![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাড়ী আখাউড়া। আখাউড়া রেলওয়ে হাইস্কুল থেকে পাস করে সোজা ঢাকায় চলে আসি। কিছুদিন সিটি কলেজে ছিলাম। ছিলাম জগন্নাথেও। তারপর টোকিওতে কাটিয়েছি সাড়ে ছয়টি বছর। দেশে ফিরে এসে চাকুরি আর সংসার নিয়ে আছি। দুটো ছেলে, মাহি আর রাহি। একজনের সাড়ে ছয় আর আরেকজনে সদ্য চার পেরিয়েছে। ওদের নামদুটো জুড়ে দিয়েই আমার নিকের জন্ম। বেশিরভাগ সময়কাটে সন্তানের সান্নিধ্য। ঘরকুনো মানুষ আমি। লেখালেখিতে হাতেখড়ি এই সা ইন বল্গে এসেই। কেউ বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিল ফিরিয়ে দেয়ার মত উদ্ধত্য আমার নেই। সবারই বন্ধু হতে চাই।
ডাক্তার আইজুদ্দিনের কোন বিপদ এলেই প্রথম বৌয়ের কাছে ছুটে আসে। সে দ্বিতীয় বৌয়ের মাত্রারিক্ত গঞ্জনা হোক কিংবা কোন অসুখ বিসুখ হোক। একবার ত কেবল ক্ষিদের জ্বালায় ছুটে এসেছিল রাহীমনের কাছে। প্রথম প্রথম রাহীমন জায়গা দিতে চাইত না কিন্তু একসময় মায়া পরে যায় বেহায়া লোকটির প্রতি। রাহীমনের ছেলে সোহেল খুব খুশী হয় বাবা আসলে। আট বছরের ছেলেটির বাবার প্রতি একটুও ক্ষোভ নেই। অনেক সময় আবদার ধরে বাবার সাথে যাবার, রাহীমন তখন মারতে আসে।
আইজুদ্দিনের ডাক্তার উপাধিটি বস্তিবাসীদের দেওয়া। একসময় আইজুদ্দিন এক কবিরাজের সাগরেদি করত। বস্তিতে আসার পর সেই বিদ্যে দিয়ে সবার টুকটাক অসুখ সারাত, আবার অনেক ক্ষেত্রে হয়তবা বাড়াত। সেই থেকে আদর করে অনেকে হয়তবা বিদ্রুপ করেই তাকে ডাক্তার আইজুদ্দিন বলে ডাকতে শুরু করে।
এইবার আইজুদ্দিন নিজেই বড় অসুখ বাধিয়ে এসেছে, অনবরত কাশতে থাকে, একসময় দলা পাকিয়ে কফের সাথে রক্ত বেরিয়ে আসে।
রাহীমন বাড়ন করেছে সোহেলকে বাবার সাথে বেশি মেশতে, যদি বা রোগটি ছোয়াছে হয়।
সোহেল সকাল থেকে সন্ধ্যাতক পাশের একটি মার্কেটে কাটিয়ে দেয় দুএক দোকানীর ফুটফুরমাইশ খেটে। ধরাবাধা কোন মাইনে নেই যদিও।
সকালেই মন খারাপ করে সোহেল রওয়ানা দেয় পাশের মার্কেটে।
মার্কেটের বারান্দায় একটা টুলে বসে থাকে সে, চা, সিগারেট কিংবা বড় নোটের ভাংতি, কারো কিছু দরকার পড়লেই, ডাক পড়ে তার। দোকানি মজিদ মিয়া সোহেলকে একটু বেশিই আদর করেন, ভদ্রলোক নিঃসন্তান, যা একটা ছেলে হয়েছিল ভয়ানক এক অসুখে মারা গেছে।
দুপুরের দিকে মজিদ মিয়া টের পান ছেলেটার মন খারাপ।
"কিরে তোর মন খারাপ কে?" সস্নেহে জিজ্ঞেস করেন তিনি।
