![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাসায় আসলে সবচেয়ে বেশী যে অফারটা পাই, তাহলো ক্লাস নেয়ার।
না, কোন কোচিং সেন্টার নয়, হাই স্কুলে। এখানে দুটো সরকারি হাই স্কুল আছে। দুটোতেই।
কারন এখানে শিক্ষক সঙ্কট খুব বেশী। দুটো মিলিয়ে যেখানে ৪০ জন থাকার কথা,
সেখানে আছে ৫+৫=১০ জন। কিছুটা চলে গেস্ট টিচার দিয়ে। বাকিটা যেভাবে সম্ভব
জোড়াতালি দিয়ে ।
সুতরাং এখানে সরকারি স্কুলের অবস্থা সবচেয়ে সবচেয়ে খারাপ।
টিচাররা আমাকে দেখলে বলে, বাসায় যখন আসছো, কয়েকদিন হেল্প করো। যদিও
সর্বাশেষ ক্লাস নিয়েছি ৪ বছর আগে। ২০১২-১৩ তে।
অথচ এখনও তখনকার ছেলেরা আমাকে দেখলে এগিয়ে এসে বলে, ভাইয়া কেমন আছেন ।
কোথায় আছেন। যদিও তাদের কম জনকেই আমি চিনি। কিন্তু তারা আমাকে মনে
রেখেছে।
কিন্তু কেন? নিশ্চয় আমার অল্প দিনের ক্লাসে এমন কিছু পেয়েছে, যেটা তারা
সচরাচর পায়না। বা শিক্ষকরাও দিতে পারেনা।
এর কারন অনেকগুলা। প্রথমত, শিক্ষকতাও একটা শিল্প। এখানেও আপনাকে শিল্পীর
মতো পরিচর্যা করে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষক হতে হবে একজন আদর্শ
মানুষ। দেখলেই যেন নিজে থেকে শ্রদ্ধা চলে আসে অনর্গল।
কিন্তু এই ছেলেগুলো সেটা আগে পায়নি। কারন, তাদের জন্য যেরকম প্রয়োজন
ছিল, সেরকমটা তারা পাচ্ছেনা।
এখানে অসংখ্য পদ খালী। কারন সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ হতে হবে সরকারি
ভাবে। জাতীয় পর্যায়ে পরিক্ষার মাধ্যমে সরকার মেধাবীদেরকেই নিয়োগ দিবে।
কিন্তু সমস্যা হল, বাইরের টিচার এসে প্রত্যন্ত এলাকায় থাকতে চাইবেনা।
তারা আসে, কয়েকদিন হাজিরা দিয়ে উপরের মহলে কিছু উপরি দিয়ে ট্রান্সফার হয়ে
চলে যায়। ফলে স্থানীয় যে টিচারগন আছেন, তারাই থাকেন।
কিন্তু সমস্যা হল, এই টিচাররা এই যুগের না। তারা অনেক জানেন ঠিক আছে,
কিন্তু আধুনিকতার তুলনায় সবাই আপডেটেড নন। ফলে এই দুরবস্থা কাটবেনা।
কিন্তু শিক্ষক শিক্ষকই। তার অবস্থান এলিট পর্যায়ে। তার আত্মসম্মান বোধ
থাকবে সবার উপরে। তিনি নিজেকে গড়ে তুলবেন আদর্শ রুপে। কারন অন্যরা তাকে
ফলো করবেন।
যেমন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এ সবার পছন্দ কেমিস্ট্রি স্যার। যার ব্যাপারে
কারো কোন দ্বিমত নেই।
কিছু দিন আগে একবার লিখেছিলাম, বাংলাদেশে ছাত্র হল দু ধরনের।
এক, ঢাবি এবং মেডিকেল
দুই। অন্যান্য।
প্রথম সারির যারা দাবিদার, তারা হলেন সকল সমালোচনার উর্ধ্বে। তারা যাই
করবেন সেটা শুধুমাত্র ভালো।
মেডিকেল আজকে বাদ দিই। কারন এখন ঢাবি মৌসুম।
ঢাবিকে নিয়ে যদি আপনি কখনো কিছু বলতে যান, তাহলে তারা প্রথমে আপনাকে যা
বলবে, তা হল, আমরাই বিশ্বের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়, যারা একটি দেশকে ভাগ
করা থেকে শুরু করে, ভাষা আদায়, স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছে।
কয়েকদিন আগে ঢাবির সাবেক ভিসি স্যার আরেফিন সিদ্দিক সাহেবকে এক টিভি
অনুষ্ঠানে প্রশ্ন করা হয়েছিল, গত দুই দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর অর্জন
কী?
