নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কবি, গল্পকার 'অথির চক্রবর্তী'র লেখা "দ্রোপদী ও পঞ্চপাণ্ডবের অলিখিত জীবনী" গল্পের প্লটের সাথে সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত "হাওয়া" সিমেমার প্লটের বা মূল গল্পের কিছুটা মিল আছে। কিংবা যদি বলা হয় 'অথির চক্রবর্তীর গল্প থেকে অনুপ্রাণিত বা প্রভাবিত হয়ে পরিচালক 'হাওয়া'র স্ক্রিপ্ট লিখেছেন তাহলে ভুল হবেনা।
'দ্রোপদী ও পঞ্চপাণ্ডবের অলিখিত জীবনী' গল্পের লেখক অথির চক্রবর্তী জেলেপাড়ার একটা মেয়ের কথা বলেছেন যার নাম দ্রোপদী। দ্রোপদীর রূপে পাড়ার ছেলেছোকরা রীতিমতো পাগল। কিন্তু হঠাৎ একদিন দ্রোপদীর বিয়ে হয়ে যায় রেলে চাকুরী করা কৃষ্ণেন্দুর সাথে। এই দুঃখে দ্রোপদীর প্রেমিক বাবুল, মহসিন, হাসমত, নিখিলের মতো পাড়ার অনেক ছেলেছোকরা সুইসাইড করার চিন্তাভাবনা করলেও শেষপর্যন্ত কেউই সুইসাইড করেনা।
বাবুল, মহসিন, হাসমত ও নিখিল.... তারা চারজন গাজার স্টিক নিয়ে নৌকায় রাত কাটানোর সিদ্ধান্ত নেয়। তারপরের ঘটনা গল্পকার অথির চক্রবর্তীর যেভাবে বলেছেন হুবহু ক্যোট করে দিলাম-
"তারা কপালের ঘাম মোছে। নদীতে ওইদিন ছিল উথালপাথাল জোছনা। যেন চাঁদের ঠাণ্ডা আগুন জ্বলছে। আর সেই আগুন ছলকে ছলকে পড়ছে। জোছনার আলোয় তাদের চোখে সন্দেহ না ভয় ঠিক কী বোঝা যায় না। ওদের কাছে হঠাৎ মনে হয় এটা জাল নয়, এটা দ্রৌপদীর শাড়ি। এই জালে কোনোদিন মাছ উঠলেও এক-দুটির বেশি উঠে না। সেই এক-দুটি মাছ যেন হাভাতে জেলেদের কিছুটা দুঃখ প্রশমনে।"
এবার আসি 'হাওয়া' সিনেমার গল্পে। হাওয়া সিনেমার গল্প মূলত উপরের ক্যোট করা অংশ থেকে শুরু। জেলে পাড়ার কয়েকজন জেলে চান মাঝির নেতৃত্বে মাছ ধরার উদ্দেশ্যে সমুদ্রে জাহাজ বা নৌকা ভাসায়। তারা সমুদ্রে জাল ফেলে, মাছ ধরে, মহাজনের চোখ ফাকি দিয়ে মাছ বিক্রি করে। মাছধরা, চুরি করে বিক্রি করে এক্সট্রা ইনকাম করাই আসলে তাদের জীবনজীবিকা। একরাতে তাদের জালে একটা মেয়ে উঠে আসে, তারা প্রথম দেখায় ভাবে মেয়েটা মৃত; পরে দেখে মেয়েটা জীবিত। তারা মেয়েটার নাম জিজ্ঞেস করে, মেয়েটা কিছুই বলে না। তারা ভাবে মেয়েটা বোবা। এবং সিদ্ধান্ত নেয় পরিচিত নৌকা বা জাহাজ পেলে মেয়েটারে তীরে পাঠিয়ে দেবে। তারপর (একদিন অনেকগুলা জেলে নৌকা সাগরে একসাথে জড়ো হলে সবাইমিলে 'সাদা সাদা কালা কালা, রঙ্গ জমেছে কালা কালা গানটা গায়, গাজাটাজা খায়'
মেয়েটাকে ঘিরে চানমাঝিসহ কয়েকজন জেলের যৌনচিন্তা বা যৌনচেতনার উদ্রেক হয়। চানমাঝি একদিন কুপ্রস্তাব দিলে মেয়েটা (দা দিয়ে) ভয় দেখায়....
