![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এইচ.আই.ভি. HIV এর সম্পূর্ন রূপ হল হিউম্যান ইমিউনো ডেফিশিয়েন্সি ভাইরাস Human Immunodeficiency Virus যা লেন্টিভাইরাস Lentivirus গোত্রের অন্তর্গত এবং এই ভাইরাসের সঙ্ক্রমন এইডস (AIDS) রোগের কারণ । মূলত এইডস একটি রোগ না এটি সাধারণত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অভাব জনিত নানা রোগের সমাহার ঘটায় । এইচ.আই.ভি ভাইরাস মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনাক্রম্যতা নষ্ট করে দেয় । ফলে নানা সংক্রামক রোগ এবং কয়েক রকম ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে রোগী মৃত্যু মুখে ঢলে পড়ে । এইচআইভি ভাইরাস শরীরে প্রবেশের পর অনাক্রম্যতা কমতে কমতে এইডস ঘটাবার মত অবস্থায় পৌছতে অনেক বছর লেগে যায় । তবে শরীরে এই ভাইরাস একবার সংক্রমিত হলে তা কমানো সম্ভব হলেও সম্পূর্ণ ভাবে দূর করা এখনো সম্ভব হয় নাই । তাই শেষপর্ষন্ত সেই রোগীর একমাত্র মৃত্যুই কাম্য । তবে বিশ্বের খুব অল্প সংখক কিছু অঞ্চলের কিছু লোকেদের শরীরে কয়েকটি জীনে খুত থাকে যার ফলে এইডস ভাইরাস তাদের শরীরে সফল ভাবে সংক্রমণ করতে পারেনা । তাদের এইচআইভির বিরুদ্ধে জন্মগত অনাক্রম্যতা আছে বলা যায় ।
ওয়ার্ল্ড হেলথ ওর্গানাইজেসন WHO World Health Organization মানবদেহে এইচ.আই.ভি ভাইরাসের সঙ্ক্রমনকে প্যান্ডেমিক Pandemic হিসাবে চিহ্নিত করেছে । ১৯৮১ সালে ভাইরাসটি আবিষ্কারের পর থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত এইডস রোগ কারনে ২কোটি ৫০ লক্ষেরও বেশী মানুষ মারা গেছেন ।
পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ০.৬% এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত। ২০০৫ সালে এইডস ২২ থেকে ৩৩ লক্ষ মানুষের জীবন কেড়ে নেয় যার মধ্যে ৫ লক্ষ ৭০ হাজারের বেশী ছিল শিশু । এই মৃত্যুর এক তৃতীয়াংশ ঘটে সাহারা নিম্ন আফ্রিকা Sub Saharan Africa অঞ্চলে । তখন ধারনা করা হয়েছিল ভাইরাসটি আফ্রিকার প্রায় ৭ কোটি মানুষকে আক্রান্ত করবে । রেট্রোভাইরাসরোধী Antiretroviral drug চিকিৎসা ভাইরাসটির সংক্রমনজনিত অসুস্থতা এবং মৃত্যু প্রবনতা দুটোই কমায় কিন্তু নিয়মিতভাবে এই চিকিৎসাসেবা সব দেশে পাওয়া যায় না ।
ভাইরাসটি প্রধানত মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার প্রধান কোষগুলো যেমন সাহায্যকারী টি কোষ helper T cells বিশেষ করে সিডি৪+ CD4+ টি কোষ সমূহ ম্যাক্রোফেজ এবং ডেনড্রাইটিক কোষগুলোকে আক্রমন করে । প্রধানত ৩টি প্রক্রিয়ায় এটি সিডি৪+ কোষের সংখ্যা কমিয়ে দেয়, এগুলো হল- সরাসরি ভাইরাসের দ্বারা কোষ নিধন, দ্বিতীয়ত, সংক্রোমিত কোষগুলোর আত্নবিনাশেরApoptosis হার বৃদ্ধি, তৃতীয়ত, কোষ হন্তারক সিডি৮+ লসিকাকোষের Cytotoxic CD8+ T lymphocyte এর মাধ্যমে সংক্রোমিত কোষ নিধন, যারা সংক্রোমিত কোষগুলোকে চিনতে পারে। যখন এই সিডি৪+ কোষের সংখ্যা একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ের নিচে নেমে যায় তখন দেহের কোষীয় অনাক্রমন্যতা Cell-mediated immunity নষ্ট হয়ে যায় এবং দেহ সুযোগসন্ধানী সংক্রোমন Opportunistic infection এর প্রতি বেশি সংবেদনশীল হয়ে পড়ে ।
এইচ.আই.ভি-১ দ্বারা আক্রান্ত এবং চিকিৎসা না হওয়া বেশীরভাগ মানুষ এইডস রোগের স্বীকার হয় । এবং তাদের বেশীরভাগ মারা যায় সুযোগসন্ধানী সংক্রোমন অথবা ম্যালিগন্যানসির Malignancy যা ক্রমশ কমতে থাকা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার ফলাফল ।
এইচ.আই.ভি সংক্রোমন থেকে এইডস হওয়ার হার নির্ভর করে ভাইরাস, পোষক এবং পরিবেশ প্রভৃতি প্রভাবকের উপর । বেশীরভাগ ক্ষেত্রে সাধারনত এইচ.আই.ভি সংক্রোমন থেকে এইডস হতে ১০ বছর সময় লাগে তবে কোন কোন ক্ষেত্রে এর চেয়ে কম না বেশী সময় লাগতে পারে ।
রেট্রোভাইরাসরোধী চিকিৎসা এইচ.আই.ভি আক্রান্ত রোগীদের জীবনসীমা আশানুরূপভাবে বৃদ্ধি করতে পারে। এমন কি ২০০৫ সালের তথ্য অনুযায়ী এইডস পর্যায়ে পৌছে যাওয়া আক্রান্ত রোগীদের জীবনসীমা গড়ে ৫ বছর বৃদ্ধি করা সম্ভব এই চিকিৎসার মাধ্যমে। রেট্রোভাইরাসরোধী চিকিৎসা ছাড়া সাধারনত একজন এইডস আক্রান্ত রোগী ১ বছরের মধ্যে মারা যায় ।
রেট্রোভিরিডি Retroviridae গোত্র এর লেন্টিভাইরাস গণ এর অন্তর্গত । লেন্টিভাইরাসগুলোর মধ্যে অনেক গঠনগত এবং জৈবিক বৈশিষ্টের মিল রয়েছে। এই ভাইরাসগুলো দ্বারা আক্রান্ত বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে বৈশিষ্ট্যমূলক লম্বা সুপ্তাবস্থা বিশিষ্ট দীর্ঘমেয়াদী সংক্রমন লক্ষ্য করা যায় । এই ভাইরাসগুলো এক-সূত্রক, ধনাত্বক সূত্র বিশিষ্ট আরএনএ ভাইরাস । নির্দিষ্ট কোষের অভ্যন্তরে প্রবেশের পর ভাইরাসের আরএনএ জিনোম রিভার্স ট্রান্স্ক্রিপ্টেজ নামক উৎসেচক এর মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়ে দ্বি-সূত্রক ভাইরাল ডিএনএ তে পরিনত হয় । এনজাইমটি ভাইরাস নিজেই তৈরী করে এবং তা ভাইরাস পার্টিকেল এর অভ্যন্তরে অবস্থান করে । এই দ্বি-সূত্রক ডিএনএ পোষক কোষের ডিএনএ এর সাথে ভাইরাস সৃষ্ট ইন্টিগ্রেজ এনজাইম এবং পোষক কোষের কিছু কো-ফ্যাক্টর এর মাধ্যমে সমন্বিত হয়ে যায় যেন জিনোমটি আত্নপ্রকাশ করতে পারে । সংক্রমনের পর ২টি ঘটনা ঘটতে পারে হয় ভাইরাস ল্যাটেন্ট থাকতে পারে এবং আক্রান্ত কোষ স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু রাখতে পারে অথবা ভাইরাস সক্রিয় হয়ে সংখ্যাবৃদ্ধির মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক ভাইরাস তৈরী করতে পারে যা আরো কোষকে আক্রান্ত করে ।
