![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মরনেও মুক্তি নেই
মোঃ হেলাল হোসেন
কালিপদ দাশ প্রাথমিক পাশ করেছে। যদিও তার আরও পড়ালেখা করা উচিত ছিল কিন্তু সে করতে পারেনি ছাত্র হিসেবে ভালই ছিল তবে বাবা গরীব, তার উপর অনেক গুলো ভাই-বোন।হাই স্কুল বাড়ি থেকে দশ কিলোমিটার দূরে সাইকেল কিনতে পারবে না, বই কিনতে পারবে না তাই পড়ালেখা ছেড়ে বাবাকে সাহায্য করতো। বাবার পেশা তার পছন্দ নয় । সারাদিন ডালা ঝুড়ি তৈরি করে সন্ধ্যায় বাজারে বিক্রি করে বাজার সদায় করতে হয়।সেটা মাঝে মাঝে বিক্রি হয় আবার হয় না তাই মাঝে মধ্যে না খেয়ে থাকতে হতো।সে পড়ালেখা করতে চাইতো কিন্তু হবে না তাই সে বাড়ি থেকে চলে আসে চট্রোগ্রামে। এখানে অনেক যায়গায় কাজের খোজ করেছে তবে পাইনি কারণ তার নাম। কলিপদ নাম বললে কোন হোটেলে তাকে রাখতে চাই না। তাই বুদ্ধি করে সে তার নাম পালটে ফেলে। তার গ্রামের মুসলমান বন্ধু নাসিব,সে নাম নেয় নাসিব, ঠিকানাও নাসিবের। এবার কাজ হয় এক হাজি সাহেবের হোটেলে কাজ পায়,সে মালিককে বলে আমি এতিম বাবা-মা নেই। কিছু দিনের মধ্যে কাজ করে সে মালিক কে খুশি করে ফেলে , মালিক তাকে বলে তুমি নামায ,আরবি জানো ? সে বলে না। মালিক তাকে ইমামের কাছে আরবি শেখার জন্য পাঠায় দিনে এক ঘন্টা পড়তে হয় , থাকে হোটেলে। মালিকের সাথে নামায আদায় করে । চাকরি বাচাতে সে নামায পড়ে কোরান পড়ে,এভাবে ঈদ আসে সে ছুটিতে বাড়ি আসে কিন্তু বাড়িতে ভাল লাগে না ।নামাযের সময়ে তার অস্বস্তি লাগে, মনে হয় কিছু একটা কাজ সে করেনি।তারপর চট্রগ্রামে এসে সে হুজুরকে সব খুলে বলে আমি মুসলমান নই চাকরির জন্য মিধ্যে বলেছি এবং বাড়ি গেলে এমন হয়েছে তখন হুজুর তাকে বলে তুমি কি মুসলমান হবে? সে বলে হবে। হুজুর তাকে কলেমা পড়িয়ে মুসলমান করে দেয়।এর মধ্যে সে বড় হয়েছে হোটেলের সব দায়িত্ব তার। মালিকের বয়স হয়েছে আগের মত লক্ষ্য রাখতে পারে না। মালিকের দুই ছেলে তারা খারাপ, কোন কাজকাম করে না শুধু হাতখরচ নেয়। মালিক একদিন নাসিবকে ডেকে বলে বাবা আমার ছেলেরা খারাপ ,তারা যদি হোটেলে বসে তবে হোটেল ভুট হয়ে যাবে। তাই তুমি হোটেল চালাবে, তাদের মাসে খরচ দিবে কোন দিন এই হোটেল ছেড়ে চলে যাবে না। এর পর একদিন মালিক মরে যায়। ভালই চলছিলো হোটেল মালিকের ছেলেরা মাসে খরচ নেয়। কিন্তু দিনদিন তাদের খরচ নেওয়া বৃদ্ধি পায় এবং একদিন তারা হোটেলের দায়িত্ব নিয়ে নেয়। নাসিবের উপর তারা চাপ বাড়ায় ভেজাল মালদিয়ে খাবার তৈরি করে বেশি লাভের আশায়।