উনি উত্তর দিয়েছিলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয় সাম্প্রতিক কি করেছে তা দেখেতো
হবেনা, দেখতে হবে তাদের ইতিহাস। আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী।
আমরাই একমাত্র, যারা একটি দেশকে স্বাধীন করেছি। এমনকি দেশের শত্রু
পাকিস্তানের সাথেও আমরা সম্পর্ক ছিন্ন করেছি।
আমার আব্বু বলেন, ঢাবির ইতিহাসে সবচেয়ে বোগাস ভিসি হল আরেফিন সিদ্দিক। যে
ঠিকমতো কথাই বলতে পারেনা।
কয়েকদিন আগে ভিসি স্যারের সাথে ভিসির আলোচনা রুমের একটি ছবি বেরিয়েছিল।
যেখানে দেখা যায় ওনার চেয়ারের দুই হাতলের উপর দুজন বেশ ঘনিষ্ঠভাবে বসে
আছে। মনে হচ্ছে পারিবারিক কোন বৈঠক।
আর যারা বসেছেন তারাও শিক্ষক। এদের মধ্যে একজন সামিয়া রহমান।
ভিসি হল একটা বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রশাসনিক প্রধান। ক্ষমতার বিচারে তিনি
প্রধানমন্ত্রীর উর্ধ্বে।
কেননা, প্রধানমন্ত্রীকে তার কাজের জন্য জবাবদিহি করতে হয়, কিন্তু ভিসিকে
তা করতে হয়না। দায়ীত্ব শেষ হয়ে গেলে তিনি সকল দায় মুক্ত। তার জবাবদিহিতা
শুধু রাষ্ট্রপতির কাছে।
বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। এর সকল কার্যক্রম এর
সিন্ডিকেট বা সিনেট সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয় আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করে।
ভিসির উপর প্রশ্ন তোলার অধিকার শুধুমাত্র সিনেট সদস্যদের আছে। এমনকি
বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষক নিয়োগ কিংবা কোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ওনাদের
উপর নির্ভর করে।
শিক্ষকের মর্যাদা বলে একটা কবিতা ছিল আমাদের পাঠ্যে। যেখানে বলা হয়েছে
শিক্ষককে সর্বদা শ্রদ্ধার চোখে দেখতে।
কিন্তু সেই শিক্ষক যখন চোর হয়, তখন শ্রদ্ধা করা দূর তার নিজের উচিৎ পদত্যাগ করা।
প্রথমে বলেছিলাম, আমাদের এখানে শিক্ষকের অভাব। সরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়ায়
সরকারের অনুমতি ছাড়া কিছু করা যাবেনা। সেজন্য এই সমস্যা।
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু সকল প্রশ্নের উর্ধ্বে, তাই সেখানে ওনাদের
ইচ্ছামত করতে পারবে।
যেটা করেছেনও আরেফিন স্যার। কয়েকদিন আগে পত্রিকায় এসেছিল, কেমিস্ট্রি
ডিপার্টমেন্ট এ তিনজন প্রভাষক এর পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ৭ জন। শুধু এখানেই
না, প্রতিটি পদে এভাবে ইচ্ছামত নিয়োগ হয়েছে, এবং যেটা শুধুমাত্র সরকার
দলীয় লোক দেখে।
প্রথম আলোর কয়েকদিন আগে আরেফিন সাহেব এর মেয়াদ পরবর্তী এক রিভিউতে
