নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার সীমিত জ্ঞান কারো উপকারে আসলে শান্তি পাই

মায়মুনা আহমেদ

আমার সীমিত জ্ঞান কারো উপকারে আসলে শান্তি পাই...

মায়মুনা আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নতুন ডায়েরি (শেষ পাতা)

২০ শে জুন, ২০২৩ বিকাল ৫:৫৬


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

০২.১১.২০২২

আলহামদুলিল্লাহ, ট্যাপির জ্বর আসে নি। সকাল সকাল জিয়ারার জন্য বের হলাম। প্রথমেই ওহুদ যুদ্ধে শহীদ সাহাবিদের সালাম পেশ করতে গেলাম। সেখান থেকে গাড়ি ওহুদ পাহাড় এলাকায় নিয়ে গেল। যুদ্ধ শেষে রাসুল সাঃ যেখানে সালাত আদায় করেছেন, সে জায়গা কাটাতারে ঘিরে রেখেছে। এই জায়গা বিভিন্ন ডকুমেন্টারিতে দেখেছি। সামনাসামনি প্রথম দেখলাম। সরাসরি রাসুল সাঃ এর স্পর্শ পাওয়া সেই জায়গা! পাথুরে পাহাড়ে আল্লাহর সৈনিকদের সালাতের মুসাল্লা। এই জায়গাটা থেকে রাসুল সাঃ এর বিশ্রাম নেয়ার, পাহাড়ের ফাকে, ছোট্ট বসার জায়গাটাও খুব কাছেই। সবই এখন ভিজিটর রেস্ট্রিক্টেড। চোখে দেখেই শান্তি পাচ্ছিলাম। আবার যখন মদিনা যাবো, একটা গাড়ি নিয়ে ওহুদ পাহাড়ের ভিতরে ভিতরে ঘুরবো ইনশাআল্লাহ। যেখানে রাসুল সাঃ বিশ্রাম নিয়েছেন, ফাতিমা রা: যেখানে বসে রাসুল সাঃ এর চেহারা মোবারক থেকে রক্ত মুছে দিয়েছেন, পাহাড়ের যেই জলাধার(বৃষ্টির পানি জমে থাকে যেখানে) থেকে আলী রা: তার নেতার জন্য পানি এনেছেন, ওহুদ পাহাড়ে হেটে হেটে ১৪০০ বছর আগে হারিয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ।

ওহুদ পাহাড় দেখে, কুবা মসজিদে গেলাম। কুবা মসজিদে দুই রাকাআত নফল সালাত আদায় করলে একটি উমরাহ আদায়ের সমান সওয়াব পাওয়া যায়। [উসাইদ ইবনে খুদাইর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, ‘মসজিদে কুবায় নামাজ, উমরাহর সমতুল্য।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২২৪; ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৪১১)]

কুবা মসজিদ এলাকায় সম্প্রতি একটি পুরাতন কূপের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। যে কূপে রাসুল সাঃ এর আংটি পড়ে গিয়েছিল। পুরো জায়গাটি নতুন প্রজেক্টের আওতায় নির্মাণাধীন থাকায় কূপের জায়গাটি দেখতে পেলাম না।

কুবা মসজিদ থেকে মসজিদে জুমআ, হযরত সালমান ফারসী রা: এর সেই আজওয়া খেজুর বাগান গাড়ি থেকে দেখে গেলাম মসজিদে কেবলাতাইন বা দুই কেবলার মসজিদ এ। দুই রাকাআত সালাত আদায় করে খন্দকের ফাতাহ মসজিদ দেখতে গেলাম। খন্দকের যুদ্ধে যে সাহাবীর ঘাটি যেখানে ছিল সেখানে স্মৃতি স্বরুপ ছোট ছোট স্থাপনা আছে। গতবার এই বিষয়টি খেয়াল করিনি। এবার আমাদের গাইড সাহেব খুব ভালো করে ধীরে সুস্থে দেখালেন এবং বর্ণনা করলেন।

এরপর আমরা গেলাম ওয়াদিয়ে জ্বীনে। বাবা-মা খুব মজা পেল। ওয়াদিয়ে জ্বিন নিয়ে গল্পের তো শেষ নেই। এবারের গাইড সাহেবও ওয়াদিয়ে জ্বিন সম্পর্কে নতুন ঘটনা বললো। সত্য- মিথ্যা আল্লাহই ভালো জানেন। বিভ্রান্তি ছড়াতে পারে এমন বিষয়ে চুপ থাকাই ভালো। এমনিতেই আমাদের ঈমান বড্ড নড়বড়ে!

ফেরার পথে এক খেজুর বাগান থেকে খেজুর কিনলাম। যোহরের সালাতের আগে জিয়ারা শেষ হলো। বাকী দিন মসজিদে রেগুলার সালাত, মি(বিড়াল) দেখা, কবুতরের সাথে খেলা করে আলহামদুলিল্লাহ সুন্দর একটি দিন কাটালাম।

০৩.১১.২০২২

গতরাত থেকে আমার প্রচন্ড জ্বর এসেছে। আজকে বদর জিয়ারা বাতিল করেছি। সারাদিনে একটিবারের জন্যও মসজিদে নববীতে যেতে পারিনি। এটা যে কতো বড় ধৈর্য পরীক্ষা!!! ছোট বাচ্চা নিয়ে আসলে কষ্ট হবে জানি। খাওয়ার কষ্ট, ঘুমের কষ্ট, কম ইবাদতের কষ্ট মেনে নিয়েছি কিন্তু আজকে রাতে আমরা চারজনই জ্বর নিয়ে বিছানায় পড়ে আছি। জ্বরে আর ক্লান্তিতে, বাচ্চার বাবার এই নিস্তেজ হয়ে পড়ে থাকা আমাকে খুব কষ্ট দিচ্ছিল। উমরাহতে আসার পর থেকে মানুষটার কি দৌড়-ঝাপ! সবার পছন্দ মতো খাবারের ব্যবস্থা করা, বাচ্চাদের দেখভাল, আলহামদুলিল্লাহ সব কাজে কম সাহায্য তো করেনি।

অনেক জায়গায় তো বেড়াতে গেলাম, আলহামদুলিল্লাহ। এখানে, এভাবে অসুস্থ হওয়াটা আমার জন্য বিশাল ধৈর্যের বিষয় ছিল।

০৪.১১.২০২২

আলহামদুলিল্লাহ, সবরের সময় আল্লাহ দীর্ঘায়িত করেন নি। আজকে আমরা সবাই বেশ ভালো আছি। জুমআর প্রস্তুতি নিতে সবাই ব্যস্ত। মসজিদে নববীতে এই সফরে আমাদের প্রথম ও শেষ জুমআর সালাত। আগে আগে মসজিদে গিয়ে দোয়া-জিকির পড়লাম। একে একে আজান -খুতবা-সালাত আদায় করে ফুরফুরে মেজাজে রুমে ফিরলাম। আসরের সালাত পড়ে সাকিফা বনু সাইদার দিকে গেলাম। এই বাগানটাও এখন ভিজিটর রেস্ট্রিক্টেড। এখানে অনেক বিড়াল থাকে। আমাদের দুইবোনের সুন্দর সময় কেটেছে এই বাগানে। ট্যাপা আর তার দাদার দৌড়াদৌড়ি খেলা শেষে সামনেই চা খেতে গেলাম। মাগরিব- এশার সালাত আদায় করে রুমে ফিরে এলাম। আমার খাওয়ার কষ্ট হচ্ছে দেখে বাচ্চাদের বাবা ইন্দোমি নুডলস কিনে এনেছে। আলহামদুলিল্লাহ।

০৫.১১.২০২২

আজকে বদর জিয়ারা। বদর ছাড়াও বীরে রাওহা, বীরে শেফা দেখে মদিনায় ফেরা। অনেক লম্বা যাত্রা। আমি বাচ্চাদের নিয়ে মদিনাতেই থেকে গেলাম। যোহরের সালাতের আগেই সবাই জিয়ারা থেকে ফিরে এলো। বাকী সময় মসজিদে সালাত পড়ে, ইবাদত করে, আশেপাশে ঘুরেফিরে কাটালাম। দেশে ফেরার সময় ঘনিয়ে আসছে।

০৬.১১.২০২২

বাচ্চাদের বাবা আর দাদা রিয়াজুল জান্নাতে যাওয়ার শিডিউল মিস করেছিল। এজেন্সির সাথে কথা বলে আজকে একটা ব্যবস্থা হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। আসরের সালাতের পর রিয়াজুল জান্নাতে সালাত আদায় করে আসলো। মদিনার মায়া এখন আরো তীব্র হয়েছে। যে শান্তি, হায়, যে শান্তি মদিনাতে! শুধু মদিনার মুসাফিররাই জানে! মদিনার জন্য ছটফট করতে থাকা ভাই-বোনদের তামান্না আল্লাহ পূর্ণ করুন, সহজ করে দেন, আমীন।

০৭.১১.২০২২

রেগুলার ইবাদতের পাশাপাশি, টুকটাক কেনাকাটা করে সময় কাটালাম।

০৮.১১.২০২২

আমাদের ১৬ রাতের সফর শেষ। আজকে সকাল ৮:৩০টায় হোটেল থেকে চেক-আউট করলাম। লবিতে বসে আছি। হঠাৎ মনে হলো গাড়ি আসতে আসতে একটু মসজিদের মিনারগুলো দেখে আসি। হোটেল সুইস ইন্টারন্যাশনাল থেকে এক হোটেল পরেই গাড়ি যাওয়ার রাস্তা। এরপরই মসজিদের এক্সটেনশন এরিয়া শুরু। এই উঠানের মতো জায়গাটাতে আজকের পর থেকে আমরা আর মি(বিড়াল), কবুতরের পিছনে ছুটবো না। মদিনার বন্ধুকে সালাম জানাতে আমার ট্যাপাট্যাপি দৌড়ে যাবে না। মদিনার অলিগলিতে আবার কবে ঘুরতে পাবো আল্লাহই ভালো জানেন। প্রচন্ড আবেগ, অগোছালো হয়। শেষের পাতা লেখা কখনো সহজ না। ঝাপসা চোখে প্রতিটা লাইন লিখি, কাটি, আবার লিখি। কোন শব্দটা যে অনুভূতিগুলো প্রকাশের জন্য যথার্থ হবে! হে আল্লাহ, আমাদের সবার মনে মদিনার মায়া ভরে দিন। যে মানুষটা সারাজীবন "উম্মতি উম্মতি" বলে কেদে গেলেন, আমরা মুসলিম বাবা-মায়ের মুসলিম সন্তান হয়ে যেন তাকে অসম্মান না করি।

ছবি - নেট

জাজাকুমুল্লাহ খাইরান

মন্তব্য ২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে জুন, ২০২৩ রাত ১০:০৫

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: মাশাল্লাহ অনেক সুন্দর করে ভ্রমন বিত্তান্ত লিখেছেন। আল্লাহ প্রত্যেক মুসলমানকে মক্কা - মদিনা যিয়ারার সক্ষমতা দান করুন।

২| ২১ শে জুন, ২০২৩ দুপুর ১:৪০

রাজীব নুর বলেছেন: খুব সুন্দর।
আল্লাহ আপনাকে ভালো রাখুক। সুস্থ রাখুক।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.