নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি হচ্ছি কানা কলসির মতো। যতোই পানি ঢালা হোক পরিপূর্ণ হয় না। জীবনে যা যা চেয়েছি তার সবই পেয়েছি বললে ভুল হবে না কিন্তু কিছুই ধরে রাখতে পারিনি। পেয়ে হারানোর তীব্র যন্ত্রণা আমাকে প্রতিনিয়ত তাড়া করে।

মাহফুজ

তেমন কিছু লিখবোনা নিজেকে নিয়ে কারণ লিখতে গেলে সেটা এতো বিশাল হবে যে কেউ পড়বেনা; অবশ্য লিখলেই যে অনেকে পড়বে তাও না। যাই হোক আসি মূল বিষয়ে, আমি হচ্ছি সেই ব্যক্তি যে জীবনে চলার পথে একটি সুন্দর সেতু পেয়েছিলাম, মজবুতও ছিলো। সেতুটির পাশেই ছিলো একটি বাঁশের সেতু। আমি অনায়াসেই সুন্দর আর মজবুত সেতু দিয়ে ওপারে চলে যেতে পারতাম যেখানে খুব সুন্দর একটি পৃথবী আছে। আমি বোকার মতো নিজের খামখেয়ালিপনার কারণে বাঁশের সাঁকোতে উঠে পড়লাম যেটা ছিলো খুবই ভয়ানক এবং জায়গায় জায়গায় ত্রুটি অর্থাৎ নড়বড়ে আর খুবই গভীর। বাতাস দিলেই সেতুটি দুলতে থাকে ভয়ানক ভাবে।

মাহফুজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

অরিম, নিষ্পাপের প্রায়শ্চিত্ত!!!

২১ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ২:৪৩

-কেমন আছো?
-খুব ভালো আছি।
জীবনের এই প্রথম কাউকে মনে হয় বললাম খুব ভালো আছি।
-জিজ্ঞেস করবেনা আমি কেমন আছি?
-তুমি তো জানই জিজ্ঞেস করবো কি না!
-হুমম তা জানি। তুমি কাউকে জিজ্ঞেস
করোনা কেমন আছো আবার নিজেও কেমন আছো বলতে চাওনা। ভাবলাম এতদিনে বদলে গেছো হয়তো।

-বদলেছি কি?

-অবশ্যই বদলেছো, ঐ যে বললে খুব ভালো আছো। এমন তো বলতেনা আগে।

-সবকিছুই অপরিবর্তিত থাকবে তাতো না।
আসলে এই বদলে যাওয়াটা একেক জনের
একেক রকম। কারো বদলে যাওয়া সুক্ষ, বুঝা
যায়না।

-খোঁচা দিলে?

-নাহ খোঁচা দেবো কেনো?

আমি রিমির চোখের দিকে তাকিয়ে কথা
বলছি। দেখতে পাচ্ছি সেই চোখজোড়া
একটা অপরাধবোধ ধীরে ধীরে গ্রাস করছে।
আমি আগে এভাবে চোখে চোখ রেখে কথা
বলতে পারতামনা। এই রিমিই আমাকে
শিখিয়েছিলো চোখে চোখ রেখে কথা বলা।
কারো চোখের দিকে তাকালে কিংবা
চোখাচোখি হলে আমি অসম্ভব লজ্জা
পেতাম। সেই সাথে থাকতো এক প্রকার ভয়।
আমার মনে হতো আমার চোখের দিকে
তাকিয়ে আমার মনের সব কথা,
চিন্তাভাবনা পড়ে ফেলছে মানুষ। একদিনের
কথা মনে পড়লে এখনো হাসি পায়। রিমির
সাথে রেস্টুরেন্টে বসেছিলাম।

-এই দেখতো আমাকে কেমন লাগছে।
আমি অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম। আমি এমনিতেই
চোরা চোখে রিমিকে দেখি বারংবার
কিন্তু আমার দিকে তাকাও এভাবে কেউ
বললেই যেন আমি খেই হারিয়ে ফেলি।

-তোমাকে সবসময়ই সুন্দর লাগে।

-তুমি কপালের দিকে তাকিয়ে কি দেখলে,
আজব! ভালো করে তাকাও। আমার চোখ নাক, কানের দুল সবকিছু দেখো।