এইসব ঘটনার ফাকে ইব্রাহীম মাঝির সাথে মেয়েটার ভাব জমে উঠে। ইব্রাহিম আবিষ্কার করে মেয়েটা কথা বলতে পারে। মেয়েটা বোবা নয়। মেয়েটা এসেছে 'পিতা হত্যার প্রতিশোধ নিতে'। বহুদিন বহুদিন আগে, মেয়েটা যখন ছোট তখন চানমাঝি মেয়েটার পিতাকে হত্যা করেছিলো। মেয়েটা এসেছে চানমাঝিরে হত্যা করে পিতাহত্যার প্রতিশোধ নিতে।
এদিকে নৌকায় বা জাহাজে জালে মাছ না-ওঠা, নোঙর ছিড়ে যাওয়াজাতীয় কিছু অপার্থিব বা পরাবাস্তব ঘটনা ঘটতে থাকে... এজন্য অনেকেই মেয়েটারে দায়ী করে। শেষে চানমাঝি সিদ্ধান্ত নেয় মেয়েটারে জলে ফেলে দিবে বা হত্যা করবে।
ইব্রাহীম বাধা দিলে শুরু হয় কোপাকুপি, মারামারি।
ইব্রাহিমকে মেরে বেধে রাখা হয়। মেয়েটা গায়েব হয়ে যায়। কুপাকুপি বমি টমি করে সবাই মারা যায়, বেঁচে থাকে স্রেফ চানমাঝি ও নাগু। শেষে সাপের কামড়ে তারাও মারা যায়।
মুভি শেষ হতে হতে আবারো দেখা যায় জলে পাওয়া মেয়েটাকে....
মুভির শেষেরদিকের অপার্থিব অংশের সাথেও আমি গল্পকার অথির চক্রবর্তীর গল্পের নিচের ক্যোট করা অংশের মিল পাচ্ছি-
"মিথ আছে এই দ্রৌপদীকে একবার একজন জোর করে চুমু খেতে চেয়েছিল, তার পরদিন থেকেই তার মুখে কুলুপ। সে আর কথা বলতে পারে না। আরেকবার কোনো দুর্বৃত্ত দ্রৌপদীকে মওকামতো পেয়ে খড়ের গম্বুজের আড়ালে শাড়ি খুলতে তৎপর হয়েছিল, তার পরদিন থেকে সবাই দেখল তার দু-হাতই অবশ। আরেকবার কেউ গোপনে দ্রৌপদীর স্নান দেখতে গিয়ে হারালো চোখ। তারপর থেকে কেউ দ্রৌপদীকে আর ঘাঁটানোর সাহস পেতো না। দ্রৌপদী তার তানপুরার মতো নিতম্ব দুলিয়ে দুলিয়ে পথের বাঁকে মিলিয়ে যায়।"
এনিওয়ে,
'হাওয়া সিমেমা' এবং গল্পকার কবি অথির চক্রবর্তীর 'দ্রোপদী ও পঞ্চপাণ্ডবের অলিখিত জীবনী' গল্প দুইটার প্লটেই জেলেজীবন, জাল, নৌকা, গাজা, সুন্দরী নায়িকা, অপার্থিব কিছু দৃশ্যচিত্র, কামচিন্তা চরিতার্থ করার চেষ্টা, লাশ.... ইত্যাদি ইত্যাদি দৃশ্যচিত্র আছে। পার্থক্য স্রেফ.... একটা গল্পে ইশারায় বা অল্পকথায় ব্যার্থ কিছু প্রেমিক জেলের স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণার গল্প এবং একটা মেয়ের আত্মহত্যা বা হত্যার গল্প ফুটিয়ে তোলা হয়েছে; অন্যটায় ডিটেইলসে জেলেদের জীবন, এবং পিতাহত্যার প্রতিশোধের গল্প ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সুতরাং গল্পকার অথির চক্রবর্তী যদি বলেন 'হাওয়া' গল্পের প্লট তার গল্প থেকে নেওয়া বা কিঞ্চিৎ অনুকরণ করা হয়েছে তাহলে মোটেও ভুল হবেনা।
অথির চচক্রবর্তীঃ দ্রোপদী ও পঞ্চপাণ্ডবের অলিখিত জীবনী
০৩ রা আগস্ট, ২০২২ সকাল ১০:২৬
ককচক বলেছেন: ছবিটা সুন্দর, এতে কোনো সংশয় নেই।
২| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২২ দুপুর ১:২৪
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
সিনেমাটি দেখার ইচ্ছে আছে বলে আপনার লেখাটি একটু পড়েই বন্ধ করে দিলাম।
০৪ ঠা আগস্ট, ২০২২ দুপুর ১:২৭
ককচক বলেছেন: ওকে। সিমেমার কাহিনী জেনে গেলে দেখে আনন্দ পাওয়া যায় না।
৩| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২৩ রাত ১০:৩০
খায়রুল আহসান বলেছেন: একটি চমৎকার আলোচনা। সাবলীল ভাষায় আলোচনার ধারাবর্ণনা ভালো লেগেছে।
হাওয়া দেখেছিলাম বছর খানেক আগে। সেটিও ভালো লেগেছিল।
পরিমিত বাক্যে পোস্টের শেষ অনুচ্ছেদটি যথার্থ এবং সুপাঠ্য।
পোস্টে ভাললাগা। + +
©somewhere in net ltd.
১| ০৩ রা আগস্ট, ২০২২ সকাল ৯:২২
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
হতেও পারে নাও হতে পারে। তবে গল্পটা সুন্দর , ছবিটা হাওয়ার মতই ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশে।