![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
স্বপ্ন থাকা খুবই জরুরি...স্বপ্ন না থাকলে ভোরবেলায় ঘুম থেকে ওঠার কোনো মানেই হয় না...সারা জীবন শুয়ে থাকলেই তো হয়...
প্রথমেই বলে নেই যে আমি মূলত বিজ্ঞান নিয়ে লিখতে ভালবাসি কিন্তু আজকের লেখাটা সম্পূর্ণ বিজ্ঞানের বাইরে। কিছুদিন ধরেই আমি বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন ও মধ্য যুগের কবিতা গুলো পড়তে শুরু করেছি। এই পড়ার মাঝেই মহাকবি আলাওলের 'পদ্মাবতী'তে হঠাৎ থমকে দাঁড়ালাম। আজ সেই পদ্মাবতীর কিছু লাইন নিয়ে আলোচনাই করার জন্য আমার এই লেখা।
মধ্যযুগের কবিতার একটি রীতি ছিলো নায়িকার রূপের পরিপূর্ণ বর্ণনা দেয়া। আজকাল তেমন হয় না। আজকাল লেখকেরা নায়ক-নায়িকার সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তুলতে চান ইঙ্গিতে। মধ্যযুগ ছিল অন্যরকম। তখন কবিরা নায়িকার আপাদমস্তক বর্ণনা করতেন। বলতেন তার চুল কেমন, চোখ কেমন, ঠোঁট কেমন ইত্যাদি। শরীরের কোনো অংশ বাদ দেয়া হতো না। রূপ বর্ণনায় কবিরা ব্যবহার করতেন একটির একটি উপমা। এর ফলে নায়িকার বিশেষ বিশেষ অঙ্গের রূপ সত্যিই ফুটে উঠতো। আলাওলের 'পদ্মাবতী' কাব্যের নায়িকার বর্ণনা শোনা যাক আলাওলের ভাষায়ঃ
পদ্মাবতী রূপ কি কহিমু মহারাজ।
তুলনা দিবারে নাহি ত্রিভুবন মাঝ ৷৷
আপানলম্বিত কেশ কস্তুরী সৌরভ ।
মহাঅন্ধকারময় দৃষ্টি পরাভব ৷৷
তার মধ্যে সীমান্ত খড়্গের ধার জিনি ।
বলাহক মধ্যে যেন স্থির সৌদামিনী ৷৷
স্বর্গ হন্তে আসিতে যাইতে মনোরথ ।
সৃজিল অরন্যমাঝে মহাসূক্ষ্ম পথ ৷৷
ভুরুর ভঙ্গিমা হেরি ভুজঙ্গ সকল।
ভাবিয়া চিন্তিয়া মনে গেল রসাতল ৷৷
কাননে কুরঙ্গ জলে সফরী লুকিত।
খঞ্জন-গঞ্জন নেত্র অঞ্জন রঞ্জিত ৷৷
পদ্মাবতীর রূপ অপূর্ব, তবে কবির ভাষা বুঝতে কিছুটা অসুবিধা হতে পারে। কবি কি বলেছেন এখানে?
