নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার পরিচয় লেখার মাঝেই

ঘাসফুল

ঘাসফুল › বিস্তারিত পোস্টঃ

বসবাসযোগ্যতায় বাংলাদেশের পশ্চাদপদতাঃ দায়ী কে??

১৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১১:৫৪

গতকাল (১৬ আগস্ট) ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) প্রকশিত এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে বসবাসের জন্য সেরা ১৪০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের একমাত্র শহর হিসেবে জায়গা নিয়েছে ঢাকা।
দ্বিতীয় কথা হল ঢাকার অবস্থান, যেটা হল ১৩৭। অর্থ্যাৎ শেষ থেকে চার।
ই আই ইইউ প্রতিবছরই এরকম একটা পরিসংখানের মাধ্যমে বসবাসের জন্য বিশ্বের সেরা এবং সবচেয়ে খারাপ শহর নির্ধারণ করে যেখানে গতবছরেও বাংলাদেশের ঢাকার অবস্থান ছিল ১৩৭ এবং ২০১৫ তে ছিল ১৩৯।
শুধু পরিচ্ছন্নতা নয়, সেরা এবং সবচেয়ে খারাপ শহর বেছে নেয়া হয় স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষা, সংস্কৃতি পরিবেশ এবং অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধার ভিত্তিতে৷
এছাড়া গতবছর যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কভিত্তিক পরামর্শ সেবাদানকারী সংস্থা মার্সারের করা ‘এইটিনথ কোয়ালিটি অব লাইফ র‌্যাঙ্কিং’ শীর্ষক তালিকায় ২৩০টি শহরের ওপর চালানো এ জরিপে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা ছিল তালিকার একেবারে তলানির দিকে- ২১৪ নম্বরে। এর আগের বছরের তুলনায় ১০ ধাপ পিছিয়েছে ঢাকা। ২০১৫তে শহরটির অবস্থান ছিল ২০৪ নম্বরে।
জরিপে মূল্যায়িত সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশের মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অপরাধ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক পরিবেশের মধ্যে ব্যাংকিং সুবিধা ও মুদ্রা বিনিময়ে শর্ত, সাংস্কৃতিক পরিবেশের মধ্যে গণমাধ্যমের উপস্থিতি ও বিধিনিষেধ এবং ব্যক্তিস্বাধীনতার সীমাবদ্ধতা, চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য, স্কুল ও শিক্ষা, গণপরিবহন ও যোগাযোগব্যবস্থা, বিনোদন, গৃহায়ণ ও আবাসনব্যবস্থা এবং শহরের প্রাকৃতিক পরিবেশ।
এ তালিকায় শীর্ষে থাকা ভিয়েনার সুগঠিত নগর কাঠামো, নিরাপদ রাস্তাঘাট আর ভালো গণস্বাস্থ্য সেবা শহরটিকে বসবাসের জন্য বিশ্বের সেরা শহরে পরিণত করে তুলেছে বলে প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়। অস্ট্রিয়ার এ রাজধানীর বাড়িঘরগুলো এখনো ঐতিহ্যের ছোঁয়া নিয়ে মাথা উঁচু করে আছে। শহরের বাসিন্দাদের একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশের নিশ্চয়তা দিচ্ছে নগর-উদ্যান। রয়েছে সাইকেল আরোহীদের জন্য বিশেষ রাস্তাঘাট। সম্প্রতি এ শহরের গণপরিবহনের ভাড়াও কমানো হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
মার্সারের প্রতিবেদনে আরো জানানো হয়, ভিয়েনায় বড় ধরনের অপরাধ নেই। শহরের বাসিন্দার সংখ্যা ১৭ লাখ। তা সত্ত্বেও বিশ্বের অন্যান্য শহরের তুলনায় এ শহর আশ্চর্য রকমের শান্ত।
ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) এর এবারের প্রতিবেদনে একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়া ছিল, যা হল অস্ট্রেলিয়ার আরেকটি শহর সিডনী এবার চলে গেছে শীর্ষ দশের বাইরে । যার মূল কারণ হিসেবে বলা হয়েছে সন্ত্রাস বৃদ্ধি।
এবার আসি বাংলাদেশের কথায়।
জার্মান রেডিও ডয়সে ভেলে তাদের এক প্রতিবেদনে লিখেছিল এ লজ্জা কিভাবে কাটাবে ঢাকা?
