![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
Tajuddin Ahmed, 46. Prime
Minister, a lawyer who has been a chief organizer
in the Awami League since its founding in 1949.
He is an expert in economics and is considered
one of the party’s leading intellectuals.
Monday, Dec. 20, 1971. TIME Magazine
Bangladesh : Out of War, a Nation Is Born
১৯৭১ সালের ২০ ডিসেম্বর তাদের প্রচ্ছদ
কাহিনীতে তাজউদ্দীন আহমদের এ
পরিচয় ছেপেছিল বিখ্যাত টাইম
ম্যাগাজিন। পরিচয়টা ছোট কিন্তু
বলছে অনেক কথা। আওয়ামী লীগের
বুদ্ধিবৃত্তিক ধারার প্রাণপুরুষদের একজন
ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ।
২. বাংলাদেশের জন্ম ইতিহাসের
কথা এলে তাজউদ্দীন আহমদের নাম
আসে। আসতেই হয়। কোনো রাজনীতি,
কোনো স্বজনপ্রীতি, কোনো বন্ধ্যা
চিন্তা দিয়ে তা আটকানো যায় না।
যাবেইবা কেন? ইতিহাসের প্রতিটি
দিন তো বাস্তব কার্যকারণ দিয়েই
লেখা। তাহলে সৎ ইতিহাসের
সত্যকাহনে আমরা বিচ্যুত হই কেমনে?
আজ বাংলাদেশের জন্ম ইতিহাসের
কথা এলে বঙ্গবন্ধু যেমন অবধারিত,
তাজউদ্দীন আহমদ তেমনই অনিবার্য।
পুরো ষাটের দশকজুড়ে আওয়ামী
লীগের যে রাজনৈতিক প্রস্তুতি তার
পুরোভাগের নির্বাহী মানুষটিকে,
পরিকল্পক মানুষটিকে আমরা ভুলি কী
করে?
যে তাজউদ্দীন আহমদ বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ঠ
সহচর, তার চিন্তক, তার পরিকল্পক, তার
ভাবনাগুলোর নির্ভেজাল
বাস্তবায়নকারী, ইতিহাসের অমোঘ
টানে তার হাতেই পতিত হয়
মুক্তিযুদ্ধের বাস্তবিক লড়াইয়ের পুরো
কাজটি। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু যখন
পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর
হাতে ধৃত, তখন একটি সরকার গঠন করে,
প্রবাসে গিয়ে বাংলাদেশের
মুক্তিযুদ্ধের সার্থক রূপায়ণ ঘটেছিল
তাজউদ্দীন আহমদের হাতেই। বাধা
ছিল, বিপত্তি ছিল অজস্র। বিরোধ ছিল
দলের মধ্যে। অনেকেই চাননি
তাজউদ্দীনের নেতৃত্ব। চীন, যুক্তরাষ্ট্র,
পাকিস্তান সমরেখায়, সমশক্তিতে
বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে
ছিল সোচ্চার। সেই অসম লড়াইয়ে
তাজউদ্দীন আহমদ বিশ্ব রাজনীতির সব
কূটজালকে ছিন্ন করেছিলেন। ইন্দিরা
গান্ধীর আস্থা পেয়েছিলেন। তার
সমর্থন আদায় করেছিলেন। ১৯৭১ সালের
মার্চজুড়ে যে অসামান্য অহিংস অথচ
কার্যকর অসহযোগ আন্দোলনের নেতৃত্ব
দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু, তাজউদ্দীন আহমদ
ছিলেন তার মূল শক্তি, মূল
পরিকল্পনাকারী এবং নির্বাহী। সেই
মার্চের যাত্রাকে তাজউদ্দীন আহমদ
ডিসেম্বর পর্যন্ত টেনেছিলেন বঙ্গবন্ধুর
নামে, তার অনুপস্থিতিতেই।
বাংলাদেশ সরকারের প্রথম
প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের
হাতে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ।
অর্জিত হয় মুক্তিযুদ্ধের বাস্তব
সার্থকতা।