আমি আবার ওর কপালের দিকে তাকিয়ে
বললাম সবকিছুই সুন্দর।

-অই তোমার সমস্যা কোথায়? আমার চোখ
নাক সবকিছুকি আমার কপালে?
রিমি রেগে গেল।

-আরে বাবা দেখেছি; বললামই তো সুন্দর।

-না দেখনি, আবার দেখ। আমার চোখের
দিকে তাকাও।

-আমি পারবোনা, পারিনা আমি।
আমি কফির কাপটা হাতে নিলাম চুমুক
দেয়ার জন্য। রিমি আমাকে অবাক করে
দিয়ে কফির কাপটা কেড়ে নিল।

-এই তোমার প্রবলেম কি? কফিটফি পরে হবে
তাকাও আমার দিকে।

আমি তাকালাম, তবে রিমির চোখে নয়
কপালে।

-ভালো হচ্ছেনা কিন্তু, মাইর দিমু।
রিমির কপট রাগে আমি ওর চোখে চোখ
রাখলাম।

জানিনা সেই চোখদুটোতে কি ছিল! আমি
তাকিয়েই থাকলাম।মায়ায় ভরা সে চোখে।
আমার একটুও লজ্জা লাগলোনা, ভয়
পেলামনা রিমি আমার মন পড়ে ফেলছে
ভেবে।

-কি ভাবছ?

রিমির কথায় ভাবনায় ছেদ পড়লো। বাস্তবে
ফিরে এসে বুঝতে পারলাম,এই আর সেদিনের
রিমিতে বিস্তর ফারাক। মাঝখানে দুইটা
বছর হাওয়া।

যেদিন বিশেষ কিছু ঘটে সেদিন ঘুম থেকে
উঠে আমি একটা তেলাপোকা দেখি আমার
ঘরে। আজও তেলাপোকা দেখেছি আমার
মাথার উপর সিলিংয়ে। বিষয়টা কাকতালীয়
কিন্তু আসলেই ঘটে এমন। এর প্রমাণ পেয়েছি
অনেক বার। যেদিন আমার চাকরি হল
সেদিনও তেলাপোকা ছিল আমার
সিলিংয়ে, একবার এক্সিডেন্ট করলাম
সেদিনও তেলাপোকা দেখেছিলাম চোখ
খোলেই। সেদিন ওটা বসা ছিল আমার আমার
স্যান্ডেলে। মাঝে মাঝে ভাবি আমি সময়ে
সময়ে যে তেলাপোকা দেখি সেটা কি
একটাই নাকি একেক সময় একেকটা আসে!
আজও যে কিছু হবে তাও বুঝে ফেলেছিলাম
সকাল বেলা তেলাপোকা দেখে। তবে দুই
বছর পর রিমির সাথে এভাবে দেখা হয়ে
যাবে ভাবিনি। মেয়েটাকে পাগলের মত
ভালবাসতাম আমি। আমার জীবনের বেশ
কয়েকটা বছর সে আমার প্রতিটা
নি:শ্বাসের সাথে জড়িয়ে ছিল। ঘুমাতাম
ওর সাথে কথা বলে বলে, ঘুম থেকেও উঠতাম
ওর ফোন পেয়ে। স্বপ্নের মত ছিলো দিনগুলি।
সারাক্ষণ ভাবতাম রিমি আমার ঘরণী হবে।
বিয়ে করে ওকে নিয়ে আমি দার্জিলিং
যাবো হানিমুনে। দার্জিলিং গিয়ে কখন কি
করব সেই সিডিউলটাও ঠিক করে
ফেলেছিলাম আমরা। শুধু কি তাই, আমাদের
প্রথম বাচ্চার নাম কি হবে তাও জানতো
আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব। অথচ আজ দুজন দুই
মেরুতে দাঁড়িয়ে আছি। কেন?

সেই দিনটা কথা ভুলা সম্ভব না যেদিন আমাদের সবকিছু
তছনছ হয়ে গিয়েছিলো। রিমি সেদিন আমাকে
জরুরী ভাবে দেখা করতে বললো। আমি
তাড়াহুড়ো করে গিয়েছিলাম আমাদের
প্রিয় "রিমঝিম" রেস্তোরাঁয়। রেস্তোরাঁর
নাম রিমঝিম কেন জানিনা। আমরা যেতাম
কারণ আমাদের মধ্যবিত্ত হৃদয়ের আবেগ
অনুভূতি প্রকাশ সাথে হালকা ভোজ করা
যেত স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে। রেস্তোরাঁর
ভেতরে খুব সুন্দর একটা অ্যাকুরিয়াম ছিল।
তার ভেতরে ওয়াটার ফল আর কয়েকটা মাছ। মাছগুলোর রং আমি চিনিনা তবে অদ্ভুত
সুন্দর ছিল। একেকটার একেক নাম দিয়েছিল
রিমি। লাল আর নীলের মিশেল একটা মাছ
ছিল আমাদের ফেভারিট। রিমি ওটার নাম
দেয় অরিম! আমার অমিয় থেকে অ আর ওর
রিমি থেকে রিম।

নামকরণ শুনে আমি রিমিকে বলেছিলাম--
-তুমি দেখি স্বার্থপর!