দেখেয়েছে, ঢাবির যতজন শিক্ষক আছে বর্তমানে, তার ৬০% গত ৭ বছরে নিয়োগ
পেয়েছে এবং সবই আরেফিন সাহেবের ইচ্ছাতে সরকারি লোক। যেখানে প্রয়োজনের
তুলনায় প্রায় ৫-৬ গুন বেশী লোক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
এদের মধ্যেই দুজন হল সামিয়া রহমান এবং মারজান। এনারা আবার টেলিভিশন এ ফুল
টাইম জব করে। সেইসাথে ঢাবির মতো একটি ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয় এর
ফুলটাইম টিচার।
সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশ, অনেক আগে কেউ একজন বলেছিলেন। সম্ভবত পর্তুগীজ
কেউ। এখনো কথাটা নিদারুণ সত্য।
সামিয়া রহমান এবং মারজান যা করেছেন, তা আসলে বলার কিছু নেই। কারন এটা
বলার আগেই ওনাদের উপরোক্ত পদগুলা থাকার কথানা।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের সবচেয়ে বড় সার্টিফিকেট হল তার থিসিস পেপার। এটা
তার মেধাসত্ব। এগুলো দিয়েই তাকে বিচার করা হয়, তার কাজ মূল্যায়ন করা হয়।
কিন্তু ওনারা সেই পেপার গুলো পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা হুবহু কপি করেছেন, তাও
একজন জনপ্রিয় বিদেশী গবেষকের।
আরো আশ্চর্যের কথা হল, দেশের ঐতিহ্য, দেশের স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ এটা ধরতেই পারেনি। তাদের এতো চেতনা!!
আর এটার জন্য প্রতিবাদ আসলো সেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস থেকেই, যার লেখা,
তাকেই খুজে বের করতে হল কে চোর?!! ঢাবির পরিক্ষকরা সেটাও পারেনি, ওনারা
কেমন শিক্ষক!!
এই শিক্ষকে নাকি আমরা শ্রদ্ধা করব!!
সামিয়া রহমান সবসময় দেশের কথা ভাবেন, দেশকে কিভাবে উপরে নিয়ে যাওয়া যায়,
সে চিন্তা করেন। বিভিন্ন টক শোতে তার চেতনা কিংবা ইতিহাস নিয়ে পাণ্ডিত্য
আমরা দেখি, কিন্তু অন্যের লেখা চুরি করে তার থিসিস পূরা করতে কি ওনার
মাথায় আসেনি, যে দেশ কতটা উপরে উঠচ্ছে??
তার আরেকজন সহযোগী মারজান। দুজনেই চোর। অথচ এখনো ওনারা নিজেদের দায়
স্বীকার করলোনা। কিসের এতো সাহস তাদের?? কার অভয়ে তারা এতবড় চুরি করে
দেশের ইজ্জত ডুবিয়েও স্বপদে বহাল??
কারন আছে, কারন তাদের নিয়োগটাও ওরকমভাবে হয়েছে। তেলবাজী করে যারা শিক্ষক
হয়, তারা শিক্ষকের মর্যাদা কি বুঝবে??
এনাদের কারনে যে এখন পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এর বদনাম হল, অন্য শিক্ষকরাও যে
বিদেশে অপমানিত হবে, ওনারাও তো কোন প্রতিবাদ করতে দেখলাম না। দেশের কোন
শিক্ষার্থী যদি ওই বিশ্ববিদ্যালয় এ পড়তে যায়, তখন যদি ওখানকার কেউ, তাকে
বলে, তোমাদের স্বদেশী তো আমাদের লেখা চুরি করে, তখন তার মানসিক অবস্থাটা
কী হবে???
