![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রশ্ন। এভার আফটার।
সদরঘাটে যাবো। বাস খুঁজে পাচ্ছিনা। বিমানবন্দর গেটে দাঁড়িয়ে আছি। সন্ধার
লঞ্চ ধরে বাসায় যাবো, কিন্তু সময় খুব কম। লামিয়াকে ফোন দিলাম, ওর গাড়িতে
আমাকে লিফট দিতে পারে। ফোন কয়েকবার রিং করলাম, রিসিভ করলোনা।
এই মেয়েটার এ স্বভাবটা খুব খারাপ। আমি কখনো ফোন করে পাইনা। ভাব ধরে থাকে।
আমাকে দিয়াবাড়ি নামিয়ে দিয়ে কোথায় হারালো কে জানে..
হয়ত ফোন সাইলেন্ট করে অনুপমের গান শুনছে গাড়িতে, আর জানালা দিয়ে বাইরে
তাকিয়ে অন্যকিছু ভাবছে। তানজির এর গানও ফেভারিট, মেঘ মিলনে চেয়ে রাগ
করোনা
আকাশে সাদা মেঘের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সাদা আকাশে কালো কাক ভালো মানায়।
কিন্তু হঠাৎ কাক আসলো কোত্থেকে। যাত্রায় কাকের আওয়াজ শুভ না। আমি আবারো
গাড়ি খোজায় মন দিলাম।
কিছুক্ষণ পর একটা গাড়ি ফেলাম। ঢাকা শহরে ভীড় ঠেলে গাড়িতে উঠতে পারাটাও
সাফল্য। এভারেস্ট জয় করার মনে হয় এরচেয়ে সহজ, অন্তত অন্য কেউ বাধা দেয়না।
অবশ্য মুসা ইব্রাহীম এর ক্ষেত্রে এ সূত্র খাটেনা। মানুষের কারণেই তিনি
চূড়ায় উঠতে পারেননি।
জানালার পাশে সীট পেলাম একটু পর। বনানী দিয়ে যাওয়ার সময় মেয়েটাকে দেখতে
পেলাম, এখনো গোলাপ হাতে গাড়ির কাছে ছুটে যাচ্ছে।
কেউ কিনছেনা। অবাক ব্যাপার, এ শহরের মানুষের কাছে ফুলের মূল্য অনেক কমে
গেছে। যে শহরে মানুষ নিজে বেচে থাকাটাই কষ্টকর, সেখানে নির্মল পুষ্পগুচ্ছ
মূল্যহীন হওয়া অস্বাভাবিক নয়।
আমিই মনে হয় একমাত্র, যে আজকে ফুল কিনেছি। মেয়েটির তে ফুলগুলো আগেরমতই রয়ে গেছে।
আরেকটা ব্যাপার লক্ষ করলাম, ফুলওয়ালা মেয়েগুলা শুধুমাত্র দামী গাড়ি গুলোর
কাছেই যাচ্ছে, লোকালবাসের আশেপাশে তাদের আনাগোনা নেই। ওরা জানে, এ গাড়ির
প্যাসেঞ্জারদের সাধ থাকলেও এসব কেনার সামর্থ্য খুব একটা থাকেনা।
ফুল দেখে মনে পড়লো, লামিয়ার দেয়া গোলাপটা ঘাসের উপরেই পড়ে আছে। অন্যমনা
হয়ে চলে আসায় ফুল আনার কথা ভুলে গেছি। অবশ্য এনেও কি হতো? সর্বোচ্চ
বুড়িগঙ্গার জলে ঠাঁই পেতো। তারচেয়ে বরং ওখানে ঘাসের উপড়েই থাকুক।
