নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানুষ মানুষের জন্য...

মানুষ আজাইরা থাকলে একটু সাহিত্য চর্চা কইরা মজা নেওয়ার চেষ্টা করে। আমিই আর ব্যতিক্রম হইতে যামু কেন! যদিও হাতের লেখা ভালো না, তাও ২/১ অক্ষর লেখলে যদি মানুষ পড়তে পারে, তাইলে আর ক্ষতি কি!!

ই-নাম

আমি একজন নিরীহ জনতা, বাপের হোটেলে খাই, মজা লইতে ভার্সিটির বারান্দা দিয়া ঘুরি মাঝে মাঝে, এইতো, আর কি কইতাম! বেশি কথা কই না, তয় আড্ডা জমলে ছাড়ি না!!

ই-নাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

কে রাখে কার খোঁজ?

৩১ শে আগস্ট, ২০১২ রাত ৯:৫২

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।

[পরম করুনাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।]



ভয় পেয়েন না ভাই, আমি জঙ্গি না!!



আজকালতো বিসমিল্লাহ্‌ দিয়ে শুরু করাটা সমাজের অনেকের কাছেই জঙ্গিবাদের অংশ হিসেবে মনে হয়।



যাহোক, এটা আমার জীবনের প্রথম ব্লগ লিখা। এর আগে আমি আর কখনো কোন ব্লগ লিখিনি। যাত্রা যাতে শুভ হয় তাই আমি একজন মুসলিম হিসেবে বিসমিল্লাহ্‌ দিয়ে শুরু করলাম। যাহোক, এসব কথা নাহয় পরে হবে। আগে বলে নেই আমার ব্লগ লিখা শুরু করার পিছনে মহান যে কারণগুলো আছে সেগুলো।



যারা আমার ব্লগার হিসেবে যে শিরোনাম দিয়েছি সেটি পড়েছেন, তারা হয়তো কিছুটা আঁচ করতে পেরেছেন কেন আমি ব্লগ লেখা শুরু করলাম। না, আমি কোন বড় কবিও হতে চাই না, বড় সাহিত্যিকও হতে চাই না। কারণ আজকাল এসব কিছুই পরিণত হয়েছে ব্যবসায়িক পণ্যে। যাকগে, তাও পরে কোন দিন আলোচনা হবে। নয়তো বিষয়ভিত্তিক যা বলতে চাচ্ছি, তার সবই গুলিয়ে ফেলবো!!



আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন ঢাকা শহর এতটা ব্যস্ত ছিলো না। জন্ম থেকে ঢাকায় থাকলেও আমার বেশি দিন আগের কথা মনে নেই। বড় জোর ৯৬/৯৭ এর দিকের ঘটনা বলতে পারবো। এর আগের কিছু কিছু ঘটনাও হয়তো বলতে পারবো, কিন্তু তখনো আমি ক্যালেন্ডার চিনি না। সে যাইহোক, ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত দুরন্ত এবং দুষ্ট একটা ছেলে ছিলাম আমি। মা-বাবা, ভাই-বোন, এলাকাবাসী,আত্মীয়-স্বজন কেউ বাদ নেই যে আমাকে নিয়ে আতঙ্কে থাকেনি। না, তেমন বড় কোন বোমা হামলা বা অন্য কোন আতঙ্ক নয়, আমি বিল্ডিংয়ের কোনায় কোনায় বেয়ে চলতাম, কখন পরে ব্যথা পাই না কি হয় তাই নিয়ে আতঙ্ক!!



আস্তে আস্তে বড় হলাম, বন্ধুদের মধ্যে একটা সার্কেল তৈরি হলো। সবাই মিলে কত খেলাধুলা, কত মজার ছিলো দিনগুলো!! সেসব স্মৃতিচারণ করতে গেলে ব্লগের আয়তন অনেক গুণে বেড়ে যাবে, পাঠক বোরিং ফিল করবে। তবে গলিতে গলিতে ক্রিকেট খেলাটা ছিলো একটা কমন বিষয়। আর বাড়িওয়ালারা আমাদেরকে দৌড়ানি দিতো, আর কে কোন দিকে দৌড়ে পালাতাম, কার খবর কে রাখে!! কারণ ছিলো একটাই, জানালার গ্লাস ভাঙ্গতো। তবে কেউ যদি ধরা খেতো, সবাই এগিয়ে যেতাম। বন্ধুদের মধ্যে মনোমালিন্য হতো, কিন্তু আবার সবাই এক হয়ে যেতাম। কতই না মধুর ছিলো দিনগুলো!!



