![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের মধ্য দিয়ে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কিছু শুদ্ধির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক টানাপড়েনে ভুগেছে। কেননা, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার কারণে কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তা থেকে লাভ ঘরে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে ভারত। শেখ হাসিনা ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক বিনির্মাণে বড় রাজনৈতিক ঝুঁকি নিয়েছেন। কিন্তু ভারতের দিক থেকে আমলাতান্ত্রিক নিষ্ক্রিয়তা ও রাজনৈতিক স্বদিচ্ছার অভাবে দ্বিপক্ষীয় ইস্যুতে ভাল অগ্রগতি অর্জনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। ভারতীয় বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের শুল্ক ও অশুল্ক বাধা অপসারণে ভারতের ত্বরিত পদক্ষেপ চেয়ে আসছে বাংলাদেশ। তবে স্থলসীমান্ত চুক্তি ও তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। হাসিনা যেমনটি প্রস্তাব করেছেন, ভারত সেভাবে প্রতিদান দিতে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যদিকে বিরোধী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) হাসিনার অধীনে ভারত-বাংলাদেশ হৃদ্যতাকে ব্যবহার করে ভারতের প্রতি তার সরকারের বশ্যতা নিয়ে সমালোচনা করছে। ২০০১-০৬-এর বিএনপি সরকারের আমলে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছিল। ২০১০ সালে হাসিনা সরকারের সঙ্গে ১০০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি স্বাক্ষর করেন তৎকালীন ভারতীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি। সে ঋণের অর্থ বাংলাদেশে রেলওয়ে ও যোগাযোগ অবকাঠামো নির্মাণে ব্যবহৃত হওয়ার কথা ছিল। ২০ বছর মেয়াদি ওই ঋণের বার্ষিক সুদের হার ছিল ১.৭৫ শতাংশ। এরপর দুই দেশ ৩৫ বছর মেয়াদি বিদ্যুৎ সঞ্চালন চুক্তি স্বাক্ষর করে। ওই চুক্তির অধীনে বাংলাদেশে প্রতি বছর সর্বোচ্চ ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রপ্তানি করার কথা ছিল ভারতের। দুটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ভারতের ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার করপোরেশনের সঙ্গে ১৭০ কোটি ডলারের চুক্তিও স্বাক্ষর করে ঢাকা। এতসবের পরও ঢাকার দুটি চাহিদা পূরণে ভারত ব্যর্থ হয়। পরে অবশ্য তার একটি চুক্তি পার্লামেন্টের মাধ্যমে অনুমোদন করায় ভারত। পার্লামেন্টে স্থলসীমান্ত চুক্তি (এলবিএ) সফলভাবে অনুমোদনের পর মোদি ঢাকা সফর করছেন। ওই চুক্তির ফলে দুই দেশ নিজেদের মধ্যে থাকা ছিটমহল বিনিময় করবে। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরে সফরসঙ্গী হননি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে এবার মোদির সফরে তিনি সফরসঙ্গী হয়েছেন। এর ফলে তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে অগ্রগতির প্রত্যাশা করছে ঢাকা ও দিল্লি। কারণ পশ্চিমবঙ্গের আপত্তির কারণেই তিস্তার বিষয়টি ঝুলে রয়েছে। তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়নের এমন ধীরগতি নিয়ে বাংলাদেশ স্বাভাবিক কারণেই অসন্তুষ্ট। হাসিনা ভারতের সঙ্গ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক একটি পর্যায়ে আনতে বড় রাজনৈতিক ঝুঁকি নিয়েছেন। অথচ ঝুলে থাকা ইস্যুগুলো সমাধানে ভারতের পক্ষ থেকে বড় ধরনের প্রচেষ্টা নেয়া হয়নি। নয়া দিল্লির জন্য সুযোগের দরজা আজীবন অবারিত থাকবে না। বাংলাদেশে ভারতবিরোধী মনোভাব দূর করা সম্ভব। তবে এর জন্য বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার সুযোগ দিতে হবে ভারতের। অথচ ভারত আফগানিস্তান-পাকিস্তান নিয়েই ব্যস্ত রয়েছে। বাংলাদেশের দিকে যথাযথ মনোযোগ দেয়নি।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর বৈদেশিক নীতি ঘুরপাক খায় ভারতকে নিয়ে। ভারতের আকার ও ভৌগোলিক সংযোগ বিবেচনায় এতে অবাক হওয়ারও কিছু নেই। নিজেদের ভারতবিরোধী হিসেবে তুলে ধরার প্রবণতা রয়েছে আওয়ামী লীগ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগকে ভারতের ‘পুতুল’ হিসেবেও প্রচার করা হয়। এর বাইরেও, ভারতকে আক্রমণ করে নিজেদের ‘ইসলামিক পরিচয়’ রক্ষা করে চলে উগ্র ইসলামী গোষ্ঠীসমূহ।
২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনা ডানপন্থি দলগুলোর পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামী ও জামা’আতুল মুজাহিদীনের মতো মৌলবাদী সংগঠনগুলোর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আসছেন। নয়া দিল্লির সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে যে কোন প্রচেষ্টাকে দমাতে ঐক্যবদ্ধ ওইসব দল। আরেকটি ছোটখাটো বিষয় হচ্ছে ভারতের নাকের ডগায় চীনের উত্থান। শেখ হাসিনা এমনকি চীনকে বাংলাদেশের সবচেয়ে ‘বিশ্বস্ত ও অটল বন্ধু’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। প্রায় ৩ দশক আগে এ দুই দেশ নিজেদের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হচ্ছে ভারতের আধিপত্য দূরে রাখার অন্যতম শক্তিশালী উপায়। বিশেষ করে যখন ভারত জটিল দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি তৈরি করতে পারছে না। ২০১৪ সালে হাসিনা চীন সফর করেন। ২০১৪ সালে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর সেটি ছিল তার দ্বিতীয় বড় বিদেশ সফর। সেখানে তিনি চীনের সঙ্গে ৫টি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এর মধ্যে একটি ছিল চীনা সহযোগিতায় পটুয়াখালীতে ১৩২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ। আরেকটি ছিল সুপার হাইব্রিড ধানের প্রযুক্তি ভাগাভাগির একটি চুক্তি। এ ধরনের চুক্তি সাধারণত চীন করে না। চীন ঢাকার সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার ও সমরাস্ত্রের সবচেয়ে বড় জোগানদারও।
ভারত নিজের সীমান্তের চারপাশে অস্থিরতা প্রত্যক্ষ করছে। তাই একটি স্থিতিশীল ও মধ্যপন্থি বাংলাদেশ হবে ভারতের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থের পক্ষে। গঠনমূলক বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক দক্ষিণ এশিয়ায় সামগ্রিকভাবে বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াতে পারে। এ কারণেই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে বাধা সৃষ্টিকারী পারস্পরিক ‘আস্থার ঘাটতি’ কমানো প্রয়োজন। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে উদার ও গঠনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে ভারত শক্তিশালী দেশ হিসেবে এ প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দিতে পারে। মোদির সফরে এ বার্তাই দেয়া উচিত।
(লেখক হার্শ ভি প্যান্ট লন্ডনের কিংস কলেজের শিক্ষক
ভারতের ডিএনএ পত্রিকায় প্রকাশিত লেখার অনুবাদ)
বাংলাদেশ হবে ভারতের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থের পক্ষে
©somewhere in net ltd.