নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কপি-পেস্ট ব্লগ

..............................................

লিঙ্কন

লিখি না অনেক দিন..

লিঙ্কন › বিস্তারিত পোস্টঃ

"অনেক ত্যাগের বিনিময়ে ভোটের অধিকার পেয়েছি" বনাম দিনের কিছু সংবাদ চিত্র

১২ ই জুন, ২০১৫ রাত ৩:০৫



১। অনেক ত্যাগের বিনিময়ে ভোটের অধিকার পেয়েছি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অনেক ত্যাগের বিনিময়ে আমরা ভোটের অধিকার পেয়েছি। ভোট আমার সাংবিধানিক ও নাগরিক অধিকার। ’৭০ সাল থেকে ভোট দিয়ে আসছি। আজ যখন ভোট দিলাম তখন মনে হলো আমি আমার নাগরিক অধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছি। আমার পছন্দমতো প্রার্থীকে ভোট দিতে পারলাম, এজন্য আমি অত্যন্ত আনন্দিত। গতকাল সকালে ঢাকা দক্ষিণে সিটি কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেয়ার পর প্রধানমন্ত্রী এ প্রতিক্রিয়া জানান। প্রধানমন্ত্রী সকাল ৭টা ৫৫ মিনিটে এ ভোটকেন্দ্রে যান এবং ১ নম্বর ভবনে ২ নম্বর মহিলা কেন্দ্রে ভোট দেন। তিনি ছিলেন এ ভোটকেন্দ্রের প্রথম ভোটার। ভোট দেয়ার পর উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আমরা জনগণের জন্য রাজনীতি করি এবং তিন সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে জনগণের রায় আমরা অবশ্যই মেনে নেবো। তিনি বলেন, জনগণ তাদের পছন্দ অনুযায়ী ভোট দেবেন। এ ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই। শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করেছেন, তার দলের সমর্থিত প্রার্থীরা তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয়ী হবেন। তিনি ‘ইলিশ’, ‘ঘুড়ি’ ও ‘পানপাতা’ প্রতীকে ভোট দিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তার মানে হচ্ছে যে, বিএনপি জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দেয় না। তারা নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেবে না। কারণ, জনগণের রায়ের প্রতি তারা শ্রদ্ধাশীল নয়। বিএনপির বলা উচিত, জনগণ যে মতামত ও রায় দেবে এবং যেসব প্রার্থী বিজয়ী হবে, দল তা মেনে নেবে। তাদের প্রার্থী জয়ী হলে ভাল আর তা না হলে আন্দোলন- এটা কি ধরনের মনোভাব?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের জানমাল রক্ষা করা সরকারের দায়িত্ব। সরকার ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সবকিছুই করবে। তাদের রাজনীতি হচ্ছে হত্যা ও মানুষ পোড়ানো। এভাবে তারা কত প্রাণ কেড়ে নেবে এবং কত মানুষের জীবন নিয়ে খেলবে, মানুষ হত্যায় বিএনপি অভ্যস্ত। সামরিক জান্তা জিয়াউর রহমান আমার বাবা, মা ও ভাইদের এবং ছোট্ট রাসেলকে হত্যা করেছেন। একইভাবে খালেদা জিয়া ও তার পুত্র তারেক জিয়া ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে আইভি রহমানসহ আওয়ামী লীগের ২২ নেতাকর্মীকে হত্যা এবং আমার প্রাণনাশের চেষ্টা করেছেন। কেবল একবার নয় আমাকে হত্যা করতে বারবার হামলা চালিয়েছে বিএনপি। তাদের একমাত্র অভিসন্ধী হচ্ছে আমাদের চিরতরে নির্মূল করা। তারা এ ধরনের হুমকি অনেকবার দিয়েছে। বিএনপির আন্দোলনে কোন জনসম্পৃক্ততা নেই। তারা কেবল জনগণকে হত্যা ও পোড়াতে জানে। মানুষ হত্যা ছাড়া তারা আর কিছুই বোঝে না।

২। নির্বাচন ২০১৫ স্টাইল
নির্বাচন শুরু হওয়ার আগেই সিলমারা, ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে বাধা প্রদান, এজেন্টদের বের করে দেয়া, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও মহিলা লীগের কেন্দ্র দখলের ঘটনা ঘটেছে প্রকাশ্যে। ভোর থেকেই সকল কেন্দ্রের আশপাশে অবস্থান নেয় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। ফলে কেন্দ্রে ভোটার আসা কমে যায় একেবারে। এর মধ্যেও যারা কেন্দ্রে যান তাদের বেশির ভাগই ভোট দিতে পারেননি। তাদের ভোট আগেই দেয়া হয়ে গেছে। অনেককে ভোট না দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে। আর এমন অভিনব পদ্ধতিতেই যাত্রাবাড়ী, শ্যামপুর, কদমতলী থানা এলাকায় নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এসব দেখে এ নির্বাচনকে ভোটাররা আখ্যা দিয়েছে নির্বাচন ২০১৫ স্টাইল হিসাবে।
ভোট কেন্দ্রে এমপি মিটিংয়ে!
সকাল ৯টা। রাজধানীর দোলাইরপাড় উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র। বাইরে স্থানীয় সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লার গাড়ি (নং-ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৩-৯৫৪০)। তার গাড়ি ঘিরে কর্মীদের জটলা। ওই কেন্দ্রের দোতলার পশ্চিম দিকে যেতে চাইলে এ প্রতিবেদকের পথ আগলে দাঁড়ান একজন। বলেন, ওদিকে যাবেন না। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমপি মিটিংয়ে ব্যস্ত। কিসের মিটিং জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের দলীয় লোকজনকে নিয়ে মিটিং করছেন। এদিকে একই কেন্দ্রে সকাল ৯টা পর্যন্ত ১ ঘণ্টায় ভোট পড়ে ৯টি। এর মধ্যে বুথ-৩ এ ৫টি ও বুথ-৪ এ ৪টি। ওই কেন্দ্রে ঢাকা দক্ষিণের বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাসের কোন এজেন্ট দেখা যায়নি। প্রিজাইডিং অফিসার মো. ওবায়দুল হক বলেন, জানেনই তো মহিলারা রান্নাবান্না করে ভোট দিতে আসে। এক্ষেত্রেও তা হয়েছে। আশা করছি বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটারের উপস্থিতিও বাড়বে।
ভোট দিতে হবে না, চলে যান
সকাল সোয়া ৯টা। দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী প্রি-ক্যাডেট হাইস্কুল কেন্দ্র। নজরুল ইসলাম নামের এক ভোটার জানান, তিনি কেন্দ্রে প্রবেশ করতে চাইলে ইউনিট ছাত্রলীগ সভাপতি হাবিবুর রহমান তার পথরোধ করেন। হাতের ভোটার স্লিপ কেড়ে নিয়ে বলেন, আপনাকে ভোট দিতে হবে না। চলে যান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ওই কেন্দ্রে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে হাবিবুর রহমান ও ইউনিট ছাত্রলীগের সম্পাদক শরিফুল ইসলাম অবস্থান নিয়ে ভোটারদের বাধা দিয়ে আসছিলেন। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে আশপাশে। ওই কেন্দ্রের ভিতরে গিয়ে দেখা যায় ৫টি বুথে তখন পর্যন্ত ভোট দিয়েছেন ৮ জন। প্রিজাইডিং অফিসার নজরুল ইসলাম বলেন, এজেন্ট ঠিক করতেই ১ ঘণ্টা চলে গেছে। ওই কেন্দ্রের ভোটার রহিমা বেগম বলেন, ঝুঁকি নিয়ে ভোট দিয়ে এসেছি।
ওসির মাতবরি
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের হলিচাইল্ড মডেল স্কুল কেন্দ্র। ভেতরে প্রবেশ করতেই পথ আগলে দাঁড়ান ডিএসবির ওসি রবিউল ইসলাম। বলেন, সরকারি নির্দেশনা রয়েছে সাংবাদিকরা এখানে দাঁড়াতে পারবেন না। কিছু জানতে হলে ৪০০ গজের বাইরে থেকে জানুন। এসময় এগিয়ে আসেন প্রিজাইডিং অফিসার মো. শাহজালাল। তিনি এগিয়ে নিয়ে যান এ প্রতিবেদককে। ভেতরে দেখা যায় মেয়র ও কাউন্সিলর ২৩ প্রার্থীর মধ্যে মাত্র ৩ জনের এজেন্ট। এ বিষয়ে প্রিজাইডিং অফিসার বলেন, অন্যরা এজেন্ট দেননি। এরই মধ্যে ২ নম্বর বুথে ভোট দিতে আসেন শাহাদাৎ হোসেন। তার ভোট দিতে সময় লাগে ৮ মিনিট। এ কেন্দ্রে মোট ভোটার ১৬৫১। এ কেন্দ্রে দেড় ঘণ্টায় ভোট পড়ে ৩৭টি।
আমার ভোট আপা দিয়ে দিয়েছে
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা কেন্দ্রের বাইরে মানুষ আর মানুষ। ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, একেবারেই ফাঁকা। কেন্দ্র দখল করে আছেন মহিলা লীগ নেত্রীরা। এরই মধ্যে একজন মহিলা ভোটার প্রবেশ করেন। তাকে ঘিরে ধরেন মহিলা লীগ নেত্রী আনোয়ারা বেগম, কল্পনা আক্তার, রেহানা বেগম ও সালমা। তাদের মধ্যে আনোয়ারা ওই ভোটারকে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে নিয়ে যান। সেখান থেকে ব্যালট সংগ্রহ করে নিয়ে যান বুথের ভেতরে। ভোট শেষে ওই মহিলা ভোটার বলেন, ওই আপাই ভোট দিয়েছেন। এ কেন্দ্রের বাইরে ছাত্রলীগ এবং যুবলীগ নেতাদের জটলা দেখা যায়। ভোটাররা আসলেও তাদের ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। ৩ নম্বর বুথের সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ফারজানা আক্তারকে বুথের ভেতর অন্য কাউকে প্রবেশে বাধার কথা জানালে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমার করার কিছু নেই। এই বুথে এজেন্ট রয়েছেন মাত্র দুই জন। একজন ইলিশ প্রতীকের ও অন্যজন ঠেলাগাড়ি প্রতীকের নাসিমা। অন্য কোন এজেন্টকে সেখানে দেখা যায়নি। প্রিজাইডিং অফিসার আবদুস সবুর জানান, দুই ঘণ্টায় ওই কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ১১ ভাগ।
প্রার্থী খালেদার যুদ্ধ
শ্যামপুর থানার জুরাইন মুরাদপুর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল ৮টা থেকে ৫২, ৫৩ ও ৫৪নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী খালেদা আলম এজেন্ট নিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাদের ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছিল না। বেলা ১১টায় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ওই প্রার্থী কেন্দ্রের বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। এসময় শ্যামপুর থানার ওসি আবদুস সালাম চিৎকার করে তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনার এজেন্ট ভেতরে যাবে না, যেতে দেয়া হবে না। খালেদাও তার এজেন্টদের ভেতরে প্রবেশ করার জন্য কাগজপত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। খালেদা আলমের মার্কা ছিল মোড়া। ওই কেন্দ্রের ভেতরে যেতে আবদল নামের একজন পুলিশ সদস্য বলেন, ভেতরে গিয়ে কি করবেন। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ম্যাজিস্ট্রেটের সামনেই সব ভোট কেটে নিয়ে গেছে। কেউ ভোট দিতে পারছে না। এ প্রসঙ্গে প্রিজাইডিং অফিসার সাইফুল ইসলাম বলেন, এ ব্যাপারে আমার করার কিছু নেই। এ কেন্দ্রে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে রুচিয়া বেগম ভেতরে গিয়ে দেখেন তার ভোট দেয়া হয়ে গেছে। রুচিয়ার ভোটার নাম্বার ৪৭২, আইডি কার্ড নং-২৬৯৭৬৮৮৪৯১০০০০। এছাড়া মাজেদা বেগম (ভোটার নয় ১১১, আইডি কার্ড নং- ২৬৯৭৬৮৮৪৯৯১১১) ভোট দিতে পারেননি। তাকে বলা হয়েছে আপনার ভোট এ কেন্দ্রে নয়। মাজেদা চিৎকার করে বলেন, আমার একই বাড়ির অন্য ভোটার এসে ভোট দিয়ে গেছে। তাহলে আমার ভোট থাকবে না কেন?
সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার নিজেই দেখিয়ে দিচ্ছেন
পোস্তগোলা নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র ভোট কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে ৪নং বুথের সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার হাফিজুর রশীদ খান নিজেই ভোটারদের বলে দিচ্ছেন কোথায় কোথায় ভোট দিতে হবে। এমনকি অনেক সময় তিনি নিজেই সিল মেরে দিচ্ছেন।বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত এ বুথে ৪০৮টি ভোটের মধ্যে কাস্ট হয়েছে ৫৮টি। কিন্তু বুথ এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছে যা সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের পেছনে। তিনি সব দেখতে পাচ্ছেন। একজন ভোটার বুথে প্রবেশ করলে এ প্রতিবেদকের সামনেই তিনি বলছেন এখানে সিল মারুন। এ কেন্দ্রেও আওয়ামী লীগ সমর্থিত তিন প্রার্থী ছাড়া কারও এজেন্ট দেখা যায়নি।
চনপাড়ার আওয়ামী লীগ নেত্রী যাত্রাবাড়ীর এজেন্ট
বেলা ১২টায় যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল হাইস্কুলে গিয়ে দেখা গেছে, মহিলা বুথ-৪ এ দায়িত্ব পালন করছেন রূপগঞ্জ উপজেলার চনপাড় বস্তির মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী হেলেনা আক্তার ইলিশ প্রতীকের এজেন্ট হয়ে বসে আছেন। তার বুকে শোভা পাচ্ছে শামসুন্নাহার বেলী নামের স্টিকার। আর লাঠিম প্রতীকের প্রার্থীর এজেন্ট হয়ে আছেন চনপাড়ার বেবি। রেহানা নাম ধারণ করে তিনি এজেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন। এ ব্যাপারে সহকারি প্রিজাইডিং অফিসার শামসুর রহমান বলেছেন, দেখা ছাড়া আমাদের আর কোন উপায় নেই। আপনারাও দেখে যান। বৃদ্ধ এক ভোটার বলেন, এ দেশে এমনটা আবার দেখতে হবে তা কল্পনাও করিনি।
দুপুরেই বিজয় মিছিল
দুপুর সাড়ে ১২টায় উত্তর যাত্রাবাড়ী ধলপুর কমিউনিটি সেন্টার কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে সেখানে বিজয় মিছিল করছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্র্থী খালেকুজ্জামান চৌধুরীর সমর্থকরা। খালেকুজ্জামানের মার্কা কাঁটা চামচ। একজন সমর্থক বলেন, যা দেখছেন সবাই আমাদের ভোটার। বিএনপির ভোট বলতে নেই। সে হিসেবে আমাদের বিজয় নিশ্চিত। এ কারণে মিছিল করছি। বিজয় আমাদের হয়ে গেছে এটা লিখে রাখুন।
বর্জনের খবরে নিস্তব্ধতা
বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণ দিলে দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন কেন্দ্রে নেমে আসে রাজ্যের নীরবতা। ভোটার আসা বন্ধ হয়ে যায়। অপরদিকে আওয়ামী শিবিরে দেখা দেয় আনন্দ। এব্যাপারে ষাটোর্ধ্ব ভোটার রমজান বলেছেন, যেভাবে নির্বাচন হচ্ছে, দখল হচ্ছে এভাবে নির্বাচন করার চেয়ে না করাই অনেক ভাল। বিএনপির নির্বাচন বর্জন ছাড়া আর কোন পথই খোলা নেই।

