নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার সীমিত জ্ঞান কারো উপকারে আসলে শান্তি পাই

মায়মুনা আহমেদ

আমার সীমিত জ্ঞান কারো উপকারে আসলে শান্তি পাই...

মায়মুনা আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নতুন ডায়েরি (পর্ব ২)

২৪ শে নভেম্বর, ২০২২ রাত ১১:০৩




বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম


"কা'বা, আল্লাহর ঘর
বেবি যাবি, ইনশাআল্লাহ... "

ভাঙা ভাঙা বুলিতে বড় মেয়েটা যখন এই কথাটা বলতো, তাল মেলাতে "ইনশাআল্লাহ" বলতে গিয়ে তখন আনমনে হাজারো প্রশ্নের ঝুলি নিয়ে মন রাব্বে কারীমের দরবারে হাজির হয়ে যেতো। এতো ছোট দুটো বাচ্চা নিয়ে কিভাবে যাবো, কিভাবে ওদের দেখাশোনা করবো, ওদের রুটিনমাফিক খাওয়া-ঘুমের সাথে ইবাদতের তাল মেলাবো কি করে!

সব প্রশ্নের একটিমাত্র উত্তর ছিল, তা হলো দোয়া। উঠতে, বসতে, চলতে, ফিরতে, সারাক্ষণ রবের সাথে কথোপকথনে ছিল সবকিছু সহজ, সুন্দর হয়ে যাওয়ার দোয়া।

আলহামদুলিল্লাহ, এতো দীর্ঘ সফরের পর হোটেলে পৌছে আমরা বড়রা যেখানে ক্লান্তিতে ঝিমিয়ে যাচ্ছিলাম সেখানে আমার ট্যাপাট্যাপির চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ ছিলো না। তবুও সেই মুহুর্তে আমাদের সবচেয়ে বড় ভাবনা ছিল, যত দ্রুত সম্ভব উমরাহ পালন করে ওদের বিশ্রামের ব্যবস্থা করা। আমরা রুমে চেক-ইন করে হেরেমে যাওয়ার জন্য তাড়াতাড়ি প্রস্তুত হয়ে নিলাম।

হেরেমের দিকে যাচ্ছি। কিছুক্ষণ পর বাইতুল্লাহ আমার নজরে আসবে ইনশাআল্লাহ। প্রতি কদমে কদমে হৃদস্পন্দন বেড়ে যাচ্ছে। বাচ্চা দুটি আমাদের দুইজনের কোলে। তাড়াহুড়ায় রুম থেকে ওদের বেবি ক্যারিয়ার নিতে ভুলে গেছি। মনের অবস্থা এমন যে, কা'বার সামনে দাড়ানোর আগে এখন আর কোনোদিকে তাকানোর কোনো ইচ্ছে নেই। আল্লাহ, বাইতুল্লাহ আর আমার /আমাদের মাঝখানে আর কোনো দুনিয়াবি ভাবনায় মন জড়াতে চাচ্ছে না। আল্লাহ ভরসা, ইনশাআল্লাহ, আল্লাহ সহজ করে দিবেন।

আজান হয়ে গেছে। সবার মধ্যে জামাতে শামিল হওয়ার তাড়া। আমরাও দ্রুত হেটে আগে জামাতে সালাতের জন্য হেরেমে প্রবেশ করলাম। ইমামতি করলেন শায়খ সুদাইস। আলহামদুলিল্লাহ, আবারও হেরেমে জামাতে সালাত আদায় করার সৌভাগ্য আল্লাহ দান করেছেন। এই অনুভূতি, রবের দরবারে এই কৃতজ্ঞতা আসলে ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। সালাত আদায় শেষে কা'বার দিকে গেলাম। কালো গিলাফে মোড়ানো চার দেয়ালের একটা ঘর। কেন এতো মায়া! আসলে এর পরতে পরতে আছে আমার নবীজির সাঃ ছোয়া! কখনো হাজরে আসওয়াদে, কখনো মাতাফের কোনো কোণে, কখনো মুসাল্লায়ে জিব্রিলের কাছে, কখনো বা মুলতাজামে! কতো ইতিহাসের সাক্ষী এই কা'বা, বাইতুল্লাহ!