এই ভাইরাসটির ২টি প্রজাতি রয়েছে- এইচ.আই.ভি-১, এইচ.আই.ভি-২ । এইচ.আই.ভি-১ ভাইরাসটি প্রথমে আবিষ্কৃত হয় এবং অপেক্ষাকৃত বেশী আক্রমনাত্বক এবং সংক্রামক। সারা বিশ্বে বেশিরভাগ এইচ.আই.ভি সংক্রমনের জন্য এই ভাইরাসটি দায়ী। এইচ.আই.ভি-২ কম সংক্রামক এবং ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা কম বিধায় এটি প্রধানত পূর্ব আফ্রিকায় সীমাবদ্ধ ।
এইচআইভি ভাইরাসের কণা গোলাকার । গোলকটির ব্যাস ১০০ ন্যানোমিটার Nanometer এবং লিপিড নির্মিত দ্বিস্তরী ঝিল্লি lipid bilayer দ্বারা আবৃত। ঝিল্লির উপরে দুই প্রকার গ্লাইকোপ্রোটিন জিপি-১২০ এবং জিপি-৪১ বের হয়ে থাকে। নিউক্লিয়ক্যাপসিড Nucleocapsidএর আকার প্রায় কোনাকার এবং দৈর্ঘ্যে প্রায় ১০০ ন্যানোমিটার । কোনকাকৃতির নিউক্লিয়ক্যাপসিডের প্রসস্থ প্রান্ত ৪০-৬০ ন্যানোমিটার চওড়া ও সরু প্রান্ত ২০ ন্যানোমিটার চওড়া । সরু প্রান্ত এক প্রকার প্রোটিন জাতীয় উপাদান দিয়ে লিপিডের ঝিল্লীর সাথে যুক্ত থাকে । এই সংযোগকে বলা হয় কোর-ঝিল্লি-সংযোগ। নিউক্লিয়ক্যাপসিডের প্রোটিনগুলো দৃঢ় ভাবে আরএনএ জিনোমের সাথে যুক্ত থাকে। ঝিল্লি ও নিউক্লিয়ক্যাপসিডের মধ্যবর্তি অঞ্চলকে বলা হয় প্যারানিউক্লিয়েড Paranucleoid অঞ্চল। এই অঞ্চলে প্রোটিন দ্বারা গঠিত মাট্রিক্স বিদ্যমান । ম্যাট্রিক্সের প্রোটিনকে ম্যাট্রিক্স প্রোটিন বলা হয় । ম্যাট্রিক্সের পরেই ক্যাপসিড স্তরের অবস্থান। ক্যাপসিড স্তর গঠিত হয় “ক্যাপসিড প্রোটিন” দ্বারা। ক্যাপসিড নির্মিত গোলাকার গঠনের ভিতরেই থাকে নিউক্লিয়ক্যাপসিড ।
ভিরিয়নের মধ্যে এইচআইভি ভাইরাসের দুইটি ধনাত্বক এক সুত্রক আরএনএ RNA থাকে । দুইটি আরএনএ একটি অপরটির কপি । দুটি আরএনএ-এর ৫` প্রান্ত একে অপরের সাথে হাইড্রোজেন বন্ধন hydrogen bond অথবা ছোট অ্যান্টি-প্যারেলাল সয্যায় লেগে থাকে । প্রতি আরএনএ RNA এর ৫` প্রান্তে একটি টি-আরএনএ t-RNA বিদ্যমান । এগুলো এইচআইভি HIV ভাইরাসেরক্ষেত্রে ঋনাত্বক আরএনএ সংশ্লেষণের সময় প্রাইমার হিসেবে কাজ করে ।এইচআইভি ভাইরাসের ভিরিয়নে কয়েক প্রকার এনজাইম পাওয়া যায়। এদের মধ্যে রিভার্স ট্রান্সক্রিপটেজ Reverse Transcriptase ইন্ট্রিগ্রেজ Integrase ভিপি-আর Vpr । রিভার্স ট্রান্সক্রিপটেজ এনজাইম রাইবোনিউক্লিয়েজ ribonuclease ক্রিয়া ছাড়াও আরএনএজ-এইচ RNaseH ক্রিয়া প্রদর্শন করে । ইন্ট্রিগ্রেজ এনজাইম পোষক কোষের Host cell ভিতরে ভাইরাসের সংশ্লেষিত ডিএনএকে DNA পোষকের ক্রোমজোমে যুক্ত হতে সাহায্য করে । ভিপি-আর Vpr একটি প্রোটিয়েজ ক্রিয়া প্রদর্শন কারী এনজাইম ।
