![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
( এক )
রিক্শাটা বাড়ির সামনে দাঁড় করিয়ে, রাস্তা থেকেই ----বৌদি, বৌদি-----ডাকতে ডাকতে ঘরে ঢোকে চুয়া। এই সাত সকালে চুয়ার ওরকম গলার স্বর শুনে ছুটে যাই।
-"কি, কি হয়েছে কি?-"
-"আচ্ছা, বৌদি, তোমাদের কতদিন বলেছি চন্দনকে আমার বাড়ি যেতে বারণ কোরো। তা তোমরা কিছুতেই শুনবে না। কাল ও যা করে এসেছে না, তারপর বোধহয় আমি ও বাড়িতে আর থাকতে পারব না।
এতক্ষনে বুঝতে পারলাম, উত্তেজনার মূল সেই চন্দন।
--"কেন? ও আবার কি করল?-"
-"কাল সকালে ও সাঁতার শিখে ফেরার সময়, আমাদের বাড়ির সামনে এসে, গাড়িতে বসেই আমার নাম ধরে ডাকছিল। সেই সময় আমার শাশুড়িও বাগানে ফুল তুলছিলেন। তা উনি এগিয়ে গিয়ে, ওকে ঘরে আসতে বলেন। তার উত্তরে ও কি বলল জান?
-"তা, ঘরে গিয়ে আর কি হবে? দেখবতো আপনার বৌ হয় বাসন মাজছে নাহয় কাপড় কাচছে। তার চাইতে বরং এখানেই আসতে বলুন দুটো কথা বলে চলে যাই। -" শুনে শাশুড়িতো রেগে টং। বললেন,
-"তা সেরকম ঘর দেখে দিলেই পারতে, যাতে ড্রয়িংরুমে, পাখার হাওয়ায় বসে গল্প করা যেত।-" এরপরেও ওর থামার নাম নেই, বলে কিনা--------
-"সেরকম ঘর দেখেই তো দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু আপনারা সবাই যদি এখন সেঞ্চুরি করার আশায় বসে থাকেন , তা হলে আর কি করা যাবে বলুন?-" বলেই ফুস করে গাড়ি চালিয়ে চলে যায়। আর আমার শাশুড়িতো একেবারে কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে আমায় এসে ধরেন। অথচ আমার সাথে ওর দেখাই হয়নি। আমি তখন বাড়ির ভেতরে ছিলাম। বাইরে যে এতসব ঘটে গেছে টেরই পাইনি। শাশুড়ি কাল সারাদিন কান্নাকাটি করে না খেয়ে থেকেছেন। কত করে বোঝালাম, ও ছেলে - মানুষ, কি বলতে কি বলেছে। তবু কি বরফ গলে? বললেন,--------
-" হ্যাঁ, হ্যাঁ ছেলে-মানুষ? নাক টিপলে দুধ গলে? অসভ্য , বজ্জাত মেয়ে।-" তোমরা হাসছ? আর আমার যে কি অবস্থা একবার ভেবে দেখতো? পাপাইকে স্কুলে নাবিয়ে সেই রিক্শাতেই এলাম তোমাদের এই খবর দিতে। ওকে, বলে দিও, ও যেন আর কোনদিনও আমার বাড়ি না যায়।
ঠিক আছে, ঠিক আছে মাথা গরম কোরনা। তুমিতো জানই ও সবার সাথেই এরম করে কথা বলে। আমি কাল গিয়ে তোমার, শাশুড়ির মাথা ঠান্ডা করে দিয়ে আসব, তা হলে হবেতো?
