নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার সীমিত জ্ঞান কারো উপকারে আসলে শান্তি পাই

মায়মুনা আহমেদ

আমার সীমিত জ্ঞান কারো উপকারে আসলে শান্তি পাই...

মায়মুনা আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নতুন ডায়েরি (পর্ব ৪)

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:২৬



বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

২৬ অক্টোবর ২০২২ ছিল আমাদের তায়েফ জিয়ারা। তায়েফে একটি মিকাত মসজিদ আছে। তাই, তায়েফ থেকে ইহরাম করে আরেকটা উমরাহ করার প্ল্যান আছে। তায়েফ যাত্রায় আমাদের সাথে আছে এজেন্সি থেকে দেয়া বাংলাদেশি ড্রাইভার এবং গাইড, দুইজন। এই নিয়ে তিনবার একই ড্রাইভারের গাড়িতে বেড়াচ্ছি, তার উপর তিনি আবার বাংলাদেশি। সবার মধ্যে বেশ ভালো আন্তরিকতা হয়ে গেছে। একবার গল্পে গল্পে ড্রাইভার আমাদের শোনাচ্ছিলেন, ঐ যে এয়ারপোর্টে একটা লোক নিজে থেকে এসে সাহায্য করলো। এর মাশুল হিসেবে ড্রাইভারের জরিমানা হয়েছে ১০০ রিয়াল! আমরা তো অবাক! যদিও জরিমানা দিবে গাড়ির কোম্পানি। তারপরেও...একটু খারাপ লাগছিল। একইসাথে সার্ভিসের ক্ষেত্রে তাদের সরকারী আইন কতটা কঠোর তার হালকা আন্দাজ পাচ্ছিলাম।

সকাল ৮ঃ৩০ এ তায়েফের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। হেরেমের সীমা ছাড়িয়ে গাড়ি তায়েফের পথে। গত কয়েকদিনের ঘোরাঘুরির মধ্যে আরবের উট দেখলাম না। জানালা দিয়ে উট খুজছিলাম। হঠাৎ গাড়ি থেমে গেল। সামনে তাকিয়ে দেখি রাস্তার উপর উটের পাল! আমি আর আমার ট্যাপা তো মহাখুশি! আলহামদুলিল্লাহ!

পরে ড্রাইভার সাহেবের কাছ থেকে জায়গার নাম জেনেছিলাম, "ওয়াদিয়ে নোমান"। এই ওয়াদিয়ে নোমান তার সৌন্দর্যের কারণে আরব কবিদের কাছে নাকি খুব পছন্দের জায়গা(নেট ঘেটে দেখলাম)।

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেছে। তাই, ট্যাপাট্যাপি গাড়িতে ঘুমিয়ে গেছে। গাড়ি চলছে পাহাড়ি পথে, এঁকেবেঁকে। নিচু এলাকা ছেড়ে আমরা পাহাড়ের উপর উঠছি। মাঝেমধ্যে কান বন্ধ হয়ে আসছে। ঘুমাবো না, দৃশ্য দেখবো। চোখ টেনে খুলে, গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি। পাহাড়ের গায়ে, রাস্তার পাশে অনেক বানর বসে আছে। তায়েফের ফলের মার্কেটের সামনের রাস্তায় সবচেয়ে বেশি বানর। বেশি মানে, একদম বানরে কিলবিল করছে এমন অবস্থা।

এই মার্কেটের ফল ড্রাইভার সাহেবের পছন্দ না। দোকানীরা নাকি শুধু লোক ঠকায়। তাই, আমরা কোথাও গাড়ি দাড় না করে, একেবারে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর লাইব্রেরি মসজিদের সামনে গাড়ি থেকে নামলাম। মসজিদের সামনেই তায়েফের বাগানের ফ্রেশ আংগুরের গাড়ি দাঁড়ানো। দেখেশুনে, বাছাই করে আংগুর কেনা হলো। আলহামদুলিল্লাহ, সত্যিই ভালো, মুখে লেগে থাকার মতো স্বাদ।