কোন উত্তর না দিয়ে চুপচাপ বসে থাকে সোহেল।
মজিদ মিয়া কথা না বাড়িয়ে দুপুরের খাবারের আয়োজনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। দোকানের পিছনে ছোট্ট একটি জায়গায় কাজটি সারেন তিনি। কোনদিন ভুলেন না সোহেলের জন্য তার খাবারের কিছুটা অংশ ছেড়ে দিতে, বাসা থেকে খাবারের সরবরাহটাও থাকে একটু বেশি।
ঘরের মানুষ হয়ত ছেলেটির কথা জেনে গেছেন তাই খাবারের বরাদ্দটাও ঠিক ওভাবেই করা হয়।
আয়োজন শেষ হলে খেতে ডাকেন মজিদ মিয়া সোহেলকে। সোহেল জবাব দেয় ক্ষিদে নেই।
মজিদ মিয়া বুঝতে পারেন, কোন কারনে ছেলেটার মন খুব খারাপ।
ধমক মেরে ডেকে পাঠান সোহেলকে।
"খাবিনা কে? তোর কি অইছে কছেন।"
মজিদ মিয়াকে সব খুলে বলে সোহেল।
মজিদ মিয়ার চাপাচাপিতে অনিচ্ছা সত্তেও দুপুরের খাবারটা দুজনে মিলে সেরে ফেলে।
ফিরে টুলে বসে ঝিমুতে থাকে সোহেল। এই সময় দোকানিসহ পুরো মারকেট ঝিমুতে থাকে।
সন্ধের দিকে মজিদ মিয়া সোহেলকে নিয়ে যান মার্কেটের দোতালায়। দোতালার ডাক্তার সাহেবকে সোহেল চিনলেও খুব একটা খাতির নেই।
মজিদ মিয়া ডাক্তারকে বলে কয়ে সোহেলের বাবার জন্য একটা সাদা কাগজে কয়টা ঔষধের নাম লিখিয়ে নেন। ডাক্তার সাহেব রোগীর রোগের বর্ণনা ছেলের কাছ থেকে শুনে নেন। তারপর মজিদ মিয়া সোহেলকে নিয়ে মার্কেট ঘুরে ঘুরে ঔষধ কেনার টাকার জোগাড়ে নামেন। সব দোকানিই কিছু কিছু টাকা দেয়, যাদের ফুটফরমাইশ খাটে সোহেল, তারা দেয় একটু বেশি।
রাতে ঔষধপত্র নিয়ে ঘরে ফেরে সোহেল। ডাক্তার আইজুদ্দিন তখন জ্বরে বিছানায় কাতরাচ্ছে।
রাহীমন ক্লান্ত চেহারায় মাথায় পট্টি দিচ্ছে স্বামীর।
দেরি না করে ডাক্তারের নির্দেষমত ডাক্তার আইজুদ্দিনকে ঔষধ খাওয়ানো হয়।
তিন চারদিনে সেরে উঠে ডাক্তার আইজুদ্দিন।
সোহেলের মুখে আবার হাসি ফুটে উঠে যদিও রাহীমনের মনের কোন পরিবর্তন ঘটেনা।
এক বিকেলে বাবা ছেলে ঘুরতে বেরোয় পাশের এক খেলার মাঠে, সোহেল ছোটাছুটি করে বেরোয় আর সব ছেলেদের সাথে, ডাক্তার আইজুদ্দিন বসে থাকে মাঠের একপাশে।
ফেরার পথে এক টাকার একটা চকোলেট কিনে দেয় ডাক্তার আইজুদ্দিন ছেলেকে।
কথায় কথায় ছেলের কাছ থেকে শুনে নেয় চিকিতসার টাকা জোগাড়ের কাহিনী।
শুনে কি জানি চিন্তা করে আইজুদ্দিন, তারপর জিজ্ঞেস করে ছেলেকে ডাক্তারের লিখা কাগজটার কথা। তোষকের তলায় রাখা কাগজটা ঘরে ফিরে বাবাকে এনে দেয় সোহেল।
