আমি এসএসসি পাশ করলাম ভাবলাম রেহাই পেয়েছি , কারণ আমাদের স্কুলের তপন স্যার এসএসসি পাশ, সে তুখোর জ্ঞানী, ইংরেজি বাংলা অংক তার কাছে ডালভাত, কোন ভুল নেই। তিনি আমাদের বলতেন তোরা আমার ছাত্র তোদেরতো আর দেখানো যায় না আমার পাছায় যে কি পরিমাণ দাগ তা দেখলে বুঝতিস পড়ালেখা কারে বলে। আমি তিনদিন বেঞ্চে বসতে পারেনি লক্ষন স্যার এমন মারা আমাকে মেরেছিল তারপর আমার আর পিছুনে ফিরে তাকাতে হয়নি দিনে আট দশ ঘন্টা পড়তাম আর স্কুল তো ছিলোই, আমি চুল বড় রেখেছিলাম রাতে পড়ার সময় ঘরের আড়ার সাথে দড়ি ঝুলিয়ে চুলের সাথে বাঁধতাম ঘুম এলেই চুলে টান লাগতো, আর এভাবেই এসএসসি পাশ করেছি আমাদের থানায় কোন কলেজ ছিল না তাই আর পড়ালেখা হল না। স্যারের কথা শুনে ভাবতাম এর চেয়ে আর কি পড়ার আছে সে তো সব কিছুই জানে। কিন্তু এসএসসি পাশে কোন কাজ হলো না এখন আমাদের থানা শহরে কলেজ আছে ,আমি সেখানে ভর্তি হলাম আবার যন্ত্রনা শুরু পড় পড় পড় স্যাররা নানা বিজ্ঞানী, দারশনিক সাহিত্যিকদের নাম বলতো আর তাদের পরিশ্রমের কতা শুনাতো আমি খুশি হতে পারতাম না কারণ তেমন কিছু হওয়ার ইচ্ছা আমার ছিল না, আমি পাশেই খুশি, কিন্তু হল না এবার একবারে পাশ করতে পারলাম না, এখনকার মত এক বিষয়ে ফেল করলে একটা পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল না, তাই গুষ্টিশুদ্ধ বই আবার পড়তে হলো বহু কষ্টে অনেক অটো নোট মুখুস্ত করে কোন রকমে পাশ করলাম, আমি বহুত খুশি হলাম এবার রেহাই পেয়েছি, আর পড়তে হবে না কারণ এর পর পড়তে হলে জেলা শহরে যেতে হবে বহু খরচের ব্যাপার, তাই বাদ বাড়ি কিছুদিন শুয়ে বসে কাটালাম ,বাবা কিছু একটা করতে বলল কিন্তু কি করবো আমিতো কিছু জানি না, কোন মতে পাশ করেছি বাবা বলল আমি চেয়ারম্যানের সাথে আলাপ করেছি সে বলেছে আমাদের গ্রামে ও আশে পাশে কোন স্কুল নেই তাই একটি প্রাইমারী স্কুল করা যায়, যে ভাবা সেই কাজ আমাদের উত্তর পাড়ার একবিঘা জমি অনেক দিন থেকে পরিত্যাক্ত নিচু জমি তাই ফসল হয় না সেখানে স্কুল করা হবে গ্রামের শিক্ষিত বেকারদের নিয়ে স্কুল শুরু করলাম বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাঁশ সংগ্রহ করা মাটি দিয়ে জমি উচু করা সব হলো ,আমি যেহেতু জমি দাতা তাই হেড মাস্টার আমি, আর তিন জন বিশ হাজার করে টাকা দিল গ্রাম থেকে চাইল,বাঁশ বাজার থেকে টাকা চাঁদা হিসেবে তোলা হল চেয়ারম্যান টাকা নিয়ে আশ্বাস দিল আমি এমপির কাছে শুপারিশ করে স্কুলের বেতনের ব্যবস্থা করবো আমরা মহৎ কাজ করেছি সে অবশ্যই সহযোগিতা করবে । এভাবে পাঁচ বছর চলল তারপর বেতন পেলাম । কোন সমস্যা নেই আমি কিছুই পড়াই না শুধু স্কুলে যাই আর বসে থাকি খাতা কলম নাড়াচাড়া করি, এর ফলে যা জানতাম তাও ভুলে গেলাম ,তাই ছাত্র-ছাত্রীদের থেকে দূরে থাকি, যদি কোন প্রশ্ন জানতে চায় তো মান-সম্মানের ব্যাপার , একদিন দেখি আমাদের অংক স্যার রোদে বসে আছে এক ছাত্র এসে স্যারকে বলল স্যার এই অংকটা করে দেননা আমি পারছি না, স্যার বলল লাঠি আনো সে লাঠি আনলো স্যার ছেলেটির পাছায় কষে দুই বাড়ি দিলেন আর বললেন এবার পারবা ? ছেলেটি বলল স্যার পারবো পারবো, আমি দেখে হাসলাম আমার কিছু করার নেই কারণ আমিও অংক পারবো না, আমার স্যাররা স্কুলে যে অংক করারে তা আগেরদিন মুখস্তো করে আসে স্কুলে এসে কোন কথা কারো সাথে বলে না আগে বোর্ডে অংক করে, কোন প্রশ্নের উত্তর দেয় না অংক করার পর ছাত্র-ছাত্রীদের বলে খাতায় তুলে মুখস্তো কর। এভাবেই তারা অভ্যাস্ত। আমারা শিক্ষার আলো ঘরে ঘরে পৌছে দিয়েছি তাই সরকারের কাছে জোর দাবী জানালাম স্কুল সরকারি কর, সরকার আমাদের দাবী পূরণ করলো এখন আমরা সরকারি শিক্ষক । এখন শেষ বয়সে চাকরি থেকে অবসর নিয়ে পেনশন তুলবো আর খাবো কিন্তু আমার বন্ধুদের কথা মনে পড়ে সে আজো কৃষক ফাস্ট বয় টাকার অভাবে আর পড়তে পারেনি কোন চাকরিও পায়নি কিন্তু সে আমার চেয়ে ভাল জানে কিন্তু লাভ কি ? মাঝে মাঝে ভাবি আমি কাজটা ঠিক করলাম ,দেশের সবথেকে গুরুত্বপূণ প্রাথমিক শিক্ষাটাকে নড়বড়ে করে দিলাম না ? আমাদের শিক্ষদের মত কি কাউকে শিখাতে পেরেছি এই কষ্ট আমার সব সময় কিন্তু অন্যদের অবস্থা যেহেতু একই তাই কষ্টটা কম লাগে , তবে আমি শিক্ষক হয়ে কিছু উপদেশ দিচ্ছি মানা না মানা সরকারের কাজ

