নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অদ্ভুত ছেলেটি

মেহেদী আনোয়ার

জানিনা

মেহেদী আনোয়ার › বিস্তারিত পোস্টঃ

পরশ্রীকাতরতা ( বাঙ্গালীর এক অনন্যসাধারন বৈশিষ্ট্য)

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:১১

অনেকেই বলে থাকেন বাঙ্গালীর দুর্দশার জন্য বাঙ্গালী নিজেই দায়ী। কিন্তু এর মুলে কি বা বাঙ্গালীর কোন বৈশিষ্ট্য দায়ী তা বলেন না বা বুঝতে চাননা। বাঙ্গালীর মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘর্ষ, বিভাজনের বীজ খুবই সুকৌশলে বপন করে গেছে ব্রিটিশ শাসকরাই। আর তাতে তাদের প্রধান অস্ত্র ছিল “ পরশ্রীকাতরতা” । এক ইউনিক গুন ( !!) যা উপমহাদেশ এবং বিশেষ করে বাঙ্গালীর মধ্যে বিদ্যমান। পৃথিবীর আর কোন জাতীর মধ্যে এটা তেমন একটা দেখা যায়না। বঙ্গবন্ধু এজন্যই বলেছিলেন “পরশ্রীকাতরতা এবং বিশ্বাসঘাতকতা আমাদের রক্তের মধ্যে রয়েছে। বোধহয় দুনিয়ার কোন ভাষায় এই কথাটা পাওয়া যাবে না, পরশ্রীকাতরতা। পরের শ্রী দেখে যে কাতর হয়, তাকে পরশ্রীকাতর বলে। ঈর্ষা, দ্বেষ সকল ভাষায়ই পাবেন, সকল জাতির মধ্যেই কিছু কিছু আছে, কিন্তু বাঙালিদের মধ্যে আছে পরশ্রীকাতরতা। ভাই, ভাইয়ের উন্নতি দেখলে খুসি হয় না। এই জন্যই বাঙালি জাতির সকল রকম গুণ থাকা সত্ত্বেও জীবনভর অন্যের অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে।“ আসলেই তাই। এই পরশ্রীকাতরতা গুনটি ব্যবহার করেই ইংরেজরা মীর জাফর কে নবাবের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে প্ররোচিত করেছিল। বিদ্যাসাগর তার সতীদাহ প্রথা বিলুপ্তির আন্দোলনে অন্যতম বাধা হিসেবে উল্লেখ করেছেন বাঙ্গালীর এই গুনটি। তিনি বলেছেন যাদিও এই আন্দোলন নারীদের সুফলের জন্য তবুও সতীদাহ প্রথা বিলুপ্তির বিপক্ষে যেসব মহিলারা সরব ছিল তাদের বেশীরভাগই ছিল এমন যাদের মেয়ে বা আত্মীয়দের মধ্যে কোন মেয়ের এই প্রথায় জীবননাশ হয়েছিল। অর্থাৎ সেই পরশ্রীকাতরতা, অপরের ভাল সহ্য করতে না পারা। তিনি একটা কথা বলে গেছেন বাঙ্গালী নারীর প্রধান শত্রু আরেক বাঙ্গালী নারী, আর এর পেছনে একটাই কারণ পরশ্রীকাতরতা। “ নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ “ প্রবাদগুলো শুধু বাংলা ভাষাতেই পাওয়া যায়। এই গুনটি ব্যবহার করেই তারা ভারত পাকিস্থান নামক ২ টা দেশে বিভক্ত করে গিয়েছিল। তারা জানতো এই গুনটির কারনে এরা একে অপরের সাথে দন্দবে মেতে থাকবে এবং তারা এটাই চেয়েছিল। তারা চায়নি অবিভক্ত উপমহাদেশ কারণ তারা জানত যদি সবাই একসাথে থাকে তাহলে এই উপমহাদেশই হবে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্র, নিয়ন্ত্রক রাষ্ট্র যেমনটা আজ আমেরিকা। মাহাত্মা গান্ধীও ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছিলেন। তাই তিনি প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন অবিভক্ত উপমহাদেশ গঠনের। কিন্তু করতে পারেননি। কারণ তিনি যে বড় দেরি করেই রাজনৈতিক দৃশ্যপটে এসেছিলেন। এই বিভাজনের বীজ যে তারও আগে বপন করা শুরু করেছিল ব্রিটিশরা। তারা এই পরশ্রীকাতর গুনটির ফুয়েল বা জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করেছিল ধর্ম কে। কারণ উপমহাদেশের ২ টি প্রধান ধর্ম হিন্দু এবং ইসলাম। আর তারা বিভেদ সৃষ্টি করার জন্য হিন্দুদের বেশী সুযোগ সুবিধা দিয়েছিল কারণ মুসলমানরা যে হিন্দুদের তুলনায় সংখ্যালঘু। উন্নয়নের বেশীরভাগ সুফলই ভোগ করেছিল হিন্দুরা আর ব্রিটিশ শাসকরা ইচ্ছে করেই তা করেছিল যাতে মুসলমান এবং হিন্দুর মধ্যে প্রতিহিংসার সৃষ্টি হয়। এর মূলেও সেই ইউনিক গুন “ পরশ্রীকাতরতা” । আর তখনকার মুসলিম নেতৃবৃন্দের ধর্মীয় গোঁড়ামি ব্রিটিশদের এই প্ল্যান সফল করতে অনেক সাহায্য করেছিল। মাহাত্মা গান্ধী অবিভক্ত উপমহাদেশ চেয়েছিলেন। তাতে সফল না হয়ে তিনি শেষ চেষ্টা করেছিলেন ধর্মীয় ভাবে দেশ বিভক্তে বাধা দিতে। মন্দের ভালো হিসেবে তিনি চেয়েছিলেন ভৌগলিক এবং ভাষাগত দিকের উপর ভিত্তিকরে উপমহাদেশ কে বিভক্ত করতে অর্থাৎ পাকিস্থান ভারত এবং বাংলাদেশ। তার প্ল্যান অনুযায়ী বাংলাদেশ হত পূর্ব -পশ্চিম বাংলা বিহার উড়িষ্যা নিয়ে, কাশ্মীর চলে যেত পাকিস্থানের সিমায়। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য আমাদের তখনকার মুসলিম নেতৃবৃন্দ এতটা দূরদর্শী ছিল না। তারা এটাকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখেছিল। এই চিন্তার পেছনেও সেই গুনের প্রভাব রয়েছে ( পরশ্রীকাতরতা) । তারা ধর্মের উপর ভিত্তি করে দেশ বিভক্ত করতে দাবী তুলল এবং ইংরেজদের ভয়ানক ট্র্যাপ এ পা দিল । যার প্রভাব এখনো চলছে। ইংরেজরা জানতো কাশ্মীর জুম্মু নিয়ে যেমন পাকিস্থান-ভারতের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলবে তেমনি দ্বন্দ্ব চলবে পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্থানের মধ্যেও এবং বিভক্ত হতে বাধ্য। তাই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটতেই থাকলো। আর ঘটেই চলছে ...... আর এই পুনরাবৃত্তি করছি আমরা নিজেরাই। কারণ, আমাদের রক্তের মধ্যেই যে এই গুনটি মিশে রয়েছে...... “ পরশ্রীকাতরতা ” এ এক অদ্ভুত জিনিস, নিজেই জন্মায়, নিজেই বিস্তার লাভ করে আবার নিজে নিজেই মরে যায়। আমরা সবাই এর বাহকমাত্র। ফলে নিজেকে এর শিকার করে না তুললেই কম ড্যামেজ হবেন। অন্তত ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে পারবেন- এটুকু নিশ্চিত করে বলা যায়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.