নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার পরিচয় লেখার মাঝেই

ঘাসফুল

ঘাসফুল › বিস্তারিত পোস্টঃ

আহারে জীবন

১৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ২:০৭

আসলে আমরা আমাদের জীবনকে এখন দুইভাগ এ ভাগ করে ফেলেছি।
এক্টার নাম হল রিয়েল লাইফ, আরেক্টাকে আদর করে বলে ভার্চুয়াল লাইফ।

ভার্চুয়াল বা অনলাইন এর জীবন চালু হয়েছে খুব বেশীদিন হয়নি।
কিন্তু যখন থেকেই তা আমাদের হাতের কাছাকাছি এসেছে, তখন থেকেই আমরা তাকে আঁকড়ে ধরেছি।

নীল জগতের বর্ণীল সব ছবি, ভিডিও দেখে দেখে আমরা এতে নিজেদেরকে হারিয়ে ফেলেছি একেবারেই।
ফেসবুক টুইটার এর মত সামাজিক যোগাযোগ এর ওয়েবপেইজ গুলা আমাদেরকে এই জগতের দিকে আরো মারাত্মকভাবে ঠেলে দিয়েছে।

এই জগতে আমরা এতই মজা পেয়েছি যে বাস্তব / রিয়েল লাইফ বলে যে আরেকটা জীবন আছে, তাই আমরা ভুলতে বসেছি।

নানা রঙ্গের বাহাদুরিময় জগত দেখতে দেখতে ঘরের সামনের শুকনো পাতার মর্মর আওয়াজ এখন আর আমাদের কানে আসেনা। বসন্তের ফুল এখন শুধুই ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড করার বিষয়।

ফেসবুক সেলিব্রেটিদের জীবনের গল্প পড়তে পড়তে আমরা এতটাই শোকাহত যে, বাসায় অসুস্থ আম্মুর শরীরের খবর নেয়ার কথা মনে থাকেনা।

পাড়ার মুরুব্বিদেরকে দেখলে গা ঘেন্নায় জ্বলে যায়, কারণ ফেসবুকে প্রতিদিনই আমেরিকার টপ সেলিব্রেটি আমার ওয়ালে এসে কড়া নাড়ে। ঘুম থেকে উঠে এখন আর সূর্য দেখতে হয় না, বং সূর্যের চেয়েও সুন্দরি কোন মেয়ের ছবি আমার অনলাইন এ ঢোকার অপেক্ষায় বসে আসে নিউজ ফিড জুড়ে।

প্রতিভোরে ঘুম থেকে উঠে ফজর নামাজ পড়ে প্রাতঃভ্রমণ এর কথা এখনো উপদেশ এর বইয়ে ভালোই মানাচ্ছে। কারণ ফজর আজান শুনে আমি প্রতিদিন বিছানায় যাই।

আমার বোন অনেকদিন ধরেই জ্বর নিয়ে বিছানায় পড়ে আছে। তার পাশে গিয়ে কিছুক্ষণ বসার সময় আমার নেই, কারণ চ্যাটের অন্যপ্রান্ত এ এক সুন্দরি আপু খোপায় গোলাপ গাঁথতে গিয়ে হাতে কাটা বিঁধেছে। আমি এখন তার হাতের চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত।

ভার্চুয়াল এর রঙ্গীণ ফ্রেমে সবকিছুই মোহনীয়। এখানে কুৎসিত বলতে কোন কিছু নেই। কয়েকটা পেজ স্ক্রল করলেই হাজার হাজার সুন্দরি মেয়ে আমাকে ইশারা করছে। মেয়ে দেখতে এখন আর গার্লস কলেজের সামনে দাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা কী?

ফেসবুকে মেয়ের সুন্দর ছবি দেখলাম, ক্রাশ খেলাম, ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েই ফ্রেন্ড হয়ে গেলাম। কত সহজ ব্যাপার একটা বন্ধু বানিয়ে ফেলা।

কয়েকদিন চ্যাট করেই মেয়ের লুলামিতে মুগ্ধ হয়ে গেলাম, এরকম মেয়েই হয়না।
এক সপ্তাহ গেল, দুই, তিন, চার,
এরপর দু তিন মাসও গেল।

এর মধ্যেই নতুন আরো কয়েকটা মেয়ের ছবি দেখলাম। তাদের একজনের সাথেও ইদানীং চ্যাট হচ্ছে। সে আগের জনের চেয়েও অনেক কিউট।কত মিষ্টি মিষ্টি দুষ্টামি করে!!

এখন আর তাকে কেন যেন ভালো লাগেনা। সে অন্যরকম হয়ে গেছে। আগেরমত তার মেসেজে আমি রোমান্টিকতা খুঁজে পাইনা। সে মনে হয় অন্য কাউকে পেয়ে গেছে। আমাকে আর তার ভালো লাগছেনা। এভাবে আর সহ্য করা যায়না। একদিন ইচ্ছামত কথা শুনিয়ে ব্রেক আপ করে নিলাম।

আমি এখন অন্য কাউকে পেয়ে গেছি, সে আমাকে প্রতিবার এত্তগুলা উম্মা দেয়। আগেরজন বলতো ছি:, অসভ্য কোথাকার।

আমি এখন অনেক খুশি। কয়েক সাপ্তাহ কেটে গেল। ইদানীং সে আমাকে মেসেজ দেয়া কমিয়ে দিয়েছে। আগেরমত আর যখনতখন মেসেজ দিয়ে খোজ নেয়না কেন জানি.?

কয়েদিনের মধ্যেই সে নিজেই ব্রেক আপ করে চলে গেলো।

"আজ আমি বুঝতে পারছি, ভার্চুয়াল লাইফ ইজ অলওয়েজ ভার্চুয়াল। ভার্চুয়াল ফ্রেন্ড কখনওই আপন হতে পারেনা " - এরকম একটা জ্বালাময়ী স্ট্যাটাস চিন্তা করতে করতে হঠাৎ বোনের কাশীর আওয়াজ শুনলাম। অনেকদিন তার মুখও দেখতে পারিনি।

নিজের খুশিতেই ভার্চুয়ালকে আপন করলাম, এখন আবার তাকেই গালি দিচ্ছি।

এই জগত খুবই অচেনা। এখানে কাউকে আপন করতে যেমন সময় লাগেনা, তেমনি অল্পতেই সে পরও হয়ে যায়।
সবকিছু ছাপিয়ে রিয়েল লাইফের রিয়েল মানুষগুলাই আমাদের সব। হাত কেটে স্ট্যাটাস দিলে ওপার থেকে কয়েকটা উহ, আহ আহ লেখাই শুধু আসবে, কিন্তু যত্ন করে হাতে ব্যান্ডেজটা লাগিয়ে দিবে পাশের মানুষগুলোই।

এই সাধারণ ব্যাপারটা বুঝেও আমরা ভুল করি বারবার। প্রথমবার করি আবগের বশে। কিন্তু দ্বিতীয়বারও করি, বিবেকে।

সব হারিয়ে আমি এখন এশেজের নিয়মিত শ্রোতা।
মাঝরাতে এখন আমার কন্ঠে বেজে উঠে, ধূলাবালী ধূলাবালী মুছতে মুছতে আমারেই মুছে দিলে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.