পরের দিন সকালে রাহীমন তাগাদা দেয় আইজুদ্দিনকে এবারকার মত বিদায় হওয়ার জন্য। আইজুদ্দিন গায়ে না মেখে তাড়া দেখিয়ে সোহেলকে সাথে করে বেরোয়, সকালের নাস্তা করতে ভুলে না যদিও।
"শিশু পারক, চিড়িয়াখানা এসব জায়গায় ঘুরতে ইচ্ছা করে না বাবা" ছেলেকে আদরমাখা সুরে শুধোয় ডাক্তার আইজুদ্দিন।
টাকা কই আর লইয়া যাইবডাই কে? সোহেল উত্তর দেয়।
"আমি লইয়া যামু, আর একটু চেষ্টা করলে টাকাটাও যোগাড় হইয়া যাইব"
সোহেল কিছু বুঝতে না পেরে বাবার দিকে তাকায়। পাঞ্জাবির পকেট থেকে ডাক্তারের কাগজটা বের করে আইজুদ্দিন।
"ডাক্তারের কাগজটা লইয়া চৌরাস্তার মোড়ে দাড়াইতে পারবিনা বাবা বড়লোকের গাড়ি দেইখ্যা ঔষধের কথা কইয়া ট্যাকা চাইবি, এতে ম্যালা টাকা পাইবি।"
সোহেলে বাবার কথা শুনে হা করে বাবার দিকে তাকিয়ে থাকে, কথাগুলো হজম করতে কষ্ট হয় ওর।
"কোন অসুবিধা নাই, এমন যায়গায় দাড়াবি যেখানে পরিচিত কেউ থাকব না। আর আমি ত থাকুমই।"
"মিছা কথা কইয়া ভিক্ষা করতে পারুম না আমি, কথাগুলো বলতে গিয়ে সোহেলের চোখ ছলছল করে উঠে।"
বাবার এই অসত প্রস্তাবে মনে কষ্ট পায় ও। "তুমি আমারে মানুষ ঠকাইতে কও"
"বড় লোকেরা ত আমগো মত হাজার হাজার মানুষ ঠকাইয়া বাড়ি গাড়ি বানায়, ওদের দুএকজন ঠকাইলেবা দোষ কি?" ডাক্তার আইজুদ্দিন যুক্তি দেখায়।
"আমি পারমু না" এবার জোর গলায় বলে সোহেল।
এবার ছেলের কথায় রাগ ধরে যায় আইজুদ্দিনের। "তয় ছ্যমরা আমার সামনেনতন দূর হ"
বাবার অযাচিত এই নিষ্ঠুর আচরনে, সোহেলের ছোট্ট হদয়টি দুমড়ে মুচড়ে যায়, বুক ভেঙ্গে কান্না আসতে চায়। বাবাকে ছেড়ে যেতে মন চায় না ওর। মাথানিচু করে বসে থাকে ও।
ছেলে একসময় ওর কথা মেনে নিবে এ আশায় সময় ক্ষেপন করতে থাকে আইজুদ্দিন। কিছুক্ষন নিশ্চুপ বসে থাকার পর আইজুদ্দিনকে নিরাশ করে মার্কেটের দিকে হাটা ধরে সোহেল। পেছনে বসা বাবা ছেলের মাথা নিচু করা ক্ষুদ্র অবয়বটাকে ধীরে ধীরে অপসৃত হতে দেখে কিন্তু দেখেনা ছেলের গাল বেয়ে অনবরত নামতে থাকা জলের উষ্ণ জলের ধারাকে।
কেন জানি আইজুদ্দিন মনটা হঠাত করে অন্ধকার হয়ে আসে। অপরাধবোধের প্রকট অনুভুতি খচখচ করতে থাকে মনের ভেতর।
একসময় আইজুদ্দিন হাটা ধরে উলটো পথে, বস্তির দিকে।
ঘরে পৌছে রাহীমনকে পেয়ে যায় আইজুদ্দিন, কাজে বেরোচ্ছিল সে তখন।
সবামীর চোখেমুখে ভাবান্তর লক্ষ করে শুধোয়, "ফিরা আইলেন যে?"
