![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রাস্তার পাশে আড়মোড়া দিয়ে শুয়ে আছে ছেলেটি মিনিট
পাচেক হলো ঘুম থেকে উঠেছে।বয়স সাতাশ আঠাশ হবে।সুর্য্যি মামা তখন
কুয়াশার চাদর খুলে জেগে উঠেছে। রাস্তার কোনে
মানুষগুলো আড়মোড়া দিয়ে শুয়ে আছে। কনকনে শীত
তবুও এই মানুষগুলো হারতে রাজি নয়। কর্মব্যস্ত এই
শহরে মানুষগুলোর শেষ আশ্রয় স্থল এই ফুটপাত। কেউ কেউ
উঠে পানির লাইনে দাড়িয়ে রয়েছে। অনেকটা লম্বা লাইন। নাহ
এই পানি খাওয়া জন্য না কোনোরকম মুখটা ধুতে
পারলেই হয়। কেউ কেউ আবার মুখ না ধুয়েই কাজের
সন্ধানে বেড়িয়ে পরেছে…ধীরে ধীরে শহরটি
কর্মচঞ্চল হয়ে উঠছে। রাস্তার ওপাশে ভুরিওয়ালা
মানুষগুলো মর্নিং ওয়াক করছে। একসময় সবাই
সবার কাজে চলে যায়। ল্যাংড়া
,লুলো এবং অন্ধ মানুষগুলো
নিজেদের অবস্থান গ্রহন করেছে।বিভিন্ন ক্যাটাগরির থাল
নিয়ে বসে আছে।উচ্চমানের ভিক্ষুকদের ভিক্ষার থালটি
সিলভারের।আর সদ্য জন্মনেয়া ভিক্ষুকরা প্লাস্টিক দিয়েই
চালিয়ে দিচ্ছে।
অতঃপর সকাল গড়িয়ে দুপুর হয় ঃ
একটি কাপড়ের ব্যানারে বড়বড় অক্ষরের লাল কালি দিয়ে
লেখা ' এখানে ২০ টাকায় ডাল ভাত খাওয়া যায় ' অনেক মানুষ
ভিড় জমিয়েছে । রাস্তার মধ্য দিয়ে এসি কারে করে যাচ্ছেন
শহরের শিল্পপতিরা। জলীয়বাষ্পরা কারের সাদা কাচে
স্থান দখল করেছে। সকালে দেখা সেই ছেলেটিকে
দেখছি সেও ২০ টাকায় ডাল ভাত খাচ্ছে । এইবার সাহস করেই
ছেলেটির কাছে গিয়ে দাড়ালাম।
-ভাই দুঃখিত আপনার নামটা কী জানতে পারি ?
মুখে এক গাল হাসি । দাতের ফোকরে মোটা চালের ভাত লেগে
রয়েছে ।
-রিফাত ইসলাম। কেন ভাই ?
-এমনিতেই। আপনার বাড়ি ?
-ফরিদপুর।
-এখানে কীভাবে?
-আমার ভাই চেয়ারম্যানের মেয়েকে পালিয়ে নিয়ে বিয়ে করেছে এখন
আসামী করা হয়েছে আমাকে।
-কেন ?
-কারন আমরা দুই ভাই যমজ। ওই ভাই বাইরে কাজ করে তাছাড়া ওই মেয়ের সাথে আমারো প্রেম ছিল কিন্তু
ভাইয়ের সাথে ও ছিল তা জানতাম না। এখন
এলাকাবাসী মনে করছে আমি পালিয়ে নিয়ে বিয়ে করেছি।তাছাড়া থানায়
মামলা মোকাদ্দমা চলছে। বাড়িতে গেলে আমাকে জেলে নিয়ে নিবে।
-ভাই কিছু মনে করবেন না। আপনি কই থাকেন ?
-পাশেই একটা মেসে।
-তাইলে সকালে যাকে দেখলাম !!
-বোঝলাম না ভাই।
-সকালে আপনার মতো অবিকল একজন কে দেখেছি ?
-বলেন কী ? কোথায় ?
-এইতো পাশের মোড়ের ফুটপাতে।
-ভাই যদি কিছু মনে না করেন আপনি একবার রাতে আসতে পারবেন। ও আমার ভাই না । আমার
জীবনটা তামা তামা করে ফেলছে ।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
রাত্র তখন ১২ টা বাজে রিফাত ও পাশে দাড়িয়ে ঃ
একটি লোক কাথা গায়ে দিয়ে ফুটপাতে শুয়ে আছে।মুখটা ল্যাম্প পোস্টের আলোয় আবছা দেখা
যাচ্ছে। আমি কিছুটা হতভম্ব একই চেহারার দুইজন ।ও এসেই রেগেমেগে অস্থির লাথি দিয়ে ভাইটিকে ঘুম
থেকে উঠালো ।
- ওই উঠ । আমার জীবনটা পানি করে দিছিস। ওই মেয়ে কই ?
ঘুম ভাঙা চোখে ভাইটির দিকে তাকায় ।
-ভাই তুই । তোর বঊ কোথায় ?
-অভিনয় রাখ । বল ওই মেয়ে কোথায় ?
-কোন মেয়ে ?
- কোন মেয়ে!! চেয়ারম্যানের মেয়েকে তুই পালিয়ে বিয়ে করিস নি ?
- মানে তুই ওকে বিয়ে করিস নি ? তোর জন্য এতটা দিন ধরে আমি ফুটপাতে ঘুমাচ্ছি।
দুই ভাই কেদে উঠে। একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে ।
যাওয়ার আগে আমাকে ওদের বাড়ির ঠিকানার আর
মোবাইল নাম্বার দিয়ে যায়।
অতঃপর কয়েকদিন পর এক দুপুরবেলা আমি ওই নাম্বার এ কল দেই এবং জানতে পারি ওদের ই এক
খালাতো ভাই চেয়ারম্যানের মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।এবং রিফাত বিয়ে করেছে তার আপন
চাচাতো বোনকে।
©somewhere in net ltd.