প্রাণেপ্রাণে মাখামাখি।
আমার কেনা পদ্মফুলগুলো এখনো লামিয়ার গাড়িতে। কে জানে যাওয়ার সময় ফেলে
দিলো কিনা। ও কে আরেকবার ফোন দেয়া দরকার।দিলাম।
এবারো ধরলোনা।
গাড়ি বিজয় স্মরণি পার হল। ঢাকার এই অংশটা আমার পছন্দ। রাস্তার দুপাশটা
অনেক পরিষ্কার। নভোথিয়েটারে লামিয়া সহ একবার এসেছিলাম। ওর মহাকাশ নিয়ে
তেমন আগ্রহ নেই, যতটা মেকাপে আছে। আমার জোরাজুরিতে এসেছিল, বিনিময়ে চকলেট
খাওয়াতে হয়েছে আমার। চকলেট এর কথা বলতে আবারো সায়মাকে মনে পড়লো । খুব
রাগ হচ্ছে ওর উপর। দেখা করার কথা বলে না এসে এমন ফাজলামোর মানে হয়না।
আরেকবার ফোন দিবো ভেবেও দিলাম না। এরপরে আর যোগাযোগের কোন মানে নেই।
খামোখা আমাকে কষ্ট দিলো।
বিখ্যাত ফার্মগেট ওভারব্রিজ নতুন রঙে দেখে ভালো লাগছে। পথচারীদের
পারাপার আরো বেড়েছে।
বিকেলের ঢাকার তাপমাত্রাও বাড়ছে। আমি ঘামছি। পাশের জনের গন্ধ নাকে আসছে।
বলা হয়, যেদিন ফার্মগেটে জ্যামে পড়বেনা, বুঝতে হবে সেদিন আপনি স্বপ্নে
আছেন।
আমি বাস্তবে আছি এবং জ্যামের স্বাদ নিচ্ছি। খুব দুপুরে কাকের আওয়াজের কথা
অনেক শুনেছি। কিন্তু এশহরে দিনেদিনে কাকও মনে হয় হারিয়ে যাচ্ছে। অন্য
পাখিতো নেইই। মেয়র সাহেবের ডাস্টবিন গুলাও হারিয়ে যাচ্ছে। বাড়ছে শুধু
রাস্তার গর্ত। বৃষ্টি আর গরম, দুটোই এ শহরের জন্য অসহনীয়।
আমি অন্যদিকে মন ফেরানোর চেষ্টায় আছে। কঠিন কষ্ট ভুলে থাকার একমাত্র উপায়
হল তারচেয়ে কঠিন কোন ব্যাপার নিয়ে চিন্তার জগতে হারিয়ে যাওয়া। গরমে
জ্যামের মধ্যে বসে থাকা এখন আমার জন্য যথেষ্ট কঠিন কাজ। এই কষ্ট ভুলে
থাকার জন্য আমার অন্যদিকে মনোনিবেশ করতে হবে । এক্ষেত্রে হুমায়ুন আহমেদের
থিওরি হল ময়ুরাক্ষি নদী। কিন্তু ময়ুরাক্ষির চেয়ে ভালো উপায় আমার আছে, তা
হল সায়মার কথা মনে করা। আমি আবার ওকে নিয় ভাবতে লাগলাম।
দুমাসের প্রেম। কিন্তু সম্পর্কের গভীরতা নিতান্ত কম নয়। এ দুমাসে অনেক
ঘটনা হয়ে গেছে, হয়েছে অনেক ভালোবাসার আদানপ্রদান। না! ওর মুখ কল্পনা
করতেই এখন বিরক্ত লাগছে। আমার সাথে এরকম কাজ করতে পারলো??
ও জানেনা, আমি মিথ্যে বলা পছন্দ করিনা?
