নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি হচ্ছি কানা কলসির মতো। যতোই পানি ঢালা হোক পরিপূর্ণ হয় না। জীবনে যা যা চেয়েছি তার সবই পেয়েছি বললে ভুল হবে না কিন্তু কিছুই ধরে রাখতে পারিনি। পেয়ে হারানোর তীব্র যন্ত্রণা আমাকে প্রতিনিয়ত তাড়া করে।

মাহফুজ

তেমন কিছু লিখবোনা নিজেকে নিয়ে কারণ লিখতে গেলে সেটা এতো বিশাল হবে যে কেউ পড়বেনা; অবশ্য লিখলেই যে অনেকে পড়বে তাও না। যাই হোক আসি মূল বিষয়ে, আমি হচ্ছি সেই ব্যক্তি যে জীবনে চলার পথে একটি সুন্দর সেতু পেয়েছিলাম, মজবুতও ছিলো। সেতুটির পাশেই ছিলো একটি বাঁশের সেতু। আমি অনায়াসেই সুন্দর আর মজবুত সেতু দিয়ে ওপারে চলে যেতে পারতাম যেখানে খুব সুন্দর একটি পৃথবী আছে। আমি বোকার মতো নিজের খামখেয়ালিপনার কারণে বাঁশের সাঁকোতে উঠে পড়লাম যেটা ছিলো খুবই ভয়ানক এবং জায়গায় জায়গায় ত্রুটি অর্থাৎ নড়বড়ে আর খুবই গভীর। বাতাস দিলেই সেতুটি দুলতে থাকে ভয়ানক ভাবে।

মাহফুজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

রক্ত এবং ভালোবাসার যাত্রা

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ২:৫২






-ঠিক আছে আমি দেখছি আর তুমিও চেষ্টা চালিয়ে যাও। আমি রাখছি।

অয়ন ফোন রেখে পাশ ফিরেই চেয়ে দেখে সুমনা ওর পাশে এসে বসেছে। আজ ভ্যালেন্টাইন। গতকাল রাত ১২ টার পর সুমনা অয়নকে প্রপোজ করেছিলো। শেষবার যখন একসাথে বসেছিলো তখনো ওরা খুব ভালো ফ্রেন্ড। বন্ধুত্বের সীমারেখা ছাড়িয়ে এখন তারা দুজনেই প্রেমিক-প্রেমিকা। কিছুটা অস্বস্তি অনুভব করছে ওরা। অয়নের অস্বস্তি বেশি হচ্ছে কারণ সে লাজুক স্বভাবের ছেলে। সুমনা দেখেই সে লাজুক হাসিটা দিল। কেউ কোন কথা বলছেনা। দুজনেই ব্যস্ত মনে মনে কি বলবে সেটা গোছাতে।

সুমনাই শুরু করল প্রথম।
-কি অবস্থা, ক্যাম্পাসে কখন আসা হলো?
সুমনা এমন ভাবে বললো যাতে তুই বা তুমি কোনটাই সম্বোধিত হচ্ছেনা। এতদিন ওরা তুই করেই কথা বলতো।

-এই মিনিট দশেক।
বলেই অয়ন আবার চুপ করে গেল।

-এই শুন আমি তোকে তুমি বলতে পারবনা, ইম্পসিবল।
সুমনা কথাগুলো বলেই লজ্জায় লাল।

-আমিও এই কথা বলতে চাইছিলামরে, তুমি বলা সম্ভব না।
অয়নও স্বস্থির নি:শ্বাস ফেললো।

একটা সাদা আর একটা লাল গোলাপ বের করে অয়নকে দিলো সুমনা। জীবনের প্রথম কারো কাছ থেকে ফুল পেয়ে অয়ন খুব খুশী। পরক্ষণেই তার মন খারাপ হয়ে গেলো; সে সুমনার জন্য কিছুই আনেনি। আসলে অয়ণ ফরমালিটি বুঝেনা, তার কাছে ফরমালিটি মানে স্রেফ ভদ্রতা। যেখানে আন্তরিকতার ছিটেফোঁটাও নেই।

অয়নকে বিষন্ন দেখে সুমনা জিজ্ঞেস করলো -কিরে তুই ফুল পেয়ে চুপসে গেলি?

-আমি তো কিছুই আনিনি।

-তুই তো এসেছিস, এটাই আমার উপহার।

-তুই আসলেই অনেক ভালো। এবার বল গোলাপ দুইটা কেন?

-একটা ভালবাসার আর অন্যটা শান্তি চুক্তির জন্য।

-মানে!

-লাল গোলাপ দিয়েছি আমার ভালবাসার প্রথম নিদর্শন হিসেবে আর সাদাটা তোর সাথে প্রথমেই শান্তি চুক্তি করে নিলাম। তুই যা রগচটা, আমি খুব ভয় পাই।

অয়ন হাহা করে হাসতে লাগলো সুমনার কথা শেষ হতেই।

-হাসছিস কেন?

