![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছেলেটির নাম টগর নাহ সে বিশেষ কিছু নয়
তবে ছেলেটির জীবনের উপর দিয়ে বিরাট বড়
এক ঝড় বয়ে গেছে । শুনেছি গ্রামীণ
ছেলেদের একটা বিশেষ গুণ থাকে এই
ছেলেটির ও তা আছে তা হলো তারা খুব
ভালবাসতে জানে ।
সে একটি মেয়েকে ভালোবাসে।
মেয়েটি বাসে কিনা সে এখন পর্যন্ত
জানতে পারে নি। সবেমাত্র অষ্টম
শ্রেণীতে পড়ে টগর
অনুভূতি জিনিসটা বেশী। তাদের
শ্রেণীতেই পড়ে শ্রীলেখা।
দেখতে সুন্দর,শান্ত-শিষ্ট,কথাবার্তায় অনেক
ভদ্র।এককথায় টগরের মনের মতো একটি মেয়ে।
টগর একেই ভালোবাসে। ভালোবাসার
শুরুটা হয় ভালোলাগা থেকে ।মেয়েটি যেন
স্বর্গের হাসি নিয়ে জন্মেছে ।মেয়েটির
হাসিতে কেমন
জানি একটি মায়া লুকিয়ে আছে যার মায়ায়
হয়তো টগর কে আরো পাগল করেছে ।
ইচ্ছে করলে টগর ছোটখাট প্রেম উপখ্যান
লেখে ফেলতে পারে । আজ প্রায় এক বছর
হতে চলল এখন পর্যন্ত মেয়েটির
সাথে একটি কথা ও বলেনি ,অনেকবার
চেষ্টা করেছে মেয়েটির
দিকে না তাকাবার কিন্তু অবুঝ প্রেম
কী মানে বাধা । মেয়েটি অনেক
স্মার্ট ,ক্লাসের সবাই
তাকে ভালবাসে,শিক্ষকদের কাছে সে যেন
স্নেহাসিনী সব শিক্ষক তাকে খুব মায়া করে ।
কিন্তু গোপন প্রেম বড়ই ব্যাতাতুর বার বার কষ্ট
দেয় টগরের মনে । এরকম করেই
পেরিয়ে গেলো আরো ছয়টি মাসে। এবার
টগর ঠিক করেছে শ্রীলেখাকে তার
ভালোবাসার কথা বলেই ফেলবে ।কতরাত
সে সংগোপনে কাটিয়েছে,কেদেছে দিন
রাত্রি তার ইয়ত্তা নেই। আজ তার শেষ
হওয়া উচিত ।ঠিক করল আজ স্কুল ছুটির পর
সে শ্রীলেখার বাড়ি পর্যন্ত যাবে তার
পেছন পেছন।একখানা চিঠি ও
তৈরী করে ফেলেছে। উঠতি বয়সের প্রেম
গুলো এরকমই আবেগের বসে যেকোনো জিনিস
করতে পারে মনে বাধে না। যদিও আজকাল
ফেইসবুক ভিত্তিক প্রেমগুলো বেশী হয় কিন্তু
গ্রামীণ সমাজে এই সামাজিক মাধ্যমটি এখন ও
পৌছায় নি। যাই হোক টগরের গল্পটি বলি। স্কুল
ছুটির পর টগর শ্রীলেখার পিছনে সামান্য দুরত্ব
বজায় রেখে হাটতে শুরু করল।উদ্দেশ্য ঝোপ
বুঝে কোপ মারা অর্থ্যাৎ প্রেমের
আবেদনপত্রখানি শ্রীলেখার
কাছে জমা দিবে। এবং সুযোগটি এসে ও
গেল ,চিঠিটি দিতে টগর সফল ও হলো।কিন্তু
মেয়েটি কিছু বলল
না চিঠি হাতে নিয়ে সোজা বাড়ির
পথে হাটতে লাগলো। হয়তো মনে মনে সে অ
টগরকে ভালোবাসে । টগর আজ দায় মুক্ত দীর্ঘ দুই
বছরের সাধনা আজ সফল। মনের ভিতর বসন্তের
হাওয়া বইছে হেলে দুলে ,কাল কি হবে এই
ভেবে কাটছে রাত ,সময় যেন কাটছে না।
পরদিন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই
চিন্তা করতে শুরু করল কীভাবে শ্রীলেখার
সামনে নিজেকে উপস্থাপন করবে।
চুলকে নানান ভাবে সাজাচ্ছে চিরুনির
জীবন থাকলে নেহাৎ সে আত্মহত্যা করত।
হিতের বিপরীত হতে পারে এ নিয়ে তার
