![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সম্প্রতি চীন সফর থেকে ফিরে শেখ হাসিনা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হত্যা, বেগম খালেদা জিয়ার ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি এবং তারেক রহমান বিষয়ে কিছু ইতিহাসবিকৃত মন্তব্য করেছেন। কিন্তু তিনি বোধ হয় ভুলে গেছেন যে মাত্র ৩০-৪০ বছর আগের সেইসব ঘটনার জীবিত সঙ্গীরা যেমন এখনো বর্তমান, ঠিক তেমনি সেইসব ঘটনা প্রকাশ করা সংবাদপত্র ও দলিল দস্তাবেজও যথেষ্ট সহজলভ্য। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে এমন বিকৃত ইতিহাস বলে এখন আর সহজে পার পাওয়া সম্ভব নয়। তিনি ভুলে গেছেন যে ১৯৮১ সালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বদান্যতায়ই উনি বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলেন এবং বর্তমানে যে দলটির শীর্ষ অবস্থানে বসে তিনি রাজনীতি করছেন সেই দলটিরও পুনঃজন্মদাতা হচ্ছেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তম।
রীতিমতো শিষ্টাচারবহির্ভূতভাবে শেখ হাসিনা জিয়া হত্যাকাণ্ডে তার সন্তান তারেক রহমানকে জড়িয়ে রিমান্ডে নেয়ার মতো কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। অথচ ১৯৮১ সালের ১ জুন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় দৈনিক পিটার্সবার্গ পোস্ট গেজেট পত্রিকায় ভারতীয় সংবাদসংস্থা ‘ইউনাইটেড নিউজ অব ইন্ডিয়া’-এর রেফারেন্স দিয়ে উল্লেখ করেছিল ‘ইউএনআই জানায়, বাংলাদেশের ভূতপূর্ব রাষ্ট্রপতির কন্যা ও প্রধান বিরোধী গ্রুপের নতুন নেতা মিসেস শেখ হাসিনা ওয়াজেদ গত শনিবার (৩০ মে জিয়া হত্যার দিন) সীমান্ত পার হয়ে ভারতে প্রবেশ করার সময় গ্রেফতার হন।
সংবাদমাধ্যমটি এই সংবাদের উৎস হিসেবে ‘সীমান্ত এলাকা (across the border)’কে কোর্ট করলেও এটা অনুমেয় যে বাংলাদেশের সীমান্তরীরাই এই গ্রেফতার করেছে এবং পরবর্তীতে ভারতীয় সীমান্ত কর্তৃপকে জানিয়েছে’। প্রশ্ন হচ্ছে জিয়া হত্যাকাণ্ডের পর শেখ হাসিনা কেন ভারতে পালাতে গিয়েছিলেন? আর কেনই বা তিনি দেশে ফেরার ১৩ দিনের মধ্যে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয়েছিল?
নিজের ওপর আসা সন্দেহের তীর থেকে মানুষের চোখ সরাতে ১৯৮১ সালের কিশোর তারেক রহমানকে তার বাবার মৃত্যুতে জড়িত ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা যেমন সুরুচির পরিচয় দিতে ব্যর্থ হয়েছেন, তেমনি নিজের সন্তানের ব্যর্থতার কথাটাও সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। ১৯৮১ সালে শহীদ জিয়ার মৃত্যুর পর বাবার কফিনের পাশে কিশোর তারেক রহমানের করুণ আহাজারির কথা সবার যেমন স্মরণ আছে, তেমনি সবাই মনে রেখেছেন ওয়াজেদ মিয়ার মৃত্যুর পর সুযোগ থাকার পরও হাসিনাপুত্র জয়ের বাবার নামাজে জানাজা ও দাফনে যোগ না দেয়ার ঘটনা।
শেখ হাসিনা ইতিহাসের চরম বিকৃতি ঘটিয়েছেন শহীদ জিয়ার মৃত্যুর পর রাষ্ট্র কর্তৃক তার পরিবারকে দেয়া সহায়তার বিষয়ে মিথ্যাচার করে। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ‘স্বামীর হত্যাকারী এরশাদের কাছ থেকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি গাড়ি টাকা পয়সা সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন কেন, এ প্রশ্নের জবাব দিতে হবে খালেদা জিয়াকে।’ তার এই মিথ্যার সাথে সুর মিলিয়ে তার অবৈধ শাসনের সহযোগী স্বৈরাচারী এরশাদ আবার বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া রাজনীতি করবেন জানলে মইনুল রোডের বাড়ি আমি দিতাম না’! কত বড় মিথ্যাচার!