-তুই সত্যি ভয় পাস আমাকে?

-পাই তো, শুধু আমি কেন অনেকেই ভয় পায়। তুই একটা ঘাড় ত্যারা অয়ন।

-অই তাইলে আমাকে ভালবাসতে গেলি কেন? ঘাড় সোজা একটা খোঁজে নিতি।

-আমার ইচ্ছা আমি ভালবেসেছি, তোর কি রে?
দু'জনে আবার হাসতে লাগলো নিজেদেরই কথাবার্তায়।

-আচ্ছা সুমনা তুই আজ ঠিক আছিস তো?

-ঠিক আছি মানে?
অয়নের অদ্ভুত প্রশ্ন শুনে সুমনা অবাক হল।

-আরে না বলছিলাম তুই আজ সুস্থ আছিস কি না, মানে শরীর ঠিক আছে তো?

সুমনা আরো বেশী অবাক হল।
-কি আজগুবি কথা বলছিস! শরীর খারাপ হলে এখানে এলাম কেন?

-তাহলে চল, এক জায়গায় যাব।

-কোথায়?

-সেটা গেলেই দেখবি, আগে চল।

-ঈশ বলনা কোথায় যাব? সাসপেন্স করিস না তো, ভাল্লাগেনা।
অয়নের হেয়ালীতে সুমনা সত্যিই বিরক্ত হচ্ছে।

-আমাদের ভালবাসার প্রথম দিনটাকে স্মরণীয় করে রাখতে চাই।

-আজফকের দিনটা এমনিতেই তো স্পেসাল।

-আরো স্পেসাল করবো। বকবক করিসনা আয় প্লিজ। তুই একটু দাঁড়া, আমি একটা ফোন দিয়ে আসি।

দুই মিনিট পর অয়ন ফিরে আসলো।
-এবার চল।

সুমনা দ্বিধান্বিত হলেও আর বাঁধা দিলনা। ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে একটা রিকসা নিল অয়ন। সুমনা একটু দূরে ছিল তাই বুঝতে পারলনা অয়ন কোথায় যাবে বলে রিকসা ঠিক করেছে। ধীরগতিতে চলতে শুরু করেছে রিকসা। সুমনা কোন কথা বলছেনা।অয়নই শুরু করলো।

-জানিস সুমনা তোকে অন্যদিনের চাইতে বেশী সুন্দর লাগছে। মনে হয় গার্লফ্রেন্ডরা বান্ধবীদের চাইতে বেশী সুন্দর হয়।
বলেই অয়ন আবার হাসলো।

-কিন্তু তোকে সুন্দর লাগছেনারে অয়ন। কেমন জানি ক্ষ্যাত মনে হচ্ছে। বয়ফ্রেন্ড থেকে ফ্রেন্ড হিসেবেই তুই পারফেক্ট ছিলি।

অয়ন সুমনার মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করলো যে, সুমনা সিরিয়াসলি বলছে না মজা করছে। সুমনার মুখয়ব দেখে সে কিছুই বুঝতে পারলনা তবে ধরে নিল এটা ফান।

-বয়ফ্রেন্ড হিসেবে যখন এতই বেমানান তাহলে এক কাজ করি।

-কি কাজ?

-ফুলগুলো দেখ এখনো তাজা আছে।

-তো কি হয়েছে!

-এদু'টো তুই ফিরিয়ে নে আর দেখ উপযুক্ত কোন ফুলদানী পাস কি না?

অয়ন কথাগুলো খুব সিরিয়াস ভাব নিয়ে বললেও সুমনা অট্টহাসি দিয়ে উঠলো।
-নারে অয়ন, ফুলদানী চ্যাঞ্জ করলে ফুল নস্ট হয়ে যাবে। থাক যেখানে আছে সেখানেই।

-তাহলে আমার হাতে হাত রেখে বল ভালোবাসি।
সুমনা তাই করল। বেশ জোরে অয়নেরহাত ধরে বললো-ভালবাসি।

-এই মামা রাখেন এখানে।

সুমনা তাকিয়ে দেখে মেডিকেল গেটে এসে থেমেছে ওরা। সে আরেক দফা অবাক হলো।
-মেডিকেলে কেন নিয়ে এলি অয়ন?