1. ভাল ছাত্র হলেই ভাল শিক্ষক হওয়া যায় না, পড়া বোঝানোর ক্ষমতা সকলের এক হয় না তাই শিক্ষার্থীদের দিয়ে শিক্ষক নির্বাচন করতে হবে, পাঁচ জন শিক্ষক একটি বিষয়ে দুটি ক্লাস নিবে সেখান থেকে শিক্ষার্থীরা শিক্ষক বাঁছাই করবে।

2. শিক্ষকদের প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা দিতে হবে বেতন ভাতা বৃদ্ধি ও প্রতি জেলা,উপজেলায় শিক্ষক দের জন্য উন্নতমানের আবাসিক এলাকা করতে হবে।হাসপাতাল সহ সেবা ক্ষেত্রে কোটা সংরক্ষ করতে হবে।

3. কোনভাবেই যোগ্যতার ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া চলবে না ,কিছুদিন আগে মেয়েরা এসএসসি পাশ করে আর পুরুষরা ডিগ্রিপাশ করে শিক্ষক পদে যোগদান করেছে. মেয়েরা জন্ম থেকে বেশি জানে?

4. স্কুল সীমিত করতে হবে এখন যত স্কুল আছে তার অর্ধেক বাদ দিলে খরচ কম হবে শিক্ষকদের সুবিধা বাড়নো যাবে, দেশের বড় এক স্কুল যদি একহাজার শিক্ষার্থী পড়াতে ও মান ধরে রাখতে পারে তো ইউনিয়ন,উপজেলায় কি পাঁচশত শিক্ষার্থী পড়ানো যায় না ?

5. শ্রেষ্ঠ শিক্ষক পদক প্রদান ও প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

6. স্কুলের পরিবেশ উন্নত ও যাতায়াত, ও বিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে, শিক্ষা ক্যালেন্ডারে এখন 85 দিন ছুটি আছে সেটা কমাতে হবে।

এখন যারা সফল তারা কোন কিন্ডারগার্টেন বা কোচিং এ পড়েনি তারা আজ আমলা সচিব, ব্যাংকার ,শিক্ষক তারা কিভাবে শিক্ষালাভ করেছে তা থেকে জ্ঞান লাভ করে প্রয়োগ করতে হবে।

লেখাটি কোনভাবেই কাল্পনিক নয় বরং বাস্তবিক চাইলে প্রমাণ দিতে পারবো এখনই যদি ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয় সামনে খারাপ অবস্থা অপেক্ষামা

বি:দ্র: মেধাবী আদর্শ শিক্ষকরা কষ্ট পাবেন না আপনারা আছেন বলে প্রদীপটা এখনো দুকে ধুকে জ্বলছে

[email protected]

