নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিত্য নতুন স্বপ্ন দেখি,দূর থেকে তাই আড়াল করি।

কুশল রাজ রায়

আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে\nআসে নাই কেহ অবনি পরে\nসকলের তরে সকলে আমরা\nপ্রত্যেকে আমরা পরের তরে।\n\nএই আমার পরিচয়, আমার নীতি।\nফেইসবুকঃ- www.facebook.com/kushal.raj120

কুশল রাজ রায় › বিস্তারিত পোস্টঃ

আশ্চর্য সান স্টোন

০২ রা এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৯:১৬

প্রতিদিনকার মতোই রাস্তা ধরে হেটে যাচ্ছি, সন্ধ্যেবেলায় মোড়ের গলির চায়ের স্টলে এক কাপ চা পান করি। এ আমার রোজকার অভ্যাস,কিন্তু ঘটনা ঘটল আজ সন্ধ্যেবেলা,ফেরার পথেই এক ব্যক্তি আমায় ডাক দিলো। এই যে শুনুন, আপনার কাছে কিছু সময় হবে আমার প্রয়োজন ছিলো।লোকটির বয়স পঞ্চাশের অধিক হবে, মুখে খোঁচা খোচা দাড়ি, এলোমেলো চুল, মুখে কেমন জানি চিন্তার ছাপ। জী বলুন, কি জন্য সময় চাইছেন। লোকটির ভ্রু কুঁচকানো মুখ দেখে মনে হলো ভীষণতর চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন।



এখানে বলা সম্ভব নয়,আমার বাসায় চলুন। আমিও সাত পাচ না ভেবে লোকটির সাথে চলা শুরু করলাম,পাশেই বাসা।দারুণ আলিশান বাসা,এ নিঃসন্দেহে ধন কুবের কিন্তু আমার সাথে কি প্রয়োজন? বাসার ভিতরে একটি ছোটোখাটো লাইব্রেরী, এককথায় পারিবারিক লাইব্রেরী বলা চলে। আমাকে এই রুমেই বসতে বললেন।খানদানী টেবিল চেয়ার, বোঝাই যায় লোকটির পুরাতন অভিজাত জিনিসের উপর প্রবল ভালোবাসা।এই ধরনের টেবিল চেয়ার আমি এর আগে দেখি নি,চমকানো কারুশৈলী,আগের আমলের পুরু কাঠ দিয়ে তৈরী।লাইব্রেরীর ডানপাশের একটি বড় কাঠের সেলফে পুরনো জিনিসের সংগ্রহশালা।মোড় ঘুরালে হয়তো জিনিসগুলো দেখা সম্ভব হতো, ভদ্রলোক সামনে বসা তাই আর সম্ভব হলো না।



সুন্দর একটি মেয়ে এসে চা দিয়ে গেলো, লোকটি পরিচয় করিয়ে দিলেন উনার মেয়ে,মৃদু হাসি দিয়ে অঅভ্যর্তনা জানিয়ে চলে গেলো। এতক্ষণ এগুলোর ঘোরে ভুলেই গেছিলাম আমার এখানে আসার উদ্দেশ্য।



এবার লোকটি কথা শুরু করল।কথা বলার আগে তোমাকে আমার পরিচয় জানিয়ে দেই। আমি অমিত মিশ্র, বাড়ি ফটিকছড়ি কাস্টমস চাকরি ছিল। চাকরীর খাতিরেই এই শহরে আসা তারপর এইদেশেই নিজের ঘরবাঁধা, পরিবারপরিজন নিয়ে এখানেই আছি। বছর দুয়েক আগে আমি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছি, শেয়ার ব্যবসা আছে, আর ছোটখাটো কিছু ব্যবসা।





ভালো। কিন্তু এসব আমাকে বলার কারণ?



বলছি। হাতে একটি সিগারেট দিয়ে বললেন, এই নাও ধরাও।



আমি সিগারেট খাই না।



গতসন্ধ্যায় তোমাকে দেখেছি চায়ের স্টলে সিগারেট খেতে, লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই।



এর মানে লোকটি আমার ওপর কিছুদিন ধরেই নজর রাখছেন।লাইটারটি আমার দিকে এগিয়ে দিলেন। পিতার বয়সী ব্যক্তির সামনে কি করে সিগারেট খাই? আমি বুঝতে পারছি না, আমাকে এতো খাতিরতোয়াজ করার কারন, লোকটি চেয়ার থেকে উঠে একটু সামনের বইয়ের আলমারির থেকে পুরনো নোটবুকের মতো কিছু একটা আমার সামনে নিয়ে আসলেন।



দেখে মনে হচ্ছে, অনেক বছর আগের কমহলেও সত্তর আশি বছর তো হবেই। সামনের প্রচ্ছদ দেখে ভূতাত্ত্বিক মনে হয়,লোকটি বলতে শুরু করলেন,



আমি তখন সবে এই শহরে এসেছি, রাস্তাঘাট তেমন একটা চিনি না, অফিস কোয়াটার এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ জীবন।একদিন পুরনো কাগজপত্র খুঁজতে গিয়ে এই পান্ডুলিপি চোখে পড়ে, ১৯২০ সালের দিকে লেখা, এডমন্ড হিপ্টারসন নামে এক ইংরেজ সাহেবের লেখা। ব্রিটিশ শাসনামলে এখানের কুমরীছড়া নামের এক চাবাগানের বড়োসাহেব হিসেবে চাকরি করেছিলেন। সেই সুবাদে বাংলা ভাষা অনেকটা বাজেয়াপ্ত করেছিলেন। উনার একজন সহকারী ছিল হরপ্রসাদ তাতী। সাহেবের সামগ্রিক দপ্তরিক,চিঠি সব কিছুই তিনি করতেন।আর্কিওলোজীর উপরে ভীষণ ঝোক ছিল সাহেবের।কি কারণে কাস্টমে এই পান্ডুলিপি আনা হয়েছিলো তার কোনো উল্লেখ নেই।