ও তো বুঝার কথা আমি ওকে কত ভালোবাসি, তারপরেও এরকম কিভাবে করতে পারলো।
আর ভাবতে পারছিনা।
সায়মারও চকলেট পছন্দ ছিল। এই একটা ব্যাপার যেখানে সব মেয়েই একমত, তাহলো
চকলেট। অবশ্য আমার একদম পছন্দ না। অনেকগুলা চকলেট উপহার পেয়েছি এবং
সবগুলা আমার ব্যাগে পড়ে আছে।
এই মেয়েটাকে মনে করায় সুবিধা হল গরম গায়ে লাগছেনা। কিন্তু অসুবিধা হলো,
ওকে মনে করতেই কষ্টটা আরো বাড়ছে।
ধুত, সব খারাপ। রঙ্গের দুনিয়াতে কোন কিছুতেই রঙ নাই।। দূরে থাকতে সবই
ভালো লাগে, কাছে গেলেই বর্ণহীন।
দিনের বর্ণ আরো ঘোলাটে হয়ে আসছে। গাড়ি ধীরপায়ে এগুচ্ছে। মাঝেমাঝে ইচ্ছে
হয় হেলিকপ্টার কিনে ফেলি। আমার ইচ্ছা আছে কেনার। ভালো টাকা হলে
হেলিকপ্টার কিনবো। এডমিশনের সময় বিভিন্ন জায়গায় দৌড়াদৌড়ি দেখেই আমার দাদু
ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলেন। বললাম আপ্নিও চলেন আমার সাথে, উনি বললেন এই শরীর
নিয়ে সম্ভব না। তুই ইঞ্জিনিয়ার হয়ে হেলিকপ্টার কিনিস, তারপর দুজন মিলে
ঘুরবো।
২.
রাত নয়টা। লঞ্চের কেবিনে শুয়ে ফেসবুক পড়ছি। কতৃপক্ষ টেলিভিশনে মুভি প্লে
করেছে। শাহরুখের ছবি। ভীষণ রোমান্টিক ফিল্ম মনে হচ্ছে। নায়ক দুনিয়ার
যাবতীয় উপায় এপ্লাই করছে নায়িকাকে রাজী করানোর জন্য। মাঝেমাঝে রাস্তার
মধ্যে হুটহাট নাচানাচি শুরু করে দিচ্ছে, তা দেখে সাথে আরো অনেকেই
নাচানাচি করছে। হয়ত দেখানোর চেষ্টা করছে, দেখো আমার কত পাওয়ার, রাস্তার
সবাই আমাকে দেখে নাচে। বাংলাদেশে হলে রাজনীতি শুরু করে দিতে পারতো। অন্তত
দুএক্টা হুংকার দিতো পারতো সেলিম ওসমানের মতো। কিন্তু শাহরুখ হ্যাংলা
শরীর নিয়ে এর বেশী কিছু করলোনা। তবে মেয়েটা মনে হয় ইসলামী শাসন মানে।
নাচানাচিতে কাজ হলোনা। শাহরুখ তাকে অনেকভাবে হেল্প করতে চাচ্ছে। এই
ছেলের মনে হয় পিয়নদের সাথে ভালো খাতির আছে, ক্লাসে না গেলেও হাজিরা আর
পরিক্ষার হলে নকল সাপ্লাইয়ে প্রব্লেম নাই। কিন্তু এতো মেয়ে থাকতে সে এরকম
ভাবওয়ালা একটা মেয়ের পিছনে কেন পড়লো বুঝতেছিনা। একে একদিনের পর দুদিনের
সময় থাপড়ায়ে চলে যাওয়া উচিৎ। আরেকটা মেয়ে ছেলেটাকে পছন্দ করে। কিন্তু
মেয়েটা মোটা বলে শাহরুখ রাজী হলোনা। আহা নারীদরদী ও নারীপ্রেমী!!
নারীবাদীরাও নিশ্চয় শাহরুখকে দেখে ক্রাশ খায়।
যাইহোক শেষদৃশ্যে মেয়েটা রাজী হয় এবং কঠোর ইসলামী শাসন মেনে চলা মেয়েটা
নাচতে নাচতে শাহরুখের কোলে উঠে যায়!!