( দুই )
চূয়া চলে গেলে, আমি আর মা দুজনে চন্দনের এই অদ্ভুত স্বভাবের কথা নিয়েই আলোচনা করছিলাম। চন্দনের এরকম মুখ-পাতলা কথা মায়ের একদম পছন্দ নয়। মায়ের মুখে ওর এইসব কীর্তি-কাহিনি শুনে শুনে আমার একেবারে মুখস্ত হয়ে গেছে। আজও আবার আর এক প্রস্ত শুরু হোল বলে।---------সেই ছোট বেলা থেকেই, ওর মাথায় সব সময় এরকম দুষ্টু বুদ্ধি খেলা করে। ওর জন্যে আমি কার কাছে না কথা শুনেছি? একবার কি, করেছিল জান? আমার দাদা এসেছেন আমার বাড়ী বেড়াতে। দাদার চোখে খুব হাই-পাওয়ারের চশমা ছিল। চশমা ছাড়া দাদা একেবারে অন্ধ। তা সেদিনও দুপুরে খাওয়া-দাওয়া সেরে দাদা শুয়ে শুয়ে গল্পের বই পড়ছিল। চন্দন গিয়ে ভালো মানুষটির মত দাদার পাশে বসে টুকটুক করে কথা বলে। দাদাও ওকে পাকা চুল তুলে দিতে বলে। ছোট্ট ছোট্ট হাতে মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে চুল তুলে দেয়। এত আরামে দাদা ঘুমিয়ে পড়ে। আর যেই না ঘুমানো, এই সুযোগে ও করে কি, চশমার কাঁচের ওপর আলতো করে চূন মাখিয়ে দেয়। তারপর জানালার পাশেই ছিল একটা বোলতার চাক। লাঠি দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ওটা ভেঙ্গে দিয়ে চুপটি করে নিজের ঘরে চলে আসে।
একে বোলতার কামড়, তাতে চোখে কিছু দেখতে পাচ্ছে না, দাদার চীৎকারে বাড়িসুদ্ধু সকলে হুমড়ি খেয়ে পড়ি। রাতে ওই বোলতার কামড়ে, দাদার ধূম জ্বর এসে গেলো। ডাক্তার পর্যন্ত ডাকতে হয়েছিল। এরকম কত কীর্তি যে ওর আছে, সে বলে শেষ করা যাবে না। আমার ননদতো দু চক্ষে ওকে দেখতে পারত না। বলত , এ তো মেয়ে নয়, মেয়ে-গুন্ডা।
( তিন )
একমাত্র বাবারই, চন্দনের এসব কার্য-কলাপে পূর্ণ সমর্থন। উনি বলেন, আমরাতো কেউ ওদের কিছু বলতে পারিনা, ও একটু বলছে বলুক। তবে যদি ওদের হুঁস হয়। সত্যি কথা বললে সবারই গায়ে লাগে। মেয়েটাকে আমার খাটিয়ে খাটিয়ে একেবারে শেষ করে ফেলেছে। এ যেন বিনি পয়সার ঝি পেয়েছে।
-----এ তুমি কি বলছ? তাই বলে সেঞ্চুরী-টেঞ্চুরী এসব আবার কি কথা?-----
------হা,হা,হা ওটা এমনি ও মশকরা করে বলেছে।
-----এই, তোমার আসকারাতেই ও এত বাড় বেড়েছে।
( চার )
চূয়া-চন্দন পিঠো-পিঠি দুই বোন। চলনে-বলনে, স্বভাবে-ব্যবহারে একেবারে আকাশ পাতাল তফাৎ। চূয়া সুশ্রী, শান্ত, ভদ্র, আর একটু নিরীহ প্রকৃতির।
আর চন্দন অপূর্ব সুন্দরী। সব সময় স্ফূর্তিতে যেন একেবারে টগবগ করে ফুটছে। মনে কোন কাদা নেই। যা মনে আসছে তাই-ই মুখে বলছে। কোন চিন্তা-ভাবনার ধার ধারেনা। নিজের অসুবিধে করে এক চুলও সে নড়বে না। সে তুমি দুঃখই পাও আর রাগই কর। তাতে তার কিছু যায় আসেনা। সত্যি কথা বলতে কি, একেক সময় ওকে দেখে আমার একরকম হিংসেই হয়। মনে হয় আমরা যে কেন পারিনি চন্দনের মত এমন শিশু মনটাকে ধরে রাখতে?