এভাবে হোটেলের বিক্রি কমে যায়। নাসিবকে জোর করে হোটেল থেকে বের করে দেয়। সে অনেক চেষ্টা করেও থাকতে পারে না। তাই ঢাকায় চলে আসে পুরান ঢাকাতে একটি হোটেলে কাজ নেয় মালিক বড় ভাল লোক তার একটি মাত্র মেয়ে কলেজে পড়ে হোটেলের পাশেই বাড়ি। মালিকের মেয়ের নাম রাজিয়া সুলতানা। মেয়ে দেখতে সুন্দরি ফরহেজগার। তার মেয়ের পিছনে আকাশ নামে একটি ছেলে লেগে ছিল। সারাক্ষণ পিছু পিছু থাকতো কলেজে গেলে বা বাইরে বেরুলে সে পাশে পাশে ঘুরতো কিন্তু কিছুই করার ছিল না। কারণ ছেলে বখাটে, যে কোন কিছু করতে পারে ।তাই রাজিয়ার বাবা-মা মুখ চেপে সহ্য করতো। এর মধ্যে আকাশ একটি মামলায় ফেঁসে যায় তাকে জেলের হাত থেকে বাঁচাতে তার বাবা মালয়েশিয়ায় পাঠিয়ে দেয়। এখন রাজিয়া ও তার পরিবার স্বস্তিতে আছে। দেখতে দেখতে ছয় মাস চলে গেল ।নাসিব কাজ করছে নিজের হোটেল মনে করে ।হোটেলে আগের চেয়ে বেচাবিক্রি বেড়ে গেছে । একদিন দোকান মালিক তার স্ত্রীর সাথে আলাপ করল আমরা আমাদের একমাত্র মেয়েকে বাইরে বিয়ে দিয়ে থাকতে পারবো না। তাই নাসিবের সাথে বিয়ে দিলে কেমন হয়? ছেলেটা এতিম তাকে ঘরজামাই রাখলে হোটেলও ভাল চলবে আমাদের দেখাশুনাও করতে পারবে। স্ত্রী রাজি তারা রাজিয়াকে বলল, সে বলল তোমরা যেটা করবে আমি তাতেই রাজি। মহাধুমধামে তাদের বিয়ে হয়ে গেল ।তারা সুখে দিনযাপন করছ্ ।তিনমাস পর আকাশ দেশে ফিরে আসলো। কিন্তু তার স্বভাব আগের মত সে রাজিয়ার বিষয়ে খোজ খবর নিল। রাজিয়ার বিয়ে হয়েছে তার স্বামী নাসিব হোটেল চালায়। আকাশ নাসিবের হেটেলে গেল কথা বলল। আগে কোথায় ছিলেন ,কি করতেন? নাসিব সরল মনে আগে চট্রোগ্রামে যে হোটেলে থাকতো তার ঠিকানা বলল। আকাশ চট্রগ্রোমে গেল হোটেল খুজে বের করল কিন্তু আগের মালিক নেই তারা বিক্রি করে দিয়েছে। তাদের বাড়ি খুজে বের করল ।এবং নাসিবের ব্যাপারে জানতে চাইলো তারা বলল ওর ঠিকানা ভাল করে জানি না ,তবে সাতক্ষীরার তালায় বাড়ি জানতাম।আকাশ নাছোরবান্দা ,সে সাতক্ষীরা গেল এবং খুঁজতে থাকলো এবং নাসিব যে বন্ধুর নাম নিয়েছে সে বাড়ি গেল, কিন্তু কাজ হলো না কারণ নাসিব তো বাড়িতেই। তাই হতাশ হয়ে ফিরে আসার সময় এক লোকের কাছে বলল, এখানকার কেউ কি বাইরে থাকে না ?চট্রোগ্রাম বা ঢাকায় ।তখন সেই লোক বলল, অনেকেইতো থাকে কার কথা বলবো? আকাশ বলল আমার বয়সি দেখতে সুন্দর । তখন ঐ লোক বলল হ্যা থাকে কালিপদ থাকে ।আগে নাকি চট্রোগ্রাম থাকতো এখন ঢাকায় থাকে, হোটেলে কাজ করে ।ছেলেটা ভদ্র সে যে মুচি তা দেখলে বোঝা যায় না। আকাশ খুশিতে লাফাতে লাগল সে ঐ লোকটাকে পাঁচশত টাকা দিয়ে চলে আসলো। লোকটা অবাক! কি জন্য পাঁচশত টাকা পেল তা সে বুঝতে পারলো না।