![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সরকারি দলের নেতারা বহু দিন পর প্রকৃতির একটি আইনের কথা মনে করে শিউরে উঠেছিলেন। বেগম জিয়া যখন ইংল্যান্ড গেলেন এবং চিকিৎসার জন্য দেশে ফিরতে বিলম্ব শুরু করলেন, তখন বিএনপিবিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলো উল্লাসে ফেটে পড়তে আরম্ভ করল। এরা প্রায় নিশ্চিত হয়েই বলাবলি শুরু করল, খালেদা জিয়া আর এ যাত্রা দেশে ফিরবেন না এবং সম্ভবত কোনো দিনই ফিরবেন না। একশ্রেণীর অতি উৎসাহী লোক এবং সরকারের তাঁবেদারেরা মনে করল, এটাই উত্তম সময়। বিএনপি ভেঙে চুরমার করে ফেলতে হবে। এরা জিয়া পরিবারের ভেতর থেকে তাদের পছন্দসই লোক বের করে ফেলল এবং বিএনপির কিছু শীর্ষ নেতার সাথে দেনদরবার করল। প্রথম দিকে এরা এদের সফলতার বিষয়ে শতভাগ নিশ্চিত ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সব পরিকল্পনা মাঠে মারা যাওয়ার পর এরা প্রকৃতির একটি আইনের ভয়াবহ পরিণতি কল্পনা করে শিউরে উঠল।
সরকারি দলের লোকজন খুব ভালো করেই জানে, তাদের প্রধান প্রতিপক্ষের রাজনৈতিক ভিত্তি। অর্থনৈতিক শক্তি এবং কূটনৈতিক দুনিয়ার শক্তিশালী মিত্রদের হালনাগাদ অবস্থা। এরা এ কথাও জানে যে, গত সাত বছরে বিএনপি এবং তাদের মিত্র দলগুলোর নেতাকর্মীদের ওপর যে চাপ, তাপ ও বল প্রয়োগ করা হয়েছে, তার অর্ধেকও যদি আওয়ামী লীগের ওপর প্রয়োগ করা হতো তবে কতজনকে খুঁজে পাওয়া যেত, তা বেশ গবেষণার বিষয়। ১৯৭৫ সালের নির্মম ঘটনার পর আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা তাদেরকে যতটা না ভয় দেখিয়েছে, তার চেয়ে কয়েক শ’ গুণ বেশি ভয় এরা নিজেরা পেয়েছিল। খোন্দকার মোশতাকের কাছে যায়নি, এমন শীর্ষ আওয়ামী লীগ নেতার যেমন অভাব রয়েছে, তেমনি পরবর্তীকালে জিয়া, এরশাদ ও মইন উদ্দিন-ফখরুদ্দীনের আমলে রাজ-আনুকূল্য পাওয়ার চেষ্টাকারী রাজনৈতিক নেতার সংখ্যা, পরিমাণ ও আয়তন যে কত বড় ছিল, তা অন্য কেউ না জানলেও শেখ হাসিনা খুব ভালো করেই জানেন।
এক-এগারোর সময় নির্বাচন কমিশন, দুদক, থানা, পুলিশ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, সেনাসদস্যরা, এনএসআই এবং বিএনপির সংস্কারবাদীরা যে তৎপরতা চালিয়েছিল তাতে বিএনপির উচিত ছিল সাথে সাথে মরে যাওয়া। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি, বরং দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা পরম ধৈর্য, সাহস ও বুদ্ধি দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছিল। ঠিক সেই সময়ে আওয়ামী শিবির ছিল যারপরনাই উল্লসিত। এরা এদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর জুলুম ও নির্যাতনকারীদের গোপনে ও প্রকাশ্যে শক্তি, সমর্থন ও সাহস জোগাতে লাগল। কিন্তু অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই পরিস্থিতি খুব দ্রুত অন্য দিকে মোড় নিলো। এক-এগারোর কুশীলবরা ইতোমধ্যেই ক্ষমতার স্বাদ পেয়ে গিয়েছিল। এরা সিদ্ধান্ত নিলো যেকোনো উপায়ে এদের ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার জন্য। আর এ লক্ষ্যে এরা বিএনপির মতো আওয়ামী লীগের দিকে নির্যাতনের হাত বাড়িয়ে দিলো। প্রণীত হলো মাইনাস টু ফর্মুলা।
প্রথম দিকে আওয়ামী লীগ আন্দাজই করতে পারল না, দমন-পীড়নের সুনামিটি তাদের দিকে এগিয়ে আসছে। এখন যারা সরকারের পক্ষে বড় বড় কথা বলছেন এবং মন্ত্রিপরিষদসহ সরকার ও প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করে আছেন, তাদের বেশির ভাগই এক-এগারোর সময়ে দলের তৃতীয় বা চতুর্থ ধাপের নেতাকর্মী ছিলেন। ফলে ওই সময় এরা কী করেছেন, কেমন করেছেন অথবা কোথায় ছিলেন- কেমন ছিলেন তা আমি জানতে পারিনি। অন্য দিকে দেশবাসীও এসব অনুল্লেখ্য তৃতীয় কিংবা চতুর্থ সারির নেতাদের সম্পর্কে জানত না এবং জানার জন্য উৎসাহী ছিল না। তবে দলটির প্রথম ও দ্বিতীয় সারির নেতাদের কর্মকাণ্ড দেখে দেশবাসী যারপরনাই বিব্রত, লজ্জিত ও বিস্মিত হয়েছিল। বড় নেতারা সরাসরি দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেন এবং এক-এগারোর কুশীলবদের পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়ে আওয়ামী লীগের অফিসগুলো দখল করে বসলেন। ওই সময়ে শেখ হাসিনার নাম নেয়ার মতো দু-একজন নেতা থাকলেও এরা সংস্কারবাদীদের ভয়ে নড়াচড়া পর্যন্ত করতে পারেননি।
এ ঘটনার কিছু দিন পর আওয়ামী সংস্কারবাদীদের একটি প্রতিপক্ষ অন্য গ্রুপটির ওপর এক-এগারোর কুশীলবদের নানা অজুহাতে লেলিয়ে দিলো। শুরু হলো ধরপাকড়। অনেকে আওয়ামী লীগ ছেড়ে পিডিবিতে যোগদান করলেন। অনেকে তাড়াহুড়ো করে পালাতে গিয়ে জায়গা-বেজায়গা থেকে গ্রেফতার হলেন। যারা পালাতে পারলেন না, তারা ভয়ে জড়সড় হয়ে অনেকটা অপ্রকৃতিস্থ হয়ে পড়লেন। তারা লোক দেখলেই হাউমাউ করে কান্নাকাটি আরম্ভ করতেন। অনেকে তো টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে রীতিমতো শিশুতোষ কান্নার প্রতিযোগিতা শুরু করে দিলেন। অন্য দিকে যারা গ্রেফতার হলেন, তারা অকপটে দলীয় প্রধানের বিরুদ্ধে যাচ্ছেতাই বক্তব্য দিতে লাগলেন। দলীয় প্রধানের অর্থনৈতিক দুর্নীতি, ব্যক্তিগত জীবনাচার এবং রাজনৈতিক জীবন নিয়ে এমন সব ঘৃণিত বক্তব্য দেয়া শুরু করলেন যে, দেশবাসী তাজ্জব বনে গেলেন। ইউটিউবে ওইসব নেতার স্বীকারোক্তির ভাবভঙ্গি, ভয়ার্ত আচরণ এবং বুদ্ধিশুদ্ধির মান দেখলে না হেসে উপায় থাকে না।
আওয়ামী সংস্কারবাদীদের তুলনায় বিএনপির সংস্কারবাদীরা ছিলেন যথেষ্ট পরিপক্ব ও সঙ্ঘবদ্ধ। এক-এগারোর কুশীলবদের নিবুর্দ্ধিতা এবং রাজনৈতিক অপরিপক্বতার কারণে তারা ঠিকমতো কাজ করতে পারেননি। অন্য দিকে কুশীলবদের মধ্যেও শুরু হয় অন্তর্দ্বন্দ্ব। ফলে তাদেরকে সাহায্যকারী আওয়ামী বিএনপির সংস্কারবাদী, পিডিবি এবং অন্যান্য দল পড়ে মহাবিপদে। কিন্তু সেই সময়ে প্রয়াত জিল্লুর রহমানের বাসায় হাসিনাপন্থী নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। অন্য দিকে বিএনপি বলতে গেলে নেতৃত্বশূন্য অবস্থায় চলতে থাকে। এর পরের ঘটনা কম-বেশি সবারই জানা। আমরা ওই প্রসঙ্গে না গিয়ে মূল আলোচনায় ফিরে আসি।
খালেদা জিয়াকে চিনতে হলে তার আচার-আচরণ, কথাবার্তা এবং অতীতের সিদ্ধান্তগুলো বিবেচনা করতে হবে। আমি নিজে তাকে রাজপথে দেখেছি ১৯৮৭ সালে। পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য আরো অনেক সাংবাদিকের সাথে আমিও সেদিন দৈনিক বাংলার মোড়ে ছিলাম। এরশাদের পুলিশ সে দিন বেধড়ক লাঠিপেটা শুরু করলে মুহূর্তের মধ্যে বিএনপির জনসভাটি পণ্ড হয়ে যায়। রাজনৈতিকভাবে বিএনপি তখন বলতে গেলে এতিম। আওয়ামী লীগ ও জামায়াত তখন প্রকাশ্যে পরস্পরের হাত ধরে রাজনৈতিক মিত্রতা শুরু করেছিল এবং উভয় দল সরকারি আনুকূল্যে সংসদে ছিল। আজকের সংসদে জাতীয় পার্টির যে অবস্থা, ঠিক তেমনই অবস্থা ছিল আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের ১৯৮৭ সালে। মাঠে কেবল বিএনপি একা ঢাল নেই, তলোয়ার নেই- নিধিরাম সরদার। বিএনপির বেশির ভাগ শীর্ষ নেতা তখন সরকারের রাহুগ্রাসে আবদ্ধ নতুবা প্রলুব্ধ। সেই অবস্থায় রাজপথের ছোট্ট একটি পথসভায় লাঠিচার্জ করে কয়েক মিনিটের মধ্যেই পুরো মাঠ ফাঁকা করে দিলো পুলিশ। সেই লাঠিচার্জে বেগম জিয়া নিজেও আঘাত পেলেন- পুলিশের লাঠির বাড়িতে তার ব্লাউজের একটি হাতা ফেটে গেল। তবুও তিনি এক চুল নড়লেন না কিংবা অগ্নিকন্যার মতো মাটিতে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ে কোনো সিনেমাটিক দৃশ্যের অবতারণা করলেন না। ফলে অগ্নিকন্যার বিরুদ্ধে পুলিশকে কামড় দেয়ার যে বিশ্রী অভিযোগ তোলা হয়েছিল, সেরূপ কোনো অভিযোগ পুলিশ করার সুযোগ পেল না।
এক-এগারোর সময় বেগম জিয়ার ওপর রীতিমতো বিভীষিকা নেমে এসেছিল। তিনি তখন বন্দী। তার পুরো পরিবার বন্দী। ছেলে দুটোকে নির্মমভাবে প্রহার করা হচ্ছিল। এরই মধ্যে তার মা মারা গেলেন। এর পরও তিনি দমেননি ন্যায় হোক, অন্যায় হোক, তিনি তার সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নামক খেল-তামাশার প্রেক্ষাপটের আগে দেশী-বিদেশী হাজারো চক্র তাকে নানাভাবে বিভ্রান্ত কিংবা প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে। বিপরীতে তিনি অটল ছিলেন। গত দুই বছরে তার ওপর যে লু হাওয়া প্রবাহিত হয়ে আসছে, তা অন্য কোনো মানুষের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলে দেখা যেত লোকটি পাগল হয়ে গেছে নতুবা হার্ট অ্যাটাক করেছে। নিজের সারা জীবনের স্মৃতিবিজড়িত আবাস থেকে কাউকে প্রকাশ্য দিবালোকে জোর করে বের করে দেয়া হলে এবং সেই বাড়ির বাথরুম, রান্নাঘর নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র বানিয়ে টেলিভিশনে প্রচার করা হলে মানুষটির মনের অবস্থা নিয়ে অবোধ জন্তু-জানোয়ারও ঠাট্টা-মশকারা করবে না। কিন্তু বেগম জিয়া-বিরোধীরা সেই কর্ম করার পরও তিনি ছিলেন নিশ্চুপ। প্রতিক্রিয়াহীন ও অবিচল। কাজেই ২০১৫ সালে এসে তিনি হঠাৎ করে বিদেশ চলে যাবেন এবং আর ফিরবেন না, এমনতর চিন্তা আমাদের গ্রামের ফইটক্যার মা কিংবা টিডিক্যার নানীও করেননি।