-কেন?
-আমার নাম থেকে একটা আর তোমার নাম
থেকে দু'টো অক্ষর নিলে? নামটা তো
অমিরি, রিমিয়, এসবও হতে পারত?

রিমি তখন গাল ফুলিয়ে বলেছিল-ঠিক আছে
যাও, মাছটার নাম অমিয়ই রেখে দেই।
তোমার তিন অক্ষরই থাকবে তাহলে।
আমি হো হো করে হেসে উঠেছিলাম সেদিন
ওর বাচ্চাদের মত রাগ দেখে।

-আরে ধুর, তুমি যে নাম দিয়েছ সেটাই হবে।
আমার বাচ্চার নাম রাখার দায়িত্বটাও
নেবে তো?

ব্যস আর কিছু বলা লাগলোনা, পাগলিটা
খুশী হয়ে গেল। অল্পতে খুশী হয়ে যেতো
মেয়েটা। তাই ওকে নিয়ে অনেক দূর স্বপ্নের
ঘোড়া ছুটিয়েছিলাম। জানতামনা সেই
ঘোড়া আচমকা মুখ থুবড়ে আর্তনাদ করে উঠবে গন্তব্যে যাবার অনেক আগে।
ঘটনায় আসি তবে। রিমির খবর পেয়ে আমি
রিমঝিমে হাজির হলাম। সে তখনো
আসেনি। খেয়াল করে দেখলাম জানালার
পাশে যে টেবিলটায় প্রায়ই বসতাম আমরা
সেটা খালি নেই। বাধ্য হয়ে অন্য টেবিলে
বসলাম। অ্যাকুরিয়ামের দিকে চোখ পড়তেই
দেখি "অরিম" নেই! কেমন যেন একটা শুণ্য
অনুভূতি হল।

পরিচিত ওয়েটার একজনকে
ডেকে জিজ্ঞেস করলাম-অরিম কোথায়?

-কে স্যার?

ওয়েটার অবাক হয়ে তাকালো আমার দিকে।

-আরে বাবা অরিমকে চিননা, আমাদের
অরিম।

-সরি স্যার আমি চিনিনা।

বোকার মত তাকিয়ে থাকলো ওয়েটার।
আমার তখন বোধোদয় হল, অরিমিকে তার
চেনার কথা না।

-আসলে আমি মাছটার কথা জানতে চাইছি,
ঐ যে লাল নীল রংয়ের মাছটা।

-অহ বুঝতে পেরেছি স্যার। আজ সকালে
রেস্টুরেন্ট খোলে আমরা দেখি মাছটা মরে
পড়ে আছে। ম্যানেজার স্যার ফেলে
দিয়েছেন বের করে।

ওয়েটার মারা যাওয়া আর ফেলে দেয়া
শব্দগুলো এমন ব্যবহার করল যে, পৃথিবীটাকে আমার বড় নিষ্ঠুর মনে হলো।

-স্যার কোন সমস্যা?

-না না সমস্যার কি! প্রয়োজন ফুরোলে ছুড়ে
ফেলা দেয়া এটাই তো দুনিয়া।

-জ্বী স্যার! তা কিছু লাগবে আপনার?
-নাহ আপাততো কিছু না। তুমি যাও, পরে এসো।
কয়েক মিনিট পরেই রিমি এলো। ওর মুখের
দিকে তাকিয়েই আমার মন কু গাইতে শুরু
করলো। রিমিকে দেখে মনে হলো সে
নিজেকে আড়াল করতে চাইছে। আমার
চোখের দিকে তাকাতে পারছেনা বা
চাইছেনা। সবচাইতে বড় কথা সে একটাবারও
একুরিয়ামের দিকে তাকালোনা।

চেয়ার টেনে বসেই মোবাইল টিপতে টিপতে
জিজ্ঞেস করলো-কখন এলে?