সালাতের ওয়াক্ত ছাড়া মসজিদ বন্ধ থাকে। তবে, লাইব্রেরি সবার জন্য উন্মুক্ত। লাইব্রেরিতে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ এর হাতে লেখা কিছু শিলালিপি সংরক্ষিত আছে। এই মসজিদের সাথেই এই বিশিষ্ট সাহাবীর কবর আছে (আল্লাহ তার উপর শান্তি বর্ষণ করুন)। স্থানীয়দের জন্য মসজিদ লাগোয়া একটি কবরস্থান আছে।

মসজিদের সামনে স্থানীয়রা আতর, জায়নামাজ, তায়েফের বাগানের ফল বিক্রি করছে। আমরা ঘুরে ঘুরে দেখলাম। তায়েফ পৌছে আমার মনের অস্থিরতা বেড়ে গেল কয়েকগুণ। ইউটিউবে দারুণ একটা জায়গা দেখেছিলাম। কখন সেখানে যাবো? আর কতক্ষণ?

বাইতুল্লাহর মুসাফির বইয়ে পড়েছিলাম, লেখক কিভাবে মসজিদে নববীর এতো চাকচিক্যের ভিতরেও খুজে পেয়েছিলেন মরু আরবের ঘ্রাণ, সেই ১৪০০ বছর আগে বিদায় নেয়া প্রিয় মানুষের সন্ধান! রওজা জিয়ারতের বর্ণনা দিতে গিয়ে লেখক যে আবেগের, যে অনুভূতির কথা লিখেছিলেন। সেসব কথাগুলো শুধু পড়ে গেছি, উপলব্ধি করতে পারিনি। এতো বছর পর, এবার আমি পেয়েছি সেই আবেগ-অনুভুতির সন্ধান!

যেখানে যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে ছিলাম, খুব একটা পরিচিত না জায়গাটা। চিরায়ত তায়েফ জিয়ারার অংশ না। সব ড্রাইভার চিনেও না। আমাদের ড্রাইভার সাহেবকে জায়গার বর্ণনা দেয়ার পর তিনি চিনলেন এবং আমরা এই জায়গার কথা জানি তাই খুব প্রশংসা করছিলেন, আলহামদুলিল্লাহ। তবুও তায়েফ আসার পথে ড্রাইভার সাহেবকে বারবার মনে করিয়ে দিয়েছি, যদি ভুলে যায়। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ এর লাইব্রেরি মসজিদ দেখে আমরা গাড়িতে উঠে বসলাম। আমাদের গন্তব্য সেই চৌদ্দশ বছর পুরনো হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ এর মসজিদ। যেখানে তিনি তাফসির, হাদিস, ফিকহ'র দারস দিতেন।

গাড়ি থেকে নেমে শ্বাশুড়ি মা'র হাত ধরে হাটা দিলাম। পাহাড়ের উপর মসজিদ। খুব উচু পাহাড় না। মসজিদের দেয়ালের কাছে কিছু অংশে পাকা সিড়ি করা আছে। অল্প সময়ের মধ্যে সিড়ির গোড়ায় পৌঁছে গেলাম। পাহাড়ে উঠার পথে দেখি তিনজন নেমে আসছে। খুব সম্ভবত তারাও বাংলাদেশি। এটা কি মসজিদ? কার মসজিদ? কেন এখানে এলাম? এই জায়গার ঐতিহাসিক গুরুত্ব কি? সিড়ির সামনে দাড়িয়ে সবাই নানান গবেষণায় ব্যস্ত। আমি দ্রুত সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে মসজিদের সামনের গেটের দিকে চলে গেলাম। বিসমিল্লাহ বলে বন্ধ দরজা খুলে দিলাম। ওইপাশে অপরিচিত কেউ, খুব সম্ভবত একটু আগে মসজিদের বন্ধ দরজার সামনে থেকে ঘুরে যাওয়া কেউ বলছিল, "ঐ যে দরজা খুলে দিছে"। আমার এসব দেখার সময় নেই। ভালো মন্দ বিচার করতে পারবো না এখন। ১৪০০ বছরের পুরনো দিনগুলো আমায় ডাকছে। মসজিদের আঙিনায় ঢুকে খুলে দিলাম মসজিদের বন্ধ দুয়ার।