মহারাজ পদ্মাবতীর রূপের কথা আমি কী বলবো! তার সাথে তুলনা দিতে পারি এমন জিনিশ তো ত্রিভুবনে নেই। তার মাথার কেশরাশি পা পর্যন্ত লম্বা, তার তাতে ভরপুর সর্বদা মৃগনাভির সৌরভ। সে-কেশরাশি এতো কালো যে চোখের দৃষ্টি সেখানে পরাজিত হয়, তা রাত্রির মতো। কবি এরপরে সিঁথির কথা বলেছেন। পদ্মাবতীর সিঁথি কেমন? তা খুব সরু, সুন্দর, তীক্ষ্ণ, এমনকি তরবারির তীক্ষ্ণতার চেয়েও অধিকতর তীক্ষ্ণ পদ্মাবতীর সিঁথি। তারপর কবি একটি উপমা দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন সে-সিঁথির সৌন্দর্য। বলেছেন, ওই সিঁথির রেখাকে মনে যেনো কালো মেঘের মধ্যে স্থির হয়ে আছে বিদ্যুৎরেখা। এতেও কবির মন ভরে নি। তাই তিনি দেন আরো একটি উপমা। বলেছেন স্বর্গ থেকে আসা-যাওয়ার জন্যে সৌন্দর্যের দেবতা অরন্যের মধ্যে এক সূক্ষ্ম পথ নির্মাণ করেছিলেন, পদ্মাবতীর সিঁথি তেমন সুন্দর, নয়নাভিরাম। কবি পদ্মাবতীর ভুরূ এর বর্ণনা দিয়েছেন ভ্রূভঙ্গি দেখে মৌমাছির দল গভীর চিন্তায় ডুবে গেল। কাজল রাঙা সেই চোখ খঞ্জন পাখির চোখকেও হার মানায় যা দেখে হরিণেরা বনে আর পুঁটিমাছগুলো জলে লুকিয়ে গেল।
এর পর একে একে চোখ, ঠোঁট থেকে একে একে সারা শরীরের, এমনকি পায়ের পাতা পর্যন্ত নয়নাভিরাম বর্ণনা দিয়েছেন। তবে সেগুলো আর ভদ্র সমাজের সামনে বর্ণনা করার মত না, তাই ভুরূতেই আমকে থামতে হল। আলাওল কিন্তু খুব সহজ কবি নন। তিনি কথা বলেন উপমায়, অলঙ্কারে এবং অনেক সময় বেশ শক্ত শব্দে। তিনি মনোযোগ দিয়ে পড়ার মতো কবি।
তথ্য সাহায্যঃ 'লাল নীল দীপাবলি বা বাঙলা সাহিত্যের জীবনী'
ছবিঃ ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত।
০২ রা আগস্ট, ২০১৬ রাত ১:০৫
ম্যাড মাক্স বলেছেন: ছোটবেলায় পড়েছিলেন! হায় হায়! কি বলেন! এই কাব্য ছোটবেলায় পড়া একদমই ঠিক হয়নি, এটা বড়দের জন্য কবি লিখেছেন। তখনকার দিনে ১৮+ ট্যাগ থাকলে নিশ্চয় কবি সেটা লাগিয়ে দিতেন। কিছু মনে করবেন না, মজা করলাম।
আপনাকেও ধন্যবাদ।
ভাল থাকবেন।
২| ০২ রা আগস্ট, ২০১৬ রাত ১২:৫৯
অনর্থদর্শী বলেছেন: প্রাচীন কবিরা উপমা ব্যবহারে যথেষ্ট গুরুত্ব দিতেন, তাদের রচিত প্রত্যেকটি পদ পাঠকালে তাদের রুচির সূক্ষতা মন কাড়ে,
তার জন্যই বোধহয় বলে,'উপমা কালিদাসস্য'
০২ রা আগস্ট, ২০১৬ রাত ১:১১
ম্যাড মাক্স বলেছেন: হুম ঠিক বলেছেন প্রাচীন কবিরা উপমা ব্যবহারে যথেষ্ট গুরুত্ব দিতেন তবে বাঙালি কবিদের লেখা কিন্তু বেশীর ভাগই মৌলিক ছিল না, ছিল বেশীর ভাগ ছিল অনুবাদ গ্রন্থ। আরবি, ফারসি, ইংলিশ ইত্যাদি ভাষার গ্রন্থের অনুবাদ তবে অনুবাদ হলেও আপনার মত করে বলতে হয় পাঠকালে তাদের রুচির সূক্ষতা মন কাড়ে।
ধন্যবাদ।
ভাল থাকবেন।
৩| ০২ রা আগস্ট, ২০১৬ রাত ১:০৪
মশিউর বেষ্ট বলেছেন: খুব সুন্দর লাগল । ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার সাহিত্য বোধও অনেক অগ্রজ।
০২ রা আগস্ট, ২০১৬ রাত ১:১২
ম্যাড মাক্স বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ।
ভাল থাকবেন।
৪| ০২ রা আগস্ট, ২০১৬ রাত ১:০৯