-হবে ১৫-২০ মিনিট।
-অহ।

-রিমি কোন সমস্যা? তোমাকে এমন লাগছে
কেন?

রিমি আমার প্রশ্ন শুনে চমকে উঠে আমার
দিকে তাকালো। আমি ওর চোখের দিকে
তাকিয়ে পরিষ্কার বুঝতে পারলাম, এ চোখ
আমার রিমির নয়। যে চোখে চোখ রেখে
আমি কথা বলা শিখেছি, শতশত স্বপ্নের
জাল বুনেছি সে চোখ নয়।

-না না কোন সমস্যা নেই অমিয়। কিছু কথা
বলার ছিল আমার তাই তোমাকে ডেকে
আনা।

-বলে ফেলো কি বলবে?

রিমি কথা বলার শুরুর আগেই ওয়েটার এসে
খাবারের অর্ডার নিতে চাইলো। রিমি
অন্যদিন বেশ হাসি মুখে ওয়েটারের সাথে
কথা বলে। সেদিন মুখ তুলে তাকালোও না।
শুধু বললো-পরে, আমরা আলাপ সেরে নেই।
ওয়েটার বিনাবাক্যে চলে গেল।

-রিমি জান অরিম মারা গেছে?

-অহ কিভাবে মরলো?

ভাবলেশহীন ভাবে প্রশ্ন করে একুরিয়ামের
দিকে একবার তাকালো রিমি। খবরটা ওর
মনে একটুও দাগ কাটেনি। আমার মনে অদ্ভুত
একটা প্রশ্ন তখন উকি দিল। কেউ যদি
রিমিকে গিয়ে কোনদিন বলে, রিমি অমিয়
মারা গেছে! রিমিকি সেদিনও এভাবেই
বলবে-অহ, কিভাবে মরলো?

আমি অরিম কিভাবে মরলো সেটা বলার
আগেই রিমি শুরু করলো ওর কথা।

-অমিয় সমস্যা হয়ে গেছে। বাসায় বিয়ের
জন্য খুব চাপ দিচ্ছে।

-তাই, তাহলে চল বিয়ে করে ফেলি।

আমি তামাশাচ্ছলেই বলেছিলাম কথাটা।

-কাকে, তোমাকে?

রিমি এমন ভাবে জিজ্ঞেস করলো যে,
আমার মনে হলো আমি কোন প্রেতাত্মা।
রিমির সাথে কেন পৃথিবীর কাউকেই আমার
বিয়ে করা মানায়না।

-আমাকে নয়তো কাকে?
-তোমাকে বিয়ে করবো! সংসার চালাতে
পারবে? এতগুলো দিন তো কিছুই করতে
পারলেনা।
-সবেমাত্র পড়া শেষ করলাম, কি করার ছিল?

-অনেকে অনেক কিছুই করছে, তুমিই পারনি
শুধু।

-এর মানে কি?

-মানে বুঝার চেষ্টা করে দেখো। আমার আর
সময় দেয়া সম্ভব না। বাবা অসুস্থ্য, বড়
ভাইয়ের বিয়ে নিয়ে তাই কথাবার্তা চলছে।
উনারা চাচ্ছেন আমার বিয়েটা দিয়ে
দিতে।

-তাহলে আমি কি করব?

-কি আর করবে, চাকরি বাকরি কর তারপর
ভালো একটা মেয়ে দেখে বিয়ে করবে।

রিমির কথাগুলো আমার মাথার উপর দিয়ে
যাচ্ছিলো। অনেক সময় লাগলো বুঝতে যে সে
ফান করছেনা।

-রিমি তুমি কি সিদ্ধান্ত নিয়েই এসেছ?

-আমার কোন উপায় নেই অমিয়।

-তাহলে আমাদের এতিদিনের রিলেশিন,
স্বপ্ন, পরিকল্পনা! আমি কাকে নিয়ে বাঁচব
রিমি? দার্জিলিং যাবেনা তুমি আমার
সাথে?