কা'বা দেখে আগেই সবার জন্য দোয়া করলাম। তারপর মাতাফে নেমে হাজরে আসওয়াদের সামনে থেকে তাওয়াফ শুরু করলাম। বাচ্চা কোলে নিয়ে তাওয়াফ করছি। কখনো তাদের খাওয়াচ্ছি আর দোয়া করছি। কখনো বা তারা ঘুমিয়ে যাচ্ছে। কোলে ঘুমানোর অভ্যাস নেই, তাই ঘুমের মধ্যেই বারবার কাধ থেকে নেমে যাচ্ছে। কোনোরকমে সামলে আল্লাহর রহমতে সাত চক্কর পুরা করলাম। পছন্দসই জায়গা খুঁজে নিয়ে ওয়াজিবুত তাওয়াফ আদায় করলাম। এরপর প্রাণভরে জমজম পান করে সায়ী করার জন্য সাফা পাহাড়ের দিকে গেলাম।
দীর্ঘ সফরের ক্লান্তির সাথে তাওয়াফের ক্লান্তি। কোলে বাচ্চা নিয়ে সুন্দরভাবে সাফা-মারওয়া সায়ী করাটা আমাদের জন্য ছিলো দারুণ চ্যালেঞ্জিং! ক্লান্তিতে বারবার পা বসে যাচ্ছিলো। ইচ্ছে করলেই হুইল চেয়ার বা ইলেকট্রিক কারে করে সায়ী করা যেতো কিন্তু আমার এসব পছন্দ না। বাচ্চা নিয়ে ইবাদতে কষ্ট হবে- এটাই চিরন্তন। রবের সন্তুষ্টির জন্য এতোটুকু কষ্ট আমার করতে হবেই হবে।

সায়ী করতে করতে কখনো ক্লান্তি দূর করতে পান করতাম দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ এনার্জি বুস্টিং ড্রিংকস "জমজম"। কখনো মাতাফে উঠার সিড়িতে বসে একটু বিশ্রাম নিয়ে নিতাম। বাচ্চারা কোলে ঘুম। সায়ী করার সময় একটা কাজ করতে আমার খুব ভালো লাগে। দেশি-বিদেশি বড় বড় উমরাহ কাফেলার সাথে আমি আস্তে করে মিশে যাই। ওরা দলবেঁধে, সুর করে, তাসবীহ-তাহলীল বা অন্য যে দোয়া পড়তে থাকে আমিও তাড়াতাড়ি আল্লাহর কাছে তা চেয়ে নেই। বাইতুল্লাহ দেখার পর থেকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া ছাড়া আর কোনো দোয়া আমার মাথাতেই আসে না। আমার শুধু মনে হয়, আল্লাহর রাগ অনেক ভয়ংকর। উঠতে, বসতে, চলতে, ফিরতে আল্লাহ রাগ করার মতো কাজ তো আর কম করছিনা। আর আল্লাহর যে বান্দা তার ক্ষমা পেয়ে যায় সে বান্দার আর কোনোকিছুর অভাব থাকতে পারে না।

সায়ী শেষে রুমে ফেরার পথে হেরেমেই বাচ্চাদের দাদা-দাদির সাথে দেখা হয়ে গেল। সবাই একসাথে রুমে ফিরে আসলাম। বাচ্চাদের বাবা সেলুনে টাক হতে চলে গেল। আমিও এককড়া পরিমাণ চুলের আগা কেটে ইহরাম থেকে মুক্ত হয়ে নিলাম। রাতের খাবার খেতে খেতে চললো সবার ছোট্ট আড্ডা। বাবা-মায়ের চেহারার সেই খুশির ঝিলিক, সারাজীবন মনে থাকার মতো! আলহামদুলিল্লাহ!


জাজাকুমুল্লাহ খাইরান

ছবি - নেট

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে নভেম্বর, ২০২২ রাত ৩:৩২

সোনাগাজী বলেছেন:


আপনি কি ওখানেই আছেন?

০১ লা ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ৮:২৭

মায়মুনা আহমেদ বলেছেন: না, চলে এসেছি

২| ২৫ শে নভেম্বর, ২০২২ রাত ৩:৩৩

সোনাগাজী বলেছেন:




আপনার প্রোফাইল পিকচার খুবই সুন্দর।

০১ লা ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ৮:২৮

মায়মুনা আহমেদ বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ২৫ শে নভেম্বর, ২০২২ বিকাল ৩:০২

রাজীব নুর বলেছেন: বাংলাদেশে কি আল্লাহর কোনো ঘর নেই?

০১ লা ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ৮:৩০

মায়মুনা আহমেদ বলেছেন: আমি যতদূর জানি, কা'বাকে বাইতুল্লাহ বা আল্লাহর ঘর নামে ডাকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.