৩। চট্টগ্রামে যত অনিয়ম
কারচুপি, জালভোট, কেন্দ্র দখল ও নানা অনিয়মের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন। সকাল ৮টায় ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও অনেক কেন্দ্রে সকাল ৭টায় একতরফা ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে যায়। ভোর থেকেই প্রতিটি কেন্দ্রের সামনে মহড়া দেয় সরকার সমর্থিত প্রার্থী আ জ ম নাছিরের হাতি মার্কার লোকজন। তারা বের করে দেয় বিরোধী প্রার্থীর এজেন্টদের। সকাল ১০ টার মধ্যে বেশির ভাগ কেন্দ্র দখলে নেয় তারা। বেলা ১২টার মধ্যে ফাঁকা হয়ে পড়ে ভোট কেন্দ্রগুলো। জাল ভোটের ছবি তুলতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছে সংবাদ কর্মীরাও। এ সময় প্রশাসনের ভূমিকা ছিল অনেকটা নিষ্ক্রিয়। যেসব কেন্দ্রে দায়িত্বরত পুলিশ প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেছে সেসব কেন্দ্র থেকে তাদের বের করে দেয়া হয়। ভোট ডাকাতি ও কেন্দ্র দখলের অভিযোগ এনে ভোট গ্রহণের তিন ঘণ্টা পরই নির্বাচন বর্জন করেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মনজুর আলমসহ তিন মেয়র প্রার্থী। আবেগী মনজুর নির্বাচন বর্জনের পাশাপাশি রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ান। একই অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জন করেন মেয়র প্রার্থী ইসলামী ফ্রন্টের মহাসচিব এমএ মতিন ও ইসলামী আন্দোলনের ওয়াইয়াজ হোসেন ভূঁইয়া। বেলা পৌনে একটার দিকে তারা এ ঘোষণা দেন। ওয়াইয়াজ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, বেশির ভাগ কেন্দ্র দখল করে নিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। এখানে নির্বাচনের কোন পরিবেশ নেই। ভোটকেন্দ্রে আমাদের এজেন্টদের ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। এমনকি আমাদের এজেন্টদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। ইসলামী আন্দোলনের তিন জন এজেন্টের মাথা ফাটিয়ে দেয়া হয়েছে। তাই নির্বাচন বর্জন করতে বাধ্য হয়েছি। ওদিকে হামলা চালানো হয় মনজুর আলমের নগরীর কাট্টলীর বাসভবনেও। সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা তার বাসভবন লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। তবে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিন। একই সুরে কথা বলেছেন চট্টগ্রামের আঞ্চলিক প্রধান নির্বাচন কর্মকর্তা আবদুল বাতেন। তিনি বলেছেন, দুই-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া নির্বাচন মোটামুটি সুষ্ঠু হয়েছে। মনজুর আলমের ভোট বর্জনের বিষয়ে তিনি বলেন, এ নিয়ে লিখিত কোন অভিযোগ পাইনি।
বের করে দেয়া হয় এজেন্টদের
সকাল ৯টা। নগরীর শহীদনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ওই কেন্দ্রে মনজুর আলমের কমলালেবু মার্কার এজেন্টের দায়িত্বপালন করছিলেন সানজিদা আলম ইতু। এ সময় তাকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ার চেষ্টা করে সরকারদলীয় লোকজন। এর প্রতিবাদ করলে ইতুর আইডি কার্ড ছিনিয়ে নিয়ে ভোটকেন্দ্রের একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখে তারা। অবরুদ্ধ অবস্থায় মোবাইলে ভাইকে এ ঘটনা জানান তিনি। পরে তার ভাই ম্যাজিস্ট্রেটকে খবর দেন। ওই ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ইতুকে মুক্ত করেন। এভাবে প্রথম দুই ঘণ্টার মধ্যেই কমলালেবু সহ বিরোধী প্রার্থীর এজেন্টদের মারধর করে বের করে দেয়া হয়। সকাল সাড়ে ১০টা। পূর্ব নাছিরাবাদ এমএ জলিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র। ওই কেন্দ্রের বাইরে হাতি মার্কার প্ল্যাকার্ড গলায় ঝুলিয়ে সশস্ত্র মহড়া দিচ্ছেন শ’দুয়েক লোক। কোণঠাসা অবস্থায় কেন্দ্রের ভেতরে দায়িত্ব পালন করছিলেন পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। ভোটারদের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছেন হাতি মার্কার সমর্থকরা। এ সময় একজন ভোটার কমলালেবুর প্রতীক গলায় ঝুলিয়ে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে চাইলে তার গতিরোধ করে তারা। পুলিশ তাকে ভেতরে আসতে বলায় চড়াও হয় হাতি মার্কার সমর্থকরা। যেসব পুলিশ সদস্য প্রতিবাদ করেছিলেন তাদের ওই কেন্দ্র থেকে বের করেন তারা। বেলা ১১টা। চট্টগ্রাম পলিটকেনিক ইনস্টিটিউট কেন্দ্র। ওই কেন্দ্রের বাইরে মহড়া দিচ্ছিলেন হাতি মার্কার লোকজন। পাশেই নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে ছিলেন কয়েকজন পুলিশ সদস্য। একটি রিকশায় হাতি মার্কার পোস্টার সাঁটিয়ে ভোটারদের আনা-নেয়া করছিলেন তারা। রিকশা থেকে নামা এক নারী ভোটারের উদ্দেশে একজন বলেন, ভেতরে বলা আছে, লাইনে দাঁড়ানোর দরকার নেই। বুথে গিয়ে সরাসরি সিল মেরে আসবেন। এ সময় হাজেরা বেগম নামের এক নারী ভোটার বলেন, হাতি মার্কার এজেন্ট আমাকে তার সামনে সিল মারতে বলে। আমি অস্বীকার করলে হুমকি দেয়। এদিকে সকাল ৭টায় মিউনিসিপ্যাল মডেল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রবেশ করেন হাতি মার্কার সমর্থকরা। জোর করে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে সিল মারতে থাকে তারা। এ সময় পুলিশ সদস্যরা নীরব ভূমিকা পালন করেন। ওই কেন্দ্রেই ভোট দেন আ জ ম নাছির উদ্দিন।
সংঘর্ষ, ককটেল বিস্ফোরণ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া
নগরীর ১৭ নম্বর পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ডের চট্টগ্রাম গভর্নমেন্ট কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউট কেন্দ্রে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে আ জ ম নাছিরের সমর্থকরা। এ সময় হাতি প্রতীকের দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাস্থলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন। ককটেল বিস্ফোরণের পর ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় অনেক ভোটার ভোট না দিয়ে চলে যায়। লালখানবাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে দু’দফা ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া অবিস্ফোরিত একটি ককটেলও উদ্ধার করেছে পুলিশ। বিকাল পৌনে ৪টার দিকে ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের ঈদগাহ বালিকা সরকারি বিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুস সবুর লিটনের সমর্থকদের সঙ্গে আরেক কাউন্সিলর প্রার্থী এসএম এরশাদ উল্লাহর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দুই পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। ঘটনাস্থল থেকে ১৩ জনকে আটক করে পুলিশ। নগরীর হালিশহরে জাল ভোটের ছবি তুলতে গেলে ভাঙচুর করা হয় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভির ক্যামেরা। সকাল ১১টায় দক্ষিণ বাকলিয়া ইউসুফ প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই কাউন্সিলর প্রার্থী শহীদুল্লা ও আবদুল মান্নান গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে ৭ জন আহত হন। এ ছাড়া একই ওয়ার্ডে মোজাফফর উলুম মাদরাসা ওই দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয় এতে ৬ জন আহত হন। ওই সময় এক ঘণ্টা ভোটকেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত ছিল। সকাল ১০টায় দক্ষিণ বাকলিয়ার বাদশা মিয়া ফোরকানিয়া মাদরাসা কেন্দ্র দখল নেয় হাতি মার্কার সমর্থকরা। এ সময় বাধা দিতে গেলে স্থানীয় বিএনপি নেতা তাহের জামাল চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সকাল সাড়ে ১১টায় বায়েজিদ আইডিয়াল মডেল স্কুল কেন্দ্রে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে হাতি মার্কায় সিল মারছিলেন আ জ ম নাছিরের এক কর্মী। এ সময় ওই দৃশ্য নিজের মোবাইলে ধারণ করেন সাধারণ এক ভোটার। ওই ছবি তোলার কারণে তাকে মারধর করে হাতি মার্কার সমর্থকরা। এ ঘটনায় আধা ঘণ্টা ওই কেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়।
ভোট দিতে পারেননি প্রার্থীরাও
নিজের ভোটটিও দিতে পারেননি ইসলামী ফ্রন্ট সমর্থিত মেয়র প্রার্থী এমএ মতিন। ভোটকেন্দ্রে নিজ প্রতীক চরকায় সিল মারলেও ব্যালট পেপারটি বাক্সে ফেলতে পারেননি তিনি। সকাল ১১টায় এনায়েত বাজার মহিলা কলেজ কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। এম এ মতিন অভিযোগ করেন, আমি আমার নিজস্ব ক্যামেরাম্যানকে নিয়ে ভোট দিতে কেন্দ্রে যাই। ব্যালটে নিজ প্রতীকে সিল মারার পর বিপুল নামে এক পুলিশ সদস্য এসে আমার কাছ থেকে ব্যালট কেড়ে নেয়। সে আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে ভোটকেন্দ্র থেকে আমাকে বের করে দিয়েছে। এদিকে পতেঙ্গা বোর্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দিতে এসেছিলেন মো. হোসেন (ভোটার নম্বর-১৫১০০০৯৭০৮০৮) নামে এক ভোটার। ভোটকেন্দ্রের নিজ বুথে গিয়ে দেখেন তার ভোটটি অন্য কেউ দিয়ে ফেলেছেন। মো. হোসেন বুথের সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারদের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তারা কোন উত্তর দিতে পারেননি। মো. হোসেন বলেন, ২ নম্বর বুথে ভোট দিতে গিয়ে দেখি আমার ভোট অন্য কেউ দিয়ে ফেলেছে। এ ব্যাপারে কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করলে তারা বলেন, কোন কিছু করার নেই। আমার ভাই ও পরিবারের সদস্যরাও কেউ ভোট দিতে পারেননি। এটি কোন ধরনের নির্বাচন? এ নির্বাচনের দরকার কি? শুধু মো. হোসেন নয়, এ কেন্দ্রে আসা অনেক ভোটারই ভোট দিতে পারেননি। সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে ওই কেন্দ্রের বিরোধী প্রার্থীর সব এজেন্টকে বের করে দিয়ে ভোটকেন্দ্র বন্ধ করে দেয় হাতি মার্কার সমর্থকরা। তাই ভোটাররা লাইনে না দাঁড়িয়ে বাসায় ফিরে যান। এদিকে সকাল ১০টা ৩৮ মিনিট। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের মাদরাসা আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া এতিমখানা কেন্দ্র। ওই কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয় বিরোধী প্রার্থীর এজেন্টদের। সকাল ৯টার দিকে নগরীর ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডের অলি আহমেদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র দখলের চেষ্টা চালায় হাতি মার্কার সমর্থকরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে ।
নীরব ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
চট্টগ্রাম সিটির ৪১টি ওয়ার্ডের ৭১৯টি ভোটকেন্দ্রে একযোগে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভোট গ্রহণ শুরু হতে না হতেই একের পর এক কেন্দ্র দখলের ঘটনা ঘটে। কিন্তু নীরব ছিল প্রশাসন। কোন কেন্দ্রেই সরকার দলের লোকজনের দখল উৎসবের প্রতিবাদ করেনি তারা। উল্টো অনেক জায়গায় মনজুর আলমের সমর্থকদের গ্রেপ্তার করেছে তারা। রাস্তায় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যদের টহল দেয়ার কথা থাকলেও কোথাও তাদের সক্রিয় ভূমিকা দেখা যায়নি।
উল্লেখ্য, চসিকের মোট ভোটার ১৮ লাখ ১৩ হাজার ৪৪৯ জন। ৯ লাখ ৩৭ হাজার ৫৩ পুরুষ ভোটারের বিপরীতে নারী ভোটার রয়েছেন ৮ লাখ ৭৬ হাজার ৩৯৬ জন। ৪১টি ওয়ার্ডের এই সিটিতে মেয়র পদে ১২ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২১৭ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৬২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে ১২ জন পুলিশ সদস্য ও ১০ জন আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়।