ভদ্রলোক কথা না বাড়িয়ে, পান্ডুলিপিটি আমার হাতে দিলেন।এর প্রচ্ছদ দেখে কিছুটা অবাক হলাম, তিনটি ভিন্ন ধরনের মাথার খুলি, দুইটি গাছ কেমন জাতি অদ্ভুত কান্না হাসির মিশ্রণ গাছ দুইটিতে, নিজের প্রান্তে ধু ধু মরুভূমির দৃশ্য,একটি প্রানী শুয়ে আছে, খুবই করুন সেই দৃশ্য।পুরনো আমলের গাছের বাকলের তৈরী পৃষ্ঠা,বর্তমান কাগজের পৃষ্ঠা থেকে অনেক পুরু এবং শক্ত। প্রথম পাতায় সাহেবের নাম , সাল (Edmund khipterson,1920) এবং উনার সহকারীর নাম (horproshad tathi). লিপিতে সাহেবের পত্নীর কোনো উল্লেখ নেই,এই শহরে আসা,চাকরি ইত্যাদির বৃত্তান্তই এইপৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে।



এবার আর পারলাম না ভদ্রলোকের সামনেই সিগারেট ধরিয়ে দিলাম।মানুষের মন বড় বিচিত্র, অনেকেই ভাবে সিগারেট পানে মনে প্রশান্তি মিলে কিন্তু সত্যিই কি তাই! এ নিতান্তই মনে বুঝ মানানো কোনো উপশম নয় হোক সিগারেট কিংবা পানের খিলি।পৃষ্ঠাঙ্ক ২য় তে তাকাতেই চোখ ভড়কালো,একটি প্রাচীন চক্রিকা কোনো এক ম্যাক্সিকান চিত্রকর স্টিফেন মিল্টন এর আকা। এর মানে কথা দাড়ায়, এটি ম্যাক্সিকোর দোরগোড়ায়ও ঘুরে এসেছে।ম্যাক্সিকান ন্যাশনাল মিউজিয়ামে এযটেক সান স্টোন(aztec sun stone,1790) নামে২৪ টন ওজনের একটি ভাস্কর্য আছে,ম্যাক্সিকান সূর্যদেবতাকে সম্মান ও শ্রদ্ধাপূর্বক এই ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়।এই চক্রিকার সাথে এর বিশেষ মিল আছে। কিন্তু এ থেকে ভিন্নতাই, মিল শুধু গোলাকৃতি প্রাচীর আর কেন্দ্রে সূর্যের উপস্থিতি। এরপর কয়েকটি পৃষ্ঠায় বাংলা অক্ষরে একটা করে খেয়ালী, বড়ই দূর্বোধ্য খেয়ালীগুলো।খুব সম্ভবত হরপ্রসাদ তাতীর লেখা ।সবচেয়ে বড় রকমের আশ্চর্য হয়েছিলাম, শেষের পৃষ্ঠায়, দুইটি হাতে আকা ছবি,প্রথমজন সাহেব আর ২য় জন হরপ্রসাদ তাতী।আশ্চর্যকথা কথা হচ্ছে হরপ্রসাদ তাতী দেখতে অবিকল আমার মতো। সম্ভবত ২০০৩ সালে লন্ডনে পৃথিবীতে একই চেহারার দুইজন করে যারা আছেন তাদেরকে নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল,পৃথিবীরর প্রায় ৬৭ টি দেশের মানুষ এতে অংশগ্রহন করেছিলেন। সেদিন অবাক হয়েছিলাম, কিন্তু আজ আমি হতভম্ব,আজ থেকে একশত বছর আগে আমার মতো কেউ পৃথিবীতে ছিল, এই একবিংশ শতাব্দীতে অবিশ্বাস্য হলেও সত্য।



যাই হোক, এবার বুঝতে পারলাম আমাকে খাতিরতোয়াজ করার মূল কারণ, মনে ভয় হচ্ছে, লোকটি যদি আমাকে বন্দী করে রাখে।



ভদ্রলোক বলে উঠলেন, তোমার কি মনে হচ্ছে আমি তোমাকে বন্দী করে রাখব। অবশ্যই রাখতাম যদি খেয়ালীর প্রথমটির উত্তর নাম জানতাম। এখানে পাচটি খেয়ালী আছে,দীর্ঘ বিশ বছর ধরে এর সন্ধান করছি।বিগত এক মাস তোমার পিছন ঘুরেছি, কিন্তু আমি তোমাকে বন্দী করব না, তুমি নিজেই এরজালে আটকে গেছো।



সত্যি বলতেই আমার পক্ষে এই রহস্য ভেদ না করে যাওয়া সম্ভব নয়।কিন্তু আমিতো খেয়ালী গুলো পড়িনি,ভদ্রলোক আমার দিকে তাকিয়ে আছেন, অদ্ভুত মায়ায়।কি এর রহস্য? কেনই বা এর ধুম্রজাল আমাতে ছড়াচ্ছে,আমি হতবাক! পাব কি এর রহস্য থেকে মুক্তি?







মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.