নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি আমার মত। আমি অনন্য। পৃথিবীতে আমার মত কেউ ছিলনা, নেই আর কেউ আসবেও না। জন্মের আগেও আমি ছিলাম না। মৃত্যুর পরেও এই নশ্বর পৃথিবীতে আমার কোন অস্তিত্ব থাকবেনা। যা থাকবে তা আমার কৃতকর্ম।
তানিয়া আমার শৈশব জীবনের প্রথম বান্ধবী। তানিয়ার আব্বা ছিল আমার দুলাভাইয়ের দুলাভাই। এজন্য আমরা তাকে মজা করে ডাবল দুলাভাই বলে ডাকতাম। ডাবল দুলাভাই খুব মজার মানুষ ছিলেন। আপাও খুব ভাল ছিলেন। এখন আসা যাক তানিয়ার প্রসঙ্গে। তানিয়া ছিল দুই ভাই এর একমাত্র ছোট বোন। আপা দুলাভাই দুইজনই খুব আদর করত। গ্রামের ভাষায় যাকে বলে আদরে আদরে আদ নাও পানি। যার অর্থ হচ্ছে আদর করতে করতে যে কখন অতিরিক্ত দুষ্ট হয়ে গেছে তা ভাবতেও পারেনি।
আমার স্বর্ণালী শৈশবে তানিয়াদের আমাদের বাড়িতে খুব যাওয়া আসা ছিল। সেই হিসেবে তানিয়ার সাথে আমার খুব বন্ধুত্ব হয়ে যায়। কিছুদিন তানিয়ারা না আসলে আমার মনের মধ্যে কাল মেঘের আনাগুনা দেখা দিত। তানিয়ারও তাই। তাই তানিয়া জোর করে ওর মা-বাবাকে নিয়ে শুধু আমার জন্য আমাদের বাড়িতে চলে আসত। তানিয়া আসলেই আমার মন আনন্দে উদ্বেলিত হত।
মাঝে মাঝে তানিয়াকে ছাড়া ওর বাবা-মা চলে আসত। তখন আমার মনে কষ্টরা বাসা বাঁধত। তানিয়া আর আমি একই ক্লাসে পড়তাম। দুজন নানা রকম খেলা খেলতাম। ও কিছু নতুন ধরণের খেলা নিয়ে আসত। ওগুলো খেলতাম। ও খুব সুন্দর সুন্দর খেলনা নিয়ে আসত একসাথে খেলার জন্য। দুজন একসাথে গাছে উঠতাম। গাছের ডালে বসে থাকতাম। দুলনা বানিয়ে দুলতাম।
মাঝে মাঝে তানিয়ার সাথে সারাক্ষণ খেলাধুলা করার জন্য আম্মার বকা খেতে হত। একবার ঝড়ে কাঠাল গাছ ভেঙ্গে যাওয়ায় গাছের ডালে বসে সারাদিন দুলনি খেলাম আর গল্প করলাম। একসাথে অনেক লাফালাফি ঝাপাঝাপি করতাম। খড়ের মধ্যে একসাথে ঝাপিয়ে পড়তাম। আরও অনেক স্মৃতি ছিল তানিয়াকে নিয়ে যার বেশিরভাগই বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে গেছে।
এর পর শুরু হল গল্পের নতুন এপিসোড। তানিয়ারা আস্তে আস্তে আমাদের বাড়িতে আসা কমিয়ে দিল। ক্লাশ সিক্সে উঠার পর হঠাত করে তানিয়া শারীরিক গড়নের দিক থেকে বড় হয়ে যায়। ওর মানসিকতাতেও পরিবর্তন ঘটে। পিউবার্টিতে যেসব পরিবর্তন সাধারণত ঘটে থাকে ওর মধ্যে তাই ঘটল। যেহেতু ছেলেদের পিউবার্টি একটু দেরিতে আসে তাই আমি প্রাকৃতিক নিয়মেই ছোট রয়ে গেলাম। তখন থেকেই শুরু হল মুল দূরত্ব। এর পর থেকে তানিয়া আর আমাদের বাড়িতে আর খুব একটা আসতনা। আমিও তানিয়ার সাথে কথা বলতে সঙ্কোচ বোধ করতাম। আমি চরম হীনমন্যতায় ভুগতাম। তানিয়ার সাথে বন্ধুত্বের এই ছিল সমাপ্তি।
তারপর অনেক বছর কেটে যায়। আমিও সাইজে অনেক বড় হয়ে যায়। কিন্তু একেবারে শুকনা থেকে যায়। ইন্টারমিডিয়েটে একবার আপার সাথে দেখা করার জন্য তানিয়াদের বাসায় যায়। কিন্তু তানিয়ার সাথে কথা বলতে পারলাম না আমার হীনমন্যতা আর অন্তর্ম্মূখীতার কারণে। জানিনা তানিয়া শৈশবের সেই স্মৃতিময় দিনগুলো তানিয়া ভূলে গেছে না মনে রেখেছে। কিন্তু স্মৃতিগুলো এখনো আমার হৃদয়ে অম্লান হয়ে আছে। ইন্টারের শেষ দিকে তানিয়া প্রেম করে বিয়ে করে। আমাদের সাথে আর কখনো দেখা হয়নি। আমি এখনো তানিয়ার খোঁজ খবর কিছুটা রাখার চেষ্টা করি। কোনদিন যদি দেখা হয় তাহলে সেই হারিয়ে যাওয়া শৈশবের স্মৃতিচারণ করব। আমি জানি সবাই জানে সেই শৈশবে আর ফেরা যায়না।
২৬ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১১:১৬
প্রজ্জলিত মেশকাত বলেছেন: ধন্যবাদ সাধু দা। অনিঃশ্বেষ শুভকামনা রইল।
২| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ২:৩৭
চাঁদগাজী বলেছেন:
শৈশবকে মুছা যায় না; মেয়েদের পক্ষে মোছা সম্ভব হয় না মোটেই; তবে, প্রকৃতি ওদেরকে ভালোবাসে, প্রকৃতি তাদেরকে বেশী গুণ দিয়ে বানায়েছে; তাই শৈশবকে তারা যতনে তুলে রেখে নিজকে যৌবনের সাথে মিলিয়ে নেয়।
২৭ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১১:১৭
প্রজ্জলিত মেশকাত বলেছেন: ধন্যবাদ গাজী কাকু সুন্দর মন্তব্যের জন্যে।
©somewhere in net ltd.
১| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১০:৪১
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ভালো থাকুক তানিয়া, ভালো থাকুন আপনিও ।