পরের সিনেমায়ও দেখলাম দেব সাহেব শুভশ্রীকে রাজী করানোর জন্য যা তা করে যাচ্ছেন।
বুঝলাম, ঘুরেফিরে সব ভারতীয় সিনেমার এক্টাই উদ্দেশ্য - কিভাবে মেয়ে পটানো
যায়। আর এসব দেখে সবার মাথায় প্রিয়জন খোজার ভূত চাপে!!
এগারোটা বাজলো প্রায়। খেয়ে আবারো মোবাইল হাতে নিলাম। লামিয়া বাসায় পৌছার
কথা এতক্ষণে।ফোন দেয়ার ইচ্ছা জাগলো। আবার ভাবলাম এতো রাতে উচিৎ হবেনা।
ফেসবুকে খুলে মেসেজ দেখলাম। সায়মা বা লামিয়ার, কারো কোন মেসেজ নেই।
সায়মাকে মেসেজ দেয়ার প্রয়োজন মনে করলাম না।
কিন্তু লামিয়ার আমাকে একটা মেসেজ দেয়া উচিৎ ছিল। এতোবার ফোন করার পরেও
রিসিভ করলোনা, এজন্য স্যরি বলা উচিৎ ছিল। কিন্তু ও করলোনা। এ যুগের
মেয়েদের দায়িত্ববোধ বলতে কিছু নেই। সিনেমার নায়িকার মতো সবসময় ভাব নিয়ে
থাকে। ওদের ধারণা একেকজন প্রিন্সেস হয়ে গেছে। ছেলেরাই সব করবে আর ওরা মজা
নিবে। ছেলেগুলা এতোই সস্তা।
আসলে আমারো তাই মনে হয়। যে পরিমাণ ছেলেরা মেয়েদের পিছনে ঘুরাঘুরি করে,
তাতে ওদের ভাব বেড়ে যাওয়া অস্বাভাবিক না। মেয়েদের মনে এই ধারণা সেট হয়েই
গেছে যে, ছেলে মানেই ছ্যাঁচড়া। ওদের কোন আত্মসম্মানবোধ নেই। অল্প কিছু
ছেলের জন্য বাকীরাও অবহেলিত হচ্ছে।
এই মেয়েটারও অনেক ভাব। সবসময় আমাকেই আগে মেসেজ দিতে হয়। প্রচণ্ড রাগ হয়।
কিন্তু আবার কেন জানি ভালোও লাগে।
মেসেজ দিলাম, কোথায় চলে গেছিলি আমাকে রেখে?
কিছুক্ষণ পর উত্তর দিলো, যার সারমর্ম এমন, বাসায় ওর বিয়ের কথা চলছে। আজ
পাত্রের সাথে দেখা করতে গেছে বসুন্ধরার একটা রেস্তোরাঁয়। আমাকে নামিয়ে
দিয়েই সেদিকে চলে গেছে। ফোন ব্যাগে ছিল। বাসায় এসে টায়ার্ড ছিল তাই আর
কিছু বলেনি!!!