আকাশ ঢাকা ফিরে নাসিবকে শেষ করার পরিকল্পনা করল। সে তার বন্ধুদের বলল আগামী শুক্রবার জুম্মার নামায শেষে নাসিবকে ধরবো আমি কথা বলবো তোরা গণপিটুনি দিবি। সবাই জানবে গণপিটুনিতে মারা গেছে।নাসিব এর মন খারা আকাশতাকে নিয়ে ঘাটাঘাটি করছে তার ভয় হচ্ছে যদি পরিচয় প্রকাশ পায়। সে এক রাতে রাজিয়াকে বলল আচ্ছা যদি এমন হয় তুমি জানতে পারলে আমি পরিচয় লুকিয়েছি আমি খারাপ কেউ,আমাকে ছেড়ে যাবে? রাজিয়া বলল কি যে বলো? যদি আমি জানতে পারি তুমি খুনি তুমি প্রতারক তুমি ভন্ড,তুমি হিন্দু তাতেও আমার যায় আসে না আমি আগের তোমাকে ভালোবাসিনি আমি এখনকার তোমাকে ভালোবেসেছি তাই কোন ভাবে ছেড়ে যাবো না আর তোমার মত ভালোলোকের সন্ধান একটা মেয়ে সমস্ত জীবন করে। নাসিবের চোখ থেকে জল নেমে এলো তার জীবন আজ সফল। শুক্রবার দিন নামায শেষে বাইরে আসলে আকাশ তাকে আটকায় এবং বলে কালিপদ কে ? তাকে তুমি চিনো? তুমি আসলে কে ? তুমি মুচি না মুসলমান? মুচি হয়ে মুসলমানের মেয়ে বিয়ে করছিস শালা মালাউন তোকে আজ দেখে নেব বলে তাকে পিটাতে শুরু করলো। দেখতে দেখতে নাসিব মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। খবর পে হুজুর চলে আসলো এস বলল কি হয়েছে? আকাশ উচ্চস্বরে বলল হুজুর শালা বাটপার মুচি হয়ে মুসলমানের মেয়ে বিয়ে করেছে। হুজুর বলল তাতে তোমার কি ? সে এখন মুসলমান আর এটাই তার পরিচয় সে পাঁচওয়াক্ত নামায আমাদের সাথে জামায়াতের সাথে আদায় করে তোমাদের তো শুক্রবার ছাড়া দেখি না। কেন তাকে মারলে বল? এই কথা শুনে আকাশ ও তার লোকজন গা ডাকা দিল। নাসিবের নিথর দেহ পড়ে রইলো। খুব তাড়াতাড়ি খবর ছড়িয়ে পড়লো । রাজিয়া শুনে ছুটে আসলো কাঁদতে কাঁদতে সে বলল ও আমার স্বামী সে মুচি কি মুসলমান সেটা আমি দেখবো তোরা দেখার কে কেন তাকে মারলি? আমি যদি তার সাথে সুখে থাকি তো তোদের কি? কেন মারলি তাকে? আমি তাকে বলতেও পারলাম যে আমি মা হতে চলেছি।আমি আমার সন্তানকে কি বলবো? সে পেটে থাকতে কেন এতিম হলো?আশপাশের পরিবেশ কিছুক্ষণের জন্য নিরব হয়ে গেল। সবাই হতবাক কারো মুখে কথা নেই সবার চোখে জল। এর মধ্যে রামকৃষ্ণ মিশন থেকে লোক এসেছে তারা লাশ নিয়ে সৎকার করবো লাশ দাহ হবে ।হুজুর বলল সে মুসলমান তাকে আমরা মুসলিম রীতিতে কবর দিবো। তখন পুরোহিত বলল তাকে যখন খুন করা হলো তখন কোথায় ছিলো আপনার মুসলিম রীতি ? মসজিদের সিমাণাতে ধর্মের জন্য তাকে জীবন দিতে হয়েছে তার লাশ আমরা নিয়ে যাবো।মরণেও নাসিব মুক্তি পেল না। তার লাশ নিয়ে নোংরা রাজনীতি শুরু হলো। অবশেষে পুলিশ এলো। রিাজিয়া তার স্বামীর লাশ মেডিকেল কলেজে দান করলেন গবেষণার জন্য।
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা মে, ২০১৫ বিকাল ৪:৩২
মো: হেলাল হোসেন বলেছেন: অসাধারণ