এইচআইভি ভাইরাসের ভিরিয়নে কয়েক প্রকার এনজাইম পাওয়া যায়। এদের মধ্যে রিভার্স ট্রান্সক্রিপটেজ Reverse Transcriptase ইন্ট্রিগ্রেজ Integrase ভিপি-আর Vpr । রিভার্স ট্রান্সক্রিপটেজ এনজাইম রাইবোনিউক্লিয়েজ ribonuclease ক্রিয়া ছাড়াও আরএনএজ-এইচ RNaseH ক্রিয়া প্রদর্শন করে । ইন্ট্রিগ্রেজ এনজাইম পোষক কোষের Host cell ভিতরে ভাইরাসের সংশ্লেষিত ডিএনএকে DNA পোষকের ক্রোমজোমে যুক্ত হতে সাহায্য করে । ভিপি-আর Vpr একটি প্রোটিয়েজ ক্রিয়া প্রদর্শন কারী এনজাইম ।
এইচআইভি ভাইরাস মোটামুটি তিন প্রকারের ছড়াতে সক্ষম।
যৌনমিলনের সময়
রক্ত blood বা লসিকার lymphমাধ্যমে
মা থেকে সন্তানে
যৌনমিলনের সময়
এইচআইভি সংক্রামণের বেশির ভাগ ঘটনাই অরক্ষিত যৌনমিলনের কারণে ঘটে থাকে ।
বায়ু,জল, খাদ্য অথবা সাধারণ ছোয়ায় বা স্পর্শে এইচআইভি ছড়ায় না । এইচআইভি মানবদেহের কয়েকটি নির্দিষ্ট তরল পদার্থে রক্ত, বীর্য, বুকের দুধ বেশি থাকে । ফলে, মানব দেহের এই তরল পদার্থগলো আদান-প্রদানের মাধ্যমে এইচআইভি ছড়াতে পারে । সুনির্দিষ্টভাবে যে যে উপায়ে এইচআইভি ছড়াতে পারে তা হল:
১) এইচআইভি এইডস আক্রান্ত রোগীর রক্ত সুস্থ ব্যক্তির দেহে পরিসঞ্চালন করলে ।
২) আক্রান্ত ব্যক্তি কতৃক ব্যবহৃত সূচ বা সিরিঞ্জ অন্য কোনো সুস্থ ব্যক্তি ব্যবহার করলে ।
৩) আক্রান্ত ব্যক্তির কোনো অঙ্গ অন্য ব্যক্তির দেহে প্রতিস্থাপন করলে ৪) এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত মায়ের মাধ্যমে গর্ভাবস্থায়, প্রসবকালে বা সন্তানের মায়ের দুধ পানকালে ।
৫) অনৈতিক ও অনিরাপদ দৈহিক মিলন করলে ।
৬) যৌণ মিলন কতটা স্থায়ী কিংবা বীর্যপাত হলো কি না তার উপরে এর সংক্রমণ নির্ভর করেনা, অরক্ষিত যৌণ মিলনে অধিকাংশ সময়ে এর সংক্রমণ ঘটতে পারে ।
এইচআইভি রোগীদের অতি প্রয়োজনীয় ওষুধ নেভিরাপিন । সচেতনতাকেই এর একমাত্র প্রতিরোধক বিবেচনা করা যেতে পারে ।
এইচআইভি সংক্রমণের উপায়গুলো জেনে এ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে এইডস প্রতিরোধ করা সম্ভব । এইডস প্রতিরোধে যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় তা হলোঃ
১) অন্যের রক্ত গ্রহণ বা অঙ্গ প্রতিস্থাপনে আগে রক্তে এইচআইভি আছে কিনা পরীক্ষা করে নেয়া ।
২) ইনজেকশন নেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবারই নতুন সুচ/সিরিঞ্জ ব্যবহার করা ।
৩) অনিরাপদ যৌন আচরণ থেকে বিরত থাকা ।
৪) এইচআইভি এইডস আক্রান্ত মায়ের সন্তান গ্রহণ বা সন্তানকে বুকের দুধ দেয়ার ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া ।
৫) কোন যৌন রোগ থাকলে বিলম্ব না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া ।
৬) ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে চলা ।
©somewhere in net ltd.
১|
২৫ শে মে, ২০১৫ দুপুর ১২:২৫
বাড্ডা ঢাকা বলেছেন: ভাল সতর্ক হইলাম ।