মানুষ ছাড়া যেমন সমাজ হয়না, তেমন শহরের মূল উপাদান নাগরিক। একটা সমাজ কিংবা শহরকে সুন্দর ও বাস যোগ্য রাখতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করতে হয় এর নাগরিকদেরকে।
অন্যদিকে শহরের অবকাঠামোগত দায়িত্বে নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান থাকে। তাদের দায়িত্ব পরিকল্পিত নগরায়ন। এ প্রতিষ্ঠানে থাকে বিশেষায়িত পরিকল্পনা বিদ। যারা এক্টী শহরের যাবতীয় নকশা অনুমোদন করেন। ফলে শহর সুশৃঙ্খল হতে বাধ্য। এখানে যারা থাকেন, তাদের অধিকাংশই মেধাবী ইঞ্জিনিয়ার। তারা অবশ্যই তাদের সেরাটা দিয়ে পরিকল্পনা করবেন এবং সেটা বাস্তবায়িত হলে কখনই নগরে স্থাপনাগত বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সুযোগ নেই। এরপরেও যদি এক্টী শহরে অপরিকল্পিত ঙ্গরায়নের স্বীকার হয় তাহলে এর দুটো কারন হবে-
১। ইঞ্জিনিয়ারের পরিকল্পনায় সীমাবদ্ধতা।
২। রাষ্ট্র তথা রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের উদাসীন স্বেচ্ছাচারীতা এবং ক্ষমতার অপব্যবহার।
বর্তমান বাংলাদেশে ২য় কারণটাই সর্বাধিক লক্ষ্যণীয়। রাস্তা, ব্রীজ, কালভার্ট, সেতু কিংবা ভবন স্থাপনে সবক্ষেত্রেই ক্ষ্মতার অপব্যবহার সর্বাধিক লক্ষ্যণীয়।
একটি দেশের পরিচালকরা যদি নিজের দায়িত্বের প্রতি উদাসীণ থাকেন, তাহলে সেখানে সুষ্ঠুভাবে কোন কিছুই সম্ভব হবেনা।
আর যদি প্রশাসনে উদাসীনতা থাকে, তাহলে অধীনস্ত সবাই এবং সর্বসাধারনের মধ্যেও এর বৃহত প্রভাব পড়বে।
তখন সবাই একে অন্যের দোহাই দিয়ে নিয়ম ভঙ্গ করবে এবং যার ফলে শেষে দেখা যাবে মারাত্মক বিশৃঙ্খলা এবং ব্যহত হবে স্বাভবিক জীবন যাত্রা।
ঢাকায় এই ব্যপারটা খুব বেশী লক্ষ্যণীয়। এখানকার স্থাপনাগুলো মারাত্মক স্বেচ্ছাচারিতায় প্রতিষ্ঠিত। যার ফলে এই শহরের পুরাতন অংশে সবচেয়ে নাজুক পরিস্থিতি দেখা যায় একটু বৃষ্টি হলেই।
আরেকটা ব্যপার হল ঢাকার জনসংখ্যা। ভিয়েনায় মানুষ থাকে ২ মিলিয়ন আর ঢাকায় ২০ মিলিয়ন সম্ভবত। ভিয়েনায় প্রতি কিলোমিটারে থাকে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার মানুষ আর ঢাকায় প্রতি কিলোমিটারে থাকে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। ভিয়েনায় কমবেশী ৪০% ট্যাক্স দিতে হয়। ঢাকার একদিনের বর্জ্য অপসারনের কাজটি করতে গেলেই তো টপ সিটিদের প্রানবায়ু বের হয়ে র্যাংকিং এর নিচে চলে যাবে! তাছাড়া এই বৃহত জনগোষ্ঠীর সবাই এসব ব্যপারে সচেতন নয়।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে ঢাকাকে কি আদৌ এই দুনিয়ার অন্য কোন শহরের সাথে তুলনা করা যায়? এই পরিমান মানুষ যদি স্বর্গেও ঢুকায় দেয়া হয় তাহলে ঐ স্বর্গের কি হাল হবে তা অনুমান করা যায়।
র্যাংকিং তো বদলায়। কিন্তু ভূগোল বদলায় না। বৈজ্ঞানিক সুত্রমতে শহর হিসেবে ঢাকার ভৌগলিক অবস্থান বিশ্বে শ্রেষ্ঠ। একটি দেশের কেন্দ্র এবং সবকিছুর মূল ,তাছাড়া নদী, সড়ক, রেল, বিমান সবকিছুতেই ঢাকা স্বয়ংসম্পূর্ণ। যেটা খুব কম শহরেই আছে।
কিন্তু কিছু লোকের অদক্ষতা ও উদাসীনতাই এরকম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহি শহরের এই নাজেহাল পরিস্থিতির কারন।
সর্বোপরি চেষ্টার অসাধ্য কিছু নেই। সবাই যদি নিজ অবস্থান থেকে শহর পরিচ্ছন্নতায় ভূমিকা রাখে, কতৃপক্ষ যদি নিজেদের কাজগুলো ঠিক্মতো করে, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যদি সঠিক নিয়ম বজায় রাখে, তাহলে ঢাকাকে আরো সুন্দর ও বসবাসের জন্য উন্নত শহর হিসেবে গড়ে তোলা অসম্ভব কিছু নয়।।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.