ঢাবি ছাত্ররা সবসময় গর্বিত। তারা এমন এক বিশ্ববিদ্যালয় এ পড়ে, যারা একটা
দেশকে স্বাধীন করেছে। ভাষা এনে দিয়েছে। কোথাও কিছু বললেই দেখবেন, তারা
এসব বলবে।
এছাড়াও তাদের অনেক ঐতিহ্য। তারা ভদ্র। তারা দেশের কাণ্ডারি। বিসি এস এ
সবচেয়ে বেশী ওনাদের ভাই বোনেরা চান্স পায়। ওনারাই সবসময় সব অন্যায়ের
প্রতিবাদ করে এসেছেন।
কিন্তু এতবড় চুরির ঘটনায় তো তাদের কারো প্রতিবাদ দেখলাম না। ক্যাম্পাসের
কোথাও কোন প্রতিবাদ মিছিল বা কুশপুত্তলিকা দাহের খবর শুনলাম না। কোথায়
তাদের চেতনা??
ওনাদের অভিযোগ, অন্যরা শুধু ঢাবির বাস উল্টো পথে চলে বলে অভিযোগ করে।
ভালো কোন খবর পেলে সেখানে ওনাদের পেজ খুলো থেকে মেধাবী ছাত্ররা ব্যাঙ্গ
করে পোস্ট দেয়, ঢাবির বাস নাকি উল্টো পথে চলে শুধু আর ভালো অর্জন নাই।।
ভালো অর্জন আছে। সেটা আমরা জানি। কিন্তু ভালো অর্জন দিয়েই সবসময় খারাপ
কাজগুলাকে চেপে যাওয়া বা অস্বীকার করার শিক্ষাও কি ঢাবিই আপনাদেরকে দেয়??
আপ্নারা না কোন অন্যায় সহ্য করেন না? আপ্নারা দেশের স্বাধীনতার পক্ষে না?
তাহলে কেন এতো এতো অন্যায় আর অবিচারের বিরুদ্ধে আপ্নারা নির্বাক? কোন হুশ নাই কেন?
এত বড় মেধাচুরি দেখেও যারা চুপ, তারাইতো এক সময় সবচেয়ে বেশী সংখ্যাই বি
সি এস এ যাবে, দেশ চালাবে। তখন তো আপ্নারা নিজেরাই চুরি করবেন। কারন
আপনাদের শিক্ষরাই চোর আর আপ্নারা তা নির্বাক মেনে নেন।
ছাত্রদের ক্ষমতা কতটা, তা আমি জানি। একজন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রকে দেশের
শাসকরাও ভয় পায়। সবসময় এটাই হয়ে আসছে। অতীতের সব অন্যায় বিরোধী সংগ্রাম
নেতৃত্ব দিয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয় এর ছাত্ররাই।
একটা ঘটনা বলি। বেশ কয়েকবছর আগের ঘটনা। আমার দাদা চট্টগ্রাম
বিশ্ববিদ্যালয় এ মাস্টার্স এ পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এ ফার্স্ট হয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট এরশাদের হাত থেকে পুরুষ্কার নেবার কথা ছিল।
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় এর অভ্যন্তরীণ ঝামেলায় সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্ররা
ক্ষেপে গিয়েছিলো। তাদের প্রতিবাদের মুখে এরশাদ আর বিশ্ববিদ্যালয় এ প্রবেশ
করতে পারেনি।
খুনি এরাশাদকে তারা প্রিয় ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেয়নি, অথচ তিনি
বিশ্ববিদ্যালয় এর আচার্য।
আর এখনকার ছাত্রদের দেখুন। নিজেদের অভ্যন্তরীণ ঘটনায়ও তাদের কোন প্রতিবাদ নেই।
সেই দেশ স্বাধীন করা তেজী ছাত্রদের ছোটভাইরা আজ পুরুষত্ব হারিয়ে বসে আছে।
আর এরকম চোর লোকগুলা বসে আছে শিক্ষক নামক সম্মানজনক এক পদে।
আজকে শিক্ষক দিবসে এসব শিক্ষক নামক জ্ঞানপাপীদের জন্য শুধুই ঘৃণা।
৫-১০-১৭
©somewhere in net ltd.