৪।শান্তিপূর্ণ জালভোট উৎসব
সকাল সাড়ে আটটা। শুক্রাবাদের নিউ মডেল উচ্চ বিদ্যালয়। ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে গিয়েই বাধার মুখে পড়তে হয়। কসরত করে ভেতরে প্রবেশ করা গেল। প্রিজাইডিং কর্মকর্তার খোঁজ চাইতেই পুলিশের একজন উপ-পরিদর্শক এগিয়ে এলেন। হাসিমাখা মুখে আশ্বস্ত করলেন, ‘কোথাও কোন সমস্যা নেই’। কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করতে ‘অনুমতি’ দিলেন। তবে ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান এ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার সময় একেবারে পাশেই বসেছিলেন এস আই। মাঝে মাঝে কিছু প্রশ্নের উত্তর তিনিই দিয়ে দিচ্ছিলেন। প্রিজাইডিং কর্মকর্তা আবুল বাশার উত্তর দেয়ার সময় একবারও চোখ তুলে তাকাননি। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, কোন সমস্যা হয়েছে কিনা। উত্তরটা যেন ঠোঁটের ডগায় তৈরিই ছিল, ‘কোন সমস্যা নেই’। পাশেই নিউ মডেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ভোটকেন্দ্র। এখানকার প্রিজাইডিং কর্মকর্তার আশেপাশে পুলিশ ছিল না। জানালেন, কোন সমস্যা তিনি এখনও দেখছেন না। তখন পর্যন্ত ওই ভোটকেন্দ্রে তেমন অস্বাভাবিক কিছু চোখে পড়েনি। তবে ফটকের মাথায় পাঁচ ছয়জন তরুণ ঢুকতে চাইছিলেন। পুলিশ বুঝিয়ে শুনিয়ে সে বারের মতো তাদের আর ঢুকতে দেয়নি। তাদের সবাই মেয়রপ্রার্থী সাঈদ খোকন ও কাউন্সিলর প্রার্থী সালাউদ্দিন আহমেদ ঢালীর এজেন্ট ও সমর্থক। তৃতীয় তলায় বুথ পরিদর্শনে যাওয়ার পাঁচ মিনিটের মাথায় দেখা গেল, ৬-৭ জন একসঙ্গে ঢুকেছেন একটি কক্ষে। ‘কী অবস্থা?’ বলেই সরাসরি ব্যালট পেপার হস্তগত করলেন একজন। তার কোমরে উঁচু কিছুর অস্তিত্ব সপষ্ট টের পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়ে গেল ধপাধপ সিলমারা। দরজার বাইরে দু’জন, সিঁড়ির পাশে দু’জন পাহারা দিচ্ছিলেন। এর কিছুক্ষণ পরই ধীরে ধীরে ভোটারদের ফিরে যাওয়ার ঘটনা বাড়তে শুরু করলো। কেন্দ্রের ভেতর কিছু না বললেও, বাইরে অনেকে তিক্ত হাসি হাসছিলেন। পরিচিতজনদের কাছে চুপি চুপি বলছিলেন, নিজের ভোট হরণের কথা। পুলিশ ও আনসার-ভিডিপি ব্যতীত আর কোন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অস্তিত্ব কেন্দ্র দুটিতে ছিল না। মাঝখানে বিজিবি’র ৪ সদস্যের একটি দল এসে ৫ মিনিট অবস্থান করে ফিরে যায়। এরই মাঝে এক গণমাধ্যমকর্মীকে কেন্দ্রের ছবি তুলতে বাধা দেন পুলিশের একজন উপ-পরিদর্শক। গলায় প্রার্থীর মার্কা ঝুলিয়ে অনেককেই বারবার ঢুকতে দেখা গেছে। বাইরে এসে সোল্লাশে... একেকজন বর্ণনা করছিলেন জাল ভোট দেয়ার অভিজ্ঞতা। কে কত বেশি ভোট দিতে পারলেন, সেটি গণনা করছিলেন। হঠাৎ ফিসফাঁস বেড়ে গেল। যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বেশ কয়েকজন বিদেশী পর্যবেক্ষক ওই কেন্দ্রগুলো ঘুরে ঘুরে দেখছিলেন। পুলিশ সদস্যরা তখন যুবকদের বুঝাচ্ছিলেন, ‘ফরেইনাররা আসছে, এখন না’। সে ভোটকেন্দ্র থেকে বের হয়ে বাইরে দাঁড়ানোর কিছুক্ষণ পরই কাউন্সিলর প্রার্থী সালাউদ্দিন আহমেদ ঢালী আসলেন। তার সঙ্গে দেখা গেল ওই ৬-৭ জনের দলটিকে। একজনের কোমরের হোলস্টারে রিভলবার এবার লুকানো নয়, সপষ্ট দেখা যাচ্ছে। অথচ নির্বাচনের প্রচারাভিযান শুরুর পর থেকেই যেকোন ধরনের বৈধ বা অবৈধ অস্ত্র বহন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল নির্বাচন কমিশন। তার আগেই বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর এজেন্টরা অভিযোগ করছিলেন, তাদের পোলিং এজেন্টকে আগেই বের করে দেয়া হয়েছে। আধঘণ্টা পর সে ক্যামেপ বিএনপি সমর্থিত কোন এজেন্টকে আর দেখা যাচ্ছিল না। সেখানের চেয়ারগুলোতে ততক্ষণে বসে গেছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর এজেন্টরা। এ দু’টো কেন্দ্র থেকে কিছুটা দূরে ধানমন্ডি গভঃ বয়েজ উচ্চ বিদ্যালয়। মাত্র একঘণ্টার মাথায় প্রিজাইডিং কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম জানান, ১০ শতাংশ ভোটগ্রহণ সমপন্ন হয়ে গেছে। তখন পর্যন্ত কোন ধরনের সমস্যার মুখোমুখি তিনি হননি বলে জানান। শঙ্কা আছে কিনা জিজ্ঞেস করতেই হেসে উঠে বলেন, ‘কখন যে কী হয় কিছু বলা যায় না’।
আবার নিউ মডেল কলেজে। এবার সেখানেও নীরবে-নিভৃতে শান্তিপূর্ণভাবে ব্যালট পেপার ছিঁড়ে জাল ভোট দিতে দেখা গেল ওই ৬-৭ জন যুবকের দলটিকে। তিনতলার বাঁ দিকের কক্ষে সামান্য উত্তেজনাও দেখা গেল। অনেকে পুরো পরিবার নিয়ে এসেও ভোট দিতে না পেরে চলে গেলেন। তাদের বেশির ভাগের মুখেই একই কথা, ‘আমার ভোট জানি কে দিয়ে ফেলেছে!’ ওদিকে তিনতলার খবর কিছুটা কানে এলো। সরকার সমর্থিত প্রার্থীর একজন এজেন্ট কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বললেন, ‘হেরা ভোট দিয়া কী করবো? ভোট দিলে কি ট্যাকা পাইবো? এত ভোট দিতে চায় ক্যান?’ এর কিছুক্ষণ পরই পুলিশের একজন উপ-পরিদর্শক এসে এ প্রতিবেদককে বের হয়ে যেতে বলেন। অবশ্য তখনও কেন্দ্রের ভেতর গিজগিজ করছে সরকার সমর্থিত প্রার্থীর এজেন্টরা।
দুপুর ১টার দিকে পান্থপথের লেক সার্কাস উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ঘুরে গেলেন নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ। তিনি চলে যাওয়ার পরও প্রায় ২টা পর্যন্ত এই প্রতিবেদককে কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়নি পুলিশ।
বিকাল সাড়ে তিনটায় নিউ মডেল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা আবুল বাশারের কক্ষে ঢোকার চেষ্টা করলাম। কোন প্রশ্ন করার আগেই তিনি বললেন, ‘আমি কিছু বলতে চাই না’। জিজ্ঞেস করলাম, ‘কত শতাংশ ভোট সমপন্ন হয়েছে?’ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে প্রায় একই সঙ্গে তিনি ও ওই উপ-পরিদর্শক জবাব দিলেন, ‘এখনও গণনা সমপন্ন হয় নাই’।
বিকাল সাড়ে চারটায় প্রায় প্রত্যেকটা কেন্দ্রে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ ভোট সমপন্নের কথা জানালেন সকল প্রিজাইডিং কর্মকর্তা। কোন রকম চ্যালেঞ্জ ছাড়াই গোলযোগমুক্ত ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে জাল ভোটের উৎসব চলেছে শুক্রাবাদ ও পান্থপথের তিনটি কেন্দ্রে।


