![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
[img|http://cms.somewhereinblog.net/ciu/image/133968/small/?token_id=aed67890cf62d091b5d816166d1f8d9c
ক্ষুদ্রঋণের দুষ্টু চক্র যে কতটাই চক্রকার তা একমাত্র পর্যবেক্ষণশীল ব্যক্তি মাত্রই উপলব্ধি করা সম্ভব, যা শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ফ্ল্যাটে বসে অনুধাবন করা সম্ভব নয়। জানি না আমার সোনার দেশের হতোদরিদ্র অতি সাধারণ জনগন আদেও এ দুষ্টু চক্রের গুহ থেকে মুক্তি পাবে কি না!! যা গ্রামের প্রতিটা ঘরে ঘরে ছেয়ে গেছে ব্যাঙের ছাতার মতো। এমন কোনও সংসার খুজে পাওয়া কষ্টকর হবে, যে ঘর এন জি ও’র ছবল থেকে রক্ষ্যা পায়নি, তাও আবার দুই তিনটা এন জি ও এর কম তো নয়ই।
আমার লেখাটা ডঃ ইউনুস বা অন্যকে কষ্ট দেবার জন্য নয় বা আমাদের সরকারকে খুশি করার জন্যেও নয়। এন জি ও গুলোর দরিদ্র বিমোচনমুখী না হয়ে ব্যবসা ভিত্তিক মানসিকতা হওয়ার কারনে ডঃ ইউনুসের ক্ষুদ্রঋণ আশীর্বাদ না হয়ে অভিশাপের রুপ নিচ্ছে সেই বাস্তব চিত্রের কিছু বলার চেষ্টা করছি মাত্র। তাই ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল।
জামানতবিহীন ক্ষুদ্রঋণের কথা জানেনা, এমন কোন বাঙ্গালি আছে কিনা আমার জানা নাই। শুধু বাঙ্গালি নয় উন্নত বিশ্বের অনেকেই জামানতবিহীন ক্ষুদ্রঋণের বিষয়ে অয়াকিবহল। আমরা সকলেই জানি ক্ষুদ্রঋণ নিতে কোন জামানত রাখতে হয় না বা একজন হতোদরিদ্র লোক ভাগ্যপরিবর্তনের লক্ষে অতি সহজেই এন জি ও’ র নিকট থেকে ঋণ নিতে পারেন। ক্ষুদ্র ঋণ নিতে হলে, ক্ষুদ্রঋণ আইন অনুযায়ী প্রত্যেক ঋণ গ্রহিতাকে ঋণ নেবার ৩ মাস পূর্ব থেকে ৩% সুদে ৫০০ টাকা সঞ্চয়ী আমানত রাখতে হয় ৫,০০০ টাকা ঋণের জন্য, যা ১,০০,০০০ টাকার জন্য ১০,০০০ টাকা, যদিও এটা বাণিজ্যিক ব্যাংক অনুযায়ী অতি নগণ্য ।
আমার লেখাটা ডঃ ইউনুস বা অন্যকে কষ্ট দেবার জন্য নয় বা আমাদের সরকারকে খুশি করার জন্যেও নয়। এন জি ও গুলোর দরিদ্র বিমোচনমুখী না হয়ে ব্যবসা ভিত্তিক মানসিকতা হওয়ার কারনে ডঃ ইউনুসের ক্ষুদ্রঋণ আশীর্বাদ না হয়ে অভিশাপের রুপ নিচ্ছে সেই বাস্তব চিত্রের কিছু বলার চেষ্টা করছি মাত্র।
৫০০ টাকা কে আমরা জামানত হিসাবে বা নাই ধরলাম কিন্তু অতি হতোদরিদ্র ঋণ গ্রহিতা কে ঋণ নেওয়ার জন্য যে চক্রবৃদ্ধি সুদের বোঝা বইতে হচ্ছে তা কি আমরা কখনো উপলব্ধি করি। কোনও ঋণ গ্রহিতা এন জি ও’ র নিকট থেকে ৫০০০ টাকা ঋণ নিলে ঋণ গ্রহীতাকে সুদাসল সহ ৫৫০০ থেকে ৫৬০০ টাকা পর্যন্ত ৪৪ অথবা ৪৫ অথবা ৪৬ কিস্তিতে ফেরত দিতে হয় (এন জি ও ভেদে পার্থক্য) । প্রতি