নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার মাতৃভাষার নাম বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি । পৃথিবীর মাত্র তিন লক্ষ মানুষ এই ভাষায় কথা বলে । ভাষাটিকে ইউনেস্কো এনডেঞ্জার্ড ল্যাঙ্গুয়েজ হিসাবে ঘোষনা করেছে ।

কুঙ্গ থাঙ

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীগুলোর ভাষা ও জাতিগত অস্তিত্বের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দাবী করছি...

কুঙ্গ থাঙ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মণিপুরি ধর্মের উৎস ও বিবর্তন

০৩ রা নভেম্বর, ২০১০ বিকাল ৪:০৩





মণিপুরি ধর্ম হলো মণিপুরিদের আদিধর্ম, মণিপুরিদের মধ্যে 'আপোকপা ধর্ম' বা 'সানামাহি ধর্ম' নামেও পরিচিত। ব্রিটিশ এবং ভারতীয় বিভিন্ন গবেষকের গবেষনা কর্মে এ ধর্মকে 'Manipuri Religion' বা 'Sanamahism' বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রাচীন এই ধর্মটি স্বাভাবিক ভাবেই তাদের আদিম সাম্যসমাজের সামগ্রিক জীবন-ভাবনা ও জীবনাচরনের অনুষঙ্গ হয়ে গিয়েছিল। প্রাক-শ্রেণীসমাজের সর্বপ্রানবাদের সাথে মণিপুরিদের ধর্মধারনার গভীর যোগাযোগ লক্ষ করা যায়। মণিপুরিরা প্রকৃতির বিভিন্ন প্রপঞ্চকে প্রানময় বলে বিশ্বাস করতো, এবং সে বিশ্বাস থেকেই তার প্রাকৃতিক বিভিন্ন শক্তিকে দেবতা হিসাবে কল্পনা করে তাদের উপাসনা করতো। দেবতাকে সন্তুষ্ট করার ধারনা থেকেই মণিপুরি নৃত্য, গীত, বাদ্য, মার্শাল আর্ট ইত্যাদি নানান শিল্পকলার শাখা বিকশিত হয়েছে।



অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের মতোই মণিপুরি ধর্মেরও রয়েছে অসংখ্য পবিত্র গ্রন্থ, প্রাচীন পুরাণ, শ্লোকসম্বলিত ধর্মীয় সাহিত্য। এগুলোকে বলা হয 'পুয়্যা'। প্রাচীন মণিপুরি মৈতৈ ভাষায় লিখিত পবিত্র গ্রন্থগুলোতে মহাবিশ্ব ও মহাবিশ্বের সৃষ্টি, জীবনের রহস্য, মানুষের শরীরের ভিতরে আত্মার স্বরূপ ও অস্তিত্ব, প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক বস্তু, মৃত্যূ, প্রকৃতির সাথে জীবনের সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয়ে দার্শনিক আলোচনা করা হয়েছে। মণিপুরি ধর্মধারনায় দেবতাদের রাজা পরমপুরুষ 'আত্যিয়াকুরু শিদাবা', বা 'লাইনিঙথৌ সরাহাল'কে বিশ্বজগতের সৃস্টির মুল বলে বর্ণনা করা হয়েছে, এবং তাকে পিতৃজ্ঞানে উপাসনা করার কথা বলা হয়েছে। আর পরমনারী 'ইমা লেইমারেল সিদাবী' বা 'ইমাগিথানী'কে মানুষ থেকে শুরু করে জীবজগৎ, নদী, পাহাড়, সমুদ্র, গ্রহ, নক্ষত্রসব বিশ্বজগতের মাতা হিসাবে গন্য করা হয়েছে, এবং তাকে মাতৃজ্ঞানে আরাধনা করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া পুয়্যাগুলোর বিশেষত্ব হলো এগুলোতে মনিপুরি মিথলজির অসংখ্য দেবদেবীর কথা, উপাখ্যান, তাদের উপাসনারীতি বা 'লেইনিং-লিচেত' আলোচনা করা হয়েছে।