বাকি অংশ মন্তব্যের ঘরে।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই জুন, ২০১৫ রাত ৩:০৯

লিঙ্কন বলেছেন: ৫। ‘ভাই ডিস্টার্ব হচ্ছে বাইরে গেলে ভাল হয়’
বিকাল তখন ৩টা ১৫ মিনিট। ৪নং ভোট কক্ষের দরজা বন্ধ। ধাক্কা দিয়ে দরজাটা খুলেই দেখা গেল কয়েকজন পোলিং এজেন্ট ও নির্বাচনী প্রার্থীর কিছু কর্মীকে। ভোট গ্রহণ তখনও শেষ হয়নি। গায়েবি ভোট প্রদানে ব্যস্ত ছিলেন তারা। ভেতরে প্রবেশ করে দেখা যায়, একটার পর একটা সিল মেরেই যাচ্ছেন। কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই আঁটসাঁট দেহের দাঁড়িওয়ালা এক ব্যক্তি এসে বললেন, ‘ভাই আমাদের ডিস্টার্ব হচ্ছে, বাইরে গেলে ভাল হয়’। গতকাল ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন চলাকালে উত্তরের ১৮নং ওয়ার্ডের শাহজাদপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এমন চিত্রই দেখা যায়। সকাল থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত নির্বাচনী অবস্থা অনেকটাই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু বেলা বাড়তেই শুরু হয় কেন্দ্র দখল উৎসব। নির্বাচনে অংশ নেয়া মেয়র প্রার্থী আনিসুল হক ও কাউন্সিলর প্রার্থী মো. আফরোজ এ হাবীবের কর্মীরা দুপুর থেকেই কেন্দ্রে প্রবেশ করা শুরু করে। একের পর এক কক্ষগুলো তাদের দখলে চলে যায়। আর নির্বিঘ্নে সিল বসানো শুরু করে তারা। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের নির্বাচন বর্জনের পর পরই ঢাকা উত্তরের ১৮ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কেন্দ্রগুলোতে এসব চিত্র দেখা গেছে। নির্বাচন চলাকালীন এ অবস্থা নিয়ে নিয়ে এ কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলমকে জিজ্ঞাস করা হলে তিনি বলেন, আমার এ কেন্দ্রের সার্বিক অবস্থা খুবই ভাল। সকাল থেকেই সুষ্ঠু নির্বাচন হয়ে আসছে। বেলা ৩টা ২০ মিনিট পর্যন্ত এ কেন্দ্রের আমার নিয়ন্ত্রণাধীন ভোট কাস্ট হয়েছে প্রায় ৪২ শতাংশ। আর কোন ধরনের ঝামেলা এ কেন্দ্রে নেই। খুবই স্বাভাবিক দেখছি। আর তা ছাড়া কোন অভিযোগও নেই। কেন্দ্র দখল দেখা গেলেও অনেকটা নীরব ভূমিকা পালন করেছেন নিরাপত্তা কর্মীরা। অবশ্য তাদের কাছে কেউ সহায়তা চায়নি বলেও দাবি করেছেন কর্তব্যরত পুলিশ। এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রে অবস্থান করা এসআই আবদুল বারিক জানান, আপনারা যা দেখছেন তা আমিও দেখছি। তবে এ নিয়ে কেউই কোন অভিযোগ করছেন না। তাই আমাদের বলার কিছু নেই। এদিকে একই কেন্দ্রের আরেক প্রিজাইডিং কর্মকর্তা হারুন অর রশীদের ভাষ্যও একই রকম। পুরো কেন্দ্রে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী তাবিথ আওয়াল ও কাউন্সিলরদের পক্ষ থেকে কোন পোলিং এজেন্ট দেখা মেলেনি। এ প্রসঙ্গে হারুন অর রশীদ বলেন, সকালে দুজন পোলিং এজেন্ট এসেছিলেন। তবে তারা পরিচয়পত্র নেননি। আমি সব ব্যবস্থা করেও রেখেছি। কিন্তু সারা দিন তাদের আর কাউকে আসতে দেখিনি। এ কেন্দ্রটির পাশেই ১৮নং ওয়ার্ডে আরেক কেন্দ্র নজর মাহমুদ সিনিয়র মাদরাসা। সেখানে প্রবেশ করতেই পরিস্থিতি খুব স্বাভাবিকই দেখা যায়। কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা প্রিজাইডিং কর্মকর্তা শ্রী কুমার টিটোর সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, আমার কেন্দ্রে ৩৩০৪ জন ভোটার। সকাল থেকেই সুষ্ঠুভাবে ভোটাররা ভোট দিয়েছেন। কোন অভিযোগ পাইনি। শান্তিপূর্ণ ভোট হচ্ছে বলেই আমি মনে করি। অবশ্য তার কথার সঙ্গে বাস্তব চিত্রটা একদমই আলাদা। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে কেন্দ্রটিতে অবস্থান করা কিছু স্থানীয় নেতা-কর্মী এসে ৪০ থেকে ৫০ জন যুবককে কেন্দ্রের ভেতর প্রবেশ করায়। এদের মধ্যে কেউ ওই কেন্দ্রের ভোটার নয় বলেই জানিয়েছেন। এদিকে সকাল থেকে ঢাকা উত্তরের ২১নং ওয়ার্ডের কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে অনেকটা শান্তিপূর্ণ ভোট হতে দেখা যায়। এ ওয়ার্ডের উত্তর বাড্ডায় অবস্থিত গুলশান নর্থ সাউথ স্কুলের কেন্দ্রটির প্রিজাইডিং কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, দুপুর ১টা পর্যন্ত এ কেন্দ্রে ৭০০ ভোট কাস্ট হয়েছে। এখানে মোট ১৮৪১ জন ভোটার রয়েছে। আমার কেন্দ্রে কোন ধরনের ঝামেলা হয়নি। শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হয়েছে। এমন সুষ্ঠু নির্বাচন সকাল থেকে একই ওয়ার্ডের বাড্ডা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাড্ডা আলাতুন্নেসা স্কুল ও কলেজ, মহানগর মহাবিদ্যালয় ও বাড্ড হাইস্কুলের ভোট কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখা গেছে। কিন্তু শেষ বেলায় আবারও কেন্দ্রগুলো ঘুরে ভিন্ন চিত্রই ফুটে উঠে। বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেখা গেছে, বেলা ৩টা ৪০ মিনিটে মেয়র প্রার্থী আনিসুল হক ও কাউন্সিলর প্রার্থী ওসমান গণির কর্মীরা কেন্দ্রের একটি কক্ষে জাল ভোট প্রদান করছেন। ভেতরে প্রবেশ করতেই তারা বেরিয়ে যেতে বলেন। একই অবস্থা দেখা গেছে পাশেই অবস্থান করা বাড্ডা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। আর প্রতিটি কেন্দ্রেই এ ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত থানা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অবস্থান নিতে দেখা গেছে। কেন্দ্রের ভেতর-বাইর সব জায়গায় বিচরণ ছিল তাদের।

২| ১২ ই জুন, ২০১৫ রাত ৩:২৫

লিঙ্কন বলেছেন:

৫। ভাই ডিস্টার্ব হচ্ছে বাইরে গেলে ভাল হয়
বিকাল তখন ৩টা ১৫ মিনিট। ৪নং ভোট কক্ষের দরজা বন্ধ। ধাক্কা দিয়ে দরজাটা খুলেই দেখা গেল কয়েকজন পোলিং এজেন্ট ও নির্বাচনী প্রার্থীর কিছু কর্মীকে। ভোট গ্রহণ তখনও শেষ হয়নি। গায়েবি ভোট প্রদানে ব্যস্ত ছিলেন তারা। ভেতরে প্রবেশ করে দেখা যায়, একটার পর একটা সিল মেরেই যাচ্ছেন। কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই আঁটসাঁট দেহের দাঁড়িওয়ালা এক ব্যক্তি এসে বললেন, ‘ভাই আমাদের ডিস্টার্ব হচ্ছে, বাইরে গেলে ভাল হয়’। গতকাল ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন চলাকালে উত্তরের ১৮নং ওয়ার্ডের শাহজাদপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এমন চিত্রই দেখা যায়। সকাল থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত নির্বাচনী অবস্থা অনেকটাই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু বেলা বাড়তেই শুরু হয় কেন্দ্র দখল উৎসব। নির্বাচনে অংশ নেয়া মেয়র প্রার্থী আনিসুল হক ও কাউন্সিলর প্রার্থী মো. আফরোজ এ হাবীবের কর্মীরা দুপুর থেকেই কেন্দ্রে প্রবেশ করা শুরু করে। একের পর এক কক্ষগুলো তাদের দখলে চলে যায়। আর নির্বিঘ্নে সিল বসানো শুরু করে তারা। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের নির্বাচন বর্জনের পর পরই ঢাকা উত্তরের ১৮ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কেন্দ্রগুলোতে এসব চিত্র দেখা গেছে। নির্বাচন চলাকালীন এ অবস্থা নিয়ে নিয়ে এ কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলমকে জিজ্ঞাস করা হলে তিনি বলেন, আমার এ কেন্দ্রের সার্বিক অবস্থা খুবই ভাল। সকাল থেকেই সুষ্ঠু নির্বাচন হয়ে আসছে। বেলা ৩টা ২০ মিনিট পর্যন্ত এ কেন্দ্রের আমার নিয়ন্ত্রণাধীন ভোট কাস্ট হয়েছে প্রায় ৪২ শতাংশ। আর কোন ধরনের ঝামেলা এ কেন্দ্রে নেই। খুবই স্বাভাবিক দেখছি। আর তা ছাড়া কোন অভিযোগও নেই। কেন্দ্র দখল দেখা গেলেও অনেকটা নীরব ভূমিকা পালন করেছেন নিরাপত্তা কর্মীরা। অবশ্য তাদের কাছে কেউ সহায়তা চায়নি বলেও দাবি করেছেন কর্তব্যরত পুলিশ। এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রে অবস্থান করা এসআই আবদুল বারিক জানান, আপনারা যা দেখছেন তা আমিও দেখছি। তবে এ নিয়ে কেউই কোন অভিযোগ করছেন না। তাই আমাদের বলার কিছু নেই। এদিকে একই কেন্দ্রের আরেক প্রিজাইডিং কর্মকর্তা হারুন অর রশীদের ভাষ্যও একই রকম। পুরো কেন্দ্রে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী তাবিথ আওয়াল ও কাউন্সিলরদের পক্ষ থেকে কোন পোলিং এজেন্ট দেখা মেলেনি। এ প্রসঙ্গে হারুন অর রশীদ বলেন, সকালে দুজন পোলিং এজেন্ট এসেছিলেন। তবে তারা পরিচয়পত্র নেননি। আমি সব ব্যবস্থা করেও রেখেছি। কিন্তু সারা দিন তাদের আর কাউকে আসতে দেখিনি। এ কেন্দ্রটির পাশেই ১৮নং ওয়ার্ডে আরেক কেন্দ্র নজর মাহমুদ সিনিয়র মাদরাসা। সেখানে প্রবেশ করতেই পরিস্থিতি খুব স্বাভাবিকই দেখা যায়। কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা প্রিজাইডিং কর্মকর্তা শ্রী কুমার টিটোর সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, আমার কেন্দ্রে ৩৩০৪ জন ভোটার। সকাল থেকেই সুষ্ঠুভাবে ভোটাররা ভোট দিয়েছেন। কোন অভিযোগ পাইনি। শান্তিপূর্ণ ভোট হচ্ছে বলেই আমি মনে করি। অবশ্য তার কথার সঙ্গে বাস্তব চিত্রটা একদমই আলাদা। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে কেন্দ্রটিতে অবস্থান করা কিছু স্থানীয় নেতা-কর্মী এসে ৪০ থেকে ৫০ জন যুবককে কেন্দ্রের ভেতর প্রবেশ করায়। এদের মধ্যে কেউ ওই কেন্দ্রের ভোটার নয় বলেই জানিয়েছেন। এদিকে সকাল থেকে ঢাকা উত্তরের ২১নং ওয়ার্ডের কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে অনেকটা শান্তিপূর্ণ ভোট হতে দেখা যায়। এ ওয়ার্ডের উত্তর বাড্ডায় অবস্থিত গুলশান নর্থ সাউথ স্কুলের কেন্দ্রটির প্রিজাইডিং কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, দুপুর ১টা পর্যন্ত এ কেন্দ্রে ৭০০ ভোট কাস্ট হয়েছে। এখানে মোট ১৮৪১ জন ভোটার রয়েছে। আমার কেন্দ্রে কোন ধরনের ঝামেলা হয়নি। শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হয়েছে। এমন সুষ্ঠু নির্বাচন সকাল থেকে একই ওয়ার্ডের বাড্ডা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাড্ডা আলাতুন্নেসা স্কুল ও কলেজ, মহানগর মহাবিদ্যালয় ও বাড্ড হাইস্কুলের ভোট কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখা গেছে। কিন্তু শেষ বেলায় আবারও কেন্দ্রগুলো ঘুরে ভিন্ন চিত্রই ফুটে উঠে। বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেখা গেছে, বেলা ৩টা ৪০ মিনিটে মেয়র প্রার্থী আনিসুল হক ও কাউন্সিলর প্রার্থী ওসমান গণির কর্মীরা কেন্দ্রের একটি কক্ষে জাল ভোট প্রদান করছেন। ভেতরে প্রবেশ করতেই তারা বেরিয়ে যেতে বলেন। একই অবস্থা দেখা গেছে পাশেই অবস্থান করা বাড্ডা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। আর প্রতিটি কেন্দ্রেই এ ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত থানা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অবস্থান নিতে দেখা গেছে। কেন্দ্রের ভেতর-বাইর সব জায়গায় বিচরণ ছিল তাদের।

৩| ১২ ই জুন, ২০১৫ রাত ৩:২৯

লিঙ্কন বলেছেন:


৬।ভোট দিতে পারলেন না প্রার্থী
কাউন্সিলর প্রার্থী নিজেই এসে দেখেন তার ভোট দেয়া হয়ে গেছে। ঘটনাটি সিদ্ধেশ্বরী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রের। প্রার্থীর নাম আবু জুবায়ের মো. মেহেরুতিল্লা। ভোটাররা জানান, সকাল ৮টায় ভোট শুরুর পরপরই ওই কেন্দ্র থেকে বিরোধী প্রার্থীদের সব এজেন্ট বের করে দেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর লোকজন। দক্ষিণ সিটি মেয়র প্রার্থী সাঈদ খোকন ও কাউন্সিলর প্রার্থী মুন্সী কামরুজ্জামান কাজলের সমর্থকরা যৌথভাবে ওই কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ নেন। গেট থেকে শুরু করে বুথের ভেতর পর্যন্ত কয়েক স্তরে ছিল ইলিশ মাছ ও ঘুড়ি প্রতীকের সমর্থকদের অবস্থান। দুটি প্রতীক দিয়ে ছাপানো কার্ড গলায় ঝুলিয়ে নির্বাচনী কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সামনে প্রকাশ্যেই তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। ভোট শুরুর আগে গেটে জটলা করে দাঁড়িয়ে থাকা সরকার সমর্থকদের বাধার মুখে পড়েন কাউন্সিলর প্রার্থী এম এ জাকির হোসেনের (ঠেলাগাড়ি) নারী এজেন্টরা। তাদের কেন্দ্রে ঢুকতেই দেয়া হয়নি। শিবির বলে তাদের গেট থেকে তাড়িয়ে দেন ইলিশ মাছ ও ঘুড়ির ব্যাজ পরিহিত রুবেল রহমান রাতুল নামের এক যুবক। এ সময় গোলে হেনা লাকী নামের এক নারী এজেন্ট তাদের ‘শিবির বলায়’ তীব্র প্রতিবাদ করেন। বারবার তিনি নিজের পরিচয় প্রকাশ করে বলেন, আমি এ এলাকার মেয়ে। এখানেই বড় হয়েছি। অনেকে আমাকে চিনেন। আমি এ স্কুলেই পড়েছি। সিদ্ধেশ্বরী কলেজের ছাত্রী ছিলাম। আমি এজেন্ট। শিবির হতে যাবো কেন? একপর্যায়ে প্রতিবাদী ওই নারী গেটে অবস্থান নেন। তাকে ঘিরে সাংবাদিকদের ভিড় বাড়তে থাকায় দ্বিতীয় দফায় তিনি সরকার সমর্থকদের তোপের মুখে পড়েন। রাতুল নামের সেই যুবক তার দিকে আবার তেড়ে আসেন। পরে উপায়ন্তর না দেখে সহযোগী এজেন্ট নিলুফার খন্দকার তাকে টেনে নিয়ে যান। এ সময় রাতুল বিরোধী এজেন্টদের উদ্দেশে বলেন, মিডিয়ায় বলেছেন তো এবার যান। আমাদের কাজ করতে দেন। এজেন্ট বের করে দেয়ার বিষয়ে বক্তব্য নিতে প্রিজাইডিং অফিসারের কক্ষে গেলে দেখা যায় সেখানে পুলিশের পাশাপাশি সরকার সমর্থকরা অবস্থান করছেন। ওই কক্ষে কে যাবেন বা যাবেন না সেটি ওই সমর্থকরাই ঠিক করে দিচ্ছেন। তাদের কক্ষঘেঁষা একটি বুথ। সেখানেও একই চিত্র। বুথের প্রবেশদ্বারে আনসার-ভিডিপির লোকজন থাকার কথা থাকলেও সেখানে রয়েছেন ইলিশ মাছ ও ঘুড়ির ব্যাজধারীরা। তারাই বুথের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন। ভেতরে ঢুকে দেখা যায় একটি ব্যাঞ্চের ওপর তিনজন সমর্থক ব্যালট পেপারে সিল দিচ্ছেন। কয়েকটি ব্যালট একসঙ্গে ভাঁজ করে বক্সে ঢোকাচ্ছেন। এ সময় এক ফটো সাংবাদিক ভেতরে প্রবেশ করলে অনেকটা উপহাস করেই ওই ৩ সমর্থক বক্সে ব্যালট ঢোকানোর পোঁজ দেন। এ সময় কাউন্সিলর প্রার্থী আবু জুবায়ের ওই বুথে নিজের ভোট দিতে যান। সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারেন তার ভোট দেয়া হয়ে গেছে। তার উপস্থিতিতেই জাল সিল দিচ্ছিলেন তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকরা। তিনি সেখানে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করেন। পাশের কক্ষে প্রিজাইডিং অফিসার শেখ মো. আরিফুল ইসলামের কাছেও তিনি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করেন। ওই প্রার্থীর অভিযোগ এবং সকাল থেকে পাওয়া নানা অভিযোগের ভিত্তিতে প্রিজাইডিং অফিসারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং আমার সহকর্মীদের নিয়ে আমি সুষ্ঠু ভোট করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এখন আমার আর কিছুই করার নেই।
রুমা সরকার হয়তো জানেন না: সিদ্ধেশ্বরী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের অরাজক পরিস্থিতি দেখে ওই প্রতিবেদক যান অল্প দূরের ইস্কাটন গার্ডেন উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র নং-৩৫৬ (৩)-এ। সেখানেও গেটের বাইরে সাঈদ খোকন ও মুন্সী কামরুজ্জামানের সমর্থকরা ছিলেন। যৌথভাবে ছাপানো ব্যাজ পরিহিত ছিলেন তারা। ভেতরে ছিল পুলিশের সরব অবস্থান। তিন তলা ওই কেন্দ্রের পরিবেশ মোটামুটি শান্তিপূর্ণই ছিল। হঠাৎ প্রিজাইডিং অফিসারের কক্ষের পাশের একটি বুথে হট্টগোল শুরু হয়। গিয়ে দেখা যায় বুথে দায়িত্বরত পোলিং অফিসার এক যুবকের সঙ্গে উচ্চস্বরে কথা বলছেন। কালো গেঞ্জি পরিহিত ওই যুবকের সঙ্গে ইস্কাটনে আরও কয়েকজন তরুণ। এর মধ্যে একজন জাল ভোট দিতে নিজেই হাতে কালি লগিয়ে ব্যালট চান। পোলিং অফিসার রুমা সরকার এর প্রতিবাদ করেন। সরকার সমর্থকরা এতে ক্ষিপ্ত হন। তারা বলেন, সিলিপ-টিলিপ বুঝি না, ভোট দিতে এলে ব্যালট দিতে হবে। এ সময় রাজধানীর পুরান ঢাকার পগজ স্কুলে কর্মরত রুমা সরকার বলেন, যেভাবে ট্রেনিং পেয়েছি সেভাবেই ভোট নেবো, এর বাইরে কিছু করবো না। এ সময় বুথে থাকা এক তরুণ অন্যজনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘চল চল, ম্যাডাম হয়তো জানেন না। পরে আসবো নে।’ ওই কেন্দ্রে অবশ্য ভোটারদের কাছ থেকে প্রকাশ্যে ভোট আদায়ের অভিযোগ পাওয়া যায়।
সরকারি দলের একাধিক প্রার্থী যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা সেখানে: বাংলামটরের খোদেজা খাতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সকাল ১০টায় ওই কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় বিভিন্ন বুথে সরকার সমর্থকরা সব করছেন। নির্বাচনী কর্মকর্তাদের পর্যন্ত ভোটাররা যেতে পারছেন না। তার আগেই এ বুথে নয়, ওই বুথে। তাদের এমন তথ্যে ভোটাররা হয়রানি হচ্ছেন। ওই কেন্দ্রের বাইরে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত এবং বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকরা রয়েছেন। আছেন বিএনপির প্রার্থীর লোকজনও। সেখানে আবদুর রহমান নামের এক ভোটার জানান, ভোট শান্তিপূর্ণই হচ্ছে। তার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সেখানে আওয়ামী লীগের দুজন প্রার্থী। তাদের নিজেদের মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। এ সময় ওই ভোটারের পাশে থাকা কাউন্সিলর প্রার্থী এম এ হামিদের ব্যাজ পরিহিত একজন বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার দুটি কেন্দ্রে তাদের দলের এক বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকরা রাতেই অনেক ব্যালট ছিনিয়ে নিয়েছেন। দুপুরের কিছু আগে পুরান ঢাকার নবাবকাটারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটার টানতে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর লোকজনের ত্রিমুখী প্রতিযোগিতা দেখা গেছে। ওই কেন্দ্রে কথা হয় ৩৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী যুবলীগ নেতা মো. আওয়াল হোসেনের সঙ্গে। মিষ্টিকুমড়া প্রতীকের ওই প্রার্থীও স্বীকার করেন ত্রিমুখী প্রতিযোগিতায় ভোট অন্য ওয়ার্ডের তুলনায় তার ওয়ার্ডে শান্তিপূর্ণ হচ্ছে।