-কাজ আছে, জলদি তিনতলায় চল।
সুমনা কিছু না বলেই অয়নকে ফলো করে।

তিনতলায় উঠেই একটা কেবিনের সামনে এসে দাঁড়ালো ওরা। দরজায় টুকা দিতেই বেরিয়ে আসলো উদভ্রান্ত চেহারার এক তরুণ। চোখের নীচে কালি পড়েছে ছেলেটার। ছেলেটাকে দেখে সুমনা চিনতে পারলনা। অবশ্য পরিচয় করানো বা পরিচিত হওয়ার মুইইডে নেই অসহায় তরুণ। অয়নকে দেখে যেন হাতে আসমান পেয়েছে সে। চোখেমুখে আচমকা এক ঝিলিক খেলে গেল।

-ভাই আপনি আসছেন! আমি জানতাম আপনি কিছু একটা ব্যবস্থা করবেন। আসেন ভেতরে আসেন।

অয়নের হাত ধরে টেনে কেবিনের ভেতর নিয়ে গেল ছেলেটা। সুমনাও পিছু পিছু ঢুকলো। কেবিনের বেডে চোখ পড়তেই চুমকে উঠলো সুমনা। একটা জীবন্ত লাশ যেন শুয়ে আছে বিছানায়। রক্তশূন্য ফ্যাকাসে চেহারার এক মেয়ে। মেয়ে না কি মহিলা বুঝা না গেলেও মানুষটা খুবই সুন্দরী সেটা বুঝা যাচ্ছে।

-মাধবী, দেখো কে এসেছেন? অয়ন ভাই আর উনার বান্ধবী সুমনা আপা।

শয্যাশায়িনী মলিন হাসি দিয়ে চাইলেন দুজনের দিকে। কোন কথা বললেননা। সুমনা সেই হাসির মাঝে দেখতে পেল বেঁচে থাকার আকুল আবেদন। অসহায়ত্ব আর জীবন এই দুইয়ের মাঝখান থেকে এর চেয়ে সুন্দর হাসি হয়তো আর হতে পারেনা।

অসহ্য নীরবতা ভেঙে অয়নই কথা শুরু করলো।
-শাওন তুমি যাও ঝটপট ব্যবস্থা কর। সময় নস্ট করার দরকার নেই।

-জ্বী ভাই আমি যাচ্ছি।
বলেই শাওন নামের ছেলেটা হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে গেল। ও চলে যেতেই সুমনাকে নিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে এল অয়ন। বাইরে এসেই প্রশ্নের পর প্রশ্ন করতে করতে লাগলো সুমনা।

-কিরে অয়ন আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা। এরা কারা? মেয়েটার কি হয়েছে? কিসের ব্যবস্থা করতে গেল শাওন নামের ছেলেটা?

অয়ন লম্বা একটা নি:শ্বাস নিল। তারপর বর্ণনা করলো বিষয়টা।

-সুমনা প্লিজ আমার উপর রাগ করিসনা। তোকে কিছুই বলতে পারিনি আগে সময়ের অভাবে। ওদের নাম তো শুনলি। মাধবী আর শাওন একে অন্যকে ভালবেসে বিয়ে করেছিল পরিবারের অমতে। গত পরশু মাধবীর প্রসব ব্যথা উঠলে এখানে নিয়ে আসা হয়। ওদের কপাল খারাপ, একটা মৃত বাচ্চা প্রসব করে মাধবী। প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। কয়েক ব্যাগ রক্ত ইতিমধ্যে দেয়া হয়েছে। আজ কোথাও কোন ভাবেই রক্ত পাওয়া যাচ্ছিলনা। দুজনের পরিবারের কেউই আসেনি এই বিপদের সময়ে। ওরা জানিয়েছে কি না তা অবশ্য জানিনা আমি। মাধবীর রক্তের গ্রুপ আর তোর গ্রুপ একই কিন্তু কোনদিন রক্ত দিসনি। তাই আজ সকালে এই অবস্থা জেনেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি তোকে নিয়ে আসব আর নিয়েও এলাম। ভ্যালেন্টাইন ডে তে কতজন কতকিছুই করছে আমরা না হয় অন্যরকম ভাবে ভালবাসা প্রকাশ করলাম আর দিনটাকে স্মরণীয় করে রাখলাম। রাগ করিসনা প্লিজ আর প্রথম দিনেই প্রেমিকার শরীর থেকে রক্তচোষা প্রেমিককে ক্ষমা করে দিস। তবে তুই না করিসনা।

লম্বা একটা দম নিয়ে থামলো অয়ন।

সুমনার দিকে ভালো করে তাকাতেই বুঝতে পারলো ও কাঁদছে।

-কি রে কাঁদছিস তুই?

সুমনা কান্না লুকানোর কোন চেষ্টাই করছেনা।
-কাঁদছিই তো। তবে একটু পরে শরীর থেকে রক্ত যাবে সেই ভয়ে বা কষ্টে নয়। আনন্দে কাঁদছি। আমার আর কোন সন্দেহ নেইরে অয়ন। আমি ভালবাসার মানুষ বাছাইয়ে ভুল করিনি। তাছাড়া তুই ভাবলি কি করে আমি রক্ত দিতে আপত্তি করব? আমি আমার অয়নকে ছোট করব?

অয়নের খুব কান্না পাচ্ছে কিন্তু সে সুমনার সামনে কাঁদতে পারবেনা। তাই হঠাৎ সুমনাকে ওর বুকে জড়িয়ে নিল। সুমনা তাই দেখতে পেলনা অয়নের চোখের জল।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.