কিস্তিতে সুদ + আসল মিলে ১২৫ টাকা নেওয়া হয় ( ৪৪ X (১১৫ আসল + ১০ সুদ) টাকা = সুদাসল ৫৫০০ টাকা)। তাহলে যদি কেঊ ৫,০০০ টাকা ঋণ নেয় তাকে ৫০০ টাকা সুদ দিতে হচ্ছে (অতি সহজেই আমরা বলতে পারি শতকরা ১০% (সরল সুদ) ), যা বাণিজ্যিক ব্যাংকের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। এই কিস্তিগুলো শুরু হয় ঋণ নেওয়ার ৭ দিনের মাথাই (বি আর ডি বি) অথবা ১৫ দিনের মাথাই (গ্রামীণ ব্যাংক)।
তাহলে প্রশ্ন উঠতে পারে চক্রবৃদ্ধি সুদই বা কোথা থেকে এলো আর এন জি ও গুলো যখন জামানত ছাড়া বা নামমাত্র জামানতের মাধ্যমে অতি সহজেই ঋণ দিচ্ছে তাহলে সমস্যাটা কোথাই । যখন কোন ঋণ গ্রহীতা বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে থাকেন তখন ঋণের সুদটা সাধারণত বছর শেষে সুদাসলে একসাথে বা কিস্তিতে প্রদান করে থাকেন। যেটা আমাদের ছোট বেলার ঐকিক অংক করার মতো ১০০ টাকাই ১ বছরের সুদ ১০ টাকা হলে সুদে আসলে কত হয়? উত্তরটা আমরা সবাই চট করে বলে ফেলি ১১০ টাকা (১০০+১০)। কিন্তু এটা বছরের শুরুতে নয় ৩৬৫ দিন পার হবার পর সুদাসলে ১১০ টাকা। যা প্রত্যেকটি এন জি ও ঋণ প্রদানের ৭দিন বা ১৫ দিন (১ম কিস্তি) মাথাই ৭ দিন অন্তর অন্তর আসল ও সুদ সহ ১১৫+১০=১২৫ টাকা প্রতি কিস্তি হিসাবে, ৪৪ কিস্তির মাধ্যমে ৫৫০০ টাকা তুলে নিচ্ছেন। এখানে আমারা পরিস্কার বুঝতে পারছি যে, ঋণগ্রহীতাকে বছরের শুরু থেকেই ঋণ ও সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে বছরশেষে নয়।
তাই বছরের শুরু থেকে ঋণ পরিশোধ করায় ঋণের পরিমান হ্রাসের সাথে সাথে সুদের পরিমানও হ্রাস পেতে থাকে। হিসাব করে দেখা যায়, যদি কোন ঋণগ্রহীতা ৫০০০ টাকা ঋণ নিয়ে থাকেন, ঋণের সুদের পরিমান হবে ৩৪১ টাকা (১৬ টাকা হারে ৪৪ কিস্তিতে Click This Link )।
এক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতা কে সুদ বাবদ ৫০০ টাকা প্রদান করতে হচ্ছে যা প্রকৃত সুদের দিগুনের কাছাকাছি।
প্রতি কিস্তিতে ঋণের পরিমাণ কমার সাথে সাথে সুদের পরিমাণ হ্রাস পেতে থাকে। যা ৪১, ৪২, ৪৩, ও ৪৪ তম কিস্তিতে সুদের পরিমাণ হয় যথাক্রমে ০.৭৭, ০.৫৫, ০.৩৩, ও ০.১১ টাকা।
কিন্তু আমাদের দরিদ্র ঋণ গ্রহীতাকে শেষ পর্যন্ত প্রতি কিস্তিতে ১০ টাকা করে সুদ প্রদান করতে হয়, হিসাব করে দেখা যায় সুদের হার ২৫% থেকে ৩০% মত হয় (এন জি ও ভেদে পার্থক্য)। যাকে বলা যায় চক্রবিদ্ধি সুদ। এই হোল আমাদের নাম মাত্র জামানত বা জামানত বিহীন ঋণের সুদের অবস্থা বা ক্ষুদ্রঋণের দুষ্টু চক্র।
