![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিশ্চিতভাবেই ঐতিহাসিক। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মের পেছনে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ভূমিকা অনস্বীকার্য। আমাদের মুক্তিসংগ্রামে জীবন দান করেছেন বহু ভারতীয় সেনা। ইন্দিরা গান্ধী সারা দুনিয়া ঘুরে জনমত তৈরি করেছেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে। প্রথম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ১৯৭২ সালের ১৭ই মার্চ বাংলাদেশ সফরে আসেন তিনি। এরপর বহু ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করেছেন। তবে আজ ৬ই জুন, ২০১৫ রোজ শনিবার সকালে নরেন্দ্র দামাদোর দাস মোদি যখন ঢাকায় পা রাখবেন তখন তৈরি হবে এক নতুন ইতিহাস। এই প্রথম বিরোধিতা ছাড়াই ভারতীয় কোন প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে আসছেন। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পুরো বাংলাদেশ যেন তারই অপেক্ষায়। তিনি বাংলাদেশের জনগণকে কি দিয়ে যাবেন সে হিসাবের খাতা হয়তো ৩৬ ঘণ্টার সফর শেষে মেলানো হবে। কিন্তু তার আগে বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল একাট্টা হয়ে যেভাবে তাকে অভিবাদন জানাচ্ছে, তা একেবারেই বিরল। এমনকি জামায়াতও তার এ সফরকে স্বাগত জানিয়েছে।
সংগ্রামমুখর এক জীবন ইতিহাস নরেন্দ্র মোদির। এক চা বিক্রেতার ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার গল্প অবশ্য দীর্ঘ। তবে এক বছর আগে যতটা গ্ল্যামার নিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসেছিলেন তা এখন কিছুটা ম্লান। এ সময়ে ১৮টি দেশ সফর করে ফেলেছেন নরেন্দ্র মোদি। আশপাশের দেশগুলোও সফর করেন তিনি। বাদ থাকে বাংলাদেশ। বাংলাদেশীদের কি দেবেন এ প্রশ্নেই সময় নেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ঢাকা সফরের আগেই অবশ্য নানা চমক তৈরি করেন মোদি। নিজেই জানিয়েছেন, মুখিয়ে আছেন ঢাকায় আসার জন্য। এর আগে সীমান্ত চুক্তির বিল অনুমোদনে রাজনৈতিক ঐকমত্যে পৌঁছান সব দলের সঙ্গে। মোদি নিজে যাকে তুলনা করেছেন, বার্লিন প্রাচীর পতনের সঙ্গে। এ চুক্তি সম্পাদনের জন্য তিনি রাজি করান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। চুক্তির জন্য আসামে তার দল বিজেপির বিপদে পড়ার ঝুঁকিকেও মেনে নেন তিনি। বিজেপির মুখপাত্র এম জে আকবরের ভাষায়, ইট দিয়ে যে দেয়াল তৈরি হয়, তা পরিণত হয় পাথরে, কংক্রিটে। সেই দেয়ালের পতন হচ্ছে। নরেন্দ্র মোদির সফরকে সামনে রেখে গতকাল দুটি ব্রিফিং হয়েছে ঢাকা আর নয়া দিল্লিতে। ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনেপররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী তিস্তা চুক্তির জন্য ধৈর্য ধরার পরামর্শ দেন। তবে দৃশ্যত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের সুযোগ নেই বলে মত দেন তিনি। যদিও ভারতের পররাষ্ট্র সচিব জয়শঙ্কর নিশ্চিত করেছেন, খালেদার সঙ্গে মোদির বৈঠক হবে।
ঐতিহাসিক বন্ধুতার বিপরীতে ভারত বিরোধিতার রাজনীতিও বাংলাদেশে সবসময় সক্রিয় ছিল। এতে ভারতের ভূমিকাও অবশ্য কম নয়। বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি আর সীমান্ত হত্যা বন্ধুত্বের পরিচয় বহন করে না। বাংলাদেশে সব আম এক ঝুড়িতে রাখার কংগ্রেসের নীতিরও সমালোচনা ছিল। ২০০১ এর নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ওই নীতিতে পরিবর্তন আসে। পরে অবশ্য আবার পুরনো নীতিতেই ফিরে যায় ভারত। কংগ্রেসের বিগ ব্রাদারসুলভ আচরণের বিরুদ্ধে মুখর হয় বাংলাদেশের একটি অংশ। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের পূর্বে ভারতের সে সময়কার পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংয়ের বিতর্কিত ভূমিকা বাংলাদেশের একটি অংশে বিস্ময় তৈরি করে। সে সময় ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা ভারত সফরে যান। তিনি ভারতীয় নীতি-নির্ধারকদের বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা বুঝানোর চেষ্টা করেন। তার সফর অবশ্য ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। বারাক ওবামার নয়া দিল্লি সফরের সময় অবশ্য বাংলাদেশ প্রসঙ্গ আলোচনায় আসে। এটা ঠিক ভারতের মতো দেশে ব্যক্তির পরিবর্তন হলেও নীতির তেমন কোন পরিবর্তন হয় না। নরেন্দ্র মোদি সরকারের এক বছরের বাংলাদেশ নীতিতে এটা বহুলাংশেই পরিষ্কার। যদিও তিনি শ্রীলঙ্কায় গিয়ে গণতন্ত্রের কথা বলেছিলেন। সে সময় তিনি গণতন্ত্রের পক্ষে তার অবস্থান পরিষ্কার করেন।
প্রাথমিক রাউন্ডে নরেন্দ্র মোদি জয়ীই হয়েছেন। বহুধা বিভক্ত বাংলাদেশী সমাজ তাকে স্বাগত জানানোর প্রশ্নে একাট্টা হয়েছে। তিনি নিজেও বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন। বিভক্তির দেয়াল ভেঙ্গে দিয়েছেন। তার কাছে বাংলাদেশের জনগণের চাওয়ার লিস্ট লম্বা নয়। বিগ ব্রাদার নয়, বন্ধু চায় বাংলাদেশ।
৩৬ ঘণ্টার সফর, ২০ চুক্তি- সমঝোতা এবং বেশ কিছু উদ্বোধন হবে: ঢাকা ও দিল্লির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আজ সকাল সাড়ে ১০টায় একটি বিশেষ বিমানে চড়ে ঢাকার মাটিতে পা রাখবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাতে শাহজালাল বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকবেন। সেখানে প্রথম বাংলাদেশে আসা নরেন্দ্র মোদিকে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানো হবে। কূটনৈতিক সূত্র জানায়, এখানে ৩৬ ঘণ্টা অবস্থান করবেন তিনি। এই সময়ে আন্তঃযোগাযোগ, সীমান্ত নিরাপত্তা, বাণিজ্য সহযোগিতার মতো বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন। দুই দেশের সম্পর্ক আগামী দিনে আরও এগিয়ে নিতে তার সফরে অন্তত ২০টি বিষয়ে চুক্তি-সমঝোতা সই হওয়ার কথা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দুই প্রধানমন্ত্রী বেশ কিছু প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন বলেও জানানো হয়েছে। ঢাকা পৌঁছার পর নরেন্দ্র মোদি সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যাবেন মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। সেখান থেকে তিনি যাবেন বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে। আজ বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ বৈঠকে মিলিত হবেন তিনি। ওই বৈঠকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও থাকবেন। কাল প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক হবে তার। বিকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সমম্মেলন কেন্দ্রে বক্তৃতা দেবেন মোদি। এরপর সন্ধ্যায়ই তিনি ঢাকা ছাড়বেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত শীর্ষ বৈঠকের পর যেসব চুক্তি-সমঝোতা সইয়ের প্রস্তুত করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি, অভ্যন্তরীণ নৌ-পটোকল, উপকূলীয় নৌ-চলাচল চুক্তি, পণ্যের মান যাচাই-সক্রান্ত সহযোগিতা চুক্তি, সাংস্কৃতিক সহযোগিতা বিনিময় চুক্তি। উভয় দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে নিয়োজিত বাহিনীদের সহযোগিতা, মানব পাচার প্রতিরোধ, জালনোট পাচার প্রতিরোধ, ব্লু ইকোনমি ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্পর্কিত সমঝোতা স্মারক। এ ছাড়া বাংলাদেশ ভারত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেশ কিছু চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। যেসব প্রকল্প উদ্বোধন হবে তার মধ্যে রযেছে আগরতলা-কলকাতা বাস সার্ভিস, ঢাকা-শিলং-গোহাটি বাস সার্ভিস, খুলনা-মংলা রেলওয়ে