আমি অবাক হয়ে বসে রইলাম কিছুক্ষণ।
এখন বুঝতে পারলাম, তার হঠাৎ লাল শাড়ী পরা, খোঁপায় ফুল আর ভালোভাবে
সাজুগুজু করার আসল রহস্য। আর আমাকে গুরুত্ব দেয়ার কোন কারণওতো নেই। ছেলে
ভালো জব করে। স্মার্ট খুব এক্টা না হলেও বেশ ভদ্র। চেহারাও সুন্দর এবং
ফ্যামিলিও ভালো। এক কথায় পার্ফেক্ট।
ওর পরিবার থেকেই পছন্দ করা হয়েছে, এখন ছেলের পছন্দ হলেই বিয়ে।
আমি চুপ করে রইলাম। লামিয়া ঘুমাবে বলে বিদায় নিলো।
হঠাৎ করে মন কেমন যেনো হয়ে গেলো। বিকেলের প্রশ্নগুলা মাথাচাড়া দিয়ে
উঠলো। গাড়িতে যাওয়ার সময় লামিয়ার হাতে হাত লেগে যে অভূতপূর্ব অনুভূতির
সৃষ্টি হয়েছিল, তা আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো। নারী বড়ই দুর্বোধ্য, অজেয়
তার মন। সারাদিনে তার আচরণ নিয়ে কত ভাবনা উদয় হল মাথায়, কত স্মৃতি জমানো
এ সফর, সবগুলো একত্র হয়ে আমার ছোট মাথায় ঝেকে বসতে চাইলো।
মনে হল অনেক বড় কিছু একটা হারিয়ে ফেলছি, অনেক দামী। কলেজ লাইফ থেকে
একসাথে পথচলা আজ থমকে যাচ্ছে। কোন একজায়গায় গিয়ে আমার আবেগ আরো বেড়ে
যাচ্ছে। হঠাৎ মনে হল, এইতো, কত কঠিন পথ পাড়ি দেয়া এখনো বাকী। কত নাম না
জানা খাবার একসাথে খাওয়া হয়নি এখনো, একসাথে চলা হয়নি দিয়বাড়ির রোড।
এখনো চড়া হয়নি হাতিরঝিলের নৌকায়, বিকেলবেলা বুড়িগঙ্গার তীরে হাওয়াবদল করা
হয়নি। হয়নি রাইডে চড়ে আকাশ ছুতে চাওয়া একসাথে। কিংবা বাকী রয়ে গেছে
শীতের রাতে ব্যাডমিন্টন আর বৃষ্টিতে ভিজে ফুটবল। আহা কতকিছু এখনো করা
বাকি একসাথে।
আশ্চর্য, আজ একসাথে কত চিন্তা মাথায় চলে আসছে হুড়মুড় করে, আগেতো এসব
মাথায় আসেনি। কেন আজ এসব চিন্তা আমার মস্তিষ্কের সমস্ত প্রকোষ্ঠ দখল করে
রেখেছে, কেন??
না, আর ভাবতে পারছিনা। অথচ এইতো বিকেলবেলায়ই ওর দিকে তাকিয়ে হঠাৎ থমকে
গিয়েছিলাম, কিন্তু তখনো তো এতকিছু মাথায় আসেনি?
তাহলে কি তখন এসব পেটে ছিল?
এখন পেট থেকে সাপ্লাই হয়ে মাথায়???
হতে পারে। এসব সাইকোলজিক্যাল ভাবনা ছাড়তে হবে এখন। আর পারছিনা। নাহ!!!!
আচ্ছা, ওর মাথায়ওকি এরকম চিন্তা আসছে?
আসছে হয়ত। অথবা আসছেনা। হয়ত নতুনজনকে নিয়ে চিন্তা করছে। নতুন দিন কেমন
হবে, সংসার কেমন হবে। দুজনে মিলে নৌকায় ঘুরতে বেরুবে ছুটির দিন। কিংবা
আশুলিয়ায় দুজনে হাত ধরে হেটে বেড়ানো।
তার বর অনেক ব্যস্ত থাকবে অফিসের কাজে। সময় দিতে চাইবে না। তখন সে জোর
করবে। এরপরেও যদি না রাজী হয় তখন একাকী বসে থাকবে রাগ করে।
তখন কি তার আমার কথা মনে পড়বে? আমার সাথে কথা না বল্লেতো কতভাবে রাগ
ভাঙানোর চেষ্টা করতাম, অফিসার সাহেব কি তা করবে? নাকি তখনো কাজ নিয়ে
ব্যস্ত থাকবে আর লামিয়া মুখ গোমড়া করে আকাশ দেখবে।
"একাএকা তুই দেখবি যখন আকাশ,
বুঝবি তোর আকাশ জুড়ে শুধু আমিই ছিলাম। "
এই কবিতা অনেকবার শুনিয়েছিলাম ওকে।
ওর কি তখন এটা আবার মনে পড়বে???