কোনো মাথা ব্যাথা নেই ।
অবশেষে সে স্কুলে গেলো। ক্লাসের প্রথম
সারিতে শ্রীলেখা বসে,ভালোছাত্রী তাই
স্যাররাই জোড় করে তাকে সামনে বসান।আজ
সে সুন্দর করে সেজেছে,এমনিতেই সুন্দর এখন
আরো বেশী ভালো লাগছে।
তবে ক্লাসে আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটলো টগর
কে দেখে । যে ছেলে ঠিক মতোন দাত ব্রাশ
করে আসে সে কিনা আজ রাজপুত্রের সাজ
ধরেছে। স্কুলের ইউনিফর্মটা ও নতুন নতুন লাগছে।
ক্লাসে সবার কানাকানি শুরু
হয়েছে ,একত্রে একদল মাছি শদ
করলে যেমনটি হয় শব্দটি ঠিক সেরকম ই হচ্ছে।
তবে আজ টগর কিছুটা নিরাশ কারণ
শ্রীলেখা তাকে দেখে শুধু
একটি হাসি দিয়ে তার পর পুরো সময় একবার ও
তার দিকে তাকায় নি।কিছুটা ক্ষোভ
রয়েছে তার প্রতি কিন্তু
সে জানে মেয়েরা কোনো জিনিস একটু সময়
নিয়ে করে।
বরাবরের মতো স্কুল ছুটি হল। কিন্তু আজকে আর
শ্রীলেখাকে দেখা যাচ্ছে না।কিন্তু হাল
ছাড়ার পাত্র টগর
নয় সে অপেক্ষা করছে। পনেরো-বিশ মিনিট
গত হবার
পর হঠাৎ দূরে একটি মহিলার
সাথে একটি মেয়েকে
দেখতে পেল সেই সাবলীল হাসি চিনতে ভূল
হল না এই শ্রীলেখা।
কিন্তু আজকে মার সাথে কেন তাহলে কী ও
মাকে সব কিছু
বলে দিয়েছে। এবার মনে চিন্তার উদ্রেগ
হলো কিন্তু প্রেমে
পড়লে মানুষ সাহসী হয় তাই বুকে সাহস
রাখছে ।সেদিনের মতো আর শ্রীলেখার
সাথে দেখা হলো
না টগরের। বাড়ির সদস্যরা ও আজ অবাক
হচ্ছে ছেলের
বেশ ভূষন দেখে। কিন্তু টগর জিনিসটি আড়াল
করার চেষ্টা
করছে। কারন
সে জানে মা বাবা জানলে বিষয়টি
অন্যদিকে
মোড় নিবে।আজকাল পড়ার
টেবিলে সন্ধাবেলায় বসে পড়ে
টগর।পরীক্ষার পাশে অন্য কেউ বসুক তা সে চায়
না। টগর
প্রথম হতে চায় না সে দ্বিতীয় হতে চায়।এর
পিছনে
একটি কারণ ও আছে,শ্রীলেখার শ্রেণী রোল
এক,এবং
দ্বিতীয়
হলে সে শ্রীলেখাকে ভালোভাবে দেখতে
পারবে।
হোক না সে পরীক্ষার কয়েকটি দিন কিন্তু
পাশে বসতে তো
পারবে। হঠাৎ করে ছেলের পড়ালেখার
প্রতি মনযোগ
দেখে বাড়ির মানুষরা ও বেশ অবাক কিন্তু
সবাই খুব
খুশী। প্রেমে পড়লে হয়তো মানুষ এরকম ই হয় সবাই
একটু হলে ও বিষয়টি আচ করতে পারছে।
এভাবেই দিন
কাটছে। প্রতিদিন স্কুল ছুটির পর শ্রীলেখার
মা তাকে
বাড়িতে নিয়ে যায়। টগর নিষ্পলক
দৃষ্টিতে দেখতে থাকে
তাদের গতিপথ।
ক্লাসে মাঝে মাঝে মুচকি হাসাহাসি হয়
দুজনের কিন্তু এর ভিতরেই সীমাবদ্ধতা।
ক্লাসে দারুন ছাত্র
হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। সব শিক্ষক
টগরের
পড়ালেখার প্রতি মনযোগী হতে দেখে খুশী।
কিন্তু
কিছু বন্ধু এখন তার সাথে কথা বলে না কারন
টগরের সফলতা ক্লাসে তাদের মূল্য
কমিয়ে দিয়েছে।
ক্লাসের ছেলেরা এখন টগরের কাছেই নোট
খাতা বেশী
চায়।টগর এ নিয়ে ভাবে সে তার
শ্রীলেখাকে চায়। তার জন্য সে
সর্বোচ্চ করতে পারে।দেখতে দেখতে নবম
শ্রেণীর
বার্ষিক পরীক্ষা ও চলে আসে। টগর খুব মনযোগ
দিয়ে
পড়ালেখা শুরু করেছে এইসব মুচকি হাসি আর
ভালো
লাগছে না তার। এবার
সরাসরি কথা বলতে চায়। পরীক্ষা
শুরু হলো। প্রতিদিন পরীক্ষা শুরু হবার আধ ঘন্টা
আগে সে স্কুলে পৌছে এর কারন অবশ্য আছে।
শ্রীলেখার
তার থেকে পাচ ছয় ব্রেঞ্চ আগে বসে তাই
সে ক্লাসের বাইরে
জানালার ফাক দিয়ে শ্রীলেখাকে দেখে।
শ্রীলেখা হয়তো
জিনিসটি বুঝতে পারছে তাই সে ও
জানালার দিকে তাকিয়ে
থাকে।তবে বন্ধুবান্ধবের জন্য সতর্ক থাকে যদি
কেউ দেখে ফেলে। ক্লাসে এখনো কেউ
তাদের কথা জানতে
পারেনি। এভাবেই পরীক্ষা শেষ হয়।স্কুল
বন্ধ ,সব গুলো
পরীক্ষাই ভালো হয়েছে টগরের
এবং সে আশাবাদী দ্বিতীয়
রোলটি তারই হবে।পরীক্ষা শেষ হলো চার-
পাচ দিন হবে
টগরের মনে হচ্ছে কয়েক বছর ধরে শ্রীলেখার
সাথে দেখা হয় না । সে আর
থাকতে পারছে না আজকে।
একবার দেখা করবে কিভাবে তাদের বাড়ির
চারিপাশ দেয়ালে
ঘেরা ভিতরে যাওয়া প্রায় অসম্ভব।
এভাবে কয়েকদিন বাড়ির
পাশ ঘুরে এসেছে কিন্তু শ্রীলেখার
দেখা পায়নি কিন্তু
সেদিন তাদের দেখা হয়েই গেলো।
আবারো তাকে দেখে হাসি।মেয়ে
হাসে বেচারা টগরের বুকের
ব্যাথাটা আরো বাড়ে। মা
বাবার সাথে কোথাও যাচ্ছে হয়তো মামার
বাড়িতে। বেশ
কয়েকদিন থাকবে তা তার বাবার
হাথে ব্যাগ দেখেই বোঝা
যাচ্ছে।শ্রীলেখার পরিবারে সে একাই তার
কোনো ভাই বোন নেই।
টগরের মনে ভয় যদি ওর পরিবারের কেউ
তাকে চিনে ফেলে তাই
আড়ালে লুকিয়েই সব দেখছে।একসময়
শ্রীলেখা চলে গেলো।
যাবার আগে একটি টিস্যু রাস্তায়
ফেলে গেল।টগর দৌড়ে
গিয়ে টিস্যুটি হাতে নিল খুব সুন্দর করে ভাজ
করা। ভিতরে
একটি চকলেট এবং টিস্যুর ভিতরের
ভাজে লেখা আমি
কয়েকদিনের জন্য মামারবাড়ি যাচ্ছি ।
নিজের খেয়াল
রেখ,অনেকদিন ধরে বলবো বলে ভাবছিলাম
কিন্তু
বলতে পারিনি। আমি ও তোমাকে অনেক
বেশী ভালোবাসী। টগর
কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।কিছু সময়ের জন্য
রাস্তার মাঝখানে বসে পড়ল।হিতাহিত
জ্ঞান শুন্যের কাছাকাছি
সে কিছুই জানে না । কোনো রকমে টিস্যু আর
চকলেটটা
পকেটে ভরল।
দৌড়ে বাড়িতে এসে বিছানায় শুয়ে
পড়ল।আজ এত বছর পর তার
ভালোবাসা সাড়া দিয়েছে । সে
আর কিছু চায় না । ডিসেম্বর মাস শেষের
দিকে পরশু রেজাল্ট
দিবে । এখন টগরের আর দুঃখ নেই দুই না হলে ও
চলবে ।
রেসাল্ট দিবে আজ ,দুপুর দুইটার
দিকে শ্রেণী শিক্ষক স্কুলের
নোটিশ বোর্ডে টাঙানো হবে। ফুরফুরে মন
নিয়ে টগর
বাড়ি থেকে বের হয়েছে।স্কুলের প্রধান
ফটকের পাশে
যেতেই কয়েকজন তাকে বাহবা,অভিনন্দন
দিচ্ছে। টগর এক
হয়েছে শ্রীলেখা দুই ।সবাই বেজায়