৪| ১২ ই জুন, ২০১৫ রাত ৩:৩১

লিঙ্কন বলেছেন:


৭।ভোট জালিয়াত ও পুলিশের রোষানলে সাংবাদিকরা
তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জালভোট ও অনিয়মের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েছেন গণমাধ্যম কর্মীরা। ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের হামলায় আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ সাংবাদিক। ভেঙে ফেলা হয়েছে ইলেক্ট্রনিক সংবাদ মাধ্যমের দুটি ক্যামেরা। এ সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে থাকা মানিব্যাগ, ডায়েরি এবং পরিচয়পত্রও নিয়ে যায় হামলাকারীরা। এর আগে সকালে ভোট গ্রহণের শুরুতেই কেন্দ্রে প্রবেশে বাধা দেয় পুলিশ। নির্বাচন কমিশনের কোন নির্দেশনা না থাকলেও অনেক কেন্দ্রে সাংবাদিকদের চারশ’ গজের ভেতর ভিড়তে দেয়া হয়নি। কোন কোন কেন্দ্রে সাংবাদিকদের প্রবেশের সুযোগ দিয়ে পরে বের করে দেয়া হয় দ্রুত সময়ের মধ্যে। বেলা দুটার পর অনেক কেন্দ্রেই সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি ছিল পুলিশের। যদিও এসব বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট কারও কোন সহযোগিতা মিলেনি। উল্টো হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হতে হয় সাংবাদিকদের। নির্বাচন কমিশনের কোন নির্দেশনা না থাকলেও সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে দায়িত্বরত পুলিশ কর্তারা সাংবাদিকদের কেন্দ্র ও বুথে প্রবেশ করতে বাধা দেন। এমন অবস্থা ছিল দিনভর। সকালে রাজধানীর সবুজবাগ এলাকায় দায়িত্ব পালনকালে হামলার শিকার হন দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার ওবায়েদ অংশুমান। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী আশরাফুজ্জামান ফরিদের নেতৃত্বে এই হামলা চালানো হয়। ফরিদ তার প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী আজাদ মোহাম্মদ সাদেকুল ইসলামের ওপর আহমেদাবাদ হাইস্কুলের সামনে হামলা চালায়। ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে বাধা দেয় এবং নিজেরাই ব্যালটে সিল মেরে বাক্সে জমা করতে থাকে। এসব অনিয়মের ছবি সংগ্রহ করার সময় ফরিদ তার লোকজন নিয়ে সাংবাদিক ওবায়েদের ওপর হামলা করে। বেধড়ক মারধর শুরু করে। এতে তার জামা ছিঁড়ে যায়। পুরো শরীরে মারাত্মক আঘাত পান তিনি। সকাল ৮টায় ভোটকেন্দ্র ঘুরে দেখার সময় মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাসের সঙ্গে থাকা যমুনা টেলিভিশনের ক্যামেরাপারসন আখলাক সাফার ওপর হামলা চালায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তিনি বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাসের এজেন্টদের বের করে দেয়ার ছবি ক্যামেরায় ধারণ করছিলেন। এ সময় যমুনা টেলিভিশনের ক্যামেরা ভাঙচুর করে আখলাক সাফাকেও মারধর করা হয়। সকাল ৯টা ২০ মিনিটে সেগুনবাগিচা স্কুলের সামনে যুগান্তর পত্রিকার ফটো সাংবাদিক শামীম নূর ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের দ্বারা নির্যাতিত হন। তার ক্যামেরায় ধারণ করা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অনিয়মের চিত্র মুছে ফেলতে বাধ্য করা হয়। সকাল থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নির্বাচনের তথ্য সংগ্রহ করছিলেন ডেইলি স্টার পত্রিকার রিপোর্টার পরিমল পাল ও মাহবুব খান। বিশ্ববিদ্যালয়ের এনেক্স ভবনে তারা কিছু বহিরাগতকে ভোট দিতে দেখেন। এদের একজনের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে সে তাদের বাইরে আসতে বলে। পরে সাংবাদিকরা তাকে এড়িয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর দুপুরের খাবার গ্রহণের জন্য পরিমল এবং মাহবুব ঢাকা মেডিক্যালের সামনে খাবারের দোকানে আসলে ছাত্রলীগের ১২-১৫ জন নেতাকর্মী তাদের ওপর হামলা করে। হামলাকারীরা মাহবুবকে থাপ্পড় দিয়ে চলে যেতে বলে এবং পরিমলকে বেধড়ক কিল, ঘুষি ও লাথি মারতে থাকে। একপর্যায় পরিমলের মোবাইল ফোন, পরিচয়পত্র এবং মানিব্যাগ রেখে দিয়ে তাকে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলে। সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে সিদ্ধেশ্বরী বয়েজ স্কুলে একই পত্রিকার ফটো সাংবাদিক আনিসুর রহমান ভোটার বিহীন কেন্দ্রের ছবি তুলতে চাইলে কয়েকজন যুবক তাকে ঘিরে ধরে। কেন ছবি তুলছেন- জানতে চায়। যুবকরা তাকে ধাক্কা দিয়ে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়। সেখান থেকে বের হয়ে আনিস যান সিদ্ধেশ্বরী গার্লস স্কুলে। সেখানে তিনি প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে এবং বুথের ভেতরে বেশ কয়েকজন যুবককে দেখেন। বুথের ছবি তুলতে গেলে কিছু যুবক তাকে কেন্দ্র ত্যাগ করার জন্য বলে। কাফরুলে ডেইলী স্টারের আরেক ফটো সাংবাদিক পলাশ একজন অস্ত্রধারীর ছবি তুললে তাকে ঘিরে ধরে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী। তারা ক্যামেরা কেড়ে নিয়ে ছবিগুলো মুছে ফেলে। একই পত্রিকার আরেক সাংবাদিক রাফি কমলাপুর শেরে বাংলা হাইস্কুলে সকাল ১১টায় অনিয়মের তথ্য সংগ্রহ করতে চাইলে আওয়ামী লীগের এক কর্মী তাকে বাধা দেয় এবং কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়। দুপুর দেড়টায় রাজধানীর শাহাজাহানপুরের মাহবুব আলী ইনস্টিটিউটে প্রকাশ্যে ব্যালটে সিল মারার খবর সংগ্রহ করতে গেলে হামলার শিকার হন প্রথম আলোর সিনিয়র রিপোর্টার সুজন মহাজয়। এসময় হামলাকারীরা তার দুইটি মোবাইল ফোন, প্রথম আলোর পরিচয়পত্র এবং নির্বাচন কমিশন থেকে সরবরাহ করা পরিচয়পত্র কেড়ে নেয়। দুপুর ১২টায় একই পত্রিকার আরেক সিনিয়র রিপোর্টার মোশতাক আহমেদ সরকার সমর্থক মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের হামলার শিকার হন। ঢাকা দক্ষিণের নারিন্দার মৈশন্ডি স্কুল কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ওই সাংবাদিকের মোবাইলে তোলা ছবি মুছে ফেলা হয়। সঙ্গে থাকা ডায়েরি ও মানিব্যাগ থেকে টাকা নিয়ে যায় হামলাকারীরা। পরে দ্রুত এলাকা ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়ে হামলাকারীরা তাকে মারধরের হুমকি দেয়। সকালে মিরপুরের একটি ভোটকেন্দ্রে একটি জনপ্রিয় জাতীয় দৈনিকের সাংবাদিকের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন একজন পুলিশ সদস্য। এক পর্যায়ে পুলিশ তাকে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করার হুমকি দেয়। ঘটনাস্থল থেকে ফিরে একজন নির্বাচন কমিশনারকে এ বিষয়ে অভিযোগ করেন ওই সাংবাদিক। তাকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন কমিশনার ঘটনাস্থলে গেলে তার সামনে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে ওই পুলিশ সদস্য। পরে সিইসিকে বিষয়টি অবগত করলে তিনি পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেন। তবে ওই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানা যায়নি। দুপুরে উত্তরা গার্লস হাইস্কুলে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আনিসুল হকের প্রতীক গলায় ঝুলিয়ে জাল ভোট দেয়ার তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে আহত হন সমকাল পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি অমিতোষ পাল। এ ঘটনায় এক সাংবাদিক ক্ষুব্ধ হয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। দুপুর ২টায় ঢাকা দক্ষিণে বাসাবো উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে সংঘর্ষে অনলাইন পোর্টাল রাইজিং বিডির সাংবাদিক ইয়াসিন রাব্বী গুলিবিদ্ধ হন। এদিকে চট্টগ্রামেও তিন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। গুরুত্বর আহত অবস্থায় তারা চট্টগ্রামের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সকাল ১০টায় হালি শহরের কেজি অ্যান্ড হাইস্কুল কেন্দ্রের বাইরের মারামারির ঘটনা ধারণ করার সময় একপক্ষের হামলার শিকার হন একাত্তর টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার আজাদ তালুকদার ও ক্যামেরাম্যান জহিরুল ইসলাম। হামলাকারীরা লাঠি দিয়ে জহিরুলের মাথায় আঘাত করে এবং ক্যামেরা ভাঙচুর করে। এতে জহিরুলের মাথা ফেটে যায়। বেলা ১১টায় আগ্রাবাদ ব্যাপারিপাড়ায় তালিবিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জালভোটের ছবি তুলতে গিয়ে হামলার শিকার হন আরটিভির ক্যামেরাম্যান পারভেজুর রহমান। আহত সাংবাদিকরা জানান, হামলাকারীদের সবার গলায় হাতী মার্কার প্রতীক সংবলিত কার্ড ঝুলছিল।

