নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি আমার মত। আমি অনন্য। পৃথিবীতে আমার মত কেউ ছিলনা, নেই আর কেউ আসবেও না। জন্মের আগেও আমি ছিলাম না। মৃত্যুর পরেও এই নশ্বর পৃথিবীতে আমার কোন অস্তিত্ব থাকবেনা। যা থাকবে তা আমার কৃতকর্ম।
বেশ কিছুদিন ধরে হাসিব বিষণ্ণতা কাটিয়ে উঠে নতুন জীবনের পথে পা বাড়াচ্ছে। জীবনের সবকিছুই ইতিবাচকভাবে নেওয়ার প্রত্যয় ঘোষণা করেছে। ভাবছে সবকিছু গ্রাউন্ড জিরো থেকে শুরু করবে। তার মানে বর্তমান অবস্থানকে শুন্য ধরে সামনে অগ্রসর হবে। সেই প্রত্যয়ে নতুন পরিকল্পনা করে জীবনকে সাজানোর চেষ্টা করছে। মানুষের জীবনে উত্থান পতন আছে, থাকবেও। তাই বলে তো থেমে যাওয়া যাবেনা। ঝর্ণার গতিময়তায় সামনে এগিয়ে যেতে হবে। ঝর্ণা যেমন বাধা কাটিয়ে পথ পরিবর্তন করে হলেও সামনে এগিয়ে যায় সেও ঠিক একইভাবে সামনের যাওয়ার প্রেরণা মনের মধ্যে জাগ্রত করছে।
এরই মধ্যে জীবনের একটু ছন্দপতন হল। দীর্ঘ ৬ বছর পর তার সাবেক প্রেমিকার ফোন এল। নাম্বারটা জানা থাকলে সে কস্মিনকালেও ফোন রিসিভ করত না। একদিন রাত ১০ টার সময় ফোন এল। অপরিচিত এক নারী কন্ঠ। কয়েক সেকেন্ড পরেই সম্বিত ফিরে পেয়ে হাসিব বুঝতে পারল কন্ঠটি সেবার। সে কিছু বলবে বা ফোন রেখে দিবে কিছুই বুঝে উঠতে পারলনা। শীতল কন্ঠে জিজ্ঞেস করল, ' কেন ফোন করেছ? আবার আমার জীবনটাকে এলোমেলো করে দিতে?' অপর প্রান্তে সেবা কেঁদে উঠল। সে কান্না অর্থহীন। এর বিন্দুমাত্র অর্থবাচকতা নেই। হাসিবের বুকটা খাঁ খাঁ করে। সে ভাবতে থাকে সেবার কথা কোনদিনই তার স্মৃতি থেকে মুছে যাবেনা। হয়তো সেটা ক্ষয়ে যাবে কিন্তু বিলীন হবেনা কোনদিন। সেবাকে হাসিব বলল কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিয়ে কি লাভ?
হাসিবের ইচ্ছে ছিলনা বেশিক্ষণ কথা বলার। কিন্তু সে অতীতের মোহময়তার কারণে ফোন রাখতে পারলনা। সেবা মনে করিয়ে দিল আজকের দিনেই প্রায় এই সময়েই হাসিব তাকে প্রথম ফোন দিয়েছল। দুজনের সামনাসামনি দেখা হত লেকচার গ্যালারিতে। এনাটমি ডিসেকশন ক্লাস শেষে আবার ডক্টরস ক্যান্টিনে নাস্তা করার সময়। কথা হত, হাসি বিনিময় হত, চোখে চোখও রাখা হত। চোখে ভালবাসার লুকোনো কথা প্রকাশ পেত দুজনের মধ্যেই। কিন্তু ফোনে কথা হতনা। একধরনের জড়তা কাজ করত। আজকের দিনের এই সময়েই হাসিব প্রথম ফোন দিয়েছিল। ঘন্টাখানেক কথা বলার পরই দুজন দুজনের প্রতি দুর্বলতা বুঝতে পেরেছিল। তার সাত দিনের মাথায় দুজন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেমে জড়ায়। তারপর একসাথে প্রায় তিনবছর পথ চলা। সেসব আর হাসিব মনে করতে চায়না। হাসিব জিজ্ঞেস করে ভূল কার বেশি ছিল? সেবা স্বীকার করে নেয়। কিন্তু মেঘে মেঘে অনেক জল গড়িয়ে গেছে। দুজনই বিয়ে করেছে। দুজনেরই সন্তান আছে। অতীতের সব সুখস্মৃতি হারিয়ে গেছে অনেক আগেই।