দু বোনই বৌদি অন্ত প্রান। আমি এ বাড়ীতে আসার পরপরই ওদের বিয়ে হয়েছে। যত রাজ্যের কথা সব আমায় বলা চাই-ই। আমি বৌদির চাইতেও ওদের বড় বন্ধু। চন্দন যখন তখন ঝড়ের মত ঘরে এসেই বলবে-----------বৌদি শোন শোন, অনেক কথা জমে আছে। চলো, চলো ওপরে চলো। তোমায় আর রান্না করতে হবেনা। ওসব মাই করে নেবে।---------মা, তুমি সব সময় বৌদিকে এত খাটাও কেন গো? যখনই আসি দেখি বৌদি রান্না-ঘরে।---------
-শুনলে, বৌমা , শুনলে? চন্দনের কথা শুনলে?----
--ও দাঁড়াও, দাঁড়াও আজ তোমার হচ্ছে। তুমি সেদিন আমার শাশুড়িকে গিয়ে কি বলে এসেছ?----
--কি? কি আবার বলেছি?----
--জানো বৌদি, সেদিন আমার শাশুড়িকে গিয়ে বলে কিনা, চন্দনকে দিয়েও তো মাঝে মাঝে একটু রান্নাটা করালে পারেন। আপনার এখন বয়স হয়েছে।---------------------------ঘর শত্রূ বিভীষণ। এসব কূট-বুদ্ধি দেওয়ার জন্যই বুঝি কদিন পর পর আমার শাশুড়িকে দেখতে যাও?-----
----তা কি অন্যায়টা বলেছি? তোর স্বামী সকাল সকাল অফিস যাবে, তুই তাকে দুটো সেদ্ধ ভাতও রান্না করে দিতে পারবি না?-----
-----না, পারব না, পারব না, পারব না। উনি যতদিন পারবেন উনিই করবেন--।
--ভালো, ভালো। রত্ন শাশুড়ি পেয়েছিস, নে সুখ করে নে। উনিতো ভাল কথাই বললেন। বললেন, ছেলে মানুষ আমি যতদিন আছি একটু সাধ-আল্হাদ করে নিক। তারপর একটা বাচ্চা হলেই দেখবেন সব কেমন পাল্টে যাবে। তখন ওদেরটা ওরাই করবে।
এরকম বিচ্ছু বৌ এর আবার কত প্রশংসা। আরও বলেন, আসলে একটা কথা কি জানেন দিদি, আমারতো কোন মেয়ে নেই, তাই আমার বড় সাধ ছিল যে, আমার ছেলের বৌ যেন আমার কাছে ঠিক মেয়ের মতই আব্দার করে। তা চন্দন আমার ঠিক সেরকমটি-ই হয়েছে। ওর এই মিষ্টি উপদ্রব আমার সংসারে যেন বাড়তি প্রান সঞ্চার করেছে। স্বামী, ছেলে দুজনেই এত ঠান্ডা যে এদের জন্যে আমার কোনদিন, কোন ব্যপারে ভাবতেই হয় না। এখনও চন্দনকে খেতে দিতেই আমি চিন্তা করি।
ও-তো মন মত না হলে মুখেই তুলবে না। তবে দিদি, ওর জন্যে আপনি ভাববেন না। এ সংসারে ও আমাদের প্রানবায়ু।
----তবেই বোঝ, আমার কেমন দাম?-----
----আচ্ছা চন্দন, তুমি বাড়ীর কি, কি কাজ কর?----
--কেন? ঘর গুছোই, আনাজ কাটি, রুটি বেলেদি।----
----ব্যাস, আর কিচ্ছু না?----
---আবার কি করব? তারপর আমার ক্লাস আছে না? জান, আগেনা বাইরে বেরোলেই মা জিজ্ঞেস করতেন, কোথায় যাচ্ছ?-------এখন শুধু বলেন আজকে কোনদিকে দিগ্বিজয় করতে চললেন?------
----বেশ মজাতেই আছ না? তারপরেও আবার এত প্রশংসা।---
---হুঁ, এরজন্যেও বুদ্ধি চাই বুঝলে, বুদ্ধি চাই।----
---আর তোমার মা এই বয়সে এখনও কত পরিশ্রম করে দেখ।----
-----ভালো, ভালো যত কাজের মধ্যে রাখবে ততই রোগ-টোগ কম হবে।----
---আর নিজের বেলায়? শুধু ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ করে উড়ে বেড়াবে না? সত্যি চন্দন তুমি না আর বড় হবে না। এই শোনোতো, সেদিন চূয়ার শাশুড়ীকে কি বলে এসেছ? ----হা, হা,, হা চল চল বাবার ঘরে বসে বলব।
( পাঁচ )
ও কথা কি বলবে শুধু হেসেই চলেছে। হাসতে হাসতে প্রায় শ্বাস ওঠার অবস্থা। বলে,