ধুর! কিসব ভাবছি পাগলের মতো। চিন্তাগুলো সব কেমন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। না
সহ্য করতে পারছি না। মরে যেতে ইচ্ছে করছে। রবি বাবু বলেছিলেন - যার হৃদয়
কোমল, যার প্রেম গভীর
তাকেই সমস্ত বেদনা বইতে হবে। আমিও বয়ে চলেছি।
কিন্তু, না থাক, এখনি মরে গেলে চলবেনা। এখনো কত পথ বাকী। তারচেয়ে বরং
একটা ঘুম দিই। ঘুমকে বলা হয় দ্বিতীয় মৃত্যু। একেবারে মরার চেয়ে, প্রাথমিক
মৃত্যু ভালো। কিছু সময় মরে থাকবো, তারপর আবার দ্বিতীয় জীবন। আবার
নতুনভাবে বেচে থাকা।
৩. সকালে বাসায় পৌঁছালাম। ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করলাম। আব্বু ঘাট থেকে বাসায়
এনেছে। সবাই অধীর আগ্রহে আছে আমার জন্য। প্রায় ৬ মাস পর বাড়ী ফেরা।
কতকিছু হয়ে গেছে এরমধ্যে। দুজনের বিয়ে আর তিনজনের মৃত্যু। প্রকৃতি
প্রতিনিয়ত নিজের মধ্যে ব্যালেন্স করে যাচ্ছে। তার কোন ঝরা জীর্ণতা নেই।
সবসময় সে চঞ্চল।
নাস্তা করে ঘুমালাম। একটু পর একটা কল আসলো ফোনে। ঘুম ভেঙে গেলো। রিসিভ
করলাম। সায়মার গলা।
ফোন করেই বলল, স্যরি। এই মেয়েটার এই গুণটা ভালো। দোষ করে স্বীকার করে।
লামিয়ার এই গুণ নেই।
আমি ঠাণ্ডা গলায় বললাম, বলো কী বলবে?
সে বলল, শোনো আমি আর তোমার সাথে যোগাযোগ রাখতে পারবোনা..
:কেনো?
- আসলে আমার আগে একটা বয়ফ্রেন্ড ছিলো। তার সাথে ঝগড়া চলাকালীন তোমার সাথে
পরিচয়। তোমাকেও আমার ভালো লেগেছিল। কিন্তু কাল তোমার সাথে দেখা করতে
যাওয়ার সময় হঠাৎ একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসলো। রিসিভ করতেই বলল,
তুমি কোথায়?
আমি উত্তর দিলাম এয়ারপোর্ট এর কাছাকাছি। ও বলল, তাহলে এয়ারপোর্ট এর
সামনেই থাকো, আমি জার্মানি থেকে ফিরছি। তোমার সাথে দেখা করে যাবো। প্লিজ,
এই অনুরোধটা রাখো । ও অনেক অনুরোধ করলো, তাই আর ফেরাতে পারিনি।
এরপর ঘটনা বলল, ও একটা স্কলারশিপ নিয়ে জার্মানি চলে গেছে। এখন ওখানেই
সেটেল্ড। বাসায় আসছে বিয়ে করবে। বউও সেখানে নিয়ে যাবে। আমার সাথে ঝগড়া
হওয়ার পর আর কারো সাথে রিলেশন হয়নি। তাই আমাকেই আবার চাচ্ছে। ওর
ফ্যামিলিও আমার ব্যাপারে আগ্রহী। আমার বাসায় প্রস্তাব পাঠাবে। আমার মনে
হয়না তোমার সাথে কন্টিনিউ করা ঠিক হবে। সেটা বলার জন্য ফোন দিলাম। ভালো