কারো বিশেষ দিন বিশেষ করে তুলতাম আমরাই। ঈদের দিন সবাই সবার বাসায় যেতাম, একসাথে বন্ধুরা মিলে ঘুরতাম। এলাকার সবাই সবাইকে চিনতো। কি বাড়িওয়ালা, কি ভাড়াটিয়া! ছিলো না তেমন কোন চুরি, তেমন কোন ডাকাতি। আর এত যানজট আর ধুলাবালিরতো প্রশ্নই আসে না। আবহাওয়া ছিলো খুব সুন্দর, বাতাস ছিলো নির্মল পরিস্কার। চারিদিকে ছিলো সবুজ গাছগাছালি। পুকুরগুলোতে ছিপ ফেলে মাছ ধরতাম মজা করে। সপ্তাহে একদিন পার্কে খেলতে যেতাম। ওখানে বিভিন্ন এলাকার ছেলেরা যেত, ওদের সাথে পরিচয় হতো আর আমরা এ কথা বুঝতে পারতাম যে আশেপাশে আমরা চিনি না এমন লোকও আছে!! আমার দেখা সবচেয়ে বড় বন্যা হচ্ছে '৯৮ এর বন্যা। তখন আমাদের নীচ তলা ডুবে গেছিলো প্রায়। তখন আব্বা বড় ভাইয়ারা মিলে বড় বড় টেটা দিয়ে ইয়া বড় বড় মাগুর মাছ ধরতো! ইশ! দেখতেই কত মজা লাগতো! একটা নৌকা উলটালেই আমরা বাচ্চারা দেখে খুশিতে চিৎকার করতাম!! ২০০৪ সালে যখন সেভেনে পড়ি তখনো বন্যা হইছিলো ভালোই। আমার মনে আছে নৌকা দিয়ে গিয়ে একদিন গোটা একটা ক্লাসই মিস করেছিলাম। তবে তখন মানুষের মাঝে একটা কেমন জানি আন্তরিকতা ছিলো।



কিন্তু বর্তমানে এলাকায় আর বাচ্চাদের তেমন হইহুল্লুর দেখিনা। আমাদের মত পোলাপানের সংখ্যা নিশ্চয়ই কমেনি এতদিনে। কারণ আমাদের ছোটবেলায় যেমন সবুজের সমারহ দেখা যেত, এখন সেসব যায়গায় দাঁড়ালে দেখা যায় ইটের স্তূপ!! বড় বড় দালান-কোঠা!! লোকজন জানে না তার পাশের বাসায় কে থাকে, কি তাদের পরিচয়। পাশের বাসাতো অনেক দূরের কথা, পাশের ফ্ল্যাটের মানুষকে চিনলেও তাকে ধরা হয়, হ্যাঁ, সে এলাকার অনেককেই চিনে!!এইসব ছেলে-মেয়েরা সব ঘরের মধ্যে ফার্মের মুরগীর মত বসে থাকে। এখনকার ছেলেরা অনেক বড় বড় ক্রিকেট ম্যাচ খেলে, ফুটবল ম্যাচ খেলে কিন্তু তার সবই কম্পিউটার বা কোন ইলেকট্রনিক ডিভাইসে! তারা সেখানে বন্দুক যুদ্ধ করে বড় বড় অস্ত্র ব্যবহার করে দেশের পর দেশ স্বাধীন করে, কিন্তু এলাকার সব ছেলেদের নিয়ে স্বাধীনভাবে খেলতে পারে না। আমারতো আশঙ্কা হয় তার পরবর্তী প্রজন্মের সব স্টেফেন হকিংস হয়ে যাবে, যাদের মেধা থাকবে প্রখর, কিন্তু সর্বাঙ্গ প্যারালাইসড!!



তারা এলাকায় বন্ধুদের সাথে বিভিন্ন অভিজ্ঞতা শেয়ার করার পরিবর্তে মারে ফেসবুকে স্ট্যাটাস। বন্ধুদের বা বড় ভাইদের জন্মদিনে বা ঈদের দিন মানুষের সাথে দেখা করার পরিবর্তে তারা ফেসবুকে দেয়ালে " হ্যাপি বার্থডে ব্রো" বা "ঈদ মুবারক ব্রো" লিখে দেওয়াই যথেষ্ট মনে করে। তাওতো এসব কর্মকাণ্ড ঘটায় যারা আমরা ছোট থাকা অবস্থায় জন্মেছে তারা। নয়া প্রজন্মের পোলাপানেরতো সর্বাঙ্গে আগুন জ্বলে!! কোন দিকের দাড়ি কোন দিকের চুলের সাথে মিলে কি বিদঘুটে চেহারা তৈরি হইছে তার নাই ঠিক, তার নাকি হ্যাব্বি দাম। সে এখন "ডিজে পার্টি" করে! তার পার্টের জ্বালায়ই এলাকাবাসীর ঘুম নাই!!



মা-বাবা? আত্মীয়-স্বজন? ময়-মুরব্বি?? এসবের ধার ধারে নাকি ওরা?? দেখলে কখনো মন চাইলে সালাম দিলো, কখনো দিলো না। আগে আমাদের এলাকার সব আঙ্কেলরা আমাদের সবাইকে শাসন করার ক্ষমতা রাখতো। কিন্তু এখন? ওরেব্বাবা!! তার পার্ট থেকে মুরাব্বি বাঁচলেই না শাসনের প্রশ্ন!!