লাইন, কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলসংযোগ পুনর্বহাল, শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে রবীন্দ্র ভবন, সারদা পুলিশ একাডেমিতে একটি মৈত্রি ভবন, ফেনী নদীর ওপর সেতু প্রকল্প, বিএসটিআইয়ের একটি পরীক্ষাগার ও একটি বর্ডার হাট উদ্বোধন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে দুই প্রধানমন্ত্রী যৌথভাবে এসব কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন বলে জানানো হয়েছে। এদিকে মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য ভারতের বর্ষীয়ান নেতা অটল বিহারি বাজপেয়ীকে সম্মাননা দেবে বাংলাদেশ। তার পক্ষে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সেটি গ্রহণ করেন। আগামীকাল বঙ্গভবনে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মোদির হাতে সেই সম্মাননা তুলে দেয়া হবে।
ড. রিজভীর আশাবাদ: এদিকে নরেন্দ্র মোদির সফর প্রাক্কালে ‘ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক’ নিয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী দারিদ্র্যবিমোচনে আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে কার্যকর সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারলে এ অঞ্চলের জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমিতি ‘ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক : আঞ্চলিক উন্নতি ও সৌহার্দ’ শীর্ষক সেমিনার আয়োজন করে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. গিয়াসউদ্দিন মোল্যার সভাপতিত্বে সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতিসংঘের সাবেক দূত ব্যারিস্টার হারুন-উর-রশীদ। মুখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান। ভারতের সঙ্গে অমীমাংসিত সমস্যাগুলো ধাপে ধাপে নিরসন করা হবে উল্লেখ করে গওহর রিজভী বলেন, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন বাংলাদেশ সফরকালে বেশ কিছু ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। দ্রুত তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যাপারেও বাংলাদেশ সরকারের চাপ অব্যাহত থাকবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ঢাকা সফর উভয় রাষ্ট্রের জন্য মঙ্গলজনক হবে: মোদি
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, তার ঢাকা সফর বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে। গতকাল ভারতের প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো (পিআইবি) মোদির ওই পোস্টটি উদ্ধৃত করেছে। এতে মোদি বলেছেন, আমি নিশ্চিত, আমার সফর আমাদের উভয় রাষ্ট্রের জনগণের জন্য মঙ্গলজনক হবে এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্যও তা অধিক কল্যাণকর হবে। ফেইসবুকের ওই পোস্টে মোদি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও প্রশংসা করেন। ঢাকা সফরে ২ দিনের কার্যসূচির একটি তালিকা দিয়েছেন মোদি। নরেন্দ্র মোদি লিখেছেন, ৬ই জুন আমি আমার ২ দিনের বাংলাদেশ সফর শুরু করছি। অত্যন্ত উৎসাহ ও আনন্দের সঙ্গে আমি একটি রাষ্ট্র সফর করবো, যার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক অত্যন্ত দৃঢ়। ওই পোস্টে তিনি আরও লিখেছেন, আমি কয়েকটি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবো, যার মধ্যে রয়েছে প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক, যিনি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক দৃঢ় করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। প্রতিনিধি পর্যায়ে বৈঠক ও চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হবে। এভাবে তিনি বাকি কর্মসূচিসমূহের কথাও উল্লেখ করেন তার পোস্টে।
৪৪ বছরে এই প্রথম
©somewhere in net ltd.