প্রাচীন মনিপুরের ধর্ম-দর্শনের সাম্যবাদী দিকটি হলো মানবজাতি সম্বন্ধে এর সর্ব্বজনীন মতবাদ - সৃস্টিকর্তা নিজের প্রতিকৃতি অনুসারে মানবজাতিকে সৃস্টি করেছেন, মানুষের মধ্যে কোন ভেদাভেদ নেই কারণ প্রতিটি মানুষই সৃষ্টিকর্তার একেকটি ছায়া। মণিপুরি সমাজের আদিধর্মে আমরা দেখি ধর্ম, জীবনবোধ, বিজ্ঞান, শিল্পকলা ও নৈতিকতার ঐকত্রিক রূপ। মণিপুরিদের উৎপাদন ব্যবস্থা, জীবনের পদ্ধতিও সে প্রকল্পের সহায়ক ছিল। শ্রেনীসমাজের মতো ধার্মিক না হয়েও ধার্মিকতার ভান করা, বা ধর্মকে শোষনে বা স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করার সুয়োগ এখানে নেই, কেননা প্রাচীন ধর্মে 'সালাই' ও 'সাগেই' ভিত্তিক যৌথ সামাজিক জীবনের বাইরে ধর্মচেতনার কোন স্থান নেই।



আধুনিক ধারনায় মণিপুরি ধর্মকে প্রাকৃত ধর্ম বলা হলেও মনিপুরি রিভাইভেলিস্টরা একে দক্ষিন-পুর্ব এশিয়ার প্রাচীনতম প্রাতিস্ঠানিক ধর্ম হিসাবে দাবী করেন। হিন্দুধর্মের শ্রেনীভিত্তিক সমাজচেতনা, আচারসর্বস্ব কাঠামো, উঠতি ব্রাহ্মনশ্রেনীর আধিপত্য ইত্যাদি কারণে বিংশ শতকের প্রথম দিকে পুরাতন ধর্মচেতনায় ফিরে যাবার জন্য রিভাইভেলিস্টদের আন্দোলন শুরু হয়। প্রাচীন ধর্ম নিয়ে গবেষনা, লেখালেখি এবং জনসংযোগ কার্যক্রম শুরু হয়। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে আঠারো শতকে হিন্দু মিশনারিদের প্ররোচনায় ধ্বংসসাধন করা ও নিষিদ্ধ ঘোষনা করা প্রাচীন ধর্মীয় পুস্তকগুলো মণিপুরের কৌব্রু, খোইবু, কোৱাথা, কাকচিং ইত্যাদি অঞ্চলের বিভিন্ন গোপন স্থান থেকে সংগ্রহ এবং পুনরুদ্ধার করার কাজ শুরু হয়। উল্লেখ্য যে ১৭৩২ খ্রীস্টাব্দের মণিপুরি মেরা মাসের ১৭ তারিখে কাংলা ফোর্টের সম্মুখে পুয়্যাগুলো পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়। মণিপুরি রিভাইভেলিস্টরা প্রতিবিছর ইতিহাসের অন্ধকারতম দিনটিকে 'পুয়্যা মেইথাবা ' দিবস হিসাবে পালন করে।



একথা সত্য যে মণিপুরিরা তাদের আদিধর্মে স্থির থাকতে পারেনি, কিন্তু এতে কোন সন্দেহ নেই যে অষ্টাদশ শতকে হিন্দুধর্মের বলয়ে আসার পুর্ব পর্যন্ত প্রাচীন ধর্মটি পুর্বপুরুষ পরম্পরায় গভীর মর্যাদার সাথে পালিত হয়ে আসছিল। হিন্দু হবার পরেও মণিপুরিদের সামাজিক বিন্যাসের বৈশিষ্ট্যগুলো অক্ষত রয়ে গেছে। মণিপুরের বাইরে এসেও পুর্বপুরুষের লকেই-সাগেই-শিংলুপ ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা, জীবনযাত্রা, বাড়ীঘরের নমুনা, খাদ্যাভ্যাস, পরিধেয়, সামাজিক রীতি-আচার-অনুষ্ঠানের সাথে প্রাচীন ধর্মের আত্মীক সম্পর্কের সূত্রটি ছিঁড়তে পারেনি মনিপুরি মৈতৈ বা মণিপুরি বিষ্ণুপ্রিয়া কেউই। তাই রথযাত্রা, জন্মাস্টমী, রাসোৎসব, দোলযাত্রা ইত্যাদি হিন্দুধর্মীয় পর্বগুলোও পালিত হয় নিজস্ব আঙ্গিকে, আদিধর্মের আচার-কানুনের সাথে সমন্বয় ঘটিয়ে। এখনো আদিধর্মের দেবদেবীদের হিন্দুদেবদেবীদের সাথে সমান, কখনো কখনো অধিক মর্যাদার আসনে বসানো হয়। এখনো মনিপুরি মৈতৈদের একাংশ এবং মণিপুরি বিষ্ণুপ্রিয়াদের একটি ক্ষুদ্র অংশ আদিধর্মে স্থিত রয়েছে।