সেতো ভালো কথা। সেদিন একজনকে তার ভাইয়ে কথা জিজ্ঞেস করলাম। ওমা! তার ভাই ম্যাট্রিক ইন্টার কত্থেকে পাস করছে সে জানে না!! কি জব করে তাও জানে না! অথচ ইন্টার পরীক্ষা দিবে।



কে রাখে কার খোঁজ? সবাই নিজের নিজের ওয়েব সাইট, ফেসবুক একাউন্ট এসবে হিরো!! আর কারো খবর লাগে নাকি!! যদি কোন ভাবে কোন রমণীকে পটাতে পারে, তাইলতো লারেলাপ্পা!! আর বাপ-মার খবর রাখে কে? কপতকপতি অজানায় হারিয়ে যায়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, যার জন্য সব ছেড়ে যায়, এত ভালোবাসা, যাকে ছাড়া এক মুহূর্তও থাকতে পারে না, ফোনে যাকে "জান, তোমাকে ছাড়া এক মুহূর্তও অসহ্য। জান, তোমাকে ছাড়া আর পারবো না বেবি। আই মিস ইউ। তোমাকে ছাড়া জীবনে আর কিছু চাই না। তুমি আমার সব।..." এসব কথা হাজার বার বলেছে, বিয়ের কয়দিন পর সেই হয়ে যায় চোখের বিষ। তখন শুরু হয়ে যায় "তুমিই আমার জীবন টাকে নষ্ট করছ। তুমি রিলেশন না করলে আমার বন্ধুদের চেয়ে আমার অবস্থান কত উপরে থাকতো। আমি আরও কত ভালো মেয়ে পেতাম। তোমার সাথে আর এক মুহূর্তও থাকা সম্ভব না।..." এসব কথা বলে সব শেষ, পরিশেষে ডিভোর্স!! কি হলো??!! লাভ কি হলো?? বাপ-মার সামাজিক স্ট্যাটাস, পারিবারিক ভাবমূর্তি সব নষ্ট করে, তবেই ক্ষান্ত!!



ব্লগে লেখা শুরু করলাম একথা জানাতেই। ভাবলাম হয়তো "তারা" এলাকায় সময় দিতে না পারুক, অন্তত ব্লগ পড়ারতো সময় পাবে ঘরের কোনে বসে!! আসলে আমাদের মধ্যে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটছে। কিন্তু আন্তরিকতাটা কেমন জানি হারিয়ে যাচ্ছে। সবাই কেমন জানি ডায়নামিক হয়ে গেছি আমরা! একটু চিন্তা করে দেখুন। আপনার বাসার বা ফ্ল্যাটের আশেপাশের লোকদের আপনি চিনেনতো? চিনলে কতটুকু চিনেন? রহিম সাহেব বড় ভালো লোক। কাস্তমস আফিসে চাকুরী করে কিন্তু খুব সৎ। ব্যস? এই পর্যন্তই? কখনো কি তাকে আপনার বাসায় বা আপনি সপরিবারে তাদের বাসায় গিয়ে খেয়ে ছিলেন??



পরিশেষে অবশ্যই ধন্যবাদ দিতে হয় সে সমস্ত পাঠককে, যারা ধৈর্য ধরে পুরা ব্লগটা পড়লেন। বেশির ভাগলোকই হয়তো অর্ধেক বা দুই/এক লাইন পড়ে বুঝে গেছে আমি বগর বগর পার্টি! তাই ছেড়ে দিয়েছে। তবে আমার একান্ত অনুরোধ রইলো বিষয়গুলো ইকটু ভাববেন। পারলে মন্তব্য শেয়ার করবেন। যেদিন আমাদের মাঝে আবার সেই আন্তরিকতা ফিরে আসবে, যেদিন আমরা সব কিছু ভুলে গিয়ে আবার "মানুষ মানুষের জন্য" এই কথাটি উপলব্ধি করতে পারবো, বুঝতে পারবো যে "সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপর সত্য নাই", সেদিন আমার এই লেখা সার্থকতা পাবে। সবাইকে আবারো শুভেচ্ছা। আল্লাহ হাফিজ। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১২:০৫

ঐদিকের কেউ!! বলেছেন: ভালো লাগসে ভাই .. চালায়া যান । :)

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১:৩৫

ই-নাম বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই, খুবই ভালো লাগলো। :)

২| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৩:৩১

এম. কে গৌরব বলেছেন: প্রথমেই বেশ ভাল লিখলেন ভাই। Keep it on. :)

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ২:২১

ই-নাম বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই উৎসাহ প্রদানের জন্য... :D

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.