নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার মস্তিষ্কের বিক্ষিপ্ত ভাবনার বর্ণমালা সমূহ।

খন্দকার সুমন

আমি একজন সাধারণ মানষ। তবে নিজের সাথে কথা বলতে ভাল লাগে। আমার এই সভাবের কারণে, সবাই ভালবেসে আড়ালে আতেল বলে ঢাকেন। আমি নিজেও আতেলদের পছন্দ করি না।

খন্দকার সুমন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফেসবুকে সমাজ সেবার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ ভোর ৪:২৫

প্রসঙ্গঃ এক

এক বংলাদেশি ভাইয়ের সৌদি আরবের ভিসা সহ পাসপোর্ট পাওয়া গেছে ফেসবুকে এই পোষ্টটি শেয়ার দিয়ে তাকে পাসপোর্টটি ফিরে পেতে সাহায্য করুন।

যোগাযোগের নম্বর: ০৪৮৮৬৫২১০৩৪৫৭

(আপনি সমাজের সচেতন ব্যাক্তি, তাই শেয়ার করলেন)



প্রসঙ্গঃ দুই

একটি ৬ বছরের শিশুকে পাওয়া গিয়েছে। তাকে তার বাবা মার কাছে ফিরিয়ে দিতে আপনি এই পোষ্টটি ফেসবুকে শেয়ার করুন।

যোগাযোগের নম্বর: ০৭৪৫৩৮৮৬৫৩৪৭



আপনার কোমলমতি হৃদয়, তাই শেয়ার করলেন। আহা! ঘরে বসে সমাজ সেবার এর চাইতে বড় দৃষ্টান্ত আর কি হতে পারে। উপরে কর্ম গুলো সাধন করতে একবারও চিন্তা করেছেন প্রসঙ্গঃ এক এবং দুইয়ের পোষ্টে যোগাযোগের যে নম্বর দু'টো দেয়া আছে সে গুলো আসলে বাংলাদেশের কোন নম্বর কি না? আপনি সমাজের সচেতন ব্যাক্তি হয়েও অচেতনে শেয়ার করলেন এমন একটি পোস্ট! একবারও সেই নম্বরে ফোন করে জানতে চেয়েছেন প্রকৃত ঘটনা কি? হয়ত বলতে পারেন- "একটা ছবিই তো শেয়ার দিয়েছি এ আর এমন কি!" আপনি নিজেকে নিজে কি মূল্যায়ন করেন তা আমার জানা নেই, কিন্তু হতে পারে আপনার অজান্তে কেউ কেউ হয়ত আপনাকে তার আদর্শ মনে করে, আপনার ভুলের উত্তরাধিকার নিয়ে সে ভূল মানুষ হয়ে গড়ে উঠছে!



প্রসঙ্গঃ তিন

এই গাছটি সাহাবি গাছ (ছবি সহ)! আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (স:) কে এই গাছ ছায়া দিয়েছিল। ১৪০০ বছর ধরে এই গাছ জীবিত আছে (সুবহান আল্লাহ্!)। সবাই কে দেখার সুযোগ করে দেয়ার জন্য ফেসবুকে শেয়ার করুন।

আপনি চোখে পানি ধরে রাখতে পারলেন না , তাই আপনার অব্যবহৃত মস্তিষ্কের উপর বিন্দু মাত্র চাপ প্রয়োগ না করে শেয়ার এর কাজ সম্পূর্ণ করলেন। একবারও ভেবে দেখলেন না সৌদি আরবের দক্ষিণ পূর্ব দিকে জর্ডান এর মরুভূমিতে ১৪০০ বছরের পুরাতন একটা গাছ আদৌ বাঁচা সম্ভব কি না? এ্যামাজান জঙ্গল সহ এমন কিছু পুরাতন গাছ পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে থাকলে তা মধ্যপ্রাচ্যের কোন দেশে নেই।