প্রকৃত সত্য হচ্ছে, মৃত্যুকালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কোনো ব্যক্তিগত সম্পত্তি না থাকায় তার পরিবারের ভরণ-পোষণের জন্য মুসলিম লীগের সংসদ সদস্য খান এ সবুর মহান জাতীয় সংসদে একটি প্রস্তাব তোলেন যা সংসদে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্যরাও সমর্থন করেন। সেই প্রস্তাবের ওপর আলোচনার সময় জানা যায় যে, একজন অবসরপ্রাপ্ত শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা হয়েও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ডিওএইচএসের কোনো প্লট পাননি; যা তার সমসাময়িক সব কর্মকর্তাই পেয়েছিলেন।
জাতীয় সংসদে সেই প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে পাস হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারের মন্ত্রিসভার ১২ জুন ১৯৮১ এবং ১৯ মার্চ ১৯৮২ তারিখের সিদ্ধান্ত মোতাবেক বেগম খালেদা জিয়াকে ৬ শহীদ মইনুল রোডের বাড়ি এবং আরো কিছু রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা প্রদান করেন। জীবিকা নির্বাহের নিমিত্তে তাকে গুলশানে একটি পরিত্যক্ত বাড়ি প্রতীকী মূল্যে প্রদান করা হয়। এই রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ৮ জুলাই ১৯৮১ ঢাকার মিলিটারি এস্টেট অফিসার বেগম খালেদা জিয়াকে ৬ নম্বর শহীদ মইনুল রোডের বাড়িটির বরাদ্দ দিয়ে রেজিস্টার্ড দলিলের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে হস্তান্তর করেন। এরশাদ সাহেব তখনো সেনাপ্রধান হিসেবে রাষ্ট্রের একজন সাধারণ বেতনভুক্ত কর্মকর্তা ছিলেন মাত্র। কাজেই শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বিপন্ন পরিবারের জন্য রাষ্ট্রীয় সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে তার কোনো ভূমিকাই ছিল না।
শেখ হাসিনা ভুলে গেলেও দেশের সাধারণ মানুষ এখনো ভুলে যাননি যে ভারত থেকে তাকে বাংলাদেশে ফেরত আনার ব্যবস্থা করেছিলেন শহীদ জিয়া নিজে। এমনকি দীর্ঘ ছয় বছর হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্সের কিস্তি পরিশোধ না করায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িটি নিলামে বিক্রি করার কথা থাকলেও শহীদ জিয়ার নির্দেশেই ঢাকার তৎকালীন ডেপুটি কমিশনার শেখ হাসিনার কাছে ওই বাড়িটিসহ ১৯৮১ সালের অঙ্কে প্রায় ৩৩ কোটি টাকার সম্পত্তি বুঝিয়ে দেন। যার মধ্যে ছিল ৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা মূল্যের প্লাটিনাম, হীরক, মুক্তা সেট ও স্বর্ণালঙ্কার; ১৭ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা, বিদেশী রাষ্ট্র থেকে পাওয়া প্রায় এক লাখ টাকা মূল্যের উপহারসামগ্রী; বাংলাদেশী মুদ্রায় নগদ ১৪ হাজার ৪৬১ টাকা; তিনটি ব্যক্তিগত গাড়ি এবং পরিবারের সদস্যদের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে রাখা দুই লাখ ৯৮ হাজার টাকা।
এখানেই শেষ নয়। ধানমন্ডিতে মরহুম ওয়াজেদ মিয়ার যে বাড়িটি ‘সুধা সদন’ নামে পরিচিত, সেই বাড়িটির মালিকানাও ওয়াজেদ মিয়া পেয়েছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বদান্যতায়। শেখ মুজিব ১৯৭৪ সালের প্রথম দিকে ধানমন্ডিতে ১৪ কাঠার এই অর্পিত সম্পত্তিটি বিধিবহির্ভূতভাবে তার জামাতা ওয়াজেদ মিয়াকে নামমাত্র মূল্যে বরাদ্দ দেন। ওয়াজেদ মিয়া সেই মূল্যও পরিশোধ করেননি। সরকার পরিবর্তনের পর গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে এই বরাদ্দপত্র বাতিল করার ব্যবস্থা নেয়া হলে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়ার কল্যাণেই কিস্তিতে টাকা পরিশোধের মাধ্যমে এই জায়গাটি ওয়াজেদ মিয়াকে প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু শেখ হাসিনা এই উপকারগুলোর প্রতিদান দেন বেগম খালেদা জিয়াকে দেয়া রাষ্ট্রীয় বরাদ্দকৃত বাড়িটি কেড়ে নিয়ে।
বিএনপি কখনোই অতীতমুখী দল নয় এবং বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও অতীতমুখী মানুষ নন। ১৯৯৬ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর থেকে আওয়ামী প্রোপাগান্ডা মেশিনগুলো যেভাবে ইতিহাসকে বিকৃত করেছে, যেভাবে বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তমকে হেয় করে মিথ্যা ইতিহাস রচনা করেছে, তারপর দেশের মানুষকে সত্য ইতিহাসগুলো জানানো বিএনপি এবং তারেক রহমানের কর্তব্য হয়ে গিয়েছে। তিনি যখন ইতিহাসের দলিল উপস্থাপন করে প্রমাণ করে দিচ্ছেন যে, পাকিস্তানিদের কাছে প্রথম আত্মসমর্পণকারীর বিপরীতে শহীদ জিয়াই ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি, তিনিই ছিলেন স্বাধীনতার ঘোষক এবং মুক্তিযুদ্ধের সূচনাকারী, তখন ইতিহাসের নির্মম সত্যগুলোকে অস্বীকার করতে না পেরে শেখ হাসিনা এবং তার অনুসারীরা এখন একের পর এক মিথ্যা ইতিহাস বলে যাচ্ছেন। এভাবে মিথ্যা ইতিহাস তৈরি করার চেষ্টা কখনোই সফল হয়নি। মানুষ একসময়-না-একসময় প্রকৃত সত্যটাকে ঠিকই জেনে নেয় এবং সেটাকেই বিশ্বাস করে।
শিমুল বিশ্বাস: বিএনপি চেয়াপারসনের বিশেষ সহকারী ও বিআইডব্লিউটিসির সাবেক চেয়ারম্যান
নতুন বার্তা ডটকম
©somewhere in net ltd.