সেবার স্মৃতিচারণের এক পর্যায়ে হাসিবের কান্না পেয়ে যায়। সে ফোন রেখে দেয়। স্মৃতি হাসিবকে ঘুনপোকার মত খেতে শুরু করে। একসাথে কত তারা গোনা। আবার অভিমানে নিরবতা। দুজনেই কথা দিয়েছিল কেউ ছেড়ে অন্যকোথাও যাবেনা। কিন্তু সেবা কথা রাখেনি। শর্তের বেড়াজালে ভালবাসাকে আবদ্ধ করে ফেলেছিল। অবিশ্বাস যখন অস্তিত্বকে আড়াল করে দেয় তখন ভালবাসা থাকেনা, হারিয়ে যায়। হয়েও ছিল তাইই। হাসিবের কিছু দোষ থাকলেও সে সব কিছু মেনে নিয়ে পরিণতি অবধি যেতে চেয়েছিল। কিন্তু পারেনি সেবার জন্য। আজ তাহলে কেন ফোন করে দোষ স্বীকার করা। দোষ স্বীকার করলেও তো অলঙ্ঘনীয় যে ইভেন্টগুলো জীবনে ঘটে গেছে তা আর পরিবর্তন সম্ভব নয় কারো পক্ষেই।
হাসিব এরপর আর দ্বিতীয়বার প্রেমে জড়ায়নি। সে জীবনের উত্থান, পতন, স্খলন, বিচ্ছেদ সবকিছু নিয়ে ভেবেছে। কিন্তু সেবা চলে যেতে পারে সেটা স্বপ্নেও ভাবেনি। তাদের মধ্যে শুধুমাত্র লিখিত সম্পর্ক ছাড়া আর সবই ছিল। আত্মিক, শারিরীক, পারিবারিক, সামাজিক সব। পরিবারের সাথেও সম্পর্ক ছিল। বিচ্ছেদটা হাসিবের কাছে অনেকটা এনেসথেশিয়া ছাড়া সার্জারির মত মনে হয়েছিল। হাসিবের মনে হয়েছিল এই জঘন্য কষ্টদায়ক কাঁটাছেড়াটা না হলেও পারত। কিন্তু কিছুই করার নেই। সে শেষমেষ নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করেছিল ভাঙ্গন প্রতিরোধের। কিন্তু সে ব্যর্থ হয়েছে। হয়তো এটা নিয়তিরই লিখন। হয়তো তারা সোলমেট নয়। পরে বিচ্ছেদ হলে হয়তো কষ্ট আরো বেশি হতো। হয়তো দাম্পত্য কলহ আরো বেশি হতো। এইসব ভেবে নিজের সামনে একটা ডিফেন্স মেকানিজম দাড় করায়।
সেবার ফোনে তার সব স্মৃতি সেলুলয়েডের পর্দার ছবির মত একের পর এক ভেসে উঠতে থাকে। সে ভাবে তাদের সম্পর্কের পরিণতি ঘটলে প্রকৃতির বেশি ক্ষতি হয়ে যেত! হয়তোবা তারও কিছু ভূল ছিল কিন্তু সে সেবাকে মন প্রাণ দিয়ে চেয়েছিল। মানুষের কোন কষ্টেই প্রকৃতির কিছু আসে যায়না। কিন্তু বিচ্ছেদের পর হাসিব যেদিন বুক ভেঙ্গে কেঁদেছিল সেদিন প্রচন্ড বৃষ্টি হয়েছিল। হাসিবের মনে হয়েছিল প্রকৃতিও তার কষ্টে কাঁদছে। তারপর দিন কেটে যায় বেদনায় আর বিষণ্ণতায়। কেউ তার খবরও রাখেনা।
০৯ ই অক্টোবর, ২০১৬ ভোর ৬:৫৯
প্রজ্জলিত মেশকাত বলেছেন: কাব্য, উপন্যাস, গল্প সবকিছুর একটা বিরাট অংশ দখল করে আছে প্রেম। তাই প্রেমই সবচেয়ে বেশি চলে আসে।
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৬ ভোর ৬:৪২
নোমান প্রধান বলেছেন: প্রেমের গল্পে জগৎ অন্ধকার হয়ে গেলো মশাই