৫| ১২ ই জুন, ২০১৫ রাত ৩:৩৩

লিঙ্কন বলেছেন:


৮। চারটার পরও চলে সিল মারার মহোৎসবচারটার পরও চলে সিল মারার মহোৎসব
দিনভর ভোট কারচুপি আর জালিয়াতির উৎসব চলে নির্ধারিত সময়ের পরও। সরজমিন তিন সিটির বিভিন্ন কেন্দ্রে এ দৃশ্য দেখা গেছে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট দিতে কমিশন নির্ধারিত সময় ছিল সকাল আটটায় শুরু হয়ে টানা বিকেল চারটা পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে বিভিন্ন স্থানে ভোট কেন্দ্র দখল করে সরকার-সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে ভোট দিতে দেখা গেছে। সকালের ভোট শুরুর পরপরই বিভিন্ন কেন্দ্রে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর এজেন্ট না থাকা ও দুপুর বারোটার মধ্যে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা আসার পরও এই ভোট জালিয়াতি থামেনি। বরং দেখা গেছে ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার বেঁধে দেয়া সময় পরও ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের একটি কেন্দ্র দখল করে ব্যালটে সিল মারতে। একটি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, উত্তরার নওয়াব হাবিবুল্লাহ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে বিকেল চারটা ২৫ মিনিট পর্যন্ত বিভিন্ন বুথে স্থানীয় আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ব্যালটে সিল মারছে। এ সময় বুথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও ছিলেন। বিকেল চারটায় ভোট গ্রহণ শেষে কেন্দ্রের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন বুথে সরকার দলীয় নেতা-কর্মীরা ব্যালটের বই নিয়ে একের পর এক পাতায় এক নাগাড়ে সিল মেরে তা বাঙে ভরছিলেন। আরেক গ্রুপ ব্যালট বইয়ের মুড়ির অংশে টিপসই দিচ্ছিল। এমনটা চলে বিকেল চারটা ২৫ মিনিট পর্যন্ত। এরপর প্রিজাইডিং কর্মকর্তার কাছে সিলমারা ব্যালট বাঙগুলো নেয়া হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপস্থিত ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তারা কিছু বলতে রাজি হননি। ভোট শেষ হওয়ার আগে থেকেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ভোটকেন্দ্রের ভেতরে অবস্থান নেন।

৬| ১২ ই জুন, ২০১৫ রাত ৩:৩৭

লিঙ্কন বলেছেন:


৯। ডিজিটাল জমানায় এনালগ কারচুপি
এ এক নয়া মডেলের নির্বাচন। উৎসব তো বটেই। দখলের উৎসব। একেবারেই খোলামেলা। কোন রাখডাক নেই। সকাল সকাল প্রায় প্রতিটি কেন্দ্র থেকেই হাওয়া বিএনপি সমর্থক এজেন্টরা। কেউ ঢুকতে পেরেছেন, কেউ পারেননি। তবে থাকতে পারেননি কেউই। হুমকি, মারধর, হামলা আর গ্রেপ্তারের শিকার হয়েছেন তারা। কাউকে কাউকে আটকে রাখা হয় আগেই। রক্তাক্ত এজেন্ট যেন একটি নির্বাচনেরই প্রতিচ্ছবি। আভাস পাওয়া গিয়েছিল আগের রাতেই। খবর আসছিলো, ব্যালট পেপারে সিল মারার। যদিও তার সংখ্যা ছিল কম। তবে গতকাল দিনের শুরুতেই সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যায়। প্রথম বাধার শিকার গণমাধ্যম। বেশির ভাগ কেন্দ্রেই ক্যামেরা নিতে মানা। দিনভর টার্গেট সাংবাদিকরা। কেন্দ্র বিরোধী এজেন্টমুক্ত করার পর বিরোধী ভোটারমুক্তও করা হয়। প্রতিটি কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন আওয়ামী লীগ-যুবলীগ-ছাত্রলীগের কর্মীরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছিল তাদের শতভাগ সহযোগী। কোথাও কোথাও অগ্রণী ভূমিকায়। কেন্দ্রের সামনে বিরোধীরা যেন আসতে না পারেন তা নিশ্চিত করা হয় শতভাগ। এরইমধ্যে চলে গায়েবি ভোট। প্রকাশ্যে ব্যালটে সিলমারা। ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরাই শুধু নয় এমনকি কোথাও কোথাও নির্বাচনী কর্মকর্তাদেরও দেখা গেছে ব্যালটে সিল মারতে। কোথাও কোথাও ভোটাররা ভোট দিতে গেলে বলা হয়, দেরি করে ফেলেছেন। অভ্যন্তরীণ লড়াইয়ে কয়েকটি কেন্দ্রে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। বলাবাহুল্য, এ সংঘর্ষ হয়েছে সরকারি দলের কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যেই। সার্বিক পরিস্থিতিতে দুপুরেই নির্বাচন পর্যবেক্ষক প্রফেসর নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, একশ’ ভাগ ভোট পড়লেও অবাক হবো না। তবে এতো কিছুর পরও সেনা সদস্যরা অবশ্য মোতায়েন ছিলেন সেনানিবাসেই। কোথাও তাদের ডাকার প্রয়োজন মনে করেনি নির্বাচন কমিশন। সারাদিনের ঘটনাপ্রবাহ দেখে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এ যেন জোর যার, ভোট তার। কেউ কেউ বলছেন, ডিজিটাল জমানায় এনালগ কারচুপি।
ভোটের শুরুতেই নানা কেন্দ্র থেকে খবর আসতে থাকে বিএনপির নেতৃত্বের কাছে। কেন্দ্রে কেন্দ্রে ঘুরে হতাশাজনক চিত্র দেখেন প্রার্থীরা। দ্রুতই এগুতে থাকেন নির্বাচন বর্জনের দিকে। প্রথম ঘোষণা আসে অবশ্য চট্টগ্রাম থেকে। বেলা ১২টার আগেই কারচুপির অভিযোগ এনে নির্বাচন থেকে সরে যান মনজুর আলম। একইসঙ্গে রাজনীতি থেকেও অবসরের ঘোষণা দেন তিনি। এর কিছুক্ষণ পর ঢাকার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন- উত্তরের মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়াল এবং দক্ষিণের প্রার্থী মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস। মওদুদ আহমদ বলেন, র‌্যাব-পুলিশ এবং সরকারি দলের লোকজন আমাদের সব এজেন্টকে বের করে দিয়েছে। এটা কোন নির্বাচন হয়নি। এটা একটি ভোটবিহীন প্রহসনের নির্বাচন। এ নির্বাচনকে আমরা প্রত্যাখ্যান করি। তবে শুধু বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীই নয়, আলোচিত বেশির ভাগ মেয়রপ্রার্থীই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। তাদের মধ্যে জাতীয় পার্টি, সিপিবি সমর্থিত প্রার্থীরা যেমন রয়েছেন, তেমনি রয়েছেন জোনায়েদ সাকী, গোলাম মাওলা রনির মতো প্রার্থীরা। নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে বলে দাবি করেছে নির্বাচন কমিশন ও আওয়ামী লীগ। যদিও দিনভর জালভোটের উৎসব আর বিএনপির বর্জনের পর এ নির্বাচনে কারা জয়ী হচ্ছেন তা নিয়ে অবশ্য কারো কোন আগ্রহ ছিল না। তিন ক্ষমতাসীন সমর্থিত প্রার্থীর নাম- ঢাকা উত্তরে আনিসুল হক, দক্ষিণে সাঈদ খোকন, চট্টগ্রামে আ.জ.ম নাছির উদ্দিন।
কলঙ্কজনক ভোট বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। তবে সবকিছু এত খোলামেলা হওয়ার ঘটনা সম্ভবত এবারই প্রথম। একদিনের বাদশারা তাদের রায় দিতে পারবেন কি-না তা নিয়ে আগেই শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল। আশঙ্কা ছিল, নজিরবিহীন ভোটের। ভোট নজিরবিহীনই হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, মঙ্গলবার কোন মঙ্গল বয়ে আনেনি। গায়েবি ভোটের উৎসবে ম্লান হয়েছে গণতন্ত্র। বেশির ভাগ মানুষই তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি। এ নিয়ে বেশি বলাও অবশ্য মুশকিল। কিছু কিছু পত্রিকা বলেছিল, এ নির্বাচন হবে গণতন্ত্রের অগ্নিপরীক্ষা। পরীক্ষা শেষে বলা যায়, বাংলাদেশে গণতন্ত্র আরও একবার পরাজিত হয়েছে।
নির্বাচন বর্জন করলেন যারা-
২০দলীয় জোট ছাড়াও ইসলামী আন্দোলন, স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম মাওলা রনি, জোনায়েদ সাকীও নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলও ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে। এছাড়া, জাতীয় পার্টির সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ করেন। ঢাকা ও চট্টগ্রামের ৩ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন সমর্থিত মেয়রপ্রার্থীরা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। ব্যাপক কারচুপি ও সরকারসমর্থিত প্রার্থীদের ভোটকেন্দ্র দখলের প্রতিবাদে এই ঘোষণা দিয়েছেন তারা। গতকাল দুপুরে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই বর্জনের ঘোষণা দেন মেয়রপ্রার্থীরা। এসময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মেয়রপ্রার্থী মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মেয়রপ্রার্থী আলহাজ আব্দুর রহমান, সংগঠনের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুছ আহমদ, রাজনৈতিক উপদেষ্টা অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, কেন্দ্রীয় নেতা ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, মাওলানা আহমদ আব্দুল কাইয়ুম, কেএম আতিকুর রহমান প্রমুখ। প্রার্থীরা বলেন, ভোটগ্রহণ শুরুর পর বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র থেকে পোলিং এজেন্ট বের করে দেয়া, জালভোট প্রদান ও ভোটকেন্দ্র দখল করে সরকারদলীয় প্রার্থীদের ভোট প্রদানসহ নানা অনিয়মের খবর পাওয়া গেছে। এহেন পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু ভোটগ্রহণের পরিবেশ বিনষ্ট হয়ে গেছে বলে আমরা মনে করছি। এ প্রহসনের নির্বাচনকে আমরা মেনে নিতে পারি না। তাই আমরা এ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিচ্ছি। চট্টগ্রাম থেকেও আমাদের মেয়র প্রার্থী ওয়ায়েজ হোসেন ভূঁইয়া নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমদ বলেন, নির্বাচন কমিশন সেনাবাহিনী না নামিয়ে সরকারসমর্থিত প্রার্থীদের ভোট ডাকাতির সুযোগ করে দিয়েছে। আমরা এ নির্বাচন বর্জন করছি এবং এ নির্বাচন বাতিল করার আহ্বান জানাচ্ছি।
এদিকে বিরোধী জোটের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা আসার পর ঢাকা উত্তরের মেয়রপ্রার্থী জোনায়েদ সাকীও নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। গতকাল দুপুরে নিজ নির্বাচনী কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন। সাকী বলেন, যেভাবে কেন্দ্র দখল করা হয়েছে, ব্যালট ছিনতাই করা হয়েছে তাতে এই ভোট ও ফল মেনে নেয়ার কোন সুযোগ নেই। এ কারণে আমি নির্বাচন ও ফল প্রত্যাখ্যান করছি। এছাড়া ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জন করলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী গোলাম মাওলা রনি। বিকাল তিনটার দিকে তিনি নির্বাচন বর্জনের এ ঘোষণা দেন। তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে এক স্ট্যাটাসে রনি লেখেন, ‘অন্যসব প্রতিযোগীর মতো আমিও এই নির্বাচন বর্জন করলাম। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন টিভিতে দেখছিলাম, আর ২৮শে এপ্রিলের নির্বাচন চর্ম চোক্ষে দেখলাম। এও কি সম্ভব! ইয়েস, ‘রংগে ভরা বঙ্গে সবই সম্ভব’। এর আগে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা ঢাকার দুই সিটি এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন বর্জন করেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির মেয়র প্রার্থী আবদুল্লাহ ক্বাফী এবং দক্ষিণে বজলুর রশীদ ফিরোজ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ভোটকেন্দ্র সরকারি দলের নেতাকর্মীরা দখল করে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ঢাকা দক্ষিণ জাতীয় পার্টি সমর্থিত মেয়রপ্রার্থী হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন। সকাল ৯টায় লালবাগের আমলীগোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট প্রদান শেষে তিনি এ অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন প্রশ্নবিদ্ধ। তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে পারেনি।