খুশী বাড়িতে
একধরনের উৎসব বলা যেতে পারে। কথায়
আছে যার বিয়ে
তার খবর নেই পাড়াপড়শীর ঘুম নেই। টগর মনমরা
হয়ে বসে আছে। এখন যদি শ্রীলেখা তাকে আর
ভালোনাবাসে।হয়তো এতক্ষণে শ্রীলেখার
কাছে খবরটি
চলে ও গেছে।টগরের ভয় হয়।মনে নানান ধরনের
চিন্তার আসে স্যারকে বলে যদি নম্বর
পরিবর্তন করা যায়
কিন্তু এত সাহস এখন ও টগরের হয়নি।
জানুয়ারিতে
নতুন ক্লাস শুরু হয়। কিন্তু পরের দিন
একটি শোকের
সংবাদ টগরের জীবনের দুঃখ বয়ে আসে।
শ্রীলেখার মা
বাবা সড়ক দূর্ঘটনায় মারা গেছে ।
জানিনা মা বাবা
হারিয়ে মেয়েটির অবস্থা কেমন হয়েছিল।
কিন্তু শ্রীলেখা
আর গ্রামের বাড়িতে থাকবে না । মামার
বাড়িতে থাকবে
শহরের একটি স্কুলে ভর্তি হবে। শেষ একদিন
স্কুলে এসেছিল
সবার কাছ থেকে বিদায় নেয়ার জন্য ।সেদিন
ছাত্র শিক্ষক
সবার অশ্রুসিক্ত নয়ন ,অনেক বাধা দেওয়ার
চেষ্টা
করেছিল কিন্তু সে থাকবে না। শেষবারের
মতো টগরের
দিকে তাকিয়ে চলে গেলো শ্রীলেখা।
কিন্তু আজ মুখে সেই স্বর্গের
হাসিটি নেই তার বদলে যুক্ত হয়ে ছিল
চোখের নোনা জল যা
টগর কোনোদিন শ্রীলেখার চোখে দেখেনি।
নিজের চোখের
পানি আর ধরে রাখতে পারল না টগর।যাবার
আগে
শ্রীলেখা তার বাসার
ঠিকানা দিয়ে গেলো তার এক বান্ধবীর
কাছে এবং এটি টগরের কাছে দিতে বললো।
ক্লাসের এই
একটি মেয়েই তাদের বিষয়টি জানত। স্কুল
ছুটির পর মেয়েটি
টগরের কাছে কাগজটি দেয় এবং শ্রীলেখার
কথা বলে।
টগর কাগজটি হাতে নিয়ে কিছু সময়ের জন্য
আকাশের
দিকে তাকায়।এক গুচ্ছ মেঘের ভিতর
দিয়ে রংধনুর
সৃষ্টি হয়েছে।আসলে মানুষ
বিভিন্নভাবে বিশ্লেষন
করতে পারলে ও নিজে কখনো তা পারে না।
যার জন্য নিজেকে
এতো পরিবর্তন করলো আজ সেই নেই। কী দরকার
ছিল
পরিবর্তনের ,কেনো মানুষ ভালোবাসে ?
মনের ভিতরের
মানুষরা বার বার টগরের মনে প্রশ্ন করে ! কিন্তু
এর
উত্তর নেই।
[সময় কাটেনা তাই
মাঝে মাঝে লেখালেখি করি। আমি লাইক/
কমেন্ট কোনো কিছুই চাই না,আমার
লেখাটি আপনারা পড়েন
আমি তাতেই খুশী। আবারো টগর
কে নিয়ে উপস্থাপিত হবো
পর্বঃ- 2 এ ।সেই পর্যন্ত সাথে থাকার অনুরোধ
রইল।]
[বিঃদ্রঃ ভূলগুলো ক্ষমা সুন্দর
দৃষ্টিতে দেখবেন]
২| ০৯ ই মে, ২০১৪ রাত ১১:২১
মোমের মানুষ-৩ বলেছেন: ধন্যবাদ
৩| ১০ ই মে, ২০১৪ সকাল ১১:৫৮
কুশল রাজ রায় বলেছেন: ধন্যবাদ।
৪| ১৫ ই মে, ২০১৪ রাত ১২:৩৬
এহসান সাবির বলেছেন: বেশ।
৫| ৩১ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১০:৫৫
এহসান সাবির বলেছেন: ঈদের শুভেচ্ছা রইল।
৬| ১১ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১২:৫৯
কুশল রাজ রায় বলেছেন: আপনাকেও
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২২
দালাল০০৭০০৭ বলেছেন: প্রথম কমেন্ট কারি আমি