অরুনি মায়া অনু বলেছেন: হা হা ছোটদের জন্য নিরাপদ এই কবিতা। কারণ তারা ১০০ বার পড়লেও কিছুই বুঝবেনা। বাড়ির একটা পুরনো বাক্সে কিছু বই ঘাটতে গিয়ে এটা পেয়েছিলাম। অল্প পড়েই বিরক্ত হয়ে রেখে দিয়েছিলাম
০২ রা আগস্ট, ২০১৬ রাত ১:১৪
ম্যাড মাক্স বলেছেন: তবে ইদানিং কালের পিচ্চি গুলা যে পাকা, ওরা পড়লে ঠিকই বুঝে যাবে সামথিং ইজ রং ।
৫| ০২ রা আগস্ট, ২০১৬ রাত ১:৩৮
সামু পাগলা০০৭ বলেছেন: "একজন পদ্মাবতী" শিরোনামটি দেখে আসা। ভেবেছিলাম কোন কবি ব্লগার কবিতা লিখেছেন। তারপরে দেখি আপনার পোষ্ট! থমকে গেলাম, বিজ্ঞানের সাথে এর কি সম্পর্ক? তারপরে পুরোটা পড়ে বুঝলাম। এমনিও আপনিতো বিজ্ঞানপ্রেমিই শুধু না সাহিত্যপ্রেমিও বটে।
হুম এবারে আসল পোষ্ট নিয়ে বলি। আপনার বর্ণনা বেশ সাবলীল। যারা কবিতার বিভিন্ন কঠিন শব্দের মারপ্যাচ বুঝতে পারেনা তাদের জন্যে উপকারী এ পোষ্ট। আমার প্রিয় কবিদের তালিকায় আলাওল নেই। কেননা আমি বোকামতী এবং শক্ত শব্দ বোঝার সামর্থ্য নেই। আমি সহজ সরল ভাষার উপন্যাস, কবিতা পছন্দ করি। কেননা আমার কাছে যেকোন সাহিত্যিক, কবির সাধারনের মধ্যে বাস করার ক্ষমতাটুকুই মুগ্ধতা জাগানিয়া! এখন বলাই বাহুল্য আমিও আপনার পোষ্টে উপকার পেলাম। তাই আন্তরিক কৃতজ্ঞতা!
০২ রা আগস্ট, ২০১৬ রাত ৩:০৩
ম্যাড মাক্স বলেছেন: আরে! গরীবের বাড়িতে .... এর পাড়া!
বিজ্ঞান নিয়ে তো সারা দিন পরে থাকি, তাই একটু স্বাদ পরিবর্ত করার জন্য সাহিত্য একটু চেষ্টা করে দেখলাম আরকি।
আমারও প্রিয় কবিদের তালিকায় আলাওল নেই, তবে পদ্মাবতীর রূপের বর্ণনা আমাকে দারুণ আকর্ষণ করেছে। এদের লেখা বুঝতে আমরও অনেক কষ্ট হয়। লেখা পড়ার জন্য রীতিমত বাংলা অভিধান নিয়ে বসতে হয় শব্দ অর্থ বোঝার জন্য। আমিও সহজ সরল ভাষার উপন্যাস, কবিতা পছন্দ করি, এই জন্য পছন্দের তালিকায় আছে হুমায়ূন আহমেদ, সুনিল গঙ্গোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার, রকিব হাসান, বুদ্ধদেব বসুদের মত লেখক।
আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
ভাল থাকবেন।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ আমার শাস্তির মেয়াদ কি শেষ হয়েছে?
৬| ০২ রা আগস্ট, ২০১৬ ভোর ৪:৪২
সামু পাগলা০০৭ বলেছেন: রকিব হাসান বাদে আপনার প্রিয়রা আমারও প্রিয়।
আপনাকেও ধন্যবাদ।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ আড্ডার ১৫৬৬ নম্বর কমেন্টের প্রতিউত্তরে উত্তর পাবেন।
০২ রা আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১১:০১
ম্যাড মাক্স বলেছেন: ছোট বেলার রূপকথা বাদে আমার পরা প্রথম বই ছিল রকিব হাসান এর 'আলোর সংকেত', তাই রকিব হাসান আমার একটা বিশেষ জায়গা দখল করে রেখছেন।
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা আগস্ট, ২০১৬ রাত ১২:৫৮
অরুনি মায়া অনু বলেছেন: এই কবিতাটি ছোটবেলায় পড়েছিলাম, তারপর ভুলেও গিয়েছিলাম। কারণ তখন কিছুই বুঝিনি। আজ আপনার লেখায় আবার মনে পড়ল এবং বুঝতেও পারলাম। তাই বিশেষ ধন্যবাদ