বেগম জিয়া দুই মাস দশ দিন ইংল্যান্ড ছিলেন। দু-একটি অনুষ্ঠানে প্রথাগত রাজনৈতিক বক্তব্য দেয়া ছাড়া তিনি টুঁ-শব্দটি করেননি। তিনি নীরবে বিদেশে গিয়েছিলেন এবং একই কায়দায় দেশে ফিরে এসেছেন। তিনি যখন বাইরে ছিলেন, তখন বিরোধী শিবিরে জল্পনা-কল্পনার শেষ ছিল না। আবার দেশে ফেরার পর শুরু হয়েছে নতুন প্রেক্ষাপট। তিনি কী করবেন, কী বলবেন ইত্যাদি হাজারো প্রশ্ন নিয়ে সরকারি দলের নেতারা ঘর্মাক্ত সময় পার করছেন। সরকার তার রাষ্ট্রক্ষমতা ব্যবহার করে সন্দেহভাজন সবাইকেই নির্বিচারে আটক শুরু করেছে। তাদের সন্দেহের অধিক্ষেত্র দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে এবং স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে যে, একধরনের অজানা এবং নামগন্ধ-বর্ণহীন ভয়-আতঙ্ক তাদেরকে পেয়ে বসেছে। তারা প্রচণ্ড অস্থিরতা নিয়ে সময় পার করছে এবং প্রায় সবাই সীমাহীন নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে থেকেও প্রচণ্ড নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। সরকারি দলের দশম গ্রেডের নেতা এবং কর্মীরা পর্যন্ত পুলিশি নিরাপত্তা নিয়ে চলাফেরা করছে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেগম জিয়ার চুপ করে থাকা ছাড়া উপায় নেই। সরকার তার সর্বশক্তি প্রয়োগ করে পুরো রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে সরকারবিরোধীদের সরিয়ে দিয়েছে। সরকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে উচ্চবাচ্য করার মতো কোনো রাজনৈতিক শক্তি আপাতত দেশে নেই। কোনো পণ্ডিত, ধর্মীয় নেতা, সিভিল সমাজ কিংবা ট্রেড ইউনিয়ন সরকারের কোনো সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করবে, এমন সাধ কিংবা সাধ্য কারোই নেই। ফলে চার দিকে নেমে এসেছে ভয়ানক নীরবতা। বিরাজ করছে সীমাহীন শূন্যতা। সেই শূন্যতার ষোলকলা পূর্ণ হয়েছিল যখন বেগম জিয়া দেশের বাইরে ছিলেন। সরকার যে একটু দম নিয়ে কাউকে গালাগালি করবে, এমন একটি লোকও নেই কেবল বেগম জিয়া ছাড়া। তাই সরকারি দলের গলাবাজরা বেগম জিয়ার লন্ডন অবস্থানের সময়ে হতোদ্যম হয়ে পড়েছিলেন। অন্য দিকে যারা একটু চিন্তাভাবনা করার ক্ষমতা রাখেন, তারা দেখলেন বেগম জিয়ার অনুপস্থিতিতে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে শূন্যতা নেমে এসেছে। শূন্যতার মধ্যে কোনো দিন শব্দ সৃষ্টি করা যায় না। কেউ কারো কথা শুনতে পারে না। অন্য দিকে প্রকৃতি বড় নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে শূন্যস্থান পূর্ণ করে ফেলে।
আমরা কথায় কথায় বলি, রাজনীতির বাতাস ভালো না কিংবা বাতাস উল্টো দিকে প্রবাহিত হচ্ছে অথবা রাজনীতিতে গরম বাতাস বইছে ইত্যাদি। বাতাস হলো জগৎ-মহাজগৎগুলোর প্রাণশক্তি। যেখানে বাতাস নেই সেখানে কিচ্ছু নেই। যেখানের বাতাস গরম হয়ে যায় সেখানে শুরু হয় ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো, সাইক্লোন ইত্যাদি। বাতাস ঠাণ্ডা হয়ে গেলে সে স্থানে তুষারপাত হয়। নদীনালা-পাহাড়-সমুদ্র সব কিছুই বরফ হয়। অচল হয়ে যায় জনজীবন। ঠাণ্ডা বাতাস কিংবা গরম বাতাসের প্রবাহ দীর্ঘস্থায়ী হলে বিলীন হয়ে যায় ওই অঞ্চলের সব কিছু। আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনের বাতাসের অবস্থা খুবই খারাপ। কোনো কোনো স্থানে গরম, আবার কোনো কোনো স্থানে ঠাণ্ডা। কিছু কিছু স্থান একেবারেই বায়ুশূন্য হয়ে পড়ছে। ফলে পুরো দেশ আজ শূন্যতা বিষয়ক প্রকৃতির আইনের কবলে পড়ে গেছে। সেখানে বেগম জিয়ার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন পরিস্থিতির কোনো গুণগত পরিবর্তন আনতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না।