গম্ভীর চেহারায় খাটের কোনে বসে থেকে কি জানি চিন্তা করতে থাকে আইজুদ্দিন।
হঠাত করেই নাটকীয় ভংগীতে রাহীমনের হাতদুটো জড়িয়ে ধরে আইজুদ্দিন।
"সোহেলরে কইয় আমারে যেন মাফ কইরা দেয়" কথাগুলো বলতে গিয়ে গলা বুজে আসে আইজুদ্দিনের।
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে স্বামীর দিকে তাকিয়ে থাকে রাহীমন। ঘটনার আদ্যোপান্ত না জানা রাহীমন অবাক হয় স্বামীর এই অযাচিত আচরনে।
রাহীমনকে কিছু বোঝার সুযোগ না দিয়েই ঝড়ো গতিতে ঘর থেকে বেরিয়া পরে আইজুদ্দিন।
রাহীমন কিংক্রতব্যবিমুঢ় হয়ে বসে থাকে।
বাসে ঝিম মেরে বসে থাকা আইজুদ্দিনের কেবলই ছেলে সোহেলের কথা ভাবতে থাকে।
ছেলে তাকে যে খুব পছন্দ করে এটা আইজুদ্দিন টের পেলেও নিজেকে ব্যাপারটি খুব একটা ভাবার সুযোগ দেয়নি। ভাবতে ভাবতে চোখ ভিজে আসে আইজুদ্দিনের।
"টিকেট দেন"
কন্ডাক্টরের কথায় সবম্ভিত ফিরে তার। টিকেট বের করতে গিয়ে সাথে একটা কাগজও বেরিয়ে আসে।
ডাক্তারের দেয়া পথ্যের নাম লেখা কাগজটি।
কাগজটি কিছুক্ষন নেড়েচেড়ে ছিড়ে ফেলতে উদ্যত হয় আইজুদ্দিন। ছিড়তে গিয়ে কাগজের উলটো পিঠে লেখা কাচা হাতের কয়টা লেখার দিকে নজর পরে তার।
কষ্ট করে পড়তে চেষ্টা করে সে। কিছুক্ষন চেষ্টা করেই শব্দ কয়টি পাঠোদ্ধার করতে সমরথ হয় সে। একই শব্দ বাবা কয়েকবার লেখা কাচা হাতে লেখা হয়েছে। আইজুদ্দিনের বুঝতে অসুবিধা হয় না ছেলে সোহেলের লেখা এটি। আবেগের বাধ ভেংগে পরে আইজুদ্দিনের ভেতর।
সবার অলক্ষে একজন মধ্যবয়সী লোক বাসের পেছনের সিটে বসে একটি কাগজ বুকে চেপে ধরে ঢুকড়ে কেদে উঠে।
রিপোষ্ট - আইজুদ্দিনেরে মনে পড়ায়
২| ৩১ শে আগস্ট, ২০০৮ সকাল ৮:৫৭
হীরা হাসান বলেছেন: ইন্টেল বলেছেন: 5
৩| ৩১ শে আগস্ট, ২০০৮ সকাল ৯:০৯
প্রশ্নোত্তর বলেছেন:
পাছাত চুল্কানি উঠলে অঈখানেই হাতাও-খাউজাও, লাঠি লয়া লারাচারা কর কেলা?
৪| ৩১ শে আগস্ট, ২০০৮ দুপুর ১২:৪৪
বিবেক সত্যি বলেছেন: +
৫| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:৫৯
কদম বলেছেন: ++
৬| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১০:২০
আলিফ দেওয়ান বলেছেন: ডাক্তার আইজুদ্দিনকে ধরিয়া সপরিবারে মাহি মেরে দেয়া হউক।
৭| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ২:৩৮
বিডি আইডল বলেছেন: সুন্দর গল্প++
৮| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ২:৪৩
©somewhere in net ltd.
১|
৩১ শে আগস্ট, ২০০৮ সকাল ৮:০১
ইন্টেল বলেছেন: 5