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১:৩৬

মো: হেলাল হোসেন বলেছেন: জীবন থেকে নেওয়া সবাইকে পড়া উচিত

২| ১৪ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১:৫৩

আরাফাত নিলয় বলেছেন: ভালো বলেছেন। কিন্তু আমাদের সমাজে যে ম্যাটেরিয়ালিস্টিক ব্যবস্থা প্রচলন রয়েছে, তাতে আপনি চাইলেই এ অবস্থার পরিবর্তন করতে পারবেন না।
আমি ঢাকা শহরে বড় হয়েছি, কিন্তু জীবনে টেবিলে বসে ২/১ ঘন্টা পড়াশোনা করিনি। এস.এস.সি, এইচ.এস.সি- তে রেজাল্ট আমার ৩.৮৮ ও ৩.১০। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এডমিশন দেয়ারও সুযোগ পাইনি। কিন্তু তাতে কী আমার খুব ক্ষতি হয়েছে?
আজ আমি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়ছি ইংলিশ লিটারেচারে। টাকার অভাবে ইউনিভার্সিটি লাইফে ১টাও বই কিনার সৌভাগ্য হয় নি। কিন্তু আমি ক্লাসের সেকেন্ড সি.আর। আমার জিপিএ- ৩.৫৫ (আউট অফ ৪ এ), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাবল জিপিএ ৫ নিয়ে যারা ভর্তি হতে পারে নি, আজ তারা আমার মতো জিপিএ ৩.১০ এর স্টুডেন্ট-এর কাছ হতে লিটারেচারের ব্যাখ্যা শুনতে আসে।

আমি মনিপুর স্কুলের দুই ছাত্রকে পড়াই। তাদেরকে আমি- ফিলোসফি, ধর্ম, সাহিত্য, সংস্কৃতি, মানবতা, প্রর্ভতি বিষয় বলি বলে, তাদের বাবা-মা অমাকে উদ্ভট শিক্ষক মনে করে। বই ছাড়া অনার্স শেষ করে ফেলছি শুনলে বিশ্বাস করতে চায় না, করলেও আমাকে স্টুডেন্ট মনে করে না।
সমাজের সব সুবিধা নিয়ে শিক্খার্থীরা আসলে পড়াশোনা করছে জিপিএ-৫ এর যু্দ্ধে জিতার জন্য। মনের গভীরে থাকা জ্ঞানের বাসনাকে জাগ্রত করার জন্য নয়। আমি অভাবী হয়ে এখন বিপদে পড়েছি, এ বই পড়ার নেশা, কেনো ছাড়ছি না- সে অভিযোগ কাঁধে নিয়ে ঘুরছি সমাজের কাছ থেকে, পরিবারের কাছ থেকে।
বলুন, কী আশা করতে পারি এ সমাজ থেকে?

৩| ১৪ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ২:০৫

টুম্পা মনি বলেছেন: হুম ভালো লিখেছেন।

১৪ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৪:২৮

মো: হেলাল হোসেন বলেছেন: আরাফাত সাহেব আপনি মোটেও অমেধাবী নন, আর আপনি পাঠ্য বই বর্হিভুত পাঠক যা আপনার লেখায় বোঝা যায়, অনেকে কষ্ট করে ব্লাগটা পড়ে না আপনি পড়েছেন, শেখার বয়স এসএসসি পর্যন্ত যা আমরা শিখতে পারিনি আর এর জন্য শিক্ষা পদ্ধতী দায়ী ,এসএসসির পর গবেষণার বয়স , আসুন আমরা সমাজটাকে মনের মত করে গড়ে তুলি আমাদের নতুন প্রজন্মকে শিখতে সুযোগ করে দেয় আমি যে কাজ পারি না তার দায়িত্ব কেন নিব, আমি যেটা ভাল পারি সেটা করার সুযোগ চাই।

৪| ১৪ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ২:১৬

নবাব চৌধুরী বলেছেন: লেখক আপন কয়েকটা দারুন বিষয় তুলে এনেছেন বিশেষত শিক্ষার্থী কতৃক শিক্ষক নির্বাচন,যোগ্যতার ক্ষেত্রে ছাড় না দেওয়ার যে কথা বলেছেন এটাও প্রশংসার দাবী রাখে্‌ আরেকটা বিষয় আমি ইনক্লুড করছি সেটা হলো এখনকার শিক্ষার্থীদের জানার আগ্রহ একেবারেই কমে গেছে কারন পরীক্ষার আগে ১০-১৫ দিন পড়েও অনেকে এ+পেয়ে যায়,এমনও হয় ওরা উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে খুব সাধারন একটা প্রশ্নের জবাবও দিতে পারেনা।এদিকেও মনোযোগ দেয়া আবশ্যক,খাতায় মার্কিং প্রশ্নপত্র ফাঁস না হতে দেয়া সব দিকেই মনোযোগ দিতে হবে অন্যথায় শিক্ষাব্যাবস্থার মান বাড়ানো সম্ভব নয় কিছুতেই।
ধন্যবাদ ভ্রাতা,আপনি ভালো থাকুন এই কামনায় থাকলাম।

৫| ১৪ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৪:১৫

বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:

ভাল বলেছেন।

১৪ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৪:৩৩

মো: হেলাল হোসেন বলেছেন: আপনার কথা ঠিক, আর জোর করে সব কিছু হয় না, যে ছেলেটি পড়তে চাই না তাকে কাউনসিলিং করতে হবে, তার এইম জানতে হবে তাকে দেখাতে হবে যারা সফল তারা পড়ালেখা ভাল করে করেছিল ,আর তোমাকে বড় হতে হলে পড়তে হবে, তারপরও না শুনলে সে যে কাজে আগ্রহী তাকে তাই করতে দিতে হবে , তাহলে জাতি তার কাছ থেকে কিছু না কিছু পাবে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.