"মিথ্যা কথন থেকে দূরে সরে থাক; [সুরা হাজ্জ্ব: ৩০]

যারা মিথ্যা কাজে যোগদান করে না এবং যখন অসার ক্রিয়াকর্মের সম্মুখীন হয়, তখন মান রক্ষার্থে ভদ্রভাবে চলে যায়। [সুরা ফুরকান: ৭২]"



প্রসঙ্গঃ চার

মদিনায় হাজার হাজার মুসল্লি স্বপ্নে দিখিয়াছেন "লাইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)" এই কালেমা তাইয়্যেবা ১০০ জনের কাছে ফেসবুক ম্যাসেজের মাধ্যমে পাঠাইয়া দিলে আগামী সাত দিনের মাধ্যেই সুখবর পাইবেন।



আপনি দুঃখের সাগরে প্লাবিত, তাই আপনার একাউন্ট এ চেনা অচেনা ফেসবুকের ৫০০০ বেগানা (!) পুরুষ-মহিলা, মুসলিম এবং অমুসলিম ফ্রেন্ডদের কাছে ম্যাসেজ পাঠিয়ে অপেক্ষায় থাকলেন ৫০ গুন বেশি সুখবরের আসায়। এমন শর্ট-কাট আমল আপনার বিলাসী অলস জীবনের প্রতিচ্ছবি। আপনি খুব স্বপ্ন বিলাসী মানুষ। ৫০০০ ম্যাসেজ কপি পেস্ট করে পাঠাতে যে সময় লাগবে সেই সময়টুকু কোন গঠন মূলক কাজে ব্যয় করলে হয়ত সুখবর আসার সম্ভাবনা থাকতেও পারে। পবিত্র কোরআন এবং হাদীসে এমন দায় সারা শর্ট-কাট আমল আমার চোখে পরে নাই এখন।



প্রসঙ্গঃ পাঁচ

কক্সবাজারের রামুতে এক বৌদ্ধ তরুণী পবিত্র কোরআন শরীফের উপর দাড়িয়ে ছবি তুলেছে (নাউযুবিল্লাহ!)। ছবিতে তরুণীর নেলপলিশ দেয়া পা দেখা যাচ্ছে। ফেসবুকে শেয়ার দিয়ে সবাইকে জানিয়ে দেন।



আপনার মন এমন দৃশ্য সহ্য করতে পারল না, তাই শেয়ার করলেন। এবার শুধু শেয়ার করলেন না! রামুতে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মন্দির এবং বাড়ীও পুড়ে দিলেন! বিগত প্রসঙ্গঃ এক থেকে চার পর্যন্ত এতক্ষণ আপনাকে তৈরি করা হল। প্রসঙ্গঃ পাঁচই হচ্ছে আপনার উর্বর মস্তিষ্কের সঠিক প্রয়োগ। এবার প্রশ্ন করবেন কে তৈরি করল এবং কিভাবে প্রয়োগ করল?

তারাই সেই ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান যাদের মিথ্যা তথ্য সংবলিত পোষ্ট এতদিন ফেসবুকে শেয়ার করিয়ে ঘরে বসিয়ে বসিয়ে আপনাকে একাধারে সমাজসেবক, নবীর প্রতি অদম্য প্রেম এবং আপনার ধর্মের প্রতি অগাধ বিশ্বাস তৈরী করাল।

শুধুমাত্র পবিত্র কোরআন নয় পৃথিবীতে যে কোন ধর্ম গ্রন্থের উপর দাড়িয়ে ছবি তোলা ক্ষমা অযোগ্য ঘৃণিত অপরাধ। মুহাম্মদ (সঃ) এর জীবনিতে অন্য ধর্মাবলম্বীদেরর প্রতি হিংসাত্মক আচরণ পরিত্যায্য বলে অনেক উদাহরণে পরিলক্ষিত হয়। অতএব যেই এই ধরনের ছবি ফেসবুকে শেয়ার দিক না কেন এর প্রকৃত উদ্দেশ্য স্ব-ধর্মের প্রতি ভালবাসা নয়, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাই এর মূল ইতি কথা।