এবার বলি একটু অন্য দিকের কথা। প্রত্যেক সদস্য কে (ঋণগ্রহীতা) প্রতি সপ্তাহে সঞ্চয়ী হিসাবে ১০ টাকা করে জমা রাখতে হয়। যা বছরন্তে ৩% হারে (বাণিজ্যিক ব্যাংক ৫%) সুদে আসলে ফেরত দেওয়া হয়, যদি কোন ঋণগ্রহীতা বা সদস্য সঞ্চয়ী উত্তোলন করতে চায়। এখানেও আমাদের দরিদ্র ঋণগ্রহীতাকে ৫% সুদের পরিবর্তে ৩% সুদ দিয়ে ঠকানো হচ্ছে।
কিভাবে আমরা ঋণের দুষ্টু চক্রে জরিয়ে পরছি? ঋণগ্রহীতা ঋণ নেওয়ার পর সংসারে কিছুটা সচ্ছলতা আসে, ঋণের কিস্তিও পরিশোধ হতে থাকে ভালভাবে তবে সেটা ২০ থেকে ২৫ কিস্তি (৪ থেকে ৫ মাস) পর্যন্ত। এর কিছুদিন (২৫ থেকে ৩০ কিস্তি বা ৫ থেকে ৬ মাস) পরেই দেখা দেয় সেই অভাব আর ঋণ খেলাপির সম্ভবনা। হত দরিদ্র ঋণগ্রহিতাকে ঋণের টাকা পরিশোধ করার জন্য ঋণ নিতে হয় অন্য কোন এন জি ও এর নিকট থেকে। এইভাবে দেখা যায় প্রত্যেক টা ফ্যামিলি ৩ থেকে ৪ টা এন জি ও এর ঋণের জালে জরিয়ে পরছেন।
আবার কোন কোন এন জি ও কে দেখা যায় ঋণপরিশোধের আগেই ঋণগ্রহীতাকে ঋণ দিয়ে থাকেন। এটা আবার কেমন ? যখন ঋণগ্রহীতা ২৫ থেকে ৩০ কিস্তি বা ৫ থেকে ৬ মাস পর ঋণের টাকা পরিশোধ করতে হিমশিম খায় বা অক্ষম হয়ে পরেন ঠিক সেই মুহূর্তে পূর্বের তুলনাই একটু বেশি ঋণ দেওয়া হয় যেমন, ৮০০০ থেকে ১০০০০ টাকা পর্যন্ত বা তারও বেশি। এবং নতুন বরাদ্দকৃত ঋণের টাকা থেকে পূর্বের ঋণ টাকা কেটে রেখে বাদবাকি টাকাটা ঋণগ্রহীতার হাতে দিয়ে থাকেন। এতে করে দেখা যায় যে ঋণগ্রহীতা ঋণের ৫৫০০ টাকা ৪৪ কিস্তি বা ৩০৮ দিনের মাথায় পরিশোধের পরিবর্তে ১০৮ দিনের মধ্যে পরিশোধ করে দিলেও সুদের পরিমান একই থাকছে এবং নতুন করে ঋণের জালে জড়াতে থাকেন।
তবে গ্রা্মীন ব্যাংকের শিক্ষা ঋণের কথা না বললেই নয়। গ্রামীন ব্যাংক শিক্ষা ঋণ প্রকল্পের মাধ্যমে, গ্রামীন ব্যাংকের সদস্যদের অনার্স ও মাস্টার্স পড়ুয়া মেধাবী ছেলেমেয়েদের কে শিক্ষা ঋণ দিয়ে থাকেন অতি অল্প সুদে। এবং এই শিক্ষা ঋণের অর্থ পরিশোধ করতে হয় মাস্টার্স অথবা শিক্ষা জীবন শেষ হবার ১২ মাস পরে এককালিন অথবা কিস্তিতে। যা অন্য কোন এন জি ও এর মাধ্যমে দেওয়া হয় না।
এই চক্রবৃদ্ধি সুদের ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে অনেকেই হয়ত উপকৃত হচ্ছেন, কিন্তু সেই পরিমানটা কতটুকু? পরিসংখ্যান করলে দেখা যাবে শতকরা ৫ জনেরও নিচে।
তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে ক্ষুদ্র ঋণকে আশীর্বাদ না ভেবে অভিশাপ বলে মনে হচ্ছে। তবে আশীর্বাদ ভাবা সম্ভব যদি সঠিক উপায়ে সুদ নিয়ে, ঋণের কিস্তির সংখ্যা বৃদ্ধি করে, সঠিক তত্ত্ববধায়নে ঋণ প্রদান করা হয়।
সৌমিত্র কুণ্ডু
[email protected]
©somewhere in net ltd.