বাইরে রোদ ঝলমল করছে। তারই আলো, দুটি জানালা দিয়ে মসজিদে ঢুকছে। কোথায়? কোন কোণে তিনি বসতেন? মসজিদের ভিতর গিয়ে দাড়ালাম। বিশ্বাস করেন মসজিদের ভিতর তাবেয়ী, তাবে-তাবেয়ীদের ভীড় যেন আমি নিজ চোখে দেখছি। ঐ যে দরজার বাইরে দারস নিতে আসা ছাত্রদের ভীড়! ঝলমলে আলো নেই। চোখ ধাধানো কারুকাজ নেই। দামী দামী ঝাড়বাতি নেই। মেঝেতে টাইলস বা মোটামুটি মানের কোনো কার্পেটও নেই। অথচ, সাদামাটা এই মসজিদের ভিতর কি যে ভালো লাগার একটা পরিবেশ!

আমার দলবল চলে এসেছে, তাই আমিও আমার আবেগের লাগাম টেনে ধরলাম। মসজিদে ঢুকে সবাই মসজিদের ইতিহাস জানতে চাইলে তাদেরকে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ সম্পর্কে বলছিলাম। জায়নামাজ বিছানো দেখে আমার ২৬ মাসের ট্যাপা সালাতে দাড়িয়ে গেল, আলহামদুলিল্লাহ। ট্যাপার দেখাদেখি তার দাদাও দুই রাকাআত নফল সালাত আদায় করে নিলেন। আমরা আর দেরি না করে মসজিদের দরজা বন্ধ করে বের হয়ে গেলাম। আমাদের কারণে ড্রাইভার সাহেব বা গাইড বিপদে পড়ুক, তা চাই না।

পথে আরো কিছু স্পট দেখে আমরা মিকাত মসজিদে গেলাম। তায়েফের আবহাওয়া ঠান্ডা। আমরা মক্কা থেকে ইহরামের প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিলাম। তাই, মিকাত মসজিদে শুধু ওজু করে ইহরাম করলাম। বরফ শীতল পানিতে ওজু করে কাপছিলাম আর এই ঠান্ডা পানিতে গোসল করতে হয়নি তাই আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছিলাম।

মক্কায় ফেরার পথে সবাই তায়েফের ফলের মার্কেটে টুকটাক কেনাকাটা করছে। এই সুযোগে, ফুরফুরে মেজাজে আমি গাড়িতে বসে চা পান করছি আর আমার রবের সাথে কথা বলছি, আলহামদুলিল্লাহ আলা কুল্লি হাল!

ছবি - নেট

জাজাকুমুল্লাহ খাইরান

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ১১:৪৬

কোলড বলেছেন: Sound and read like a die-hard Salafist. Classic example of decay in Muslim people.

২| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:২৫

রাজীব নুর বলেছেন: ডায়েরি লেখা উত্তম কাজ।

৩| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:২৮

শোভন শামস বলেছেন: আধুনিক সৌদি আরব ভ্রমনের উপর লিখা বই খুব কম। মক্কা মদিনা ও জেদ্দা সবাই যায় হজ্জ কিংবা উমরা করার সময়। অনেক বাংলাদেশী রিয়াদ দাম্মাম ও অন্যান্য শহরে কাজ করেন। তবে জীবিকার তাগিদে ব্যস্ত থাকায় লিখা হয়ত হয়ে উঠে না।
ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.