পৃথিবীতে একমাত্র চিন দেশে সবচাইতে বেশি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠি থাকার পরও, এমন ঘৃণিত কাজ বাংলাদেশের সংখ্যালঘু বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের বসতি কক্সবাজারের রামুতেই ঘটে কেন? এমন প্রশ্নের উত্তর তো পরের কথা, প্রশ্নই আপনার মনে জাগ্রত হয়নি কখনো আমি নিশ্চিত!

বাংলাদেশ সরকার কতৃক কক্সবাজার এবং কুয়াকাটা কে পর্যটন নগরী হিসেবে ঘোষনা দেয়ার পর পরই অত্র অঞ্চলে ভুমির তৎকালীন মূল্য বেড়ে একশ গুণ হয়ে যায়। বর্তমানে সাধারণ জনগণের হাতে টাকা থাকলেও অত্র অঞ্চলে জমি কেনার ক্ষমতা তাদের নেই বললেই চলে। বিশ্বাস না করলে বেড়ানোর ফাঁকে একবার সরেজমিনে তদন্ত করে দেখতে পারেন।

১৭৮৪ সালে রাখাইনদের মাতৃভূমি বার্মার (মিয়ানমার) আরাকান রাজ্য সৃষ্টি হলে সেখান থেকে ১৫০টি পরিবার বর্মী রাজার অত্যাচারের হাত থেকে মুক্তি লাভের আশায় ৫০টি নৌকাযোগে বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে, অবশেষে তিনদিন তিনরাত পর বাংলাদেশের সর্বদক্ষিনে সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চল বসবাসের স্থান হিসেবে বেছে নেয়। হিংস্র জীবজন্তুর সাথে যুদ্ধ করে রাখাইনরা এসব অরন্যভূমি বনজঙ্গল পরিস্কার করে তাদের সাথে আনা ধান ও অন্যান্য বীজ বপন করে। রাখাইনরা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। উপকূলীয় অঞ্চলের অধিকাংশ ভু-সম্পত্তি তাদের। যে কোন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মাধ্যমে তাদের বসতভিটা দখল করতে সক্ষম হলে উক্ত ইসলাম ধর্মের সেনাপতির(!) চার পুরুষের আর কিছু না করলেও চলবে।

শুধু মাত্র কিছু পুণ্যের আসায় আপনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে এমন সম্প্রদায়িক দাঙ্গা সবার মাঝে ছড়িয়ে দিলেন, প্রকৃত পক্ষ প্রিয় নবীর অভিশাপে আপনি অভিশপ্ত হলেন।

রাসূলে করিম (সাঃ) বলেন, "যে ব্যাক্তি কোন অমুসলিম ব্যক্তির ওপর জুলুম করবে কিংবা তার হক নষ্ট করবে অথবা শক্তি-সামর্থ্যের অধিক বোঝা তার ওপর চাপাবে কিংবা তার ইচ্ছা ও অনুমতি ছাড়া তার কোন জিনিস নিয়ে নেবে, কিয়ামতের দিন আমি তার বিরুদ্ধে মামলা লড়ব।" (আবু দাউদ)

"ধর্মের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি এবং তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেনি, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফকারীদেরকে ভালবাসেন।" [সুরা মুমতাহিনা: ৮]

এমন দায় থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য হয়ত মনে মনে বলবেন, "না বুঝে করেছি! আল্লাহ ক্ষমা করবেন!"

আমি দুঃখিত! এই লেখা পাঠ করার পর আপনার স্ব-স্বীকৃত দায় সারা পথটাও আজ থেকে আপনার জন্য চিরতরে বন্ধ হয়ে গেল!

"নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন।" [সুরা হুজুরাত: ১৩]

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.