পরবর্তী পর্ব: আপোকপা (পুর্বপুরুষকে দেবতা জ্ঞানে আরাধনা)

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১০ বিকাল ৪:১৭

আবু শরীফ মাহমুদ খান বলেছেন: অনেক অজানা তথ্য পেলাম।

০৩ রা নভেম্বর, ২০১০ বিকাল ৪:২৯

কুঙ্গ থাঙ বলেছেন: পড়ার জন্যে অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

২| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১০ বিকাল ৪:৩৭

বিপ্লব কান্তি বলেছেন: কনভার্ট হওয়া খুব খারাপ জিনিস, হিন্দু ধর্মের গীতায় এনিয়ে বিষদ বলা আছে , হিন্দু ধর্মে আগে ও আপনাদের মত অনকে জনগোষ্টি ইচ্ছে করেই এসেছে , কিন্তু হিন্দুরা তাদের সমাজে তাদের স্হান দেয়নি । বর্তমানে প্রচুর খ্রিষ্টান হিন্দু ধর্মে কনভার্ট হয়ে আসে , কিন্তু এটা কতটুকু ঠিক তা নিয়ে চিন্তা আছে

০৩ রা নভেম্বর, ২০১০ রাত ১১:২৭

কুঙ্গ থাঙ বলেছেন: ধর্মান্তর বিষয়ে মোটামুটি ভালই বলেছেন তবে 'হিন্দু সমাজে স্থান পাওয়া'র ব্যপারটি বুঝলুম না দাদা। বাঙালি হিন্দু, পাঞ্জাবি হিন্দু, তামিল হিন্দু, আসামি হিন্দু, মণিপুরি হিন্দু সমাজ থাকতে পারে, আলাদাভাবে হিন্দু সমাজ কোনটা? যতদুর জানি শাক্ত, শৈব, সৌর, গাণপত্য, বৈষ্ণব প্রভৃতি অসংখ্য শাখা প্রশাখা রয়েছে হিন্দু ধর্মে। এগুলোর কোন শাখা বা উপশাখাকে ধরে হিন্দু ধর্ম বা সমাজকে বুঝতে হবে? ... আরেকটা কথা হলো, আঠারো শতকে মণিপুরি ধর্মান্তরের ব্যপারটি 'ইচ্ছা'য় নয়, অনেকটা জোরজবরদস্তিমুলক এবং এতে ভারতীয় হিন্দু ধর্মগুরু/ধর্মপ্রচারকদের যথেষ্ঠ ভুমিকা আছে। তারা মণিপুরের হাঁটুবুদ্ধি রাস্ট্রনায়কদের মগজধোলাই করতে সক্ষম হয় এবং ঐ ভূখন্ডটিকে মহাভারতে বর্ণিত মণিপুর রাজ্য বলে দাবী করে। বর্ণাশ্রমভিত্তিক হিন্দুধর্মে অন্যদের অনুপ্রবেশের কোন ব্যবস্থা না থাকায় বিকল্প ব্যবস্থা হলো গোটা একটি জাতিকে 'ট্রাইবকাস্ট' হিসাবে আত্মস্থ করে নেয়া। এ ব্যবস্থায় মণিপুরিদেরকে মহাভারতে বর্ণিত অর্জ্জুনের বংশধর অভিধা দিয়ে ক্ষত্রিয় বর্ণশ্রেনীতে অন্তর্ভূক্ত করে নেয়া হয়। সে কারনে বর্তমান মণিপুরি হিন্দু সমাজে ক্ষত্রিয় এবং ব্রাহ্মন এই দুইটি বর্ণশ্রেনী রয়েছে, যা আমাদের আদিধর্মে ছিলনা। ধন্যবাদ।

৩| ১২ ই নভেম্বর, ২০১০ রাত ৩:২৪

রাইসুল সাগর বলেছেন: জেনে ভালো লাগলো..অনেক অজানা তথ্য পেলাম.।শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ এবং++++
শুভকামনা রইল..

৪| ২১ শে নভেম্বর, ২০১০ বিকাল ৪:০৫

নিজাম কুতুবী বলেছেন: জানলাম। ধন্যবাদ

৫| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১০ রাত ২:২১

দীপান্বিতা বলেছেন:
নাচের ছন্দেঃ রাস পূর্ণিমায় আগরতলায়...

রাস পূর্ণিমার শুভেচ্ছা :)

৬| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১১ রাত ২:৪০

দীপান্বিতা বলেছেন: কেমন আছেন!...নতুন বছরে অনেক শুভেচ্ছা :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.