৯। ডিজিটাল জমানায় এনালগ কারচুপি
এ এক নয়া মডেলের নির্বাচন। উৎসব তো বটেই। দখলের উৎসব। একেবারেই খোলামেলা। কোন রাখডাক নেই। সকাল সকাল প্রায় প্রতিটি কেন্দ্র থেকেই হাওয়া বিএনপি সমর্থক এজেন্টরা। কেউ ঢুকতে পেরেছেন, কেউ পারেননি। তবে থাকতে পারেননি কেউই। হুমকি, মারধর, হামলা আর গ্রেপ্তারের শিকার হয়েছেন তারা। কাউকে কাউকে আটকে রাখা হয় আগেই। রক্তাক্ত এজেন্ট যেন একটি নির্বাচনেরই প্রতিচ্ছবি। আভাস পাওয়া গিয়েছিল আগের রাতেই। খবর আসছিলো, ব্যালট পেপারে সিল মারার। যদিও তার সংখ্যা ছিল কম। তবে গতকাল দিনের শুরুতেই সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যায়। প্রথম বাধার শিকার গণমাধ্যম। বেশির ভাগ কেন্দ্রেই ক্যামেরা নিতে মানা। দিনভর টার্গেট সাংবাদিকরা। কেন্দ্র বিরোধী এজেন্টমুক্ত করার পর বিরোধী ভোটারমুক্তও করা হয়। প্রতিটি কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন আওয়ামী লীগ-যুবলীগ-ছাত্রলীগের কর্মীরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছিল তাদের শতভাগ সহযোগী। কোথাও কোথাও অগ্রণী ভূমিকায়। কেন্দ্রের সামনে বিরোধীরা যেন আসতে না পারেন তা নিশ্চিত করা হয় শতভাগ। এরইমধ্যে চলে গায়েবি ভোট। প্রকাশ্যে ব্যালটে সিলমারা। ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরাই শুধু নয় এমনকি কোথাও কোথাও নির্বাচনী কর্মকর্তাদেরও দেখা গেছে ব্যালটে সিল মারতে। কোথাও কোথাও ভোটাররা ভোট দিতে গেলে বলা হয়, দেরি করে ফেলেছেন। অভ্যন্তরীণ লড়াইয়ে কয়েকটি কেন্দ্রে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। বলাবাহুল্য, এ সংঘর্ষ হয়েছে সরকারি দলের কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যেই। সার্বিক পরিস্থিতিতে দুপুরেই নির্বাচন পর্যবেক্ষক প্রফেসর নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, একশ’ ভাগ ভোট পড়লেও অবাক হবো না। তবে এতো কিছুর পরও সেনা সদস্যরা অবশ্য মোতায়েন ছিলেন সেনানিবাসেই। কোথাও তাদের ডাকার প্রয়োজন মনে করেনি নির্বাচন কমিশন। সারাদিনের ঘটনাপ্রবাহ দেখে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এ যেন জোর যার, ভোট তার। কেউ কেউ বলছেন, ডিজিটাল জমানায় এনালগ কারচুপি।
ভোটের শুরুতেই নানা কেন্দ্র থেকে খবর আসতে থাকে বিএনপির নেতৃত্বের কাছে। কেন্দ্রে কেন্দ্রে ঘুরে হতাশাজনক চিত্র দেখেন প্রার্থীরা। দ্রুতই এগুতে থাকেন নির্বাচন বর্জনের দিকে। প্রথম ঘোষণা আসে অবশ্য চট্টগ্রাম থেকে। বেলা ১২টার আগেই কারচুপির অভিযোগ এনে নির্বাচন থেকে সরে যান মনজুর আলম। একইসঙ্গে রাজনীতি থেকেও অবসরের ঘোষণা দেন তিনি। এর কিছুক্ষণ পর ঢাকার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন- উত্তরের মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়াল এবং দক্ষিণের প্রার্থী মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস। মওদুদ আহমদ বলেন, র‌্যাব-পুলিশ এবং সরকারি দলের লোকজন আমাদের সব এজেন্টকে বের করে দিয়েছে। এটা কোন নির্বাচন হয়নি। এটা একটি ভোটবিহীন প্রহসনের নির্বাচন। এ নির্বাচনকে আমরা প্রত্যাখ্যান করি। তবে শুধু বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীই নয়, আলোচিত বেশির ভাগ মেয়রপ্রার্থীই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। তাদের মধ্যে জাতীয় পার্টি, সিপিবি সমর্থিত প্রার্থীরা যেমন রয়েছেন, তেমনি রয়েছেন জোনায়েদ সাকী, গোলাম মাওলা রনির মতো প্রার্থীরা। নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে বলে দাবি করেছে নির্বাচন কমিশন ও আওয়ামী লীগ। যদিও দিনভর জালভোটের উৎসব আর বিএনপির বর্জনের পর এ নির্বাচনে কারা জয়ী হচ্ছেন তা নিয়ে অবশ্য কারো কোন আগ্রহ ছিল না। তিন ক্ষমতাসীন সমর্থিত প্রার্থীর নাম- ঢাকা উত্তরে আনিসুল হক, দক্ষিণে সাঈদ খোকন, চট্টগ্রামে আ.জ.ম নাছির উদ্দিন।
কলঙ্কজনক ভোট বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। তবে সবকিছু এত খোলামেলা হওয়ার ঘটনা সম্ভবত এবারই প্রথম। একদিনের বাদশারা তাদের রায় দিতে পারবেন কি-না তা নিয়ে আগেই শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল। আশঙ্কা ছিল, নজিরবিহীন ভোটের। ভোট নজিরবিহীনই হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, মঙ্গলবার কোন মঙ্গল বয়ে আনেনি। গায়েবি ভোটের উৎসবে ম্লান হয়েছে গণতন্ত্র। বেশির ভাগ মানুষই তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি। এ নিয়ে বেশি বলাও অবশ্য মুশকিল। কিছু কিছু পত্রিকা বলেছিল, এ নির্বাচন হবে গণতন্ত্রের অগ্নিপরীক্ষা। পরীক্ষা শেষে বলা যায়, বাংলাদেশে গণতন্ত্র আরও একবার পরাজিত হয়েছে।
নির্বাচন বর্জন করলেন যারা-
২০দলীয় জোট ছাড়াও ইসলামী আন্দোলন, স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম মাওলা রনি, জোনায়েদ সাকীও নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলও ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে। এছাড়া, জাতীয় পার্টির সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ করেন। ঢাকা ও চট্টগ্রামের ৩ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন সমর্থিত মেয়রপ্রার্থীরা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। ব্যাপক কারচুপি ও সরকারসমর্থিত প্রার্থীদের ভোটকেন্দ্র দখলের প্রতিবাদে এই ঘোষণা দিয়েছেন তারা। গতকাল দুপুরে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই বর্জনের ঘোষণা দেন মেয়রপ্রার্থীরা। এসময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মেয়রপ্রার্থী মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মেয়রপ্রার্থী আলহাজ আব্দুর রহমান, সংগঠনের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুছ আহমদ, রাজনৈতিক উপদেষ্টা অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, কেন্দ্রীয় নেতা ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, মাওলানা আহমদ আব্দুল কাইয়ুম, কেএম আতিকুর রহমান প্রমুখ। প্রার্থীরা বলেন, ভোটগ্রহণ শুরুর পর বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র থেকে পোলিং এজেন্ট বের করে দেয়া, জালভোট প্রদান ও ভোটকেন্দ্র দখল করে সরকারদলীয় প্রার্থীদের ভোট প্রদানসহ নানা অনিয়মের খবর পাওয়া গেছে। এহেন পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু ভোটগ্রহণের পরিবেশ বিনষ্ট হয়ে গেছে বলে আমরা মনে করছি। এ প্রহসনের নির্বাচনকে আমরা মেনে নিতে পারি না। তাই আমরা এ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিচ্ছি। চট্টগ্রাম থেকেও আমাদের মেয়র প্রার্থী ওয়ায়েজ হোসেন ভূঁইয়া নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমদ বলেন, নির্বাচন কমিশন সেনাবাহিনী না নামিয়ে সরকারসমর্থিত প্রার্থীদের ভোট ডাকাতির সুযোগ করে দিয়েছে। আমরা এ নির্বাচন বর্জন করছি এবং এ নির্বাচন বাতিল করার আহ্বান জানাচ্ছি।
এদিকে বিরোধী জোটের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা আসার পর ঢাকা উত্তরের মেয়রপ্রার্থী জোনায়েদ সাকীও নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। গতকাল দুপুরে নিজ নির্বাচনী কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন। সাকী বলেন, যেভাবে কেন্দ্র দখল করা হয়েছে, ব্যালট ছিনতাই করা হয়েছে তাতে এই ভোট ও ফল মেনে নেয়ার কোন সুযোগ নেই। এ কারণে আমি নির্বাচন ও ফল প্রত্যাখ্যান করছি। এছাড়া ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জন করলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী গোলাম মাওলা রনি। বিকাল তিনটার দিকে তিনি নির্বাচন বর্জনের এ ঘোষণা দেন। তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে এক স্ট্যাটাসে রনি লেখেন, ‘অন্যসব প্রতিযোগীর মতো আমিও এই নির্বাচন বর্জন করলাম। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন টিভিতে দেখছিলাম, আর ২৮শে এপ্রিলের নির্বাচন চর্ম চোক্ষে দেখলাম। এও কি সম্ভব! ইয়েস, ‘রংগে ভরা বঙ্গে সবই সম্ভব’। এর আগে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা ঢাকার দুই সিটি এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন বর্জন করেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির মেয়র প্রার্থী আবদুল্লাহ ক্বাফী এবং দক্ষিণে বজলুর রশীদ ফিরোজ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ভোটকেন্দ্র সরকারি দলের নেতাকর্মীরা দখল করে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ঢাকা দক্ষিণ জাতীয় পার্টি সমর্থিত মেয়রপ্রার্থী হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন। সকাল ৯টায় লালবাগের আমলীগোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট প্রদান শেষে তিনি এ অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন প্রশ্নবিদ্ধ। তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে পারেনি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.