---ঠিক করেছি। বুঝলে, এ চূয়ার কাজ নয়। এ পিস পড়ত আমার হাতে, বাছা বুঝত কত ধানে কত চাল।-----
মেয়ের ভাষা শুনে মা অবাক হয়ে বলেন,------------------------থাক, তোর আর ও বাড়ী গিয়ে কাজ নেই। চুয়া যখন মানিয়ে নিয়েছে, তোর কি দরকার যেচে যেচে অশান্তি বাধাবার?-----
-----কেন? যাব না কেন? একশ বার যাব। ওই ভালো মানুষের গুষ্টির আমি তুষ্টি করে ছাড়ব, দেখো। আরে বৌদি, শোন না, যে কথা বলব বলে তোমায় ডাকলাম। সেটাইতো বলা হোল না। সেদিন জামাই বাবু দেখি খুব সকালে কি একটা দরকারে ওর কাছে এসেছে. কাজ-টাজ সেরে চলে যাওয়ার সময়, আমিও পেছন পেছন গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিতে গেলাম। ঠিক বেরোবার মুখেই জিজ্ঞেস করলাম,----------------তারপর আপনাদের বাড়ীর কাজের লোকের খবর কি?----জামাই বাবু অবাক সুরে বলেন, -"কে, কাজের লোক?-" তা আমি কি ছাড়বার পাত্রী? ওমনি বলে দিলাম,-----------"বাব্বাঃ, যেন আকাশ থেকে পড়লেন?---"
এদিকে তোমাদের জামাই বাবাতো পড়ি কি মরি করে আমার পেছন পেছন ছুটে এসে, জামাই বাবুকে নিয়ে বেরিয়ে গেল। আমার কানে এল, ও জামাই বাবুকে বলছে,---- আরে, ও একটু ছিটিয়াল আছে। ওর কথায় আপনি কিছু মনে করবেন না।----
---ছিঃ, চন্দন, গুরুজনদের সাথে ওভাবে কথা বলতে আছে? ওদের সংসার ওরা বুঝবে। তুমি আর কক্ষনো এভাবে কথা বোলনা কেমন।----
---আচ্ছা বৌদি, সত্যি করে বলতো চুয়ার জন্যে তোমার খারাপ লাগেনা?---
----কি করবে বলো? সবই আমাদের ভাগ্য। একে মানুষ, তায় আবার মেয়ে-মানুষ। ভগবান দুহাত ভরে দিলেও, কৃপণ মানুষ পারেনা তা ভোগ করতে দিতে।
আমি প্রথম থেকেই বুঝেছিলাম এপাত্র কেমন হবে। যে ছেলে, উঠতে বসতে ওরকম ম্যা-ম্যা করে তারা ওরকমই হয়।----
----সে-কি? ও কি ছাগল ছানা নাকি যে ম্যা-ম্যা করবে?
---আরে ছাগল ছানা হলেও তো ভাল হোত, দুধ খেয়েই পালিয়ে আসত। এ একটা ভেড়া, আস্ত একটা ভেড়ুয়া। তোর বৌকে দিয়ে রাত-দিন এত খাটায় তুই চোখে দেখিসনা? তুই কি কানা? আরও বলে কিনা, আমি কি বলব? যে পুরুষ মানুষের এতটুকুও ভয়েস নেই, তাদের আবার এত বিয়ের শখ কেন?---------ওদিকে চুয়াটাও হয়েছে একটা ভেবলু। যেন বাড়ির ষাট বছরের বুড়ি পিসিমা।-----
( ছয় )
চন্দন এলেই শুধু কথা আর ঘর ফাটানো হাসি।
---জান বৌদি, সেদিন চুয়াকে না একটা নতুন আইডিয়া দিয়ে এসেছি।----
-----তুমি কি আজকাল নতুন নতুন আইডিয়া নিয়েও রিসার্চ করছ নাকি?-----
-----বলেছি যেদিন তোর শাশুড়ি রান্না করতে যাবে, সেদিন তেলের শিশিতে একটু জল মিশিয়ে রেখে দিবি। যেই না গরম কড়াতে বুড়ি তেল দেবে, ওমনি তেল ছিটকে চোখে-মুখে এসে আচ্ছা জব্দ হবে বুড়ি।----
-----আচ্ছা চন্দন, তোমার মাথায় সব সময়ই কি শুধু এসব বদ-বুদ্ধি খেলা করে? অন্যের পেছনেতো বেশ লাগতে পার, নিজের বাড়ীতে কি কর?-----
----সে আর বলতে? সে তাদের একদিন জিজ্ঞেস করেই দেখোনা? এইতো সেদিন ঝিল পাড়ের পিসিমা এসেছিলেন কি একটা মেয়েলি অনুষ্ঠানে মাকে আর আমাকে নেমন্তন্ন করতে। তা উনি বেরোবার পথে আমায় সামনে পেয়ে বললেন, -কাল দুপুরে আমাদের বাড়িতে দুটি ডাল-ভাত খেও বৌমা-----"