সরকার বুঝে গেছে, তারা আসলে কী অবস্থায় আছে। সুনসান নীরবতা ও শূন্যতা দূর করার জন্য তারা আগামী কয়েক মাসে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন দিয়ে পরিস্থিতি সামলে দেয়ার চেষ্টা করছে। বিএনপি যাতে দলগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়, এ জন্য দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচনের বিধানসংবলিত আইন পাস করেছে। উদ্দেশ্য একটাই, বিএনপিকে মাঠে নামিয়ে শূন্যতা দূর করা। সরকার সর্বতোভাবে চেষ্টা করছে বিএনপিকে তাদের টোপ গেলানোর জন্য। অন্য দিকে বিএনপির নীতিনির্ধারণী মহল তাদের দলীয় নেতাকর্মীদের লোভী অংশটির জিহ্বার মাপ ও ওজন নির্ধারণের চেষ্টা করে যাচ্ছে। একই সাথে গত সাত বছরে স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেয়ার লাভ-ক্ষতি এবং সরকারের ফাঁদে পড়ে বেইজ্জতি হওয়ার খতিয়ানের হিসাব মেলাচ্ছে। বেগম জিয়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে এযাবৎকালের একমাত্র নেত্রী, যিনি সব সময় সর্বোচ্চসংখ্যক সংসদীয় আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন এবং কোথাও পরাজিত হননি। তার সম্মান, ব্যক্তিত্ব ও জনপ্রিয়তা এমন এক উচ্চতায় ছিল, যেখান থেকে তিনি কোনো দিন ভোট দেয়ার জন্য রাস্তায় নামেননি। মানুষের দুয়ারে দুয়ারে যাননি, বরং মানুষই তাকে ভালোবেসে তাদের পবিত্র আমানত বেগম জিয়াকে দিয়ে আসছিলেন বরাবর।
দেশবাসীর একটি অংশ বেগম জিয়াকে সম্মান ও মর্যাদার আসনে বসালেও তার দলের কিছু লোক তাকে বারবার বেইজ্জতি করে বর্তমান অবস্থায় নিয়ে এসেছেন। সরকারের ফাঁদে পা দিয়ে বিগত সিটি নির্বাচনে তারা বেগম জিয়াকে প্রথমবারের মতো পথে, মাঠে নামিয়ে এনেছিলেন। সেই নির্বাচনে বেইজ্জতি হওয়ার কথা যদি তাদের মনে রেখাপাত না করে থাকে, তবে আগামীর পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তারা হয়তো তাদের জাতীয় নেত্রীকে তৃণমূল নেত্রী বানানোর কসরত করবেন। কারণ, এ মুহূর্তে সরকারের দরকার হয়ে পড়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনের শূন্যতা কিছুটা হলেও দূর করা। কাজেই সরকারি মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ এবং সরকারি তন্ত্রে মুগ্ধ বিএনপির একশ্রেণীর নেতাদের প্রধান মিশন হলো- যেকোনো মূল্যে এ কথা প্রতিষ্ঠিত করা যে, বিগত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ না নেয়া ছিল বিএনপির জন্য সম্ভবত ভুল। কাজেই সেই ভুলের সংশোধন করার জন্য আগামীতে অবশ্যই দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন করতে হবে। এই লক্ষ্য বাস্তবায়ন করার জন্য বেগম জিয়ার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন খুবই জরুরি ছিল। এখন দেশবাসীকে ধৈর্য নিয়ে অপেক্ষা করতে হবে শূন্য মাঠে প্রকৃতি এবং মানুষের ক্রিয়াকলাপের শেষ পরিণতি দেখার জন্য।
গোলাম মাওলা রনি ২৬ নভেম্বর ২০১৫,বৃহস্পতিবার, ১৮:২৫
©somewhere in net ltd.