থেকো। তুমি আমার চেয়ে ভালো কাউকে পেয়ে যাবে। আল্লাহ হাফেজ।
: আল্লাহ হাফেজ মানে কি? আমাকে অপেক্ষায় বসিয়ে রেখে তুমি আরেকজনের সাথে
দেখা করতে যাও। একবার বলতেওতো পারতে। আর আগে প্রেম ছিল, সেটা ক্লোজ করতে
না পারলে আমাকে জড়ালে কেন.... কথা শেষ করার আগে কল কেটে গেলো। জানি, এখন
ব্যাক করেও লাভ হবেনা। ফোন অফ। চিরতরেই। এই নাম্বারে আর ওকে পাওয়া যায়নি।
ফোন পাশে রেখে শুয়ে রইলাম। কি আর করার আছে, সে তার ভালোটাই খুঁজবে,
স্বাভাবিক। আমার আর কিছু করার নেই। যাক, বেশী কিছু হওয়ার আগেই বিদায়
নিয়েছে। এমনওতো হতে পারতো, আমার সাথে বিয়ের পর ঐ ছেলের কাছে চলে গেলো। এ
যুগে সবই সম্ভব। নায়িকা যদি বাবার ইচ্ছায় বিয়ের পর আবার আগের প্রেমিক
নায়কের কাছে ফিরে যেতে পারে, আমার ক্ষেত্রেও এটা অস্বাভাবিক নয়।
হুমায়ুন সাহ্বে একটা মহাসত্য কথা বলে গেছেন -
মানুষ হয়ে জন্মগ্রহন করার প্রধান সমস্যা হলো,মাঝে মাঝে ভূল ভ্রান্তির
কাছে পরাজয় স্বীকার করতে হবে।
গত দুমাসের অনেকগুলো স্মৃতি মনে আসতে চাইলো। সেগুলা বলে আর লাভ নেই। মন
খারাপ হচ্ছে আমার ব্যাগে রাখা সায়মার জন্য নেয়া চকলেট গুলোর জন্য। ওগুলা
এখন কে খাবে?
একটু পর উঠে আম্মুর রুমে গেলাম। বসে কোরান পড়ছে। আমি পাশে গিয়ে শুলাম।
এক্টুপর মায়ের কোলে মাথা দিলাম। আবারো চোখ গেলো আকাশের দিকে জানালার ফাক
দিয়ে।
সূর্য উঠেছে বেশীক্ষণ হয়নি। এখনো পুব আকাশে আছে। হালকা একটু মেঘ দেখা
যাচ্ছে। সামনে পুরো দিন পড়ে আছে। তাকে সারা আকাশ পাড়ি দিয়ে পশ্চিম আকাশে
হারিয়ে যেতে হবে।
কবে থেকে আকাশ দাঁড়িয়ে আছে একা,
তার বুক থেকে খসে পড়েছে কত তারা।
বেঁচে থাকলে আরো কত তারাই খসবে,
তা নিয়ে আকাশ কি দুঃখ করতে বসবে?
(নির্মলেন্দু গুণ)
আমি কোলে শুয়ে চোখ বন্ধ করলাম। মাদেরকে কিছু বলতে হয়না। এম্নিতেই বুঝে
যায়। মাথায় হাত বুলালেন। আমিও আদর নিতে থাকলাম। আমাকে নিয়ে ওনাদের কত
স্বপ্ন। এগুলো এখনো পূরণ করা বাকী। এখনো কত পথ পাড়ি দিতে হবে। মাত্র সকাল
হল।
জীবনানন্দ বলেছিলেন-
যে যাবার সেতো যাবেই,
কলমি ফুলের ফ্ল্যাটে ফিরবে হলুদাভ হাস।।
যে যাওয়ার, সে গেছেই। এখন নতুন ফ্লাট গড়তে হবে। এখানে অনেক হাস আসবে,
আবার যাবে। ফ্ল্যাটটা হতে হবে স্থায়ী।
গল্প: প্রশ্ন সমাপ্তি
©somewhere in net ltd.