আমি অবুঝ বালকের মত কেঁদে ফেলেছি তখন।

-প্লিজ অমিয় লোকে দেখছে। ছেলেমানুষি
করোনা। আবেগ দিয়ে জীবন চলেনা।

-এতদিন কি করে চললো তবে? প্রেম
করেছিলে কি ভেবে। আমাকে অল্প কয়েকটা
দিন সময় দাও। এভাবে আমাকে নি:স্ব করে
দিওনা তোমার দুইটা পায়ে পড়ি রিমি।

রিমি কোন কথা বললোনা।

-কিছু একটা বলো রিমি? তুমি তো কোনদিন
বিয়ের কথাই তুলনি। আর আজ এসে এমন ভাবে বলছো, নিজেকে আমার ফাসির আসামীর চাইতেও বেশি অসহায় মনে হচ্ছে। ফাসির আসামীও শেষ ইচ্ছা পূরণের সুযোগ পায়, তুমি তাও দিচ্ছনা আমাকে। আচমকা এসে ঝুলিয়ে দিতে চাইছো।

-ঠিক আছে দেখ কি করতে পারো।

রিমি আর একটা সেকেন্ড অপেক্ষা করলনা।
সোজা বেরিয়ে গেল।কেন জানি এই
যাওয়াটাই শেষ প্রস্থান মনে হয়েছিলো
আমার।

এরপর কয়েকদিন রিমির ফোন বন্ধ ছিল।
যোগাযোগ করার সুযোগই পাইনি। সিলিংয়ে
তেলাপোকা দেখে ঘুম থেকে উঠলাম একদিন
প্রায় দুপুরে। নাস্তার পর আম্মা দুইটা খাম
দিলেন আমার হাতে। প্রথমটা সরকারি
অফিসের খাম। সেটাই আগে খোললাম।
খোলেই আনন্দে আম্মাকে জড়িয়ে ধরলাম।

-আম্মা আমার চাকরি হয়ে গেছে।

আম্মাও আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলেন।
জলদি বাবাকে ফোন দিয়ে খবরটা জানাতে
বললেন।

আমি বাবাকে কল করার আগেই দ্বিতীয়
খামটা দেখতে চাইলাম।

বেশ বড় আর শক্ত খাম। খামের মুখ ছিঁড়ে
দেখি বিয়ের কার্ড। ভাবলাম কোন দুরের
আত্মীয় বা বন্ধুর বিয়ে। কিন্তু সেটা ছিল
রিমির বিয়ের কার্ড!
চোখের সামনে যেন সমস্ত পৃথিবীটা দোলে
উঠেছিল আমার। নিমিষেই সবকিছু ঝাপসা
হয়ে গেল। ভাগ্যিস মা ততক্ষণে রান্নাঘরে
চলে গেছেন। চাকরির খবর নিয়ে আসা
খামটার দিকে তাকিয়ে আমি তাচ্ছিল্যের
হাসি হাসলাম। মনে হলো এক খামে জীবন
আরেক খামে মৃত্যুর পরোয়ানা। আসলেই তো।
মৃত্যুর পরোয়ানা।রিমি যদি অন্যকারো হয়ে
যায় তাহলে বেঁচে থাকাই তো আমার দায়
হয়ে যাবে। রিমির সকল সাদ আহ্লাদ পূরণের
ক্ষমতা যেই ক্ষণটায় অর্জন করলাম সেই
ক্ষণটাতেই রিমিকে চিরতরে হারিয়ে
ফেললাম। এর চাইতে অসহায় পরিস্থিতি কি
হতে পারে একটা মানুষের সামনে। চোখের
সামনে রিমির সব স্মৃতিরা যেন ভীড়
করছিল। তবে রিমির চেহারা বড্ড বেশী
কুতসিত মনে হচ্ছিলো।
-এখানে কেন এসেছো?
রিমির প্রশ্নে আমার চিন্তার সুতোটায়
আবার টান পড়লো।

আম্মার কিছু রিপোর্ট নিতে আমি এসেছি
ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। কে জানতো
রিমির সাথে দেখা হয়ে যাবে?
-আম্মার রিপোর্ট নিতে। তুমি কেন এসেছো?

-আমার বাচ্চাটার রক্ত পরিক্ষা করতে।
বাচ্চার বাবা ভেতরে নিয়ে গেছে, আমার
ভয় লাগে।

-বাচ্চার কি হয়েছে?

-জানিনা, জ্বর কমেনা।
-অহ, আর এমনিতে ভালোই আছ না?

-আছি, খারাপ না। তোমার কি খবর? বিয়ে
টিয়ে করেছ?

-নাহ, করিনি আর করব কিনা জানিনা।

-কেন?

-তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছ বলে নয়,
কাউকে বিশ্বাস করতে পারিনা তাই।

পুতুলের মত ছোট একটা বাচ্চাকে নিয়ে এক
ভদ্রলোক তখন সেখানে হাজির হলেন।
আমাকে খেয়াল করেননি মনে হয়।
রিমির কোলে বাচ্চাটা দিতে দিতে
বললেন-অরিমকে তুমি নাও এবার, আমি
রক্তটা দিয়ে আসছি ল্যাবে।
বলেই তিনি চলে গেলেন।
অরিম! রিমি বাচ্চার নাম রেখেছে অরিম।
কেন জানি বাচ্চা শিশুটার দিকে তাকিয়ে
রিমির প্রতি রাগ অনেকটা কমে গেল।
কোলে নিতে ইচ্ছে করলো বাচ্চাটাকে।
কিন্তু নিলামনা। কেন নিলামনা জানিনা।
রিমিকে বুঝতেই দিলামনা ওর ছেলের নাম
শুনে অবাক হয়েছি। আমার ড্রাইভার জলিল
তখন আমার আম্মার রিপোর্ট নিয়ে হাজির।
আমি ওয়েটিং রুমে বসে জলিলকেই
পাঠিয়েছিলাম রিপোর্ট আনতে।

-স্যার চলেন, রিপোর্ট নিয়ে আসছি। ওরা
বলেছে এখন এলিফ্যান্ট রোডের চ্যাম্বারে
পাওয়া যাবে ডাক্তারকে। জ্যাম লাগার
আগে চলেন যাই।

-ঠিক আছে তুমি গাড়ী বের কর, আসছি।

-জ্বী স্যার।

জলিল চলে যাবার পর আমিও উঠে পড়লাম।
-রিমি আসি তবে?

-ভালো চাকরি পেয়েছ মনে হয়, গাড়ী কিনেছ?

-নাহ অফিসের।

-অরিমকে কোলে নেবেনা?

অদম্য ইচ্ছা থাকা সত্যেও রিমির মুখের উপর
না করে দিলাম।

-নাহ, আমার তাড়া আছে এখন।

আর অপেক্ষা করলামনা, প্রায় দৌড়ে চলে
এলাম।বুকের ভেতরে কেউ যেন হাতুড়ি
পিঠাচ্ছিল আমার। রিমিকে দেখে, ওর
বাচ্চার নাম শুনে শুকিয়ে যাওয়া পুরনো
ক্ষতগুলোতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছিললো।

রিমির সাথে সেদিন দেখা হয়ে যাবার পর
সবকিছুই স্বাভাবিক ভাবে চলছিলো।

অফিসে কাজের চাপ, বাসায় আম্মার বিয়ে
কর, বিয়ে কর বলে চাপ। প্রায় সপ্তাহ খানেক
পরে আমি অফিসে একদিন লাঞ্চ করছিলাম।
মোবাইলে তখন একটা মেসেজ আসে।
অপারেটর থেকে প্রতিদিন মেসেজ আসে আর
আমি ডিলিট করি। পারসোনাল মেসেজ
আসে খুব কম।।আমি মোবাইল হাতে নিয়ে
মেসেজ ডিলিট করতে গিয়ে দেখি। এটা
কোন অপারেটর মেসেজ না। আমি পড়া শুরু
করলাম-
আমাকে তুমি অনেক অভিশাপ দিয়েছো না?
ক্ষমা করতে পারোনি। আর আমিও জানি আমি ক্ষমার অযোগ্যা। আচ্ছা অমিয় রিমঝিম
রেস্তোরাঁর অরিম কি এমনিতেই মারা
গিয়েছিল? নাকি আমি অরিমের দিকে খুব
তাকাতাম বলে তুমি বদ-দোয়া দিয়ে মেরে
ফেলেছিলে? আসল কথাটা বলে ফেলি,অমিয়
আমি নিশ্চিত তুমি আমাকে অভিশাপ
দিয়েছো। আর তাই বিধাতা সেই অভিশাপ
কবুল করে আমার অরিমকে দিয়ে দিলেন
লিউকোমিয়ার মত প্রাণঘাতী অসুখ।
অরিমের জন্য দোয়া করো। সত্যিই যদি
দোয়া করো তাহলে সে দোয়ায় বলবে-আমার
অপরাধের শাস্তি যেন আমার অরিমকে ভোগ
না করতে হয়। "নিষ্পাপ অরিমকে যেনো প্রায়শ্চিত্ত করতে না হয় তার লোভী মায়ের পাপ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.