----আমিও বেশ মিষ্টি করেই শুধালাম, -"নুন-লঙ্কাটা কি তাহলে বাড়ি থেকে নিয়ে যাব পিসিমা?-" আমার প্রশ্ন শুনে উনি কেমন থতমত খেয়ে, চোখ গোলগোল করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন। মা , তাড়াতাড়ি এসে তবে সামাল দেন। বাবাকে তো সেদিন সন্দেশের দুপিঠে মিহিনুন এমন ভাবে মাখিয়ে দিয়েছি যে, উনি বোধহয় এ জন্মে আর সন্দেশ ছোঁবেন না।
মেয়ের কান্ড-কারখানা শুনে মা মুখ বেঁকিয়ে বলেন,--------"হয়েছে, যত্ত সব সৃষ্টিছাড়া কথা। আর বড় গলা করে তোকে শোনাতে হবেনা। দেবেখন, একদিন ঘেঁটি ধরে বার করে, তখন বুঝবি।-"
-"ইস্, বললেই হোল? আমি বাড়ি না থাকলে, ওদের ভালই লাগেনা।-" হাসতে হাসতে আমাদের দুজনের পেট ব্যথা হয়ে গেছে। হাসির দাপটে চোখ-নাক দিয়ে জল গড়াচ্ছে।
( সাত )
মা আমাদের এরকম হাসি দেখে আরও রেগে যান।
-" এসব কথা শুনে তুমি হাসছ বৌমা?-" চন্দনের সটান জবাব, -"তা হাসবে নাতো কি করবে শুনি?
তোমার মত দিনরাত চিন্তার সূত্র ধরে ধরে খুঁজে বেড়াবে?"
---"তাবলে , তুই অত বড় মানুষটাকে নুন মাখিয়ে সন্দেশ দিবি?---"
----"দিয়েছিতো কি হয়েছে? রোজ রোজ তো আর করিনা। একদিন একটু ইচ্ছে হোল তাই দিয়ে দেখলাম। সেই থেকে বাবা, আমায় দেখলেই হেসে বলেন,--------------তারপর, আমাদের চন্দনের স্টকে আজ কি কি নতুন প্ল্যান আছে?------
আর তোমাদের জামাই বাবাটিতো , রীতিমত প্রান হাতে নিয়ে ঘোরে। শোনোইনা সেদিন কি হয়েছে, গত রোববার দুপুরে, বাবু দেখি খুব নাক ডাকিয়ে ঘুমোচ্ছে। প্রত্যেক রোববার আমি মায়ের চুলে রং করেদি । আমি মার হেয়ার ডাই-এর তুলিটা ধুতে যাওয়ার পথে, ওর গোঁফের ওপর আস্তে করে একটু বুলিয়ে দিয়েছি। সত্যিই ওইটুকু বোলানোতেই যে রঙ হয়ে যাবে আমি নিজেও ঠিক বুঝতে পারিনি। ঘুম থেকে উঠে, মুখ ধুয়ে এসে দেখে গোঁফ লাল। আর যাবে কোথায়? মা-বাবা ওকে দেখে আর ও কটমট করে আমায় দেখে। সেদিন খুব রেগে গেছিল। ওর ওরকম রাগ আমি কোনদিন দেখিনি। পারলে আমায় খুন করে ফেলে। শুধু বলে,
"আমি এখন বাইরে বেরোবো কি করে?"
-"তখন তুমি কি করলে?"
_ "কি আর করব? মাই ভরসা। মার পেছন পেছন আঁচল ধরে ঘুরছি। প্রায় সপ্তাহ -খানেক আমি ওর দিকে তাকাতেই পারিনি। তাকালেই হাসিতে আমার পেটের ভেতরটা কেমন গুড়গুড় করে ওঠে। আর ও তত যায় রেগে। আমি বুঝি, মা-বাবাও হাসির ভয়ে মুখ আড়াল করে। তারপর সেই গোঁফ পুরো উড়িয়ে তবে বেরোয়।
( আট )
এবার অনেকদিন পর চন্দন এসেছে চুয়ার বাড়িতে। বেশ জমিয়ে সবার সাথে গল্প করছে। সকলে ওর মজার মজার কথা শুনে খুব হাসছে। ওই যে কথায় আছে না "সুন্দর মুখের সর্বত্র জয়"। যতই দুষ্টুমি করুক না কেন? ওর একটু মিষ্টি কথাতেই সবাই একেবারে গলে যায়। প্রায় একবেলা, সবার সঙ্গে ভালোভাবে কাটিয়ে, কোন গন্ডোগোল না পাকিয়ে, ও চলে যায়। সবাইকে সন্তুষ্ট দেখে চুয়ারও বেশ ভালো লাগে। এটাইতো ভালো, এরকম এলে-গেলে কে আর বারণ করে?
এদিকে চন্দন চলে যাওয়ার প্রায় ঘন্টাখানেক পর, চুয়ার শ্বশুরকে নিয়ে হুলু-স্থুলু কান্ড বাধে। এর মধ্যে আবার কার ফোন এল। চুয়াই ধরে,
-"হ্যালো? -কে চুয়া বলছিস?- চন্দনের গলা । -হ্যাঁ---
-"তোর শ্বশুর মনে হয় খুব কাসছে? হি----হি----হি---"
-"হ্যাঁ, দেখনা, হঠাৎ কি যে হোল, গড়গড়া টানতে টানতে দম আটকে, চোখ উল্টে একেবারে যায়যায় দশা। তোর জামাই বাবু এইমাত্র ডাক্তার নিয়ে এল।-"
-"ও কিচ্ছু না। গড়গড়ার কলকের গুলিটার তলায়, আমি একটা শুকনো লঙ্কা গুঁজে রেখে এসেছি। ওটা ফেলে দে, তাহলেই দেখবি কাশি থেমে যাবে।-"
এবার চুয়া বুঝল, আজ তার বোনের এত ভালো মানুষ সাজার কারণটা কি? ফোন ছেড়ে দিয়ে চুয়া লুকিয়ে লুকিয়ে কলকে ধুয়ে, পরিষ্কার করে রাখে। আর মনে মনে বলে পাগলিটা ফের যেদিন আসবে সেদিন আচ্ছা করে---------------------
০৩ রা জুন, ২০১১ বিকাল ৫:১৮
লীলা চক্রব্ত্তী বলেছেন: আমার গল্পটা পড়ে, তাহলে আপনার উপকার হয়েছে বলুন। আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম। কিন্তু আপনার শেষ প্রশ্নের উত্তরটা কি হবে বলুনতো?
২| ০৩ রা জুন, ২০১১ রাত ১১:২৮
ইলিয়াস সাগর বলেছেন:
অনেক দিন পরে এলাম তোমার ব্লগালয়ে।
লেখনির এই ধারা অব্যাহত থাক।
ঢাকা থেকে কিশোর দেশ নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে।
কিশোর দেশ-এ তুমিও লিখতে পারো। লেখার বিষয় : কিশোর কিশোরীদের উপযোগী ছড়া কবিতা, ছোটগল্প, হররগল্প, অনুবাদগল্প, ফিচার, সায়েন্স ফিকশন, ভ্রমণ কাহিনি, জানা অজানা, স্মরণীয় ঘটনা, মজার অভিজ্ঞতা ও দর্শনিয় স্থান পরিচিতিসহ যে কোন সৃজনশীল লেখা।
লেখাটি এমএস ওয়ার্ড-এ কম্পোজ করে ই-মেইল-এ পাঠিয়ে দাও। লেখার সাথে তোমার ই-মেইল আইডি, ফোন নং ও যোগাযোগের ঠিকানা পাঠাতে যেনো ভুলো না।
ই-মেইল : [email protected]
০৫ ই জুন, ২০১১ বিকাল ৪:৪৭
লীলা চক্রব্ত্তী বলেছেন: অনেকদিন পর আপনার মতামত জানতে পেরে সুখী হলাম। এই লেখনির যেন আমি উপযুক্ত সন্মান দিতে পারি। শুভেচ্ছা রইল।
"কিশোর-দেশ" সম্বন্ধে ভবিষ্যতে চিন্তা কোরব। বর্তমানে একটা কাজটা নিয়ে আমি একটু ব্যস্ত। এ বিষয়ে আমাকে জানাবার জন্য অশেষ ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা জুন, ২০১১ সকাল ১১:০৯
মিকন মোদক বলেছেন: আজ মনে হয়েছিল ঘুম মনে হয় আমার চোখ ছাড়বে না,আর অফিসের কাজও করা হবে না।তবে এত হাসি হেসে সত্যি মনে হচ্ছে ঘুমটা চলে গেল........খুব সুন্দর ......গল্পটা কি আপনি লিখেছেন????