৩. স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধুর
প্রত্যাবর্তনের পর শাসন পদ্ধতি পাল্টায়।
কুশীলবদের অনেকেই পাল্টে যান।
বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি
দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী হন। বঙ্গবন্ধু
বাকশাল কায়েম করেন। ততদিনে
তাজউদ্দীনের সঙ্গে বাড়তে থাকে
দূরত্ব। যে বঙ্গবন্ধু-তাজউদ্দীন জুটি
পরস্পরে সম্পূরক-পরিপূরকতায় আজীবন
রাজনীতির মাঠে থাকেন, সরকারের
মাঠে স্বাধীন দেশে তারা দূরে
সরতে থাকেন।
স্বাধীনতা ছিল লক্ষ্য। এ লক্ষ্য অর্জনের
পর সরকার পরিচালনার কাজে হাত
দিয়ে বোঝা যায় বাস্তবতার সঙ্গে
তাত্তি্বকতার কত ফারাক। তাজউদ্দীন
আহমদ যে প্রজ্ঞা, মেধা আর নির্বাহী
জ্ঞানে রাষ্ট্র পরিচালনার মধ্যে
নিবিষ্ট ছিলেন, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক
প্রজ্ঞায়, সিংহ হৃদয়ের ঔদার্য তাতে
সংঘাত আনে। আরও একটি বড় বিষয় ছিল
‘মুক্তিযুদ্ধ’। পুরো ৯ মাস ‘বঙ্গবন্ধু’ ছিলেন
পাকিস্তানের কারাগারে।
তাজউদ্দীন আহমদ ছিলেন যুদ্ধের মাঠে।
দুই অবস্থান খুব বাস্তব ফারাক এনে দেয়
ভবিষ্যতের কর্মনির্ধারণে। সেই ফারাক
দূরত্ব বাড়ায় দু’জনের। তাই কাল হলো।
বাংলাদেশের জীবনে তাই অনেক
দুর্যোগর সূচনা করল। দুই অভিন্ন হৃদয় ভিন্ন
হলো। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ১৯৭৪ সালে
মন্ত্রিসভা থেকে বিদায় নিতে হলো
তাজউদ্দীন আহমদকে। এর বছরখানেকের
মধ্যে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু, ৩
নভেম্বর তাজউদ্দীন আহমদ খুন হলেন। খুন
হলো বাংলাদেশ।
৪. ১৯২৫ সালের ২৩ জুলাই তাজউদ্দীন
আহমদ জন্মেছিলেন ঢাকার অদূরে
গাজীপুরের কাপাসিয়ায়। তাজউদ্দীন
আহমদ মেধাবী ছাত্র ছিলেন। স্কুল-
কলেজের গণ্ডি পেরিয়েছেন
অসাধারণ ফলাফলে। পাঠ্যপুস্তকের
গণ্ডি ছেড়ে জনতার গণ্ডি ছিল তার মূল
আকর্ষণ। তাই জনমানুষের রাজনীতি
ছিল তার মূল ভাবনা। তার সব কর্মজুড়েই
ছিল গণরাজনীতি। ১৯৪৪ সালে
ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় প্রথম
বিভাগে চতুর্থ স্থান অর্জনকারী
তাজউদ্দীন আহমদ ছাত্রাবস্থাতে
রাজনীতিতেই মনোনিবেশ
করেছিলেন। ১৯৫৪ সালে যখন তার বয়স
মাত্র ২৯ বছর, তখন যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী
হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে
এমএলএ নির্বাচিত হয়েছেন। তখনও তার
বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া শেষ
হয়নি।
১৯৭১ সালে যখন তার বয়স মাত্র ৪৬ বছর,
বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তার নামে
পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী
হিসেবে নেতৃত্ব দেন তাজউদ্দীন আহমদ।
প্রবাসে অবস্থানকালীন প্রথম সরকারের
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যে ঐতিহাসিক
ভূমিকা রেখেছিলেন তাজউদ্দীন
আহমদ, তার সম্পর্কে তার নিজের
অভিব্যক্তি ছিল এ রকম, ‘আসুন, আমরা
এমনভাবে কাজ করি ভবিষ্যতে যখন
ঐতিহাসিকরা বাংলাদেশের
ইতিহাস রচনা করবেন তখন যেন
আমাদের খুঁজে পেতে কষ্ট হয়।’
৫. মুক্তিযুদ্ধ শেষে দেশে ফিরে
অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছিলেন
তাজউদ্দীন আহমদ। যুদ্ধ-উত্তর
বাংলাদেশে অর্থমন্ত্রী হিসেবে
নিজ গ্রামে পাকিস্তানি বাহিনীর
নৃশংসতার আগুনে পোড়া নিজের
পৈতৃক ভিটার সামনে এলে সমবেত
জনতা বলে ওঠেন_ আর চিন্তা কী,
তাজউদ্দীন ভাইসাবের পোড়া ভিটায়
নতুন বাড়ি উঠবে। অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন
আহমদের প্রত্যুত্তরে বলেছিলেন, ‘যতদিন
পর্যন্ত এই বাংলাদেশের ক্ষতিগ্রস্ত
মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই না হবে,
ততদিন এ ভিটায় বাড়ি উঠবে না।’
আজ খুব অবাক লাগে যখন দেখি,
তাজউদ্দীন আহমদ সেই জনতাকে লক্ষ্য
করে বলছেন, ‘মনে রেখ, আমি শুধু এই
এলাকার মন্ত্রী নই, আমি সমস্ত
বাংলাদেশের মন্ত্রী। এখন তোমাদের
দায়িত্ব আগের চেয়ে অনেক বেশি।
কারণ সমস্ত দেশের মানুষ তোমাদের
কাপাসিয়ার এই মন্ত্রীর দিকে
তাকিয়ে থাকবে। আমি স্বার্থপরের
মতো আমার এলাকার উন্নয়নের কাজে
হাত দিতে পারি না। আমাকে সমস্ত
দেশে সবকিছু সমান ভাগ করে দিতে
হবে।’
শুধু এই তাত্তি্বক বক্তব্য দিয়ে শেষ
করেননি, সমবেত জনতাকে তাদের
মতো করে হৃদয়ের ভাষায় ব্যাখ্যা
দিয়ে বুঝিয়ে বলেছিলেন, ‘বাড়িতে
যখন অতিথি-মেহমান আসে তখন আমরা
কী করি? তাকে ভালো করে আদর-যত্ন
করি, তার জন্য খাবারের ব্যবস্থা করি,
তাকে সবচেয়ে ভালো জিনিসটা
খেতে দিই। তারপর যা থাকে
নিজেরা ভাগ করে খাই। তোমরাও
সমস্ত বাংলাদেশকে তেমনিভাবে
দেখ। এসো, আগে আমরা সবাই মিলে
দেশ গড়ি। তখন এই এলাকা এমনিতেই আর
পিছিয়ে থাকবে না।’
৬. তাজউদ্দীন আহমদ জনমানুষের প্রকৃত
সমস্যাটা বুঝতে চাইতেন। কেননা
তিনি জানতেন, রাজনীতিতে জনগণই
মূলশক্তি। ঔপনিবেশিক শাসন আমাদের
মস্তিষ্কে, চিন্তাজগতে যে নতুন ধারা
তৈরি করেছে তাতে জনগণকে
উপেক্ষা করার রেওয়াজটা মজ্জাগত।
তাজউদ্দীন আহমদ অর্থমন্ত্রী হিসেবে
কাজ করার সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের
গভর্নরকে বলে দিয়েছিলেন, ‘দেশের
অর্থনীতির ব্যাপারে প্রতিদিনের
রিপোর্ট আমাকে দেড় পৃষ্ঠার মধ্যে
টাইপ করে দেবেন। যেন আমি পুরো
চিত্র পাই। এখানে কোনো কিছু
লুকানোর চেষ্টা করবেন না। এতে আমি
মনে করব, আপনি আমার বন্ধুর মতো কাজ
করেছেন। কারণ আমি সঠিক চিত্র
পেলে তখনই সে অনুযায়ী কাজ করার
সুযোগ পাব। কখনও আমার সন্তুষ্টির
চেষ্টা করবেন না। একদিক থেকে
ড্রেনেজ হয়ে সব বেরিয়ে চলে
যাচ্ছে আর আপনি বলছেন খুব ভালো
ইকোনমির অবস্থা_ এটা কখন আমাকে
বলবেন না। বরং একটু খারাপ কিছু
দেখলেই আমাকে বলবেন, যেন আমি
সংশোধন করার চেষ্টা করতে পারি।’
৯০ তম জন্মবার্ষিকীর এ দিনে গণমুখী
রাজনীতির চিন্তক, কর্মবীর তাজউদ্দীন
আহমদকে তাই স্মরণ করি অসীম শ্রদ্ধায়,